ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ড

সাংবাদিকতার জন্য অযাচিত ধূম্রজাল

সাংবাদিকতার জন্য অযাচিত ধূম্রজাল

প্রতীকী ছবি

সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০০:০৯

সচিবালয়ে বুধবার রাত্রিতে অগ্নিকাণ্ডের জের ধরিয়া সাংবাদিকদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড ব্যবহার করিয়া সচিবালয়ে প্রবেশাধিকার বাতিল ঘোষণা সংগত কারণেই নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়াছে। প্রথমত, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার সহিত সাংবাদিকদের প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্রে প্রবেশাধিকারের কী সম্পর্ক– শুক্রবার প্রকাশিত সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞপ্তিতে উহার ব্যাখ্যা নাই। সমালোচনার মুখে শনিবার সরকার এই সিদ্ধান্তকে ‘সাময়িক’ ঘোষণা করিয়া সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কর্তৃক সাংবাদিকদের জন্য প্রতিদিন অস্থায়ী পাস ইস্যুর কথা বলিলেও বাস্তবে যে সাংবাদিকদের জন্য সচিবালয়ে প্রবেশাধিকার কঠিনই থাকিবে– উহা বুঝিতে বিশেষজ্ঞ হইবার প্রয়োজন নাই। দ্বিতীয়ত, যেই প্রক্রিয়ায় সিদ্ধান্ত গৃহীত ও ঘোষিত হইয়াছে, উহাও প্রশ্নবিদ্ধ। সাংবাদিকদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড ইস্যু করিয়া থাকে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন তথ্য অধিদপ্তর; কিন্তু কার্ড বাতিল করিয়াছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এমনকি সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে তথ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টদের সহিত আলোচনাও হয় নাই বলিয়া সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে রবিবার সমকাল জানাইয়াছে। সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশ বারিত করা কী কারণে এতটা জরুরি হইয়া উঠিল যে, তজ্জন্য প্রতিষ্ঠিত নিয়মের ব্যত্যয় ঘটাইতে হইল? 

প্রসংগত, আলোচ্য ঘটনার পূর্বেও অন্তর্বর্তী সরকার গত নভেম্বরে তিন দফায় ১৬৭ জন সাংবাদিকের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করে। তখনও তাহার যৌক্তিক কারণ ব্যাখ্যা করা হয় নাই। ফলে নূতন করিয়া অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিলের ঘটনায় সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীদের মনে এই উদ্বেগ সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক, পূর্বসূরির ন্যায় বর্তমান সরকারও তুচ্ছ কারণে স্বাধীন মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করিতে উৎসাহী। সম্প্রতি প্রকাশিত সাইবার নিরাপত্তা অধ্যাদেশের খসড়া লইয়াও প্রশ্ন উঠিয়াছে। সহযোগী ইংরাজি সংবাদপত্রে বৃহস্পতিবার প্রকাশিত প্রতিবেদন বলা হইয়াছে, যদিও অধ্যাদেশটির ঘোষিত লক্ষ্য তাহার পূর্বসূরি কুখ্যাত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, সাইবার নিরাপত্তা আইন এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের দুর্বলতাসমূহ দূরীকরণ, ইহাতে এমন সকল বিধান রাখা হইয়াছে, যেইগুলি চূড়ান্ত অধ্যাদেশে থাকিলে নাগরিক স্বাধীনতা ও ডিজিটাল অধিকার সম্পর্কে বরং অধিকতর উদ্বেগের কারণ ঘটাইবে। কোনো কোনো অধিকারকর্মী এমনও শঙ্কা প্রকাশ করিয়াছেন, স্বচ্ছতার অভাব, পদ্ধতিগত সুরক্ষার অনুপস্থিতি এবং কর্তৃপক্ষকে প্রদত্ত বিস্তৃত বিশেষ ক্ষমতা অধ্যাদেশকে সুরক্ষার পরিবর্তে অপব্যবহারের একটি সম্ভাব্য হাতিয়ারে পরিণত করিতে পারে। ইহা কার্যকর হইলে, তাহাদের মতে, নাগরিকদের উপর নজরদারি, সেন্সরশিপ এবং রাষ্ট্রীয় খবরদারির ঝুঁকি বৃদ্ধি পাইতে পারে।

স্বীকার্য, কি পয়েন্ট ইনস্টলেশন-কেপিআইরূপে পরিচিত সচিবালয়ের ন্যায় সুরক্ষিত এলাকায় বুধবারের অগ্নিকাণ্ড নজিরবিহীন। এই অগ্নিকাণ্ডে অন্তত আট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আসবাবসহ গুরুত্বপূর্ণ নথি, কম্পিউটার ও ল্যাপটপ ভস্মীভূত। ফলস্বরূপ অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত বহু দায়িত্ব সময়ানুযায়ী সম্পাদন দুরূহ হইয়া উঠিতে পারে। অন্যদিকে, এই অগ্নিকাণ্ডের প্রকৃত কারণ লইয়াও নানা জন নানা কথা বলিতেছেন। স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত এবং দায়ীদের আইনের আওতায় আনয়নের দাবি আমরাও করি। সরকার ইতোমধ্যে উক্ত অগ্নিকাণ্ড তদন্তে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করিয়াছে, যাহার স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিতকরণে সংবাদমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখিতে পারে। অর্থাৎ সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার থাকিলে তদন্তকার্যে বিঘ্ন নহে, বরং স্বচ্ছতা নিশ্চিত হইবে। তৎপরিবর্তে সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ড স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য ধূম্রজাল সৃষ্টি হইবে কেন?

স্মরণে রাখিতে হইবে, সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার এমন সময়ে সীমাবদ্ধ করা হইতেছে যখন খোদ প্রধান উপদেষ্টা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সুরক্ষায় তাঁহার সরকারের অঙ্গীকার একাধিকবার ঘোষণা করিয়াছেন। আমাদের প্রত্যাশা, আলোচ্য সিদ্ধান্তসমূহ সরকার দ্রুত প্রত্যাহার এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার পথ কণ্টকমুক্ত করিবে।

আরও পড়ুন

×