ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

ছুটিতে বেড়াবেন?

ছুটিতে বেড়াবেন?

পদ্মা রিসোর্ট পানাম নগর, সোনারগাঁও

রিক্তা রিচি

প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২৪ | ০২:১৯

অফিস, ঘর-সংসারের কাজবাজ সামলে বেড়ানোর সময় পান না অনেকে। অপেক্ষা করেন ছুটির জন্য। এবারের ঈদে পরিবার নিয়ে ঢাকার আশপাশে ঘুরে বেড়াতে পারেন। ছুটির এক দিন কিংবা দু’দিন দুটি ভিন্ন জায়গায় ডে ট্যুরে যেতে পারেন। ডে ট্যুর আপনার জমে থাকা ক্লান্তি দূর করবে। সেইসঙ্গে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে অনেকটা সময় কাটানো হবে। বেড়াবেন তো। কিন্তু কোথায় বেড়াবেন? জেনে নিন বেড়ানোর জনপ্রিয় কিছু স্থান এবং বিভিন্ন প্রয়োজনীয় তথ্য। 
গোলাপ গ্রাম: সবুজ গ্রাম, ক্ষেত ও সতেজ প্রকৃতি দেখতে ডে লং ট্যুরে যেতে পারেন গোলাপ গ্রামে। এটি সাভারের সাদুল্লাহপুরে অবস্থিত। এ ছাড়া শ্যামপুর ও মোস্তাপাড়া গ্রামজুড়ে গোলাপের বাগান আছে। গোলাপ ছাড়াও গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, জারবেরাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুলের চাষ হয় এ গ্রামে। এ গ্রামের পথ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে দেখতে পাবেন পথের পাশে ফুটে আছে মিরিন্ডা জাতের গোলাপ। আরও রংবেরঙের ফুল আপনাকে বিমোহিত করবে। গোলাপ গ্রামে বেড়াতে গেলে খুব বেশি খরচ হবে না। সকালে গিয়ে সন্ধ্যার মধ্যেই ফিরতে পারবেন। 
যেভাবে যাবেন: সাদুল্লাহপুর যেতে ঢাকার যে কোনো জায়গা থেকে প্রথমে গাবতলী বাসস্ট্যান্ড যেতে হবে। যে কোনো বাসে উঠে সাভার বাসস্ট্যান্ডের ওভারব্রিজের নিচে নামতে হবে। ওভারব্রিজ পার হয়ে পূর্বদিকের বিরুলিয়া ইউনিয়নের রাস্তায় ব্যাটারিচালিত হ্যালো বাইক পাওয়া যায়। বাইকে ভাড়া করে গোলাপ গ্রামে যেতে পারবেন।  
ইঞ্জিনচালিত নৌকায় যেতে চাইলে ঢাকার যেকোনো জায়গা থেকে মিরপুর-১ যেতে হবে। সেখান থেকে দিয়াবাড়ী ঘাট যাবেন। এ ঘাট থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকা, কোশা নৌকা, স্পিডবোট ছাড়ে। পছন্দের জলযানে চড়ে পৌঁছে যাবেন সাদুল্লাহপুর ঘাটে। সেখান থেকে রিকশা নিয়ে ঘুরে ঘুরে পুরো গ্রাম দেখতে পারবেন।  
বালিয়াটি জমিদার বাড়ি: সন্তানদের নিয়ে ঈদের ছুটিতে বালিয়াটি জমিদার বাড়ি থেকে ঘুরে আসতে পারেন। এটি মানিকগঞ্জ জেলা থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটি গ্রামে অবস্থিত। জমিদার বাড়িটি ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে। উনিশ শতকের প্রথমার্ধ থেকে বিশ শতকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত শতাধিক বছরের বহু কীর্তি জমিদার বাড়িতে আছে। তাই বাড়িটি এখন প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ সংরক্ষণ ও পরিচালনা করছে। ১৬ হাজার ৫৫৪ বর্গমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত জমিদার বাড়ির মূল ফটকে রয়েছে দুটি সিংহের মূর্তি। আঙিনায় ফুলের বাগান আছে। আছে চারটি বহুতল ভবন, চারটি পুকুর ও জমিদারি অন্দরমহল। বালিয়াটি জমিদার বাড়িতে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত প্রবেশ করা যায়। পরিবার নিয়ে বেড়াতে গেলে এ সময়ের মধ্যেই যাওয়ার চেষ্টা করুন।
যেভাবে যাবেন: বালিয়াটি জমিদার বাড়িতে গেলে নিজস্ব বাহনে যাওয়া ভালো। যাদের নিজস্ব বাহন নেই, তারা ঢাকার গাবতলী থেকে যেসব বাস সাটুরিয়া হয়ে আরিচা-মানিকগঞ্জ যায়, সেসব বাসে উঠতে হবে। সাটুরিয়া জিরো পয়েন্ট থেকে ইজিবাইক-সিএনজি দিয়ে জমিদার বাড়িতে যেতে পারবেন। 
