ইহাই তবে ওয়াসার ‘পানির দাম’

প্রতীকী ছবি
সমকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৪ | ০০:০৯
ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ-ঢাকা ওয়াসা পহেলা জুলাই হইতে পানির দাম এক লম্ফে যেভাবে ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করিবার সিদ্ধান্ত লইয়াছে, উহা যৌক্তিক হইতে পারে না। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত সমকালের প্রতিবেদন বলিতেছে, ঢাকা ওয়াসা ষোড়শ বৎসরে পানির দাম ষোড়শ দফায় বৃদ্ধি করিয়াছে; যাহা প্রায় ৩০০ শতাংশ। এইবার দাম বৃদ্ধিতে মূল্যস্ফীতি সমন্বয় ও সরকারের ভর্তুকি হ্রাসের যে যুক্তি প্রদর্শন করা হইয়াছে, উহাও অগ্রহণযোগ্য। নাগরিকদের যদি এত অর্থের বিনিময়ে পানির মতো সাধারণ সরকারি সেবা পাইতে হয়, তবে তাহারা যাইবে কোথায়? আমরা মনে করি, পানির অপচয় রোধ এবং অব্যবস্থাপনা দূর করিলে পানির দাম বৃদ্ধির প্রয়োজন হইবে না এবং উহাই ঢাকা ওয়াসার অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।
ওয়াসার আইনে প্রতি বৎসর ৫ শতাংশ হারে পানির দাম বৃদ্ধির অনুমতি দেওয়া হইলেও, শর্ত হইল– ওয়াসা বোর্ডের অনুমোদন লইতে হইবে। উহার অধিক মূল্য বৃদ্ধিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন প্রযোজ্য। অথচ অভিযোগ উঠিয়াছে, এইবার ঢাকা ওয়াসা পানির দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দিলেও বোর্ডের অনুমোদন লয় নাই। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কোন যুক্তিতে এতটা দাম বৃদ্ধির অনুমোদন দিয়াছে এবং বোর্ডের অগোচরে এত বড় সিদ্ধান্ত কী প্রকারে লওয়া হইল? আমাদের স্মরণে আছে, ২০২২ সালে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক বোর্ডের অনুমোদন ব্যতিরেকে সরকারের নিকট ২৫ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করিয়াছিলেন। তখন বিষয়টি হাইকোর্টের দ্বারে উপনীত হইবার কারণে মূল্যবৃদ্ধি ঘটে নাই। কিন্তু প্রশ্ন হইল, যথাযথ অনুমোদন ব্যতিরেকে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক যখন স্বয়ং এমন সিদ্ধান্ত লইতেছেন, তবে এই বোর্ডের প্রয়োজন কী?
আমরা বিস্মিত, ঢাকা ওয়াসা এমন সময়ে পানির দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত লইয়াছে, যখন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষ চাপে রহিয়াছে। এই সময়ে সরকারের পানির দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত জনবিরোধীরূপেই দেখা হইবে। এতদ্ব্যতীত ঢাকা ওয়াসার সেবা লইয়াও বিস্তর অভিযোগ। ওয়াসার সরবরাহকৃত পানির মান এতটাই নিম্নে, নগরবাসী তাহা সরাসরি পান করিতে পারেন না। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবির গবেষণায় দেখা গিয়াছে, নগরীর ৯৩ শতাংশ গ্রাহককে ফুটানোসহ বিভিন্ন পদ্ধতিতে ওয়াসার পানি পানের উপযোগী করিতে হয়। তজ্জন্য তাহাদের যে ব্যয় হয়, উহাও বিবেচনায় লইতে হইবে। উপরন্তু ওয়াসার লাইনে সর্বদা পানি না পাইবার কারণে অনেক গ্রাহককে ভোগান্তিতে পড়িতে হয়। এমনকি ওয়াসার ভূতুড়ে বিলের বিষয়ও উপেক্ষণীয় নহে।
রাজধানীবাসী পানির জন্য ঢাকা ওয়াসার উপর নির্ভরশীল বলিয়া প্রতিষ্ঠানটি খুশিমতো দাম বৃদ্ধি করিবে– এমনটা অগ্রহণযোগ্য। এই ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীলতাও প্রশ্নবিদ্ধ। আমরা পুনরায় পানির অপচয় রোধ এবং অব্যবস্থাপনাগত সংকট দূরীকরণ ও গ্রাহকসেবা বৃদ্ধির বিষয়ে জোর দিতে চাই। এইগুলি নিশ্চিতকরণের পূর্বে গ্রাহকের উপর বারংবার পানির মূল্য বৃদ্ধির খড়্গ্ উত্তোলন না করাই মঙ্গল।
- বিষয় :
- পানির দাম