ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

সরকারি তিতুমীর কলেজ

সড়কে শিক্ষার্থীদের অনশন রাজধানীজুড়ে যানজট

অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তিনজন

সড়কে শিক্ষার্থীদের অনশন রাজধানীজুড়ে যানজট

স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করাসহ ৭ দফা দাবিতে বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর মহাখালীতে তিতুমীর কলেজের প্রধান ফটকের সামনের সড়কে অবস্থান নেন অনশনরত শিক্ষার্থীরা। এতে দুই পাশের রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় - মাহবুব হোসেন নবীন

 সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৫ | ০১:৫৪ | আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২৫ | ১১:৩৮

সরকারি তিতুমীর কলেজকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের মতো সড়কে বসে অনশন করেন শিক্ষার্থীরা। এতে আমতলী, মহাখালী মোড়, গুলশান-১ ও ২, বনানী, কাকলী, তেজগাঁও, সাতরাস্তা ও মগবাজার পর্যন্ত যানজট তৈরি হয়। এদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অবৈধভাবে চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যরা পুনর্বহালের দাবিতে হাইকোর্ট এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন। এ ছাড়া দনিয়া কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী হত্যা মামলার বিচার দাবিতে যাত্রাবাড়ীতে অবরোধ করেন বর্তমান শিক্ষার্থীরা। এসব কর্মসূচির ফলে দিনভর রাজধানীজুড়ে যানজট লেগেছিল। গত বুধবার বিকেল ৫টায় তিতুমীর কলেজের ফটকের সামনে আমরণ অনশন শুরু করেন ৫ শিক্ষার্থী। গতকাল সকালে তাতে যোগ দেন আরও দু’জন। তবে গতকাল দুপুর ১২টা থেকে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী সড়কে বসে অনশন শুরু করেন। তারা কলেজের সামনের সড়ক অবরোধ করেন। ফলে গুলশান-মহাখালী সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তার দুই পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এই যানজটের প্রভাব পড়ে বিমানবন্দর-মহাখালী সড়কেও। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহনে বসে থেকে নাকাল হয়েছেন সাধারণ মানুষ। টঙ্গীতে শুরু হওয়া বিশ্ব ইজতেমাগামী মুসল্লিদের বিমানবন্দর সড়কে দুর্ভোগ সইতে হয়েছে। এদিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে সতর্ক অবস্থানে ছিলেন পুলিশ সদস্যরা।

গতকাল রাত ৯টায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নুরুজ্জামান শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের অনশন প্রত্যাহার করার অনুরোধ জানান। তবে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবিতে অনড় থেকে অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

গতকাল রাত পর্যন্ত অনশন অবস্থায় অসুস্থ হয়ে সাত শিক্ষার্থী সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ছাড়া দুই শিক্ষার্থী সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মহাখালী জোনের সহকারী কমিশনার (ট্রাফিক) মো. জুনায়েদ বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছেন। তাদের সড়ক ছেড়ে দিতে একাধিকবার অনুরোধ করা হলেও সাড়া দেননি।’

শিক্ষার্থীরা জানান, তারা সাত কলেজের সঙ্গে যৌথ বিশ্ববিদ্যালয় করার সরকারের পরিকল্পনাকে প্রত্যাখ্যান করেন। স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় চান।
এদিকে শিক্ষার্থীরা অনশনে বসলেও কলেজে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন চলমান রাখায় প্রশাসনের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি নিয়ে তারা যখন আমরণ অনশনে, তখন কলেজের অধ্যক্ষ জোরে মাইক বাজিয়ে পিলো পাসিং গেম (বালিশ বদল) খেলেছেন। তারা অধ্যক্ষকে ‘অথর্ব’ দাবি করে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন।
অনশনরত একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘যখন শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করেছেন, তখন শিক্ষকরা এসে আমাদের কলেজে ফিরিয়ে নিতে চেষ্টা করেছেন। শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ে তারা সহযোগিতা না করে উল্টো আনন্দ-উল্লাসে মেতেছেন। এমন অধ্যক্ষ আমরা চাই না।’

‘তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে আমরণ অনশনে’ বসা তিতুমীর ঐক্যের দাবিগুলো হলো— রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠন করে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করা, শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা বা অনতিবিলম্বে শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসিক খরচ বহন এবং ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে আইন ও সাংবাদিকতা বিষয় চালু করা। এ ছাড়া একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন পিএইচডিধারী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া। শিক্ষার গুণগতমান বাড়ানোর লক্ষ্যে আসন সংখ্যা সীমিত ও আন্তর্জাতিক মানের গবেষণাগার নির্মাণের লক্ষ্যে জমি ও আর্থিক বরাদ্দ নিশ্চিত করা।

চাকরি পুনর্বহাল চান পুলিশ সদস্যরা

এদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অবৈধভাবে চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যরা পুনর্বহালের দাবিতে আবারও আন্দোলনে নেমেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে একটি পদযাত্রা বের করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে সচিবালয়ের সামনে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু শিক্ষা ভবনের সামনে তাদের আটকে দেয় পুলিশ। সেখান থেকে আলোচনার জন্য পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলতে সচিবালয়ে যায়। কিন্তু তারা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দেখা পাননি।
সরেজমিন দেখা যায়, সাবেক পুলিশ সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যরা আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। তাদের হাতে বিভিন্ন ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড রয়েছে। চাকরি ফিরে পেতে নানা ধরনের স্লোগান দিচ্ছেন। তাদের যেন দ্রুত চাকরি ফিরিয়ে দেওয়া হয়, পদযাত্রা থেকে সরকারের কাছে এ দাবি জানানো হয়। পুলিশের বাধায় তারা শিক্ষা ভবনের সামনে শুয়ে সড়ক অবরোধ করেন। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে ঘোষণা দেন।

আন্দোলনকারী এক পুলিশ সদস্য বলেন, ‘বর্তমান আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনার বাধ্যতামূলক অবসরে ছিলেন। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে চাকরি করছেন। তাহলে আমরা কেন পারব না?’

মিনহাজুল হত্যার বিচার দাবি

রাজধানীর দনিয়া কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী প্রকৌশলী মিনহাজুল ইসলাম হত্যা মামলার আসামি গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়ায় সড়ক অবরোধ করেন তারা।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দনিয়া কলেজের সামনে প্রকৌশলী মিনহাজুলকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আসামিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে কলেজে মানববন্ধন করেন দনিয়া কলেজের শতাধিক শিক্ষার্থী। এক পর্যায়ে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে তারা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এতে শনির আখড়া সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

যাত্রাবাড়ী থানার ওসি কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, ‘আসামি গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে বিকেল ৩টায় সড়ক ছেড়ে দেন শিক্ষার্থীরা। এর পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।’

 

আরও পড়ুন

×