উন্নয়ন
চট্টগ্রাম মহানগরীর 'মৃত্যুকূপ'

ড. মুহাম্মদ ইদ্রিস আলী
প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ১২:০০
জলাবদ্ধতা ও জলমগ্নতার মহানগরী এখন অরক্ষিত নালা-নর্দমার মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। এযাবৎকালের সব উন্নয়ন, আশ্বাস ও বিশ্বাসের এক এক করে মৃত্যু হচ্ছে। আশা, আশ্বাস, বিশ্বাস কোনোকিছুরই আর মূল্য থাকছে না। আমরা মানবীয় মূল্যবোধগুলো ব্যবসার উপাদানে পরিণত করছি। মানুষের প্রয়োজনীয় বসবাসের উপকরণগুলোকে, চলাচলের নাগরিক বা মৌলিক ব্যবস্থাগুলোকে ব্যবসায়ে পরিণত করছি। পাহাড়ধস বা জলাবদ্ধতার কারণে চট্টগ্রাম এখন মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। প্রচলিত সংকটগুলো নিয়ে চট্টগ্রামের মানুষ বিব্রত, বিভ্রান্ত, বিপদ ও আপদগ্রস্ত। প্রতিবছর বর্ষার আগে-পরে পাহাড় ধসে মৃত্যুর আহাজারি, জলাবদ্ধতার বিপর্যয়, সম্পদের হানি, স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের জলবিপন্নতা নগরবাসীকে বিপদগ্রস্ত করে তোলে। মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত থাকে। প্রশাসকদের আশ্বাসে বিশ্বাস করে মানুষ বুক বাঁধে। হতাশ হয়। একবার নয়, বারবার।
কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো, ৭০ লাখ মানুষের এই নান্দনিক মহানগরী এখন উন্নয়নের নামে অপপরিকল্পনা এবং সমন্বয়হীনতায় মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। একশ্রেণির পরিকল্পনাকারীদের লোভ ও লাভের উপাদানে পরিণত হয়েছে। চট্টগ্রামের খাল-নালাগুলো অপরিকল্পিত, অরক্ষিত ও একেকটি মৃত্যুকূপ। এগুলো নিয়মিতভাবে অনিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় খোঁড়াখুঁড়ির শিকার। এ পর্যন্ত নালায় পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে অন্তত ছয়জনের প্রাণহানি ঘটেছে। নালায় পড়ে, ড্রেনে পড়ে, খালে পড়ে এই শহরে মানুষ মরছে। চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষ দারুণভাবে মর্মাহত। নগরীতে ত্রস্ত-শঙ্কিত জীবনযাপন করছেন নাগরিকরা। উষ্ণায়নের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে ঋতুগুলোতে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। ঋতুর বিভ্রান্তিকে মানুষ জীবনযাত্রার অভিযোজন দিয়ে খাপ খাইয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।
হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন চট্টগ্রামের মানুষকে আনন্দিত করেছিল। মানুষের মননে উন্নয়নের বিপর্যয়কে প্রশান্তিতে গ্রহণ করতে কষ্ট হয়নি। সেই আনন্দে এখন ভাটা পড়েছে। কারণ, পরিকল্পনায় চরম সমন্বয়হীনতা। একজনের দোষ আরেকজনের ঘাড়ে চাপানো হচ্ছে। ফ্লাইওভার হচ্ছে চট্টগ্রামে। ফ্লাইওভার করতে গিয়ে রাস্তার দুই পাশে চাপ সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তায় অনাকাঙ্ক্ষিত সংকোচন সৃষ্টি হয়েছে। নগরবাসীর যাতায়াতে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। সমস্যার মূলে পরিকল্পনাকারী কিংবা প্রশাসকদের কোনো দৃষ্টি নেই। চট্টগ্রাম শহরে মানুষের সংখ্যা আগের চেয়ে বেড়েছে। ফুটপাতগুলো অরক্ষিত। ঢাকনামুক্ত। রাতে আলোবিহীন। বিপদসংকুল, বিচ্ছিন্ন এবং বিপদাপন্ন। এই শহরে উন্নয়ন হচ্ছে মানুষের জীবনকে, জীবনযাত্রাকে, জীবনের প্রাত্যাহিক প্রয়োজনীয়তা জীবনের অনিবার্য কর্মগুলো গুরুত্ব না দিয়ে। এসব অদূরদর্শিতার মূল্য দিতে হচ্ছে বিভিন্ন মানুষকে, নগরবাসীকে। উন্নয়ন প্রয়োজন, কিন্তু এভাবে নয়। ৭০ লাখ মানুষের এই শহরে নালা-নর্দমা অরক্ষিত থাকলে বিপদ প্রতি পদে পদেই পা জড়িয়ে থাকে।
