‘অলি, আপনার লিরিকটা নিতে পারছি না, কথাটি বলারও প্রয়োজন মনে করেননি’

বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৩ | ১৫:০৭ | আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৩ | ১৫:০৮
ঈদুল আজহায় দেশের ১০৭ সিনেমা হলে মুক্তি পেয়েছে শাকিব খান অভিনীত ‘প্রিয়তমা’। মুক্তির পর সিনমাটির ‘ঈশ্বর’ শিরোনামের গানটি দারুণ শ্রোতাপ্রিয় হয়। যে গানটির মাধ্যমে ৯ বছর পর চলচ্চিত্রের গানে সুর সংগীতে ফিরেছেন প্রিন্স মাহমুদ। কাব্যিক কথার এই গানটির গীতিকার সোমেশ্বর অলি। গানটির দর্শকপ্রিয়তা ও গানের নানা প্রসঙ্গ নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে
আপনার লেখা ঈশ্বর গানটি দর্শক শ্রোতা গ্রহণ করেছেন। গীতিকার হিসেবে গানের এই সাফল্যে কেমন লাগছে?
গীতিকারের কাজ লিখে দেওয়া। সেই লেখার কাজটা আমি সৎভাবে করতে চাই। ছোট-বড় যে কোনো প্রজেক্টের ক্ষেত্রে একইরকম চেষ্টা আমার থাকে। ‘প্রিয়তমা’ সিনেমাটি অবশ্যই দারুণ একটি প্রজেক্ট। এখানে গানটি লিখে দেওয়া, সুর-সংগীত হওয়ার পর গানটি ঠিকঠাকভাবে দর্শক-শ্রোতার কাছে গিয়েছে। বড় প্রজেক্ট বলে শ্রোতাদের কাছেও গানটি দ্রুত পৌছে গেছে। তারা সেটি গ্রহণও করেছেন। অনেকটা দ্রুততার সঙ্গেই গানটি সাড়া পেয়েছে। এ কারণে আমি বিস্মিত, আপ্লুত আর ভালো তো অবশ্যই লাগছে।
শাকিব খানের সিনেমায় গান লিখলেন, তখন কি ভেবেছিলেন গানটি এতটা সাড়া জাগাবে?
শাকিব খান বাংলাদেশের সুপারস্টার। বাণিজ্যিক সিনেমার বড় ক্যানভাস তিনি। তার প্রজেক্টের কোনো কাজের সাড়া পাওয়ার সম্ভাবনার জায়গাটা বড় হবে, এটাই স্বাভাবিক। এই গানের ক্ষেত্রেও তেমনটি ঘটেছে। সাড়া মিলবে, এটা অনুমান করেছিলাম। আমি চেয়েছিলাম লেখার মধ্য দিয়ে নতুন কিছু যোগ করতে, যেহেতু বাকি বিষয়গুলো আমার হাতে ছিল না। তারপরও আমার জায়গা থেকে ভালো কিছুই করার চেষ্টা করেছি।
গানটির এত দর্শকপ্রিয়তা কি শাকিব খানের জন্য নাকি কথা ও সুরের কারণে, আপনি কি মনে করছেন?
কথা, সুর, সংগীত, গায়কী, অভিনয়, গল্প, উপস্থাপন- সবকিছুর সুন্দর সমন্বয় হয়েছে বলেই সবাই ভালোভাবে গ্রহণ করেছে। শাকিব খানের ভক্তরাও গানটি লুফে নিয়েছেন।
শাকিব খানের সঙ্গে কাজ, একই সঙ্গে প্রিন্স মাহমুদের সঙ্গেও। তাদের সঙ্গে আগে আপনার গান হয়নি কেনো?
এর আগে শাকিব খানের ‘সুপারহিরো’ মুভির টাইটেল গানটি লিখেছিলাম। নাভেদ পারভেজ সুর-সংগীত করেছিলেন। এরপর আর শাকিব ভাইয়ের সিনেমায় ডাক আসেনি। ‘প্রিয়তমা’য় একসঙ্গে দুই তারকার সঙ্গে কাজ- এটা বড় প্রাপ্তি। মোটা দাগে যদি বলি, কার সঙ্গে আমার কাজ হবে- এটা আমি নির্ধারণ করার কেউ না। আমি ভাড়ায়চালিত গীতিকার। এই ঈদেই অন্য একটি ছবির জন্য গান লিখেছিলাম, সুর হওয়ার পর সেটা বাতিল হয়েছে। ব্যাপার না, হতেই পারে। পরিচালক বা প্রযোজক সৌজন্য হিসেবেও একটা মেসেজও দেয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি যে, ‘অলি আপনার লিরিকটা নিচ্ছি না...’। অথচ গান লেখার মিটিং হয়েছিল খুব আয়োজন করে, বাদ দেয়া হলো নিঃশব্দে। সো, আমি কে? কেউ না। এই শহরে আমাকে গ্রহণ-বর্জন সবই করা যায়। আমি শুধু আমি না, এমন ঘটনার শিকার হন অনেকেই...।
প্রিয়তমায় ‘ঈশ্বর’ গানটির কথা কিভাবে মাথায় এলো?
