ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

‘এ জীবন কেবল নিজের জন্য নয়, আশপাশের মানুষের জন্যও’

‘এ জীবন কেবল নিজের জন্য নয়, আশপাশের মানুষের জন্যও’

রামেন্দু মজুমদার

এমদাদুল হক মিলটন

প্রকাশ: ০৮ আগস্ট ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ০৯ আগস্ট ২০২৩ | ০৭:২৪

রামেন্দু মজুমদার। অভিনেতা, নির্দেশক ও সংগঠক। ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে মঞ্চ নাটকে অভিনয় করছেন। পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদক। এই সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের জন্মদিন আজ। দিনটি উদযাপন ও অন্যান্য প্রসঙ্গে কথা হয় তাঁর সঙ্গে...

৮৩ বছরে পা রেখেছেন। জন্মদিনে দৈনিক সমকাল পরিবারের পক্ষ থেকে আপনাকে শুভেচ্ছা। দিনটি কীভাবে কাটানোর পরিকল্পনা করেছেন?

শুভেচ্ছার জন্য সমকাল পরিবারের সবাইকে ধন্যবাদ। এ দিন ঘিরে বিশেষ কোনো পরিকল্পনা নেই। আর কখনও ঘটা করে দিনটি উদযাপন করি না। শুভাকাঙ্ক্ষীরা শুভেচ্ছা জানান– এটাই ভালো লাগার। আমি সব সময়ই পারিবারিক আবহে জন্মদিন পালন করার চেষ্টা করি। এবারও সেরকমই হবে। পরিবারের সবাই মিলেই একসঙ্গে কোথাও খাওয়াদাওয়া করি। এটাই আমাদের জন্মদিন উদযাপন। এ বিশেষ দিনে আনন্দের সঙ্গে একটু মন খারাপও থাকবে। জন্মদিনের পরদিন নাতনি দেশের বাইরে পড়তে যাবে। এ নিয়ে পরিবারের সবারই মন খারাপ। 

জন্মদিন পালনের সংস্কৃতিকে কীভাবে দেখেন?

যে যার রুচি অনুযায়ী দিনটি উদযাপন করেন– এটাই স্বাভাবিক। সবারই যে ঘটা করে জন্মদিন পালন করতে হবে, আমি তা মনে করি না। কীর্তিমানদের জন্মদিনই পালন হওয়া উচিত। বিশেষ দিনটি পারিবারিকভাবে উপযাপন করাই ভালো– এটি  আমার ব্যক্তিগত অভিমত। 

জন্মদিন এলে কী উপলব্ধ হয়? 

এই বয়সের জন্মদিন সুখের নয় বরং মনে করিয়ে দেয় সময় ফুরিয়ে এসেছে। সেই অনুযায়ী কাজ করতে পারিনি। এখনও অনেক কিছু করার বাকি আছে। এটি বুঝেও সক্রিয় হই না। একটু আলস্য আছে। কিছু স্বপ্নপূরণ এখনও বাকি। আরও কিছুদিন বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা আছে। নতুন আশা নিয়ে ৮৩-এর দিকে যাত্রা করতে চাই। 

৮২ বছর বয়সে আপনার সেরা অর্জন কী?

মানুষের ভালোবাসা। এটি আমার এগিয়ে চলায় পাথেয়।

ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউটের [আইটিআই] উদ্যোগে তরুণ নাট্যকারদের নিয়ে একটি কর্মশালা হচ্ছে। কোন ভাবনা থেকে সংগঠনের তরফ থেকে এ উদ্যোগ নিয়েছেন?

