বাড়িতে বসে এই সিনেমাগুলো দেখুন

উপমা পারভীন
প্রকাশ: ০২ এপ্রিল ২০২০ | ০১:২৪ | আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২০ | ০১:৩৭
পৃথিবীতে এত এত চলচ্চিত্রের ভিড়ে ভালো সিনেমা বাছাই করা বেশ কঠিন। সেটি সহজ করে দিল ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি। তারা ইংরেজি ভাষার বাইরে পৃথিবীর নানা ভাষার সেরা ১০০ সিনেমার তালিকা প্রকাশ করেছে সম্প্রতি। তিন বছর ধরে চলচ্চিত্রের এই তালিকা তৈরি করছে বিবিসির সংস্কৃতি বিভাগ। সেখানেই সবার ওপরে আছে জাপানি চলচ্চিত্রকার আকিরা কুরোসাওয়ার চলচ্চিত্র 'সেভেন সামুরাই'। তালিকায় একমাত্র বাংলা সিনেমা হিসেবে রয়েছে সত্যজিৎ রায়ের 'পথের পাঁচালী'। এ সিনেমাটি রয়েছে ১৫ নম্বরে। এবারের বিবিসি নির্বাচিত প্রথম পাঁচটি ছবি নিয়ে এ আয়োজন।
সেভেন সামুরাই
১৫৮৬ সাল। যখন জাপানের ইতিহাসে চলছে সেনগোকু সময়। ডাকাতদের হামলা থেকে বাঁচতে কয়েকজন সামুরাইয়ের সাহায্য চায় গ্রামবাসী। এই নিয়ে 'সেভেন সামুরাই' সিনেমার গল্প বুনেছেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার আকিরা কুরোসাওয়া। সিনেমাটির প্রথম অর্ধেকে দেখা যায়, কীভাবে সামুরাই দলের প্রধান তার বাহিনীকে জড়ো করে এবং গ্রামবাসীর সঙ্গে বোঝাপড়া করে। একেবারেই যেন সাদাসিধে বাস্তবতার পাশাপাশি জীবনের নানা বাঁকের চিহ্ন স্পষ্ট। দ্বিতীয় ভাগে সিনেমা পায় ভিন্ন ধরনের গতি। এই ভাগে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিতে থাকেন সামুরাই। এরপর যুদ্ধ, বৃষ্টি, কাদা, ঘাম ও রক্ত একাকার। বলা হয়ে থাকে, যোদ্ধা ও যুদ্ধ নিয়ে দুনিয়ায় যত সিনেমা তৈরি হয়েছে তার তালিকা করলে সবসময় সামনের দিকে থাকবে 'সেভেন সামুরাই'। এ ছবিটি বিভিন্ন ধরনের জরিপে বিভিন্ন সময় সেরা চলচ্চিত্রের তালিকায় উঠে এসেছে। রোটেন টমেটোর সর্বকালের সেরা অ্যাকশন-অ্যাডভেঞ্চার সিনেমার তালিকায় এটি ছিল ৫ নম্বরে। নির্ভরযোগ্য চলচ্চিত্র সাময়িকী সাইট অ্যান্ড সাউন্ডের সেরা চলচ্চিত্রের তালিকায় বরাবরই ওপরের দিকে ছিল এটি। ২০১০ সালের এম্পায়ার ম্যাগাজিনের করা বিশ্বের ১০০ সেরা চলচ্চিত্রের তালিকায়ও ছিল সিনেমাটি। ছবিটি ১৯৫৪ সালের ২৬ এপ্রিল মুক্তি পায়। মুক্তির পর সিনেমাটি ক্রিটিকদের প্রিয় তালিকায় উঠে আসে। আজও সেই ধারা অব্যাহত আছে।
বাইসাইকেল থিভস
১৯৪৮ সালে মুক্তি পায় এ চলচ্চিত্রটি। ড্রামা ঘরানার এ ছবির ব্যাপ্তি ৯৩ মিনিট। ইতালিতে দ্বিতীয় যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে একটা পরিবারের কাহিনি নিয়ে ছবিটি। এতে রয়েছে সংগ্রামের গল্প, বেঁচে থাকার গল্প, টিকে থাকার গল্প। ইতালিয়ান ভাষার এ চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছেন ভিত্তোরিও ডি সিকা। ছবির গল্পে দেখা যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ মাত্রই শেষ হয়েছে। ফলে ইতালির অধিকাংশ মানুষই বেকার। এটা-সেটা করে সবাই টিকে আছে। তেমনই একজন আন্টোনিও। বউ আর একটা ছেলে। তার নাম ব্রুনো। সাবাই চাকরির পেছনে ছুটছে। ভাগ্যক্রমে আন্টোনি একটি চাকরি পায়। কিন্তু চাকরির সঙ্গে একটা শর্তও জুড়ে দেওয়া হয়। শর্তটা হচ্ছে, একটা বাইসাইকেল থাকা লাগবে। নতুন করে বাঁচার তাগিদে নিজেদের অধিকাংশ জিনিসই বন্ধক রেখে সাইকেল কেনে সে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে চাকরির প্রথম দিনেই সে সাইকেলটা হারিয়ে ফেলে! এরপর বাবা আর ছেলে মিলে খুঁজতে বের হয় হারিয়ে যাওয়া সাইকেল। শেষমেশ কি তারা সাইকেল ফেরত পায়? নাকি পায় না? জানতে হলে আপনাকে দেখতে হবে। এই ছবিতে মনে রাখার মতো খুব বেশি সংলাপ নেই, নেই হাস্যকর কোনো দৃশ্য। কিন্তু এই ছবিতে রয়েছে এক অদ্ভুত গল্প। যে গল্প আপনাকে এক বসাতেই ছবিটি দেখতে বাধ্য করবে।