২৭ সেপ্টেম্বর রাতে মামার সঙ্গে চশমা কিনে বাসায় ফেরার পথে ড্রেনে পড়ে নিখোঁজ হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ বছরের কিশোরী সেহেরির মাহবুব সাদিয়া। আগ্রাবাদ মাজার গেট ও আগ্রাবাদ মোড়ের মাঝামাঝি এলাকায় ডায়মন্ড রেস্টুরেন্টের বিপরীত পাশের অন্ধকার ফুটপাতের ড্রেনে পা পিছলে পড়ে যায় সাদিয়া। ফায়ার সার্ভিসের তথ্যমতে, আবর্জনায় ভরা ১৫ ফুট গভীরের নালায়। পাঁচ টন আবর্জনা সরিয়ে পাঁচ ঘণ্টা পর রাত ৩টার দিকে নালার আবর্জনার নিচে পড়ে থাকা সাদিয়ার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। মর্মান্তিক এ ঘটনায় কিশোরী সাদিয়ার অকাল মৃত্যুর দায় কার? চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এ দায় নেয়নি। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষও তাদের দায় অস্বীকার করেছে।
এক মাস আগে ২৫ আগস্ট ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাওয়ার পথে নগরীর মুরাদপুর এলাকায় চশমা খালে পড়ে পানির স্রোতে তলিয়ে যায় সবজি ব্যবসায়ী ৫৫ বছর বয়সী ছালেহ আহমদ। বর্জ্যে ভরা এ খালে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা কয়েকদিন প্রচেষ্টা চালিয়েও মৃতদেহের সন্ধান পায়নি। দায় কার? ৩০ জুন ষোলশহর চশমা হিল এলাকায় অটোরকশা থেকে পড়ে গিয়ে চালক এবং যাত্রী করুণভাবে মৃত্যুবরণ করেন। খালপাড় ছিল অরক্ষিত। আরও পেছনে তাকালে আমরা দেখতে পাই, ২০১৮ সালে আমিন জুট মিলের কাছে জুন মাসের ৯ তারিখে ড্রেনে পড়ে গিয়ে একজন শিশু মৃত্যুবরণ করে। এভাবে খোলা ড্রেনে পড়ে গিয়ে এর আগেও মানুষ মরেছে এই নগরীতে। দায় কেউ নিল না। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন বলল, সিডিএ দায়ী। সিডিএ বলল, সিটি করপোরেশন দায়ী। এই যে আমাদের ব্যক্তিক, মানবিক, নৈতিক, প্রাতিষ্ঠানিক বোধ, মানুষ হিসেবে আমাদের অবস্থানটা কোন স্তরে গেল? মানবিক মূল্যবোধ, প্রশাসনিক দায়িত্ববোধ, সামাজিক দায়বোধ। তার কী হলো? আমরা কতটুকু মানুষ কিংবা প্রশাসক থাকলাম? এরকম মানুষের সঙ্গে নির্বোধ পশুর দূরত্ব কতটুকু? আমরা ঢাকঢোল পিটিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করি। অভিষিক্ত হই। আড়ম্বরের বিড়ম্বনায় পরিবেশ-প্রতিবেশকে আবেগে-আবহে ভাসিয়ে দিই। দায়িত্বের সঙ্গে চলতে না পেরে আস্তে আস্তে যান্ত্রিক মানুষ হয়ে যাই। প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তি হয়ে যাই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশে অনেক স্বপ্ন সঙ্গে নিয়ে পথ চলছে। স্বপ্টেম্নর জয় করা উন্নয়নের পথে বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু সভ্য দুনিয়ার বর্বরতাকে, অসভ্য দুনিয়ার নিকৃষ্টতাকে, বর্বর যুগের ঘটনাগুলোকে আমরা যখন জীবন দিয়ে চর্চা করি, তখন আমরা কী হয়ে যাই?
