জনশক্তি রপ্তানিতে আত্মঘাতী সিন্ডিকেটবাজি

প্রতীকী ছবি
সমকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৪ | ২৩:৩৫
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগে পুনরায় যে সিন্ডিকেটবাজির নগ্ন রূপ পরিদৃষ্ট হইল, উহা নিশ্চিতভাবে দুর্ভাগ্যজনক। শুক্রবার সমকালের শীর্ষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকে বিমান ভাড়াসহ ১৫ রকম ব্যয় মালয়েশীয় নিয়োগকারীর বহনের শর্ত থাকায় সরকার রিক্রুটিং এজেন্সির ৫০ সহস্র টাকা সার্ভিস চার্জসহ কর্মীপ্রতি মোট ব্যয় প্রায় ৭৯ সহস্র টাকা নির্ধারণ করে। কিন্তু বাস্তবে মালয়েশিয়াগামী প্রত্যেক কর্মীকে দিতে হইয়াছে সাড়ে ৪ হইতে সাড়ে ৬ লক্ষ টাকা, যাহার মধ্যে আছে আইনে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হইলেও ভিসা বা চাহিদাপত্র ক্রয় বাবদ ন্যূনতম ৬ হাজার রিঙ্গিত বা দেড় লক্ষ টাকা এবং সিন্ডিকেটের চাঁদা বাবদ ১ লক্ষ ৪২ সহস্র টাকা। কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিবন্ধন ও সম্পাদনেও সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিল সিন্ডিকেটের। প্রতিবেদনমতে, এই সকল ব্যয় মিলাইয়া ২০২২ সালের আগস্ট হইতে অদ্যাবধি মালয়েশিয়ায় সাড়ে চার লক্ষাধিক কর্মী প্রেরণ প্রক্রিয়ায় অন্তত সাড়ে ১৩ সহস্র কোটি টাকা গিয়াছে দুই দেশের কোম্পানির সমন্বয়ে গঠিত সিন্ডিকেটের পকেটে। এমনকি এই লুটপাটের প্রক্রিয়ায় ভুয়া চাহিদাপত্রের ভিত্তিতে দেশটিতে কর্মী প্রেরণের ঘটনাও ঘটিয়াছে, যাহার ফলস্বরূপ বর্তমানে সেখানে বিনা বেতনে মানবেতর জীবন কাটাইতে হইতেছে অন্তত এক লক্ষ কর্মীকে। এহেন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার পুনরায় বন্ধ হইয়া গিয়াছে মালয়েশীয় শ্রমবাজার। বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনক। কারণ মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণে সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ প্রায় সর্বজনবিদিত হইলেও জাতীয় স্বার্থ ক্ষুণ্নকারী এই চক্রের বিরুদ্ধে অদ্যাবধি কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয় নাই। এমনকি সম্প্রতি ঢাকায় মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রদূত সিন্ডিকেটের বিষয়টি প্রকাশ্যে স্বীকার করিবার পরও সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলে কোনো হেলদোল দেখা যাইতেছে না। বরং প্রবাসীকল্যাণ সচিব সমকালের সঙ্গে আলোচনায় বিষয়টি ধামাচাপা দিবার চেষ্টা করিয়াছেন।
আমরা জানি, ২০০৫ সালে কর্মী প্রেরণে সংঘটিত অনুরূপ দুর্নীতি-অনিয়মের জেরে ২০০৯ সালে মালয়েশীয় সরকার বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। উপরন্তু প্রচুর কাঠখড় পোড়াইয়া ২০১২ সালে উক্ত নিষেধাজ্ঞা তুলিতে মালয়েশিয়া সরকারকে সম্মত করাইবার পরও অনুরূপ অনিয়ম ঘটিতে থাকিলে ২০১৮ সালে দেশটির সরকার পুনরায় বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। বারংবার এহেন নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হইয়া একদিকে দেশ হারাইতেছে রেমিট্যান্স আয়ের বৃহৎ উৎস, অপরদিকে অসহনীয় বেকারত্বের জ্বালায় তরুণ-যুবারা বিপৎসংকুল সমুদ্রপথে অবৈধ উপায়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সমৃদ্ধিশালী দেশটিতে পাড়ি জমাইতে সচেষ্ট। আন্তর্জাতিক মানব পাচার চক্রের ফাঁদে পড়িয়া তাহাদের অধিকাংশ মালয়েশিয়া ও উহার প্রতিবেশী দেশগুলির জঙ্গলে মানবেতর জীবন যাপন করিতে বাধ্য হয়। সদ্য উন্নয়নশীল দেশের তকমাপ্রাপ্ত রেমিট্যান্সনির্ভর বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির জন্য ইহা নিশ্চয় উত্তম কার্য নহে।
নিঃসন্দেহে প্রতিবেদনে যদ্রূপ বলা হইয়াছে, দুই দেশের প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপির আশীর্বাদপুষ্ট বিধায় উক্ত সিন্ডিকেট ভাঙা সহজ নহে। তবে রাষ্ট্র ও জনগণের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দানকারী সরকারের জন্য কোনো কিছুই দুরূহ নহে– এমন নজিরও আছে।
- বিষয় :
- জনশক্তি রপ্তানি