টোকিও স্টোরি
শাকিচি ও টমি হিরায়ামা নামের এক অবসরপ্রাপ্ত দম্পতি। তাদের মেয়ে কিয়োকোর সঙ্গে [যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা] দক্ষিণ-পশ্চিম জাপানের ওনোমিচি শহরে বাস করেন। এই দম্পতি তাদের ছেলে, কন্যা এবং বিধবা পুত্রবধূকে দেখতে টোকিও ভ্রমণ করেন। তাদের বড় ছেলে কচি একজন শিশু বিশেষজ্ঞ এবং তাদের বড় মেয়ে শিজ একটা সেলুন চালায়। এদিকে বিধবা পুত্রবধূ নরিকো ব্যস্ত চাকরি নিয়ে। সে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে শাকিচি ও টমিকে টোকিও ঘুরে দেখান। এই ছবির ঘটনাপ্রবাহে দেখা যায়, শাকিচি আর টমির সন্তানরা ক্রমাগত তাদের পিতামাতাকে অবহেলা করলেও নরিকো ক্রমাগত তাদের কাছে মায়া-মমতায় কাছে টেনে নেয়। এভাবে ঘটনা, দুর্ঘটনায় এগোতে থাকে ছবিটির গল্প। লিও ম্যাককারি পরিচালিত ১৯৩৭ সালের আমেরিকান চলচ্চিত্র 'মেক ওয়ে ফর টুমোরো' ছবির ওপর ভিত্তি করে 'টোকিও স্টোরি' ছবির চিত্রনাট্য করেন ইয়াসুজিরো ওজু এবং কগো নোদা। তারা এই চিত্রনাট্য করতে সময় নেন ১০৩ দিন। ১৯৫৩ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবিটির পরিচালক ইয়াসুজিরো ওজু।
রাশোমন
একটি খুন ও ধর্ষণের সাক্ষীদের বিবৃতি, যা একটা আরেকটার সঙ্গে কোনোভাবেই মেলে না। এমন একটি দুর্বোধ্য গল্প নিয়ে 'রাশোমন' চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছেন জাপানি চলচ্চিত্রকার আকিরা কুরোসাওয়া। ধ্বংসস্তূপ, যখন-তখন খুন, রাহাজানি, লুটপাট নিত্যকার ঘটনা, এর সবকিছুর সঙ্গে মুষলধারে বৃষ্টি। এমন ঝড়বৃষ্টিতে ভেঙে পড়া জীর্ণ রাশোমন তোরণে শুরু হয় তিনজনের কথোপকথন- কাঠুরে, বৌদ্ধ পরিব্রাজক ও এক সাধারণ লোক। বিষয় 'বাঁশবনে খুন'। এর মধ্যে প্রথম দু'জন ঘটনার প্রতক্ষ্যদর্শী ও মামলার সাক্ষী। প্রথম লোক বনে গিয়েছিলেন কাঠ কাটতে। সেখানে গিয়ে হঠাৎ তিনি দেখতে পান একটি হ্যাট পড়ে আছে। কিছু দূরে তিনি দেখতে পান একজন মৃত লোক। এরপর কোর্টে তাকে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য ডাকা হয়। কারণ যে লোকটা মারা গেছেন তার খুনি একজন ডাকাত ধরা পড়েছে। ভিক্ষুও যান সাক্ষ্য দিতে কোর্টে। কারণ যে লোকটি মারা গেছেন তাকে রাস্তা দিয়ে যেতে দেখেছিলেন তিনি। লোকটির ঘোড়ার ওপরে ছিল তার স্ত্রী। নিচে অস্ত্রসহ লোকটি হাঁটিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন ঘোড়াটিকে। লোকটি ছিলেন একজন সামুরাই। ভিক্ষু এবং প্রথম লোকটি তাদের সাক্ষ্য দেওয়ার পর ঘটনা শুরু হয় মূলত। ধৃত ডাকাত একভাবে বলে ঘটনাটি। যে লোক মারা গেছেন তার স্ত্রী বলেন অন্যভাবে। এই দুই ঘটনা ভিক্ষু এবং প্রথম লোক কারোরই বিশ্বাস হয় না।
দ্য রুলস অব দ্য গেম
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে ফ্রান্সের উচ্চবিত্তদের সমাজের চিত্র নিয়ে নির্মিত হয়েছে 'দ্য রুলস অব দ্য গেম'। ফরাসি ভাষায় নির্মিত এ ছবিটি পরিচালনা করেছেন জ্য রেনেয়াঁ। ছবিটির ফরাসি নাম 'লা রেগলে দু জিউ'। ১৯৩৯ সালে মুক্তি পাওয়া এ ছবিতে রয়েছে ট্র্যাজেডির সঙ্গে কমেডির মিশ্রণ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে সমাজের উচ্চ শ্রেণির চালচলন নিয়ে বিদ্রুপাত্মক ছবি এটি। ফ্রান্সের অভিজাত শ্রেণি প্রথমে ছবিটি পছন্দ করেনি। ফলে সরকার ছবিটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। বিশ্বযুদ্ধের পর অবশ্য ছবিটি অবারও আলোর মুখ দেখে এবং এরপর থেকেই সর্বকালের অন্যতম সেরা ছবির মর্যাদা পায় 'দ্য রুলস অব দ্য গেম'।