ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

সুলভ হোক স্যানিটারি ন্যাপকিন

সুলভ হোক স্যানিটারি ন্যাপকিন

ছবি-সংগৃহীত

সাদিয়া আফরিন মৌরী

প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ০১:৪০

পিরিয়ড বা ঋতুস্রাব নারীর জীবনচক্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ। একজন নারীর নিয়মিত ও সঠিকভাবে পিরিয়ড হওয়ার অর্থ, তিনি সন্তান ধারণে সক্ষম। বিষয়টি স্বাভাবিক হলেও দুঃখজনকভাবে এ সম্পর্কে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি এখনও স্বাভাবিক নয়। এমনকি পিরিয়ড নিয়ে পরিচিতদের কাছে তাচ্ছিল্য বা লজ্জার শিকার হন অনেকে।

অন্যদিকে বাংলাদেশে এখনও অনেক নারী ঋতুস্রাবের সময় তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় স্যানিটারি ন্যাপকিনের পাশাপাশি তুলা বা কাপড় ব্যবহার করেন। এসব ব্যবহার করা খুবই বিপজ্জনক। এ কারণে তাদের নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা হতে পারে। এমনকি জরায়ুতে ক্যান্সারের মতো গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। এটাও ঠিক, স্যানিটারি ন্যাপকিনের গুরুত্ব জানার পরও অনেকে তা উচ্চমূল্যের কারণে ব্যবহার করতে পারে না। দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের পরিবারের নারীদের জন্য বিষয়টি খুবই ব্যয়বহুল। ফলে অনেক নারী স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারকে অনর্থক টাকা নষ্ট বলে মনে করে।

বর্তমানে এই ঊর্ধ্বমুখী ব্যয়ের জীবনযাত্রায় সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারেও এমনটা মনে হওয়া বিচিত্র কিছু নয়। কে অস্বীকার করতে পারবে, পরিবারে যে কোনো ত্যাগের প্রশ্ন উঠলে বরাবরই নারীকে এগিয়ে আসতে হয়! জটিল রোগেই নারীকে যেখানে ব্যয় সাশ্রয়ের কথা ভেবে তা চেপে রাখতে হয়, সেখানে ঋতুস্রাব তো অনেক পরের কথা। পরিবারের অন্য সদস্যরা, বিশেষ করে পুরুষরা যে নিজের কথা একটু কম ভেবে স্ত্রী-কন্যা বা মা-বোনের অন্তত চিকিৎসার বিষয়কে অগ্রাধিকার দেয়, সেটাও খুব দেখা যায় না। সমাজে পুরুষতন্ত্রের দৌরাত্ম্য এখনও কমেনি। এখানেই আসে রাষ্ট্রের কাঙ্ক্ষিত ভূমিকার কথা। নারী অধিকার নিয়ে আমাদের রাষ্ট্র কম সরব নয়। তার মধ্যে যে প্রজনন স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টিও পড়ে, সেটা মনে করিয়ে দিতেই আমার এ লেখা।

সাধারণত স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরিতে ব্যবহৃত কাঁচামালের ওপর বিভিন্ন স্তরে কর দিতে হয় বলে এর দাম আকাশচুম্বী। আন্তর্জাতিক মানের স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরিতে ব্যবহৃত কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। এ ক্ষেত্রে টোটাল ট্যাক্স ইনসিডেন্ট (টিটিআই) ১২৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ। যেখানে ২৫ শতাংশ দিতে হয় কাস্টমস ডিউটি, ৪৫ শতাংশ সাপিস্টুমেন্টারি ডিউটি, ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ৫ শতাংশ অগ্রিম আয় কর (এআইটি), ৩ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি এবং ৪ শতাংশ এটিভি। এ ছাড়া বড় দোকান থেকে কিনতে গেলে আরও ৫ শতাংশ অতিরিক্ত কর দিতে হয় ক্রেতাকে।

বর্তমান সরকার নারীদের প্রজনন সম্পর্কিত বিভিন্ন সেমিনারের আয়োজন করছে, যেটা সত্যিই প্রশংসনীয়। তবে উল্লিখিত কর কাটছাঁট করে স্যানিটারি ন্যাপকিনের দাম যদি কমিয়ে আনা যায়, তাহলে অনেক নারীর কাছেই এটি সহজলভ্য হবে। নিম্ন আয়ের পরিবারভুক্ত নারীদের কাছেও তা সুলভ করার কার্যকর পন্থা খুঁজতে হবে।

শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন

×