ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

তাদের যে চরিত্র মনে গেথে আছে

তাদের যে চরিত্র মনে গেথে আছে

রাসেল আজাদ বিদ্যুৎ

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২০ | ০০:০৫ | আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২০ | ০০:২৪

 অভিনীত চরিত্র কখনও যে জীবনের সঙ্গে মিশে যায়, তা অনেকেই বুঝতে পারেন না। অনেক সময় চরিত্রই পরিচিতি এনে দেয় দর্শকের কাছে। আড়ালে ঢাকা পড়ে নিজের আসল পরিচয়। অভিনয় দিয়ে দর্শকের কাছে চরিত্রকে বাস্তব করে তোলার বিষয়টি অনেকের প্রিয়। একই সঙ্গে প্রিয় হয়ে ওঠে চরিত্রগুলো। তেমনই কিছু চরিত্রের কথা ভুলতে পারেন না অনেক অভিনয়শিল্পী। প্রিয় অভিনেত্রীদের পছন্দের কিছু চরিত্র নিয়েই এ আয়োজন

জয়া আহসানের কথা দিয়েই শুরু করা যাক। বেশ কয়েক বছর আগে তিনি অভিনয় করেছিলেন নূরুল আলম আতিকের 'ডুবসাঁতার' ছবিতে। আগে-পরে অনেক নাটক, চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। ভালো লাগা তৈরি হয়েছে সেসব নাটক, টেলিছবি ও চলচ্চিত্রের বেশ কিছু চরিত্রের প্রতি। তারপরও ভুলতে পারেন না 'ডুবসাঁতার' ছবির রেনুকে। জয়ার কথায়, 'রেনু এমন চরিত্র, যাকে আমি কোনো দিন ভুলতে পারব না। মনে আছে, এই চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে নিজেকেই হারিয়ে ফেলেছিলাম রেনুর মাঝে। যেন আমি অন্য আর কেউ নই, কেবলই রেনু। তার চলা, বলা, ভাবনা, কল্পনা সবই যেন নিজের, এটাই আমি। এই যে চরিত্র নিজের বলে ভেবে নেওয়া, এটা সম্ভব হয়েছে শুধু নিজেকে রেনুর মতো করে পর্দায় তুলে ধরতে পারার জন্য।'

এটা রেনু নয়, জয়ার প্রিয় চরিত্র আরও আছে, যেসব চরিত্রে জয়া অভিনয় করেননি তেমন কিছু চরিত্র মনে মাঝে গেঁথে আছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'পোস্টমাস্টার' গল্পের রতন চরিত্রের প্রতি আছে অন্যরকম এক আকর্ষণ। যদিও এখন এই কিশোরীর চরিত্রে অভিনয় করা কঠিন, তারপরও তার মনে হয়, কখনও যদি এই চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেতেন, তাহলে মনপ্রাণ উজার করে অভিনয় করে যেতেন। অবশ্য হুমায়ূন আহমেদের 'দেবী' উপন্যাসের রানুকেