ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

চট্টগ্রামে রাজস্ব জালিয়াতি

সরিষার ভূত তাড়ান সর্বাগ্রে

সরিষার ভূত তাড়ান সর্বাগ্রে

প্রতীকী ছবি

সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ২৩:৫৩

কাস্টমস কর্মকর্তার গুপ্ত ‘ইউজার আইডি’ ব্যবহার করিয়া চট্টগ্রাম বন্দর হইতে কয়েক সহস্র কোটি টাকার পণ্য খালাসের যেই তথ্য চট্টগ্রাম শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর উদ্ঘাটন করিয়াছে, উহা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। এই সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে সমকাল বৃহস্পতিবার জানাইয়াছে, ২০১৮ হইতে ২০১৯ সালে অবসরপ্রাপ্ত এক শুল্ক কর্মকর্তার আইডি ব্যবহারপূর্বক ৮৫০ কোটি টাকার চার সহস্র চালান খালাস করিয়া লইয়া যায় জালিয়াত চক্র। একই সময়ে বদলি হওয়া অপর সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার আইডি ব্যবহার করিয়া সাড়ে তিন সহস্রাধিকবার সফটওয়্যার ‘অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেম’-এ লগইন করা হয়। শুধু উহাই নহে, জালিয়াত চক্র মূল সার্ভার হইতে উহাদের অপকর্মের সকল চিহ্ন মুছিয়া দিয়াছে। এমনকি জালিয়াতিতে সাত সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠানের সহিত আট কাস্টমস কর্মকর্তার যোগসাজশ খুঁজিয়া পাইবার পরও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) উহাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করে নাই। ফলস্বরূপ, উক্ত জালিয়াতি অদ্যাবধি অব্যাহত রহিয়াছে। প্রতিবেদনমতে, চলমান বৎসরেই অপর কাস্টমস কর্মকর্তার পাসওয়ার্ড ব্যবহারপূর্বক জালিয়াত চক্র খালাস করিয়া লইয়া গিয়াছে সিগারেটের চালান। তিন সহস্র রপ্তানি চালানের মাধ্যমে উক্ত সময়ে সহস্র কোটি টাকা পাচারও করিয়াছে সাইবার অপরাধীরা। 

ইহা বুঝিতে বিশেষজ্ঞ হইবার প্রয়োজন নাই, এহেন জালিয়াতি কেবল উল্লিখিত ঘটনাবলিতেই সীমাবদ্ধ নহে। কারণ একদিকে জালিয়াত চক্র দীর্ঘ সময় ধরিয়া প্রায় বাধাহীন সুযোগ পাইয়াছে, অপরদিকে উক্ত সময়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর উহার সার্ভারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্ছিদ্র করিতে উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করে নাই।
প্রতিবেদনমতে, জালিয়াতির ঘটনা প্রথম জানাজানির পর ২০২২ সালে প্রায় তিনশত কোটি টাকা ব্যয় করিয়া সার্ভারের পাসওয়ার্ড ব্যবস্থায় ওটিপি সমন্বিত নূতন স্তর যুক্ত করা হইলেও বাস্তবে তাহা কাজে আসে নাই। ফলে এমন সন্দেহ অমূলক নহে, চট্টগ্রাম বন্দর হইতে দেশ উক্ত সময়ে অনাদায়ী শুল্ক বাবদ বিপুল পরিমাণ অর্থ হারাইয়াছে। একই সময়ে কত অবৈধ পণ্য যে এই প্রক্রিয়ায় দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করিয়াছে, তাহারও নিশ্চয় ইয়ত্তা নাই। সকলেরই জানা, দেশের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের ৮০ শতাংশেরও অধিক চট্টগ্রাম বন্দর দিয়া সম্পন্ন হয়। যেই কারণে বন্দরটিকে জাতীয় অর্থনীতির লাইফলাইনও বলা হয়। এই দিক বিবেচনায় চট্টগ্রাম বন্দরের কাস্টমস কর্তৃপক্ষের এইরূপ নাজুক সাইবার ব্যবস্থা জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি হুমকি বলিলে অত্যুক্তি হইবে না।
প্রতিবেদন অনুসারে, সর্বশেষ ঘটনাটি প্রকাশ হইবার পর এনবিআর পাসওয়ার্ড সংরক্ষণের নূতন নিয়ম চালু করিয়াছে। সেই নিয়ম অনুযায়ী, এখন হইতে ২১ দিন অন্তর কাস্টমস কর্মকর্তাদের পাসওয়ার্ড স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিবর্তন হইয়া যাইবে। ইহা নিঃসন্দেহে এনবিআরের সার্ভারের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করিবার পথে এক ধাপ অগ্রগতি। তবে খোদ সরিষার অভ্যন্তরেই ভূত থাকিলে সেই সরিষা দিয়া যদ্রূপ ভূত তাড়ানো যায় না, তদ্রূপ ইতোমধ্যে চিহ্নিত আমদানিকারক এবং উহাদের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, তৎসহিত জালিয়াতিতে সহায়তা দানকারী রাজস্ব কর্মকর্তাদের আইনের আওতায় না আনিলে কোনো উদ্যোগই সফল হইবে না।

তবে আশাব্যঞ্জক, কাস্টমস কর্মকর্তার আইডি-পাসওয়ার্ড চুরি করিয়া তাহা ব্যবহারের মাধ্যমে মালপত্র খালাসকার্যে জড়িত চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্তের মহাপরিচালকের নেতৃত্বে একটি এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এক সদস্যের নেতৃত্বে আরেক তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু করিয়াছে। আমাদের প্রত্যাশা, বিগত সময়ের ন্যায় কোনো অদৃশ্য হস্তের ইশারায় এই সকল উদ্যোগ মধ্যপথে থামিয়া যাইবে না। বরং ইহার মাধ্যমে সমস্যাটির চূড়ান্ত সমাধান আসিবে। ইহার সহিত জাতীয় অর্থনীতির প্রাণভ্রমরারূপী দেশের প্রধান রাজস্ব আদায়কারী এই প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত জনবল এবং উপকরণ নিশ্চিত করা হইবে।

আরও পড়ুন

×