কোথায় এর সমাধান? এই প্রাণগুলো প্রস্টম্ফুটিত হওয়ার আগেই ঝরে যাচ্ছে। আমরা নির্লিপ্ত থাকছি। আমাদের মানবিকতায়, মননশীলতায়, বিশ্বাসে, নিঃশ্বাসে এর কোনো প্রভাব পড়ে না? চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা, পাহাড়ধস, পাহাড় কেটে নালা-নর্দমা দখল, ময়লা-আবর্জনায় ভরাট রেখে আমরা উন্নয়ন বিলাস করছি। জনদুর্ভোগ নিয়ে ব্যবসা করছি। নির্লিপ্ত থাকছি। মানুষের জীবন বিসর্জনকে, জীবন অকালে হারিয়ে যাওয়াকে এখন সাধারণ ঘটনায় রূপান্তরিত করে চলেছি। এভাবে চলতে পারে না। চলতে দেওয়া যায় না। কারণ, আমরা মানুষ থাকতে চাই আজ এবং আগামী প্রজন্মের জন্য। এরকম একটি ব্যস্ত নগরীতে নালায় ঢাকনা থাকবে না, রাতের চলাচলে বিপজ্জনক জায়গাতেও আলো থাকবে না, নর্দমা মৃত্যুকূপ হয়ে থাকবে- তা তো হতে পারে না। মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি থাকতে হবে। যারা চট্টগ্রাম মহানগরীর উন্নয়নের দায়িত্বে নিয়োজিত, তাদের দূরদর্শী, দেশপ্রেমিক হতে হবে। পেশাদার হতে হবে। রাজনীতির ক্ষেত্রে কিংবা সামাজিক ক্ষেত্রে তাদের মননশীলতা, জবাবদিহিতা কিংবা দায়বদ্ধতা থাকতে হবে। আমরা ভবিষ্যতে আর কোনো সাদিয়া, আবু সালের অপমৃত্যু চাই না। আমাদের ভাবনা, চিন্তা, কর্ম জনগণের জন্য, নাগরিক নিরাপত্তার জন্য, পরিবেশ-প্রতিবেশকে সুরক্ষিত রাখার জন্যই হওয়া উচিত।
মুক্তিযোদ্ধা, অধ্যাপক ও কর্ণফুলী গবেষক
কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো, ৭০ লাখ মানুষের এই নান্দনিক মহানগরী এখন উন্নয়নের নামে অপপরিকল্পনা এবং সমন্বয়হীনতায় মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। একশ্রেণির পরিকল্পনাকারীদের লোভ ও লাভের উপাদানে পরিণত হয়েছে। চট্টগ্রামের খাল-নালাগুলো অপরিকল্পিত, অরক্ষিত ও একেকটি মৃত্যুকূপ। এগুলো নিয়মিতভাবে অনিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় খোঁড়াখুঁড়ির শিকার। এ পর্যন্ত নালায় পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে অন্তত ছয়জনের প্রাণহানি ঘটেছে। নালায় পড়ে, ড্রেনে পড়ে, খালে পড়ে এই শহরে মানুষ মরছে। চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষ দারুণভাবে মর্মাহত। নগরীতে ত্রস্ত-শঙ্কিত জীবনযাপন করছেন নাগরিকরা। উষ্ণায়নের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে ঋতুগুলোতে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। ঋতুর বিভ্রান্তিকে মানুষ জীবনযাত্রার অভিযোজন দিয়ে খাপ খাইয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।
হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন চট্টগ্রামের মানুষকে আনন্দিত করেছিল। মানুষের মননে উন্নয়নের বিপর্যয়কে প্রশান্তিতে গ্রহণ করতে কষ্ট হয়নি। সেই আনন্দে এখন ভাটা পড়েছে। কারণ, পরিকল্পনায় চরম সমন্বয়হীনতা। একজনের দোষ আরেকজনের ঘাড়ে চাপানো হচ্ছে। ফ্লাইওভার হচ্ছে চট্টগ্রামে। ফ্লাইওভার করতে গিয়ে রাস্তার দুই পাশে চাপ সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তায় অনাকাঙ্ক্ষিত সংকোচন সৃষ্টি হয়েছে। নগরবাসীর যাতায়াতে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। সমস্যার মূলে পরিকল্পনাকারী কিংবা প্রশাসকদের কোনো দৃষ্টি নেই। চট্টগ্রাম শহরে মানুষের সংখ্যা আগের চেয়ে বেড়েছে। ফুটপাতগুলো অরক্ষিত। ঢাকনামুক্ত। রাতে আলোবিহীন। বিপদসংকুল, বিচ্ছিন্ন এবং বিপদাপন্ন। এই শহরে উন্নয়ন হচ্ছে মানুষের জীবনকে, জীবনযাত্রাকে, জীবনের প্রাত্যাহিক প্রয়োজনীয়তা জীবনের অনিবার্য কর্মগুলো গুরুত্ব না দিয়ে। এসব অদূরদর্শিতার মূল্য দিতে হচ্ছে বিভিন্ন মানুষকে, নগরবাসীকে। উন্নয়ন প্রয়োজন, কিন্তু এভাবে নয়। ৭০ লাখ মানুষের এই শহরে নালা-নর্দমা অরক্ষিত থাকলে বিপদ প্রতি পদে পদেই পা জড়িয়ে থাকে।
২৭ সেপ্টেম্বর রাতে মামার সঙ্গে চশমা কিনে বাসায় ফেরার পথে ড্রেনে পড়ে নিখোঁজ হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ বছরের কিশোরী সেহেরির মাহবুব সাদিয়া। আগ্রাবাদ মাজার গেট ও আগ্রাবাদ মোড়ের মাঝামাঝি এলাকায় ডায়মন্ড রেস্টুরেন্টের বিপরীত পাশের অন্ধকার ফুটপাতের ড্রেনে পা পিছলে পড়ে যায় সাদিয়া। ফায়ার সার্ভিসের তথ্যমতে, আবর্জনায় ভরা ১৫ ফুট গভীরের নালায়। পাঁচ টন আবর্জনা সরিয়ে পাঁচ ঘণ্টা পর রাত ৩টার দিকে নালার আবর্জনার নিচে পড়ে থাকা সাদিয়ার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। মর্মান্তিক এ ঘটনায় কিশোরী সাদিয়ার অকাল মৃত্যুর দায় কার? চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এ দায় নেয়নি। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষও তাদের দায় অস্বীকার করেছে।
এক মাস আগে ২৫ আগস্ট ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাওয়ার পথে নগরীর মুরাদপুর এলাকায় চশমা খালে পড়ে পানির স্রোতে তলিয়ে যায় সবজি ব্যবসায়ী ৫৫ বছর বয়সী ছালেহ আহমদ। বর্জ্যে ভরা এ খালে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা কয়েকদিন প্রচেষ্টা চালিয়েও মৃতদেহের সন্ধান পায়নি। দায় কার? ৩০ জুন ষোলশহর চশমা হিল এলাকায় অটোরকশা থেকে পড়ে গিয়ে চালক এবং যাত্রী করুণভাবে মৃত্যুবরণ করেন। খালপাড় ছিল অরক্ষিত। আরও পেছনে তাকালে আমরা দেখতে পাই, ২০১৮ সালে আমিন জুট মিলের কাছে জুন মাসের ৯ তারিখে ড্রেনে পড়ে গিয়ে একজন শিশু মৃত্যুবরণ করে। এভাবে খোলা ড্রেনে পড়ে গিয়ে এর আগেও মানুষ মরেছে এই নগরীতে। দায় কেউ নিল না। