প্রাণহানি, রক্তপাত, সংঘর্ষ বন্ধ করুন

প্রতীকী ছবি
সমকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২৪ | ২৩:০৫
কোটা সংস্কার আন্দোলনে ক্ষমতাসীন দলের হামলার জের ধরিয়া সংঘাত ও পুলিশের গুলিতে মঙ্গলবার ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে যেইভাবে প্রাণহানি ঘটিয়াছে, উহাতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন ও বেদনাহত। সন্ধ্যায় অত্র সম্পাদকীয় স্তম্ভ রচিত হইবার সময় পর্যন্ত অন্তত যেই ছয়জনের প্রাণহানির খবর মিলিয়াছে, তাহাদের স্বজন ও পরিবারকে আমরা কী জবাব দিব? এই আশঙ্কা অমূলক হইতে পারে না, আহত অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। রবিবার দিবাগত রাত্রি হইতে কার্যত সমগ্র দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা ও হতাহতের ঘটনাবলি দেশবাসীকে কতখানি বিক্ষুব্ধ করিয়া তুলিয়াছে, সামাজিক মাধ্যমে উহা স্পষ্টতই প্রতিফলিত। আমরা মনে করি, এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকিতে দেওয়া যায় না। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় মতপ্রকাশ ও সমাবেশ করিবার অধিকার সকল নাগরিকেরই রহিয়াছে। সেইখানে হামলা ও শক্তি প্রয়োগ কোনো যুক্তিতেই গ্রহণযোগ্য নহে। আমরা দেখিতে চাহিব, পরিস্থিতির আরও অবনতির পূর্বেই এই প্রাণহানি, রক্তপাত ও সংঘর্ষ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ লওয়া হইয়াছে।
বস্তুত সরকারি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থার সংস্কার লইয়া শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের কার্যত শান্তিপূর্ণ আন্দোলন যেইভাবে সহিংস হইয়া উঠিল, উহার দায় বহুপক্ষীয়। আমরা দেখিয়াছি, কোটা ব্যবস্থা বাতিল সংক্রান্ত পরিপত্রটি এই বৎসর জুনের প্রথম সপ্তাহে উচ্চ আদালতের রায়ে বাতিলের পর হইতেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আন্দোলনে নামিয়াছিল। আন্দোলনের প্রতি বিপুল জনসমর্থন বিবেচনা করিয়াই সম্ভবত ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনটি উহাতে বাধা প্রদানে নিবৃত্ত ছিল। এমনকি ১০ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায়টিতে চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দেন এবং প্রধান বিচারপতি স্বয়ং শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ফিরিয়া যাইবার আহ্বান জানান। আমরা মনে করি, শিক্ষার্থীরা ঐ আহ্বানে ইতিবাচক সাড়া দিলে পরিস্থিতি এতদূর গড়াইত না। ইহার সহিত ক্ষমতাসীন দলও বিপুল জনপ্রিয় এই আন্দোলন লইয়া দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হইয়াছে। বিশেষত ১৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর এই সংক্রান্ত বক্তব্য লইয়া সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেই প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হইয়াছিল, উহা আরও প্রজ্ঞা ও স্থিরতার সহিত মোকাবিলা করা যাইত। তৎপরিবর্তে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের পক্ষ হইতে বল প্রয়োগের ব্যগ্রতা পরিস্থিতির অবনতি বৈ উন্নতি ঘটায় নাই।
আমরা প্রত্যাশা করিব, বিলম্বে হইলেও সংশ্লিষ্টদের এই সম্বিত ফিরিবে যে, ক্ষমতাসীন দল তথা সরকারকেই সর্বোচ্চ সংযম ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হয়। এই ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় হইতে মাঠ পর্যায়ে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের বার্তা দিবার বিকল্প নাই। পুলিশও কেন অকস্মাৎ ‘ট্রিগার হ্যাপি’ হইয়া উঠিল– খতাইয়া দেখিতে হইবে। অহেতুক প্রাণহানি ও রক্তপাতের দায় সংশ্লিষ্টরা এড়াইতে পারেন না। বিশেষত প্রতিটি প্রাণহানির তদন্ত, দায়ীদিগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা এবং তাহাদের পরিবার ও স্বজনকে ক্ষতিপূরণ দিতেই হইবে। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিকদের প্রাণ মূল্যহীন হইতে পারে না। আমরা ইহাও প্রত্যাশা করিব, কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ সর্বোচ্চ আদালতের রায় পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করিবেন। আমরা বিশ্বাস করি, যেই কোনো সমস্যা বা সংকটই আলোচনার মাধ্যমে সমাধান সম্ভব। প্রাণহানি, রক্তপাত, সংঘাত কোনো পক্ষের জন্যই কল্যাণ বহিয়া আনিতে পারে না।
- বিষয় :
- প্রাণহানি