জন্মসনদ নীরবে বাতিল
অবিমৃষ্যকারী সিদ্ধান্তের দায় অনেকের

সেনাসদস্য সাইফুল ইসলাম সাইফ। ছবি-সংগৃহীত
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ১২:০০
নাগরিক হিসেবে জন্মসনদ নানা কাজে জরুরি হলেও গত প্রায় দুই দশকে এ সনদ গ্রহণ ও নিবন্ধনের একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা তৈরি হয়নি। ক'দিন পরপর প্রশাসনের সিদ্ধান্ত বদলের কারণে মানুষ বিড়ম্বনায় পড়ছে। এবার আমরা দেখছি আরেক তুঘলকি কাণ্ড। বৃহস্পতিবার সমকালের শীর্ষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'সাত কোটি জন্মসনদ নীরবে বাতিল'। গত বছর সংশোধিত জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন আইন প্রণয়নের পর নতুন সার্ভার চালু করায় ২০১২ সালের আগের জন্ম নিবন্ধনকারীদের তথ্য অন্তর্ভুক্ত না করায় সেগুলো বাতিল হয়ে যায়। নিবন্ধনকারীদের না জানিয়েই প্রশাসন যেভাবে ইচ্ছামতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে; আমরা মনে করি, তা খামখেয়ালিপনা ছাড়া আর কিছু নয়। তা ছাড়া আগের তথ্য হারিয়ে ফেলা কিংবা সার্ভার নষ্টের যে অভিযোগ উঠেছে; এমনটা ঘটে থাকলে সেখানে প্রশাসনের দায়িত্বহীনতাই স্পষ্ট।
আমরা জানি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুদের ভর্তি করাতে বয়সের প্রমাণ, বিয়ের নিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্টসহ ১৮ ধরনের সেবা পেতে জন্মসনদ বাধ্যতামূলক। ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের কভিড-১৯ এর টিকা কার্যক্রমেও জন্মসনদের প্রয়োজন পড়েছে। বস্তুত ১৮ বছর কিংবা তদূর্ধ্ব নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে বলে জরুরি সেবা পেতে তাদের সমস্যা হয় না। কিন্তু তার কম বয়সী নাগরিকদের জন্য জন্মসনদই ভরসা। আপাত দৃষ্টিতে দেখা যাচ্ছে, সার্ভার জটিলতার কারণে সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। সমকালের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১১ সালের শেষদিকে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের নতুন ওয়েবসাইট ও সার্ভার চালু করা হয়। ২০১২ সাল থেকে তা পরিপূর্ণভাবে কাজ শুরু করে। ওই সময় গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পুরোনো নিবন্ধিতদের জন্ম নিবন্ধন সনদ নতুন ওয়েবসাইটে যুক্ত করে নেওয়ার কথা বলা হলেও অল্পকিছু মানুষ সেটা করেছিলেন। যারা করেননি তাদের জন্ম নিবন্ধন সনদ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে গেছে। প্রশ্ন হলো, যারা একবার নিবন্ধন করবেন, সেটা বাতিল করা হবে কেন?
সরকার ২০০৪ সালে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন আইন করে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠী-লিঙ্গ নির্বিশেষে জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে নিবন্ধনের নির্দেশনা দেয়। প্রথমে অ্যানালগ পদ্ধতিতে হাতের লেখা জন্মসনদ থাকলেও ২০০৬ সালে তা অনলাইন করা হয়। শুরু থেকেই জন্ম নিবন্ধন যথাযথভাবে না করায় কেউ একাধিকবার নিবন্ধন করেছেন। আবার অনেকের মৃত্যুর পরও তা বাতিল করা হয়নি। সমকালের প্রতিবেদন অনুসারে, জন্ম নিবন্ধন ১৮ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। অথচ সংশ্নিষ্টরা বলছেন, প্রকৃতপক্ষে দেশের মাত্র ৩০ শতাংশ মানুষ জন্ম নিবন্ধনের আওতায় এসেছে। আমরা মনে করি, বাস্তবতা ও নিবন্ধনের সংখ্যার মধ্যে যে ফারাক রয়ে গেছে, সেখানে অবশ্যই নজর দিতে হবে। তাই বলে ২০১২ সালের আগের নিবন্ধনকারীদের তথ্য বাতিল করা হবে কেন? কারও একাধিক জন্মসনদ থাকলে সেটি যাচাই-বাছাই করে কেবল অতিরিক্ত সনদ বাতিল হতে পারে। এমন অবিমৃষ্যকারী সিদ্ধান্তের ফলে অনেকেই বিড়ম্বনায় পড়েছেন।
বলাবাহুল্য, দেশে জন্ম নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ নয়। বর্তমান নিয়ম অনুসারে সন্তানের জন্ম নিবন্ধন করতে মা-বাবার অনলাইন জন্ম নিবন্ধনের শর্ত জুড়ে দেওয়ায় জন্মসনদ পাওয়া বেশ কঠিন। ২০১২ সালের আগের জন্মসনদ বাতিল হলে স্বাভাবিকভাবেই অনেক মা-বাবার জন্মসনদ থাকার কথা নয়। যদিও নিয়ম যত কঠিনই হোক, বাস্তবে দালালদের মাধ্যমে অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে সহজেই জন্মসনদ মিলছে। ফলে অভিযোগ উঠছে, মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলে ফায়দা লোটার জন্যই জন্মসনদ বাতিল করা হয়েছে। সেই সুযোগে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ে একটি অসাধু চক্র গড়ে উঠেছে, যাদের অর্থ দিলেই পুরোনো নিবন্ধন ওয়েবসাইটে অন্তর্ভুক্ত করছেন। এমনকি সনদের ভুলভ্রান্তিও সংশোধন করে দিচ্ছেন।