‘ঈশ্বর কি তোমার আমার মিলন লিখতে পারতো না’এই লাইনটা আগে থেকেই আমার লেখা ছিল। আমার প্রচুর লেখা রয়েছে অসম্পন্ন। কখনো কখনো সেগুলো বেশ কাজে দেয়। এবারও তাই হয়েছে। হিমেল আশরাফের কাছ থেকে গল্পটা শোনার পরই মনে হয়েছিল এই লাইন নিয়ে গানটি লেখা যায়। হলোও তা-ই। ৫-৭ দিনের মধ্যে লিখে ফেলি পুরো গান, বেগ পেতে হয়নি। মজার ব্যাপার হচ্ছে, কোনো শব্দ সংযোজন, সংশোধন বা বাদ দিতে হয় নি।
'ঘুড়ি'র পর সমাদৃত হয়েছেন এমন গান নিশ্চয়ই করেছেন?
‘ঘুড়ি তুমি কার আকাশে ওড়ো’ বারবার হবে না। আমি বা লুৎফর ভাই সেটা জানি, শ্রোতারাও জানেন। ওই গানের রেশ যেন কখনো ফুরাবার নয়। এরপর কিছু গান সমাদৃত হয়েছে বা প্রশংসিত হয়েছে। কোনো কোনোটি জনপ্রিয়তাও পেয়েছে। যেমন লুৎফর হাসানের ‘আমার আকাশ পুরোটাই’, ‘আয়না দিয়ে ঘর বেঁধেছি’, ‘খরচাপাতির গান’, ‘ মিফতাহ জামানের ‘তাই তোমার খেয়াল’, মাহতিম শাকিবের ‘বুকের বাঁ পাশে’, ‘না থাকা জুড়ে’, ‘মুঠোর ভেতর তুমি নেই’, রেহান রাসুল-অবন্তী সিঁথির ‘রূপকথার জগতে’ ঐশীর ‘মায়া’, তানজীব সারোয়ারের ‘ভেজা ভেজা চোখ’, ‘বোহেমিয়ান’, তাহসান-পূজার ‘একটাই তুমি’, সুমন কল্যাণের ‘ছাতার কারিগর’, ‘সুইসাইড নোট’, বেলাল খানের ‘দোযখ’, দোলার 'জোছনা’, ইমরান ও কনার ‘শূন্য থেকে আসে প্রেম’, তাহসিনের ‘মন ভালো হয়ে যায়’, ‘সান্ত্বনা’, ‘নরকবাস’, ‘তুমি আমারই’, জয় শাহরিয়ারের ‘আমি নেই’, পথিক নবীর ‘জোড়া শালিক’, কুদ্দুস বয়াতী-প্রীতম হাসানের ‘আসো মামা হে’, পিন্টু ঘোষের 'এক মুজিব', 'তোমার মুখ', মিনারের 'হৃদয়ের ডাক', কনার 'কাগজের নাও'...
বাংলা সিনেমায় ও ঢাকার সংগীত জগতে কাব্যিক কথার গান এখন খুব একটা হয় না। আপনিই কি তাই মনে করেন? আর মনে করে থাকলে কেনো হয় না?
সবাই সহজ কথার গান চায়। সেটা আমিও চাই। তাই বলে সহজ আর সস্তা এক জিনিস? নিশ্চয়ই না। সহজ হলেই গ্রহণ করবে, এমন না। আবার কিছুটা নতুনত্ব থাকলে জনপ্রিয় হবে না, এমনও না। তো সাহস করে চ্যালেঞ্জ নেয়ার মানসিকতা কমে গেছে আমাদের। কমে গেছে নতুন কিছুকে গ্রহণ করার ক্ষমতাও। নিশ্চিতভাবে 'হিট' হবে, এমন কিছু সবাই চায়। জনপ্রিয়তার পিছেই দৌড় আমাদের...। বাংলাদেশে কাব্যিক কথার গান হচ্ছে, তবে তুলনায় কম। তা-ও সবার কাছে যেতে পারছে না। সিনেমায়ও হচ্ছে এখন। পুরনো দিনের সিনেমার লিরিক তো অসাধারণ ছিল। সেগুলোতে কাব্য, রূপক, উপমা, ছন্দ, অন্তঃমিল সবই ছিল। আমরাই সেসব থেকে দূরে সরে এসেছি...
- বিষয় :
- সোমেশ্বর অলি
- ঈশ্বর
- প্রিয়তমা