ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

রাইড শেয়ারিং

যাত্রীর ভোগান্তি কমবে কবে

যাত্রীর ভোগান্তি কমবে কবে

ঢাকায় রাইড শেয়ারিং সার্ভিস অনেকের যানবাহনের চিন্তা কমালেও দুর্ভোগ তেমন কমেনি। বিশ্বের উন্নত শহরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রযুক্তিনির্ভর এ সেবা রাজকীয়ভাবে রাজধানীতে শুরু হলেও বলা চলে, অল্প সময়ের মধ

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ১২:০০

ঢাকায় রাইড শেয়ারিং সার্ভিস অনেকের যানবাহনের চিন্তা কমালেও দুর্ভোগ তেমন কমেনি। বিশ্বের উন্নত শহরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রযুক্তিনির্ভর এ সেবা রাজকীয়ভাবে রাজধানীতে শুরু হলেও বলা চলে, অল্প সময়ের মধ্যেই এর মধুচন্দ্রিমা শেষ। আমরা দেখছি, দিন যত গড়াচ্ছে, এ সার্ভিস নিয়ে অভিযোগ তত বাড়ছে। নতুন ভোগান্তি 'উবার' শীর্ষক বুধবার প্রকাশিত সমকালের শীর্ষ প্রতিবেদনে প্রকাশ, রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলো কোনো নিয়ম-নীতি ছাড়া যখন-তখন ভাড়া বাড়িয়ে দেয়; সকালে মানুষের অফিসের সময় কিংবা বিকেলে অফিস থেকে ফেরার মুহূর্তে ভাড়া স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হয়ে যায়। এমনকি সমকালের প্রতিবেদন অনুসারে বৃষ্টি হলেই 'বাড়তি চাহিদার কারণে ভাড়া একটু বেশি' নোটিশ দিয়ে ভাড়া হয়ে যায় আকাশচুম্বী। বলা বাহুল্য, নাগরিকের যানবাহন যখন বেশি জরুরি, তখনই সেবার নামে রাইড শেয়ারিং সার্ভিসগুলোর এ ধরনের আচরণ অনেকটা যাত্রীদের জিম্মি করার মতো। বস্তুত ভাড়ার বাইরেও সমস্যা রয়েছে বহুবিধ; চালকরা ভাড়া কম পাবেন বলে স্বল্প দূরত্বে যেতে চান না।

স্মার্টফোনে বিশেষ অ্যাপে পরিচালিত এ সার্ভিসগুলোতে চালকদের গন্তব্য জানার সুযোগ না থাকলেও ফোন করে গন্তব্য জেনে অনেক ক্ষেত্রেই চালকরা অপারগতা প্রকাশ করেন। এমনকি চালকরা অস্বীকৃতি জানানোর পর যাত্রীদেরই কল কাটতে বাধ্য করছেন। ফলে তাদের জরিমানার শিকার হতে হচ্ছে। জরিমানার টাকা দিতে গিয়েও অ্যাপের জটিল নির্দেশনা অনুসরণের ক্ষেত্রে সমস্যার মুখে পড়ছেন যাত্রীরা। রাইড শেয়ারিং মোটরসাইকেল চালকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, যাত্রীকে না নিয়েই রাইড শুরু করেন অনেক চালক। এ সময় চুক্তিতে অন্য যাত্রীকে পরিবহন করেন তারা। এতে রাইড চালু করায় সংশ্নিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও চুক্তিতে যাওয়া যাত্রী- উভয়ের কাছ থেকেই টাকা পান চালকরা। কিন্তু যে যাত্রী অ্যাপের মাধ্যমে গাড়ি কিংবা মোটরসাইকেল ডাকেন, তাকে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। অ্যাপে নির্ধারিত ভাড়া থাকলেও রাতে কিংবা বিশেষ সময়ে যাত্রী থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগও কম নয়।

আমরা জানি, রাজধানীতে অধিক জনসংখ্যা এবং অপ্রতুল গণপরিবহনে রাইড শেয়ারিং যাত্রীদের স্বস্তি কিংবা সিএনজি-ট্যাক্সিক্যাবের জিম্মিদশা থেকে নগরবাসীকে কিছুটা মুক্তি দিলেও কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। দিন দিন রাইড শেয়ারিং সার্ভিসে মানুষের নির্ভরতা বাড়লেও সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সেবার মান বাড়েনি। করোনার আগের তথ্য বলছে, ঢাকায় প্রতি মিনিটে ২০৫ জন উবারের অ্যাপ ব্যবহার করেন। তার মানে অনেকেই এ সেবায় নির্ভরশীল হয়ে ওঠেন। তারপরও সেবা নিয়ে কেন এত অভিযোগ? আমরা মনে করি, এতে সেবা সংস্থাগুলোর দায় যেমন রয়েছে, তেমনি চালকদের দায়ও কম নয়। অস্বীকার করা যাবে না, রাইড শেয়ারিং সার্ভিস অনেকেরই কর্মসংস্থানে ভূমিকা রাখছে। কিন্তু ক্রমবিকাশমান এ খাতটি যথার্থ সেবা দিতে না পারলে মানুষের আস্থা যেমন হারাবে, তেমনি ভালো বিকল্প হয়ে উঠতে সক্ষম হবে না।

এ ক্ষেত্রে সংশ্নিষ্ট সবার দায় ও দায়িত্ব রয়েছে। সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ও চালক উভয়কে যাত্রীর স্বার্থ সর্বাগ্রে দেখতে হবে। একই সঙ্গে সরকারের নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকেও মনিটরিং জরুরি। চালকের যথাযথ দক্ষতাসহ যাত্রীদের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে করণীয় বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ। নানা অজুহাতে কোম্পানিগুলো যেভাবে ভাড়া বাড়িয়ে দিচ্ছে, এ অপচর্চা বন্ধ করা যাত্রীর স্বার্থেই জরুরি। যাত্রী যেন সহজে যে কোনো অভিযোগ জানাতে পারেন, তেমন ব্যবস্থা রাখা এবং কোনো অভিযোগ এলে তা আন্তরিকতার সঙ্গে খতিয়ে দেখার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা চাই। ঢাকা শহরে 'রাইড শেয়ারিং সার্ভিস' যেন বিকল্প 'ট্যাক্সি' সার্ভিসে পরিণত না হয়। তবে সর্বাগ্রে ভাড়ার বিষয়টির সমাধান করতে হবে। আমাদের মনে আছে, সরকার অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে ট্যাক্সিক্যাব নামিয়েছিল। অবশেষে ভাড়া জটিলতার কারণে সার্ভিসটি মুখ থুবড়ে পড়ে। রাইড শেয়ারিংয়েও ভাড়া নৈরাজ্য কারও জন্য কল্যাণকর হবে না। এতে পরিবহন খাত আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে। ভাড়া নিয়ন্ত্রণেও সরকারের তদারকি জোরদারের বিকল্প নেই।

আরও পড়ুন

×