আমরা চাই, জন্ম নিবন্ধনের পুরো বিষয়টি তদন্তে একটি নিরপেক্ষ কমিটি গঠন করা হোক। জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের ক্ষেত্রে সমস্যা চিহ্নিত করে এর সমাধানের পথও বের করা জরুরি। যাদের জন্মসনদ বাতিল করা হয়েছে, পুনরায় আবেদন করার মাধ্যমে সহজে এবং স্বল্প সময়ে তাদের জন্মসনদ পাওয়ার সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন। সর্বোপরি, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন ঘিরে যে চক্র গড়ে উঠেছে; তার মূলোৎপাটন করে একটি সহজসাধ্য, গতিশীল ও স্মার্ট জন্ম নিবন্ধন ব্যবস্থা গড়ে তোলা দরকার।
আমরা জানি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুদের ভর্তি করাতে বয়সের প্রমাণ, বিয়ের নিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্টসহ ১৮ ধরনের সেবা পেতে জন্মসনদ বাধ্যতামূলক। ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের কভিড-১৯ এর টিকা কার্যক্রমেও জন্মসনদের প্রয়োজন পড়েছে। বস্তুত ১৮ বছর কিংবা তদূর্ধ্ব নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে বলে জরুরি সেবা পেতে তাদের সমস্যা হয় না। কিন্তু তার কম বয়সী নাগরিকদের জন্য জন্মসনদই ভরসা। আপাত দৃষ্টিতে দেখা যাচ্ছে, সার্ভার জটিলতার কারণে সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। সমকালের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১১ সালের শেষদিকে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের নতুন ওয়েবসাইট ও সার্ভার চালু করা হয়। ২০১২ সাল থেকে তা পরিপূর্ণভাবে কাজ শুরু করে। ওই সময় গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পুরোনো নিবন্ধিতদের জন্ম নিবন্ধন সনদ নতুন ওয়েবসাইটে যুক্ত করে নেওয়ার কথা বলা হলেও অল্পকিছু মানুষ সেটা করেছিলেন। যারা করেননি তাদের জন্ম নিবন্ধন সনদ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে গেছে। প্রশ্ন হলো, যারা একবার নিবন্ধন করবেন, সেটা বাতিল করা হবে কেন?
সরকার ২০০৪ সালে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন আইন করে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠী-লিঙ্গ নির্বিশেষে জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে নিবন্ধনের নির্দেশনা দেয়। প্রথমে অ্যানালগ পদ্ধতিতে হাতের লেখা জন্মসনদ থাকলেও ২০০৬ সালে তা অনলাইন করা হয়। শুরু থেকেই জন্ম নিবন্ধন যথাযথভাবে না করায় কেউ একাধিকবার নিবন্ধন করেছেন। আবার অনেকের মৃত্যুর পরও তা বাতিল করা হয়নি। সমকালের প্রতিবেদন অনুসারে, জন্ম নিবন্ধন ১৮ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। অথচ সংশ্নিষ্টরা বলছেন, প্রকৃতপক্ষে দেশের মাত্র ৩০ শতাংশ মানুষ জন্ম নিবন্ধনের আওতায় এসেছে। আমরা মনে করি, বাস্তবতা ও নিবন্ধনের সংখ্যার মধ্যে যে ফারাক রয়ে গেছে, সেখানে অবশ্যই নজর দিতে হবে। তাই বলে ২০১২ সালের আগের নিবন্ধনকারীদের তথ্য বাতিল করা হবে কেন? কারও একাধিক জন্মসনদ থাকলে সেটি যাচাই-বাছাই করে কেবল অতিরিক্ত সনদ বাতিল হতে পারে। এমন অবিমৃষ্যকারী সিদ্ধান্তের ফলে অনেকেই বিড়ম্বনায় পড়েছেন।
বলাবাহুল্য, দেশে জন্ম নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ নয়। বর্তমান নিয়ম অনুসারে সন্তানের জন্ম নিবন্ধন করতে মা-বাবার অনলাইন জন্ম নিবন্ধনের শর্ত জুড়ে দেওয়ায় জন্মসনদ পাওয়া বেশ কঠিন। ২০১২ সালের আগের জন্মসনদ বাতিল হলে স্বাভাবিকভাবেই অনেক মা-বাবার জন্মসনদ থাকার কথা নয়। যদিও নিয়ম যত কঠিনই হোক, বাস্তবে দালালদের মাধ্যমে অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে সহজেই জন্মসনদ মিলছে। ফলে অভিযোগ উঠছে, মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলে ফায়দা লোটার জন্যই জন্মসনদ বাতিল করা হয়েছে। সেই সুযোগে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ে একটি অসাধু চক্র গড়ে উঠেছে, যাদের অর্থ দিলেই পুরোনো নিবন্ধন ওয়েবসাইটে অন্তর্ভুক্ত করছেন। এমনকি সনদের ভুলভ্রান্তিও সংশোধন করে দিচ্ছেন।
আমরা চাই, জন্ম নিবন্ধনের পুরো বিষয়টি তদন্তে একটি নিরপেক্ষ কমিটি গঠন করা হোক। জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের ক্ষেত্রে সমস্যা চিহ্নিত করে এর সমাধানের পথও বের করা জরুরি। যাদের জন্মসনদ বাতিল করা হয়েছে, পুনরায় আবেদন করার মাধ্যমে সহজে এবং স্বল্প সময়ে তাদের জন্মসনদ পাওয়ার সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন। সর্বোপরি, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন ঘিরে যে চক্র গড়ে উঠেছে; তার মূলোৎপাটন করে একটি সহজসাধ্য, গতিশীল ও স্মার্ট জন্ম নিবন্ধন ব্যবস্থা গড়ে তোলা দরকার।