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন বলল, সিডিএ দায়ী। সিডিএ বলল, সিটি করপোরেশন দায়ী। এই যে আমাদের ব্যক্তিক, মানবিক, নৈতিক, প্রাতিষ্ঠানিক বোধ, মানুষ হিসেবে আমাদের অবস্থানটা কোন স্তরে গেল? মানবিক মূল্যবোধ, প্রশাসনিক দায়িত্ববোধ, সামাজিক দায়বোধ। তার কী হলো? আমরা কতটুকু মানুষ কিংবা প্রশাসক থাকলাম? এরকম মানুষের সঙ্গে নির্বোধ পশুর দূরত্ব কতটুকু? আমরা ঢাকঢোল পিটিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করি। অভিষিক্ত হই। আড়ম্বরের বিড়ম্বনায় পরিবেশ-প্রতিবেশকে আবেগে-আবহে ভাসিয়ে দিই। দায়িত্বের সঙ্গে চলতে না পেরে আস্তে আস্তে যান্ত্রিক মানুষ হয়ে যাই। প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তি হয়ে যাই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশে অনেক স্বপ্ন সঙ্গে নিয়ে পথ চলছে। স্বপ্টেম্নর জয় করা উন্নয়নের পথে বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু সভ্য দুনিয়ার বর্বরতাকে, অসভ্য দুনিয়ার নিকৃষ্টতাকে, বর্বর যুগের ঘটনাগুলোকে আমরা যখন জীবন দিয়ে চর্চা করি, তখন আমরা কী হয়ে যাই?
কোথায় এর সমাধান? এই প্রাণগুলো প্রস্টম্ফুটিত হওয়ার আগেই ঝরে যাচ্ছে। আমরা নির্লিপ্ত থাকছি। আমাদের মানবিকতায়, মননশীলতায়, বিশ্বাসে, নিঃশ্বাসে এর কোনো প্রভাব পড়ে না? চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা, পাহাড়ধস, পাহাড় কেটে নালা-নর্দমা দখল, ময়লা-আবর্জনায় ভরাট রেখে আমরা উন্নয়ন বিলাস করছি। জনদুর্ভোগ নিয়ে ব্যবসা করছি। নির্লিপ্ত থাকছি। মানুষের জীবন বিসর্জনকে, জীবন অকালে হারিয়ে যাওয়াকে এখন সাধারণ ঘটনায় রূপান্তরিত করে চলেছি। এভাবে চলতে পারে না। চলতে দেওয়া যায় না। কারণ, আমরা মানুষ থাকতে চাই আজ এবং আগামী প্রজন্মের জন্য। এরকম একটি ব্যস্ত নগরীতে নালায় ঢাকনা থাকবে না, রাতের চলাচলে বিপজ্জনক জায়গাতেও আলো থাকবে না, নর্দমা মৃত্যুকূপ হয়ে থাকবে- তা তো হতে পারে না। মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি থাকতে হবে। যারা চট্টগ্রাম মহানগরীর উন্নয়নের দায়িত্বে নিয়োজিত, তাদের দূরদর্শী, দেশপ্রেমিক হতে হবে। পেশাদার হতে হবে। রাজনীতির ক্ষেত্রে কিংবা সামাজিক ক্ষেত্রে তাদের মননশীলতা, জবাবদিহিতা কিংবা দায়বদ্ধতা থাকতে হবে। আমরা ভবিষ্যতে আর কোনো সাদিয়া, আবু সালের অপমৃত্যু চাই না। আমাদের ভাবনা, চিন্তা, কর্ম জনগণের জন্য, নাগরিক নিরাপত্তার জন্য, পরিবেশ-প্রতিবেশকে সুরক্ষিত রাখার জন্যই হওয়া উচিত।
মুক্তিযোদ্ধা, অধ্যাপক ও কর্ণফুলী গবেষক
- বিষয় :
- উন্নয়ন
- ড. মুহাম্মদ ইদ্রিস আলী