পদ্মা রিসোর্ট: মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় পদ্মা নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছে পদ্মা রিসোর্ট। এটি নয়নাভিরাম ভ্রমণ স্থান। ব্যস্ততা, কোলাহল, বায়ুদূষণ ও শব্দদূষণ ভুলে প্রশান্তিতে কিছু সময় এ রিসোর্টে কাটাতে পারবেন। এখানে আপনি নৌকায় ঘোরাঘুরি করতে পারবেন। লেভিশ বিচ চেয়ারে শরীর এলিয়ে দিতে পারবেন। পদ্মার পাড়ে ঘোড়ায় চড়তে পারবেন, ঘুড়ি উড়ানো-ফ্রিজবি খেলায় মেতে উঠতে পারবেন। পদ্মা রিসোর্টে রয়েছে ১৬টি ডুপ্লেক্স কটেজ। বারোটি কটেজের নাম বাংলা বারো মাসের নামানুসারে রাখা হয়েছে। চারটি কটেজের নাম রাখা হয়েছে চার ঋতুর নাম অনুযায়ী। 
কেমন খরচ: সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ভ্যাটসহ ২ হাজার ৩০০ টাকায় কটেজ ভাড়া নেওয়া যাবে। সকাল ১০টা থেকে পরদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত কটেজে কাটাতে খরচ পড়বে ভ্যাটসহ ৩ হাজার ৪২০ টাকা। রিসোর্টেই খাবারের ব্যবস্থা আছে। পদ্মার বুকে ঘুরতে চাইলে স্পিডবোটে ২ হাজার ৫০০ টাকা, সাম্পানে ১ হাজার ২০০ এবং ট্রলারে ৬০০ টাকায় ঘুরতে পারবেন। 
যেভাবে যাবেন: পদ্মা রিসোর্টে যেতে হলে ঢাকার যে কোনো প্রান্ত থেকে লৌহজং যেতে হবে। গুলিস্তান থেকে গাঙচিল কিংবা ইলিশ পরিবহনে সরাসরি লৌহজং থানা মসজিদ পর্যন্ত যাওয়া যাবে। মিরপুর-১০, ফার্মগেট থেকে স্বাধীন পরিবহনে যাওয়া যাবে।   
জিন্দা পার্ক: ঢাকার কাছাকাছি বেড়ানোর জন্য খুব সুন্দর স্থান জিন্দা পার্ক। এটি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় দাউদপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। রাজধানী ঢাকা থেকে মাত্র ৩৭ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। এই পার্ক যেন সবুজের আচ্ছাদনে ঘেরা। পার্কে রয়েছে ২৫০ প্রজাতির দশ হাজারের বেশি গাছ, ৫টি জলাধার ও অসংখ্য পাখি। মাটির ঘর, শান বাঁধানো পুকুর, সাঁকো রয়েছে এ পার্কে। জিন্দা পার্কে বেড়াতে গেলে পুরো গ্রামের আমেজ পাবেন। মার্কেট, লাইব্রেরি, ক্যান্টিন ও মিনি চিড়িয়াখানাও রয়েছে পার্কে। এ পার্ক  পরিবার-সন্তানদের নিয়ে দিনে গিয়ে ফিরে আসার জন্য উপযুক্ত জায়গা। 
যেভাবে যাবেন: ঢাকার যে কোনো জায়গা থেকে কুড়িল বিশ্বরোড চলে যান। কুড়িলের বিআরটিসি কাউন্টার থেকে কাঞ্চন ব্রিজ যাওয়ার টিকিট কাটবেন। কাঞ্চন ব্রিজ যাওয়ার আগে বা পাশে ঢাকা সিটি বাইপাস ধরে চার কিলোমিটার দূরেই জিন্দা পার্কের অবস্থান। সে ক্ষেত্রে বাইপাসের মোড় থেকে অটোরিকশা নিয়ে পার্কে যেতে পারবেন। আবার কুড়িল বিশ্বরোড থেকে সিএনজি রিজার্ভ নিয়েও জিন্দা পার্কে যেতে পারবেন। 
পানাম নগর: ঈদের ছুটিতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে পানাম সিটিতে ঘুরতে যেতে পারেন। এটি ‘হারানো নগরী’ হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। পানাম নগরীর চারদিক পঙ্খীরাজ খাল দিয়ে ঘেরা। সিটির পূর্বদিকে মেঘনা নদী এবং পশ্চিমে রয়েছে শীতলক্ষ্যা। পানাম সিটির দালানগুলোয় রয়েছে কারুকার্য ও আভিজাত্যের ছোঁয়া। ৫২টি ভবন ছাড়াও নগরীতে রয়েছে– মসজিদ, গির্জা, মন্দির, মঠ, নাচঘর, জাদুঘর, চিত্রশালা, পান্থশালা, দরবার কক্ষ ইত্যাদি। এ নগরীতে গেলে আরও দেখতে পাবেন লোকশিল্প জাদুঘর ও গোয়ালদি মসজিদ। মাত্র ১৫ টাকার টিকিট কেটেই পানাম নগরীতে প্রবেশ করা যাবে। তবে জাদুঘরের টিকিটের মূল্য ৩০ টাকা। যেভাবে যাবেন: ঢাকার গুলিস্তান থেকে বাসে করে মোগড়াপাড়া চৌরাস্তা যেতে হবে। মোগড়াপাড়া চৌরাস্তা থেকে ব্যাটারিচালিত অটো কিংবা রিকশায় করে পানাম নগরীতে যেতে পারবেন। 

আরও পড়ুন

×