দেশে নাট্যকারের খুব অভাব। সেই উপলব্ধি থেকে আমরা চেয়েছি নাট্যকার আরও তৈরি হোক। এ কারণে পদ্ধতিগতভাবে তাদের উৎসাহিত করতে এ আয়োজন। এরই মধ্যে এক সপ্তাহ কাজ হয়েছে। ছয় মাসের এ কর্মশালা। বিরতি দিয়ে দিয়ে এটি হবে। নাট্যকার মাসুম রেজা কর্মশালা পরিচালনা করছেন। ১১ জন্য নাট্যকারকে আমরা বাছাই প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে কর্মশালায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়েছি।

৫২ বছর ধরে ‘থিয়েটার’ পত্রিকা সম্পাদনা করছেন। এত দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়া কীভাবে সম্ভব হলো?

থিয়েটার পত্রিকাটি এতদিন ধরে চালাতে পেরেছি, এটি আমার একটি গর্বের জায়গা। শুরু থেকেই পত্রিকাটিকে দলীয় গণ্ডির মধ্যে রাখতে চাইনি। কারণ, এটি সবার পত্রিকা। চলার পথে সবার সহযোগিতা পেয়েছি। লেগে ছিলাম বলে অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও হতোদ্যম হইনি। নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়েও পত্রিকাটি চালিয়ে আসছি। আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের নব নাট্যচর্চার বিশ্বাসযোগ্য সহযাত্রী  ‘থিয়েটার’ পত্রিকা। 

একসময় বিটিভিতে সংবাদ পাঠ করতেন। এখনকার সংবাদ পাঠের ধরন কেমন লাগে?

ভালোই। এ পেশায় নতুন নতুন ছেলেমেয়ে আসছে। উপস্থাপনায়ও নতুনত্ব এসেছে। আগে কারিগরি সুযোগ-সুবিধা কম ছিল। নানা সীমাবদ্ধতা নিয়ে কাজ করতে হয়েছে। নতুন নতুন প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে এখন সবাই এগিয়ে যাচ্ছে। 

জীবনের এ সময়ে এসে কি কখনও মনে হয়েছে জীবন যেভাবে কাটাতে চেয়েছিলেন, সেভাবে পেরেছেন–

অনেকটা পেরেছি। নাটকের জন্য কাজ করে গেছি। কিছুটা হলেও বাংলাদেশের মঞ্চ নাটক ও সংস্কৃতির জন্য অবদান রাখতে পেরেছি। আইটিআইর সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে পরিচিত করে দেওয়ার সুযোগ হয়েছে। এখন মাঝেমধ্যে মনে হয়, আবার যদি এই জীবনটা ফিরে পেতাম, তাহলে অর্থপূর্ণ কাজ করে জীবনটাকে আরও পরিপূর্ণ করতাম। স্বীয় ক্ষমতাবলে যে জায়গা থেকে আমি উঠে এসেছি, সে অনুযায়ী জীবনে অনেক পেয়েছি।

মঞ্চ নাটকের এই সময়কে কীভাবে দেখছেন?

সাম্প্রতিককালে বেশ কিছু ভালো নাটক মঞ্চে এসেছে। যার ফলে আমাদের দর্শক আবার মঞ্চের দিকে ফিরছে। সাংগঠনিক দিকের চেয়েও শিল্পসৃষ্টিতে কোন নাট্যদল কী রকম কাজ করছে, সেটা জরুরি। সুতরাং কাজটি ভালোভাবে করা দরকার। দলাদলি, রেষারেষি আসলে কোনো কাজে দেয়  না। এটি আমি কখনও গুরুত্ব দিইনি। 

আপনার কাছে জীবনের সংজ্ঞা কী?  

জীবন একটাই। সুতরাং জীবনকে ভালোবাসি। জীবনকে অর্থবহভাবে উদযাপন করা প্রয়োজন। আমি বিশ্বাস করি, এ জীবন কেবল নিজের জন্য নয়, আশপাশের মানুষের জন্য। মানুষের কতটা উপকারে আসছি, সেটাই জরুরি মনে করি। শুধু নিজের জন্য নয়, সবাইকে নিয়ে ভালোভাবে আনন্দে বেঁচে থাকার নামই জীবন।

আরও পড়ুন

×