আরবান ডায়ালগে বিশেষজ্ঞের মত
ঘূর্ণিঝড় হিটওয়েভে সামনে ডেঙ্গু আরও বাড়বে

ঢাবির সিনেট ভবনে ৮ম আরবান ডায়ালগ: রেজিলিয়েন্ট সিটিস টুওয়ার্ড এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন শীর্ষক সম্মেলন। ছবি: সমকাল
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৯ মে ২০২৪ | ০৯:৫৬ | আপডেট: ২৯ মে ২০২৪ | ১০:৫৭
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ও পরিবেশবিজ্ঞানী ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেছেন, এবার ঘূর্ণিঝড় রিমালের ভিন্নরূপ দেখা গেছে, লম্বা সময় ধরে বৃষ্টি ছিল। এটির মূল কারণ বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থা (অ্যাটমোসফেরিক কন্ডিশন), এটা জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঘূর্ণিঝড়, ডেঙ্গু, আরবান হিট আইল্যান্ডের পরিমাণ বাড়ছে। এটা সরাসরি উৎপাদনে প্রভাব পড়ে। তাপমাত্রা বাড়লে মানুষের শক্তি কমে, মনোযোগ বিঘ্ন ঘটে। ফলে শিল্পের উৎপাদন কমে যায়।
মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নবাব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ‘৮ম আরবান ডায়ালগ: রেজিলিয়েন্ট সিটিস টুওয়ার্ড এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন’ শীর্ষক সম্মেলনের উদ্বোধনী সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম।
দীর্ঘ আলোচনায় মাকসুদ কামাল বলেন, আমাদের চারপাশের নদীগুলোতে প্রাণের অস্তিত্ব নেই, অক্সিজেন নেই। শহরে পর্যাপ্ত সবুজ জায়গা না থাকায় হিট আইল্যান্ড আরও হবে। যদিও এ বছর হিটওয়েভের সঙ্গে লা নিনো, এল নিনোর সংশ্লেষ আছে। প্রতিবছর উষ্ণতা বাড়ার কারণ হলো জনসংখ্যার ঘনত্ব, অবকাঠামো, সবুজ এলাকা না থাকা, ওয়াটার বডি বা পুকুর কমে যাওয়া। এ চারটি কারণে শহরে উষ্ণতা-হিট আইল্যান্ড বেড়ে যাচ্ছে। এর ফলে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া বাড়বে।
এ সময় সরকারের ‘আমাদের গ্রাম আমাদের শহর’ কর্মসূচি, মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যান, ডেল্টা প্ল্যান, ন্যাশনাল অ্যাডাপটেশন প্ল্যানের কথা উল্লেখ করে পরিকল্পিত পাবলিক ট্রান্সপোর্ট, পরিকল্পিত নগরায়ন, সাইবার সিকিউরিটি, বায়ুর উন্নতির পাশাপাশি গবেষণা ও উদ্ভাবনের উপর গুরুত্ব দেন তিনি।
মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখন আমাদের মাথাব্যথা। এটি আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলেছে। নদীতে ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে মানুষ ঢাকায় আসে, থাকে বস্তিতে আর ব্যবসা করে ফুটপাথে। এটাই আমাদের বাস্তবতা। আমাদের ঢাকা উত্তরে লোক সংখ্যা ১ কোটি ২০ লাখ। প্রতি বর্গ কিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ৪৯ হাজার, কিছু এলাকায় আরও বেশি। এ সকল চ্যালেঞ্জ নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
মেয়র আরও বলেন, উন্নত বিশ্বের ছয়টি দেশ ৬০ শতাংশ গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণের জন্য দায়ী। তারা যুদ্ধের জন্য যে ব্যয় করছে, তার ১০ শতাংশ পেলেও আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হই না। আজকে আইলা, রিমাল সবকিছুর ভুক্তভোগী হচ্ছি আমরা। আমরা নিজেরাও আমাদের খালগুলো মেরে ফেলেছি। এমন কিছু নেই খালে ফেলা হয় না। অনেকে মাসলের জোর দেখায়, রাজনৈতিক ক্ষমতা দেখায়। আমরা সেগুলোকে গুরুত্ব দিচ্ছি না। যত তাপমাত্রা হবে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়বে। আমরা সুনাগরিক হলে অটোমেটিক শহর ভালো হয়ে যাবে।
এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কোলাবোরেশনের মাধ্যমে রিসার্চের জন্য পাঁচ কোটি টাকা আগামী বাজেটে বরাদ্দ রাখার ঘোষণা দেন মেয়র।
এ দিকে বিকেলের অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশের দিকে যাচ্ছি। ২০৪১ সালে আমরা উন্নত দেশ হব। এটা আনুমানিক নয়, ক্যালকুলেটেড। এ জন্য সরকার স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, দক্ষতা, পরিবেশগত বিষয়কে গুরুত্ব দিচ্ছে। তাই ডেল্টা প্ল্যানসহ নানা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, আমাদের জনসংখ্যার ঘনত্ব অনেক বেশি। এটার সুবিধা-অসুবিধা দুই-ই আছে। আমাদের সুবিধাগুলো কাজে লাগাতে হবে। ইতোমধ্যে বর্জ্য নিঃসরণ করে দূষণ না বাড়িয়ে সেখান থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।