ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

দ্রব্যমূল্য

মূল্যস্ফীতির চাপে জীবন ওষ্ঠাগত

মূল্যস্ফীতির চাপে জীবন ওষ্ঠাগত

প্রতীকী ছবি

সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২৪ | ২৩:৫১

মূল্যস্ফীতি এখনও জনজীবনকে কতটা বিপর্যস্ত করিয়া চলিয়াছে, শুক্রবার সমকালের শীর্ষ প্রতিবেদন হইতে ইহা স্পষ্ট। তথায় বলা হইয়াছে, ঊর্ধ্বগতির বাজারে মানুষের আয় অপেক্ষা ব্যয় অধিক হইবার কারণে বিপুলসংখ্যক মানুষ সংসার চালাইতে হিমশিম খাইতেছেন। শুধু উহাই নহে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সেই সকল পরিবারের খাদ্যতালিকা ছোট হইয়া আসিবার কারণে পুষ্টির ঘাটতি দেখা যাইতেছে। বাজারে সবজির মূল্য কিছুটা নাগালে থাকিলেও চাউল-ডাউল-তৈল, চিনিসহ অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দর বৃদ্ধি পাইয়াছে। চাউলের বাজারেও নাই স্বস্তি। বলা বাহুল্য, এহেন পরিস্থিতি এমন সময়ে চলিতেছে যখন সিংহভাগ মানুষের প্রকৃত আয় নিম্নমুখী; নূতন কর্মসংস্থানও হইতেছে না।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাম্প্রতিক তথ্যে দৃশ্যমান, অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পাইয়া ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ হইয়াছে, যথায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পাইয়া দাঁড়াইয়াছে ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশে। উহাই প্রমাণ করিতেছে বাজার পরিস্থিতি কতটা নাজুক। বিশেষ করিয়া যখন মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পাইলেও আয় বাড়িতেছে না, তখন মানুষের উপর চাপও অধিক পড়িয়া থাকে। পরিসংখ্যান বলিতেছে, অক্টোবরে গড় শ্রমের মজুরি বৃদ্ধি পাইয়াছে মাত্র ৮ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। অর্থাৎ গড় আয় অপেক্ষা ব্যয় অধিক। খাবার ক্রয়ে ব্যয় সর্বোচ্চ। লাগামহীন মূল্যস্ফীতি আর আয়ের চিত্রের এই অবস্থায় মানুষের কষ্টের চিত্র ফুটিয়া উঠিতেছে। এমতাবস্থায় সরকারের অলস সময় পার করিবার কোনো অবকাশ নাই। পদক্ষেপ লওয়া সত্ত্বেও উহার সুফল কেন পাওয়া যাইতেছে না– তাহার তত্ত্ব-তালাশ করিয়া বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরাইয়া জনমনে স্বস্তি আনিতেই হইবে।

অস্বীকার করা যাইবে না, দাম বৃদ্ধির এই ধারা নূতন নহে। কিন্তু বিগত সরকার মূল্য নিয়ন্ত্রণে যেই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়াছে, সেই ধারা কেন অব্যাহত থাকিবে? এটা সত্য, অন্তর্বর্তী সরকার বাজারে লাগাম টানিতে ভোগ্যপণ্যের মূল্য বাঁধিয়া দেওয়া, অভিযান চালানো, আমদানিতে শুল্ককর হ্রাস, আমদানির অনুমতিসহ বিভিন্ন উদ্যোগ লইয়াছে। প্রশ্ন হইল, তাহাতেও স্বস্তি মিলিতেছে না কেন? আলু, পেঁয়াজ, চাউল, ডিম্ব ইত্যাদি পণ্যে যেই হারে শুল্ক হ্রাস করা হইয়াছে, সেই হারে বাজারে মূল্য হ্রাস না হইবার বিষয়টি হতাশাজনক। বস্তুত মূল্য বৃদ্ধির সিন্ডিকেট থাকিবার অভিযোগ এই পরিস্থিতিতে স্পষ্ট হইতেছে। এমনকি অন্তর্বর্তী সরকার আসিয়াও সেই সিন্ডিকেটের ভিত্তিমূলে টান দিতে পারে নাই। আমরা দেখিয়াছি, সিন্ডিকেট দমনে উল্লেখযোগ্য আইন হইয়াছে বটে, যেমন ২০১২ সালে প্রতিযোগিতা আইন, ২০১৬ সালে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন গঠন এবং ২০১৮ সালে কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণ আইন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, এই সকল আইন প্রয়োগে যেই বিচারিক ব্যবস্থা দরকার, তাহা অনেক সময়ই কাজ করে না। 
আমরা মনে করি, ইহার জন্য সরকারকে সর্বাগ্রে গুরুত্ব দিতে হইবে উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থায়। শিল্পের কাঁচামাল আমদানির পথ সচল রাখিবার বিকল্প নাই। এতদ্ব্যতীত যেই সকল ব্যবসায়ী সন্দেহভাজন বা পলাতক, তাহারা বাজার অস্থির করিবার পশ্চাতে কলকাঠি নাড়িতেছেন কিনা, উহাও খতাইয়া দেখিতে হইবে। ইহা স্পষ্ট যে, উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করিতে না পারিলে সরকারের অনেক সংস্কার কর্মসূচিই বাধাগ্রস্ত হইবার আশঙ্কা সৃষ্টি হইবে। এমনকি সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতাও সৃষ্টি হইতে পারে, যাহা বর্তমান পরিস্থিতিকে আরও অবনতিশীল করিয়া তুলিতে পারে। দ্রব্যমূল্যের সহিত দেশের অধিকাংশ মানুষের স্বার্থ জড়িত বলিয়া মূল্যস্ফীতি হ্রাসের বিষয়টি সরকারের অগ্রাধিকারে সবসময়ই থাকিতে হইবে। তথায় কোনো ঘাটতি রহিয়াছে কিনা, তাহা সরকারকে দেখিতে হইবে। টিসিবি পণ্য এবং সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির উপকারভোগী বৃদ্ধির জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করাও জরুরি। আন্তর্জাতিক বাজার হইতে টিসিবির মাধ্যমে পর্যাপ্ত পণ্য আমদানি করিয়া উন্মুক্ত পরিসরে বিক্রয়ের পরিকল্পনাও গ্রহণ করা যাইতে পারে।

আরও পড়ুন

×