ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

ব্যাংকার তবারুক থেকে যেভাবে বাংলার মহানায়ক হয়ে ওঠেন তিনি

ব্যাংকার তবারুক থেকে যেভাবে বাংলার মহানায়ক হয়ে ওঠেন তিনি

নায়ক বুলবুল আহমেদ

বিনোদন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২২ | ০৪:৩৯ | আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২২ | ০৬:২৬

বুলবুল আহমেদ। আমাদের দেশীয় চলচ্চিত্রের দেবদাস কিংবা মহানয়ক। বাংলা চলচ্চিত্রের সুদর্শন, সুশিক্ষিত, মার্জিত, রুচিশীল এই অভিনেতার ১২ তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১০ সালের এই দিনে তিনি পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। 

মৃত্যুর ১২ বছর পর আজ বাংলার এই দেবদাস'খ্যাত অভিনেতাকে ক'জন মনে রেখেছেন? টিভিতে তার অভিনীত সিনেমা প্রদর্শন খবরের শিরোনাম ছাড়া খুব একটা তাকে স্মরণ করে না দিনটিতে। তার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এফডিসিতেও নেই কোনো আয়োজন। 

বুলবুল আহমেদের জন্ম ৪ সেপ্টেম্বর ১৯৪১ সালে ঢাকায় হলেও পৈতৃক বাড়ি ছিল ভারতের মেদিনীপুরে। বাবা ছিলেন তৎকালীন অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব এবং সংস্কৃতিমনা মানুষ। তিনি নাটক করতেন। বুলবুল আহমেদ ছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা তবারুক আহমেদ। আবদুল্লাহ ইউসুফের ইয়ে করে বিয়ে ছবিতে বুলবুল আহমেদ নাম দিয়ে চলচ্চিত্রে নায়ক হন। 

স্ত্রীসহ নায়করাজ রাজ্জাক ও বুলবুল আহমেদ।

ছোটবেলায় গুন গুন করে গান গাওয়ার অভ্যেস ছিল। ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ১৯৫৭ সালে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন।

কলেজে পড়ালেখা করার সময় কয়েকজন বন্ধু মিলে গড়ে তোলেন নাট্য শিল্পগোষ্ঠী। নাজমুল হুদা বাচ্চু, সৈয়দ আহসান আলী সিডনী, আবদুল জলিল ও আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমামকে নিয়ে এই নাট্যগোষ্ঠীর প্রথম নাটক নীহার রঞ্জন গুপ্তের উল্কা প্রদর্শিত হয় ব্রিটিশ কাউন্সিলে। কলেজে পড়া অবস্থায় ১৯৫৭ সালের ২৫ ডিসেম্বর তাঁর মা মারা যান। এর চার মাস পর ১৯৫৮ সালের ২৯ এপ্রিল বাবা মারা যান। 

বাবার ইচ্ছা ছিল ছেলেকে প্রকৌশলী বানানোর। বাবার মৃত্যুর পর ঢাকা কলেজ থেকে পাস করে নটর ডেম কলেজে বিএ ক্লাসে ভর্তি হন এবং এই কলেজের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। নটর ডেম কলেজ থেকে বিএ পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগে মাস্টার্সে ভর্তি হন। সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের বার্ষিক নাটকে অভিনয় করতেন এবং এক সময় গ্রুপ থিয়েটার ড্রামা সার্কেল নাট্যগোষ্ঠীর সক্রিয় সদস্য হন।

তার বিয়েটাও নাটকীয়। ঢাকায় অভয় দাস লেনের পৈতৃক বাড়ির পাশের বাড়ির চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ুয়া কিশোরী ফৌজিয়ার সঙ্গে প্রেম গড়ে ওঠে। তখন বুলবুল আহমেদ সপ্তম শ্রেণীতে লেখাপড়া করেন। এমএ শেষ বর্ষের ছাত্র থাকাকালীন অনেক সামাজিক, পারিবারিক বাধা-বিপত্তি ডিঙিয়ে দীর্ঘ ১২ বছরের প্রেমের পরিণতি ১৯৬৩ সালের ২৭ আগস্ট ফৌজিয়া আহমেদ ডেইজিকে বিয়ে করেন। ১৯৬৫ সালে এমএ পাস করার পর ইউনাইটেড ব্যাংকে চাকরিতে যোগদান করার পর ৭ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে স্ত্রীকে ঘরে তোলেন। বিয়ের পর চট্টগ্রামে তাকে বদলি করা হয় এবং সেখানেই তাদের সংসার জীবন শুরু। ১৯৬৮ সালে ঢাকায় বদলি হয়ে এসে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন এবং মোস্তফা মনোয়ার প্রযোজিত আবদুল্লাহ আল মামুন রচিত প্রথম টেলিভিশনে পূর্বাভাস নাটকে প্রথম অভিনয় করেন। টেলিভিশন নাটকে অভিনয়ের কারণে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের রোষানলে পড়েন। টেলিভিশনের প্রযোজক আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমামের ইয়ে করে বিয়ে (১৯৭৩) ছবিতে প্রথম চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ক্ষুব্ধ হয়ে পুনরায় তাকে ঢাকার বাইরে বদলি করেন। ছোটবেলা থেকে যে সুপ্ত বাসনা ছিল চলচ্চিত্রে এবং টেলিভিশনে অভিনয়ের, তা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে পারলেন না বলে নিশ্চিত নির্ভরতার ব্যাংকের চাকরিটি ছেড়ে দেন। 


অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবেন—এমন মনোবাসনা নিয়ে কয়েকজন বন্ধু মিলে জীবন নিয়ে জুয়া নামে একটি ছবি তৈরি করেন। ছবিটি ১৯৭৫ সালে মুক্তি পায় এবং দর্শকদের মাঝে বেশ সাড়া জাগায়। সেই সঙ্গে তবারুক আহমেদ থেকে হয়ে উঠলেন অভিনেতা বুলবুল আহমেদ । 

পরে আলমগীর কবীরের সঙ্গে বুলবুল আহমেদের সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং তার পরিচালিত সূর্যকন্যা, সীমানা পেরিয়ে, রূপালী সৈকতে, মোহনা, মহানায়ক ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।

১৯৮২ সালে বুলবুল আহমেদ চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত দেবদাস ছবিতে দেবদাস চরিত্রে অভিনয় করে ব্যাপক সাড়া জাগান । 

সীমানা পেরিয়ে (১৯৭৭), বধূ বিদায় (১৯৭৮), শেষ উত্তর (১৯৮০) ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা এবং দীপু নাম্বার টু (১৯৯৬) ছবির পার্শ্ব চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান এই অভিনেতা। 

 রূপালী সৈকতে (১৯৭৯), দেবদাস (১৯৮২), ফেরারী বসন্ত (১৯৮৩), রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে বাচসাস পুরস্কার পান। 

আরও পড়ুন

×