ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ড

উত্তরে পাহাড়

উত্তরে পাহাড়

প্রতীকী ছবি

সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ০৮ জানুয়ারি ২০২৫ | ০১:১৭

গত ২৫ ডিসেম্বর সচিবালয়ে সংঘটিত ভয়ংকর অগ্নিকাণ্ড ঘিরিয়া যেই সকল প্রশ্ন উঠিয়াছিল, দুই সপ্তাহ অতিক্রান্ত হইবার পরও উহার উত্তর না মিলিবার বিষয় হতাশাজনক বটে। অধিকতর হতাশাজনক, প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্রে সংঘটিত নজিরবিহীন এই ঘটনার কারণ উদ্ঘাটনে গঠিত ‘উচ্চ পর্যায়ের’ কমিটি উহার প্রাথমিক প্রতিবেদনে রহস্য উন্মোচনের পরিবর্তে বরং নূতন প্রশ্নের জন্ম দিয়াছে। যেমন, স্পর্শকাতর ভবনটির ষষ্ঠ হইতে নবম তলায় ‘সাদা পাউডার’ কোথা হইতে আসিল– তাহার সদুত্তর উক্ত প্রতিবেদনে নাই। ষষ্ঠ তলার ফটক তালাবদ্ধ থাকিবার পরও কী প্রকারে জলজ্যান্ত সারমেয় প্রবেশ করিয়া দগ্ধীভূত ও অঙ্গার হইল, উহারও উত্তর নাই। বড়দিনের ছুটির দিনে, সমকালের প্রতিবেদনে যদ্রূপ বলা হইয়াছে, অস্থায়ী পাস লইয়া কতিপয় অপরিচিত ব্যক্তি বন্ধ সচিবালয়ে প্রবেশ করিয়া কী করিয়াছিলেন, উহাও স্পষ্ট নহে। 

কেবল প্রশ্ন নহে, পরস্পরিবিরোধী বক্তব্যও যথেষ্ট বিভ্রান্তিকর। অগ্নিকাণ্ডের পরবর্তী দিবসে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা বলিয়াছিলেন, পাঁচ মন্ত্রণালয়ের নথি ভস্মীভূত। অথচ তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশকালে কমিটিপ্রধান বলিলেন, সশরীরে দুইবার ভবনে উঠিয়া প্রতিটি কক্ষ ঘুরিয়া তিনি দেখিয়াছেন, নথি দগ্ধ হয় নাই। এমনকি তদন্ত প্রতিবেদনে অগ্নিকাণ্ডের জন্য বৈদ্যুতিক তারের ‘ঢিলা সংযোগ’সৃষ্ট স্ফুলিঙ্গকে দায়ী করা হইলেও, সচিবালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত গণপূর্ত অধিদপ্তরের ইলেকট্রো মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্টের ভাষ্য– যেই স্থানে বৈদ্যুতিক ত্রুটির কথা বলা হইয়াছে, তথায় ছিল টেলিফোনের তার; যাহা হইতে স্ফুলিঙ্গ সৃষ্টি অসম্ভব। অধিকন্তু, তদন্ত কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী সমকালের নিকট অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাতস্থলে টেলিফোন বক্স থাকিবার কথা স্বীকার, তৎসহিত দাবি করিয়াছেন, ইহার সহিত বৈদ্যুতিক তারের সংযোগও ছিল। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগের অধ্যাপক সাইয়েদ মাহমুদ উল্লা সমকালকে বলিয়াছেন, ছুটির দিন গভীর রজনীতে তারটি কেন সচল ছিল– ইহাও প্রশ্ন বটে। স্পষ্টত, আলোচিত প্রশ্নগুলির উত্তর না মিলিবার পাশাপাশি তদন্ত কমিটির সহিত বিশেষত অগ্নিকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে উল্লিখিত গণপূর্তের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের মতভেদের কারণে তদন্তকার্য পরিচালনায় খোদ কমিটির আন্তরিকতা লইয়া প্রশ্ন তুলিলে তাহা অসংগত হইবে না।

তদন্ত কমিটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন আগামী শুক্রবারের মধ্যে জমা দিবে বলিয়া জানা গিয়াছে। আমরা জানি না, তথায় বিশেষজ্ঞ, তৎসহিত জনপরিসরে সৃষ্ট প্রশ্নগুলির উত্তর থাকিবে কিনা। কিংবা সচিবালয়ের ন্যায় কেপিআইভুক্ত বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার দুর্বলতা সম্পর্কেও আলোকপাত হইবে কিনা। তবে এই কথা নিশ্চিতভাবে বলা যায়, আলোচ্য প্রশ্নগুলির সদুত্তর না মিলিলে একদিকে জনপরিসরে ইতোমধ্যে বিরাজমান নানা ষড়যন্ত্রতত্ত্ব ভিত্তি পাইবে; অন্যদিকে সচিবালয়ের ন্যায় রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও নিশ্ছিদ্র করা যাইবে না। স্মর্তব্য, ২০১৯ সালের এপ্রিলে তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ সচিব সচিবালয়ও অগ্নিঝুঁকির বাহিরে নহে বলিয়া মন্তব্য করিবার পরও প্রতিকার বা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গৃহীত হয় নাই। ইহারই ফলস্বরূপ সচিবালয়ে আলোচ্য অগ্নিকাণ্ডের পূর্বে ৭ জুলাই ও ১ আগস্ট; অন্তত দুইবার অগ্নিকাণ্ড ঘটে। দুর্ভাগ্যবশত সেই সকল অগ্নিকাণ্ডের পরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চৈতন্যোদয় হয় নাই। আলোচ্য তদন্ত প্রতিবেদনও যদি ‘উত্তরে পাহাড়’ হইয়া থাকে, তাহা হইলে ভবিষ্যতে আরও ভয়ংকর অগ্নিকাণ্ডের আশঙ্কা লইয়া অপেক্ষায় থাকিবার বিকল্প কী? আমরা মনে করি, প্রয়োজনে তদন্ত কমিটিতে অধিক বিশেষজ্ঞ অন্তর্ভুক্তির এবং সময় বৃদ্ধি করিয়াও তদন্ত প্রতিবেদনে আলোচ্য অগ্নিকাণ্ডের কারণসহ উত্থাপিত সকল জিজ্ঞাসার উত্তর থাকিতে হইবে। ইহার সহিত সমস্যার বাস্তবসম্মত সমাধান সম্পর্কেও সুপারিশ থাকিবে, যাহার যথাযথ বাস্তবায়ন 
সরকার করিবে।
 

আরও পড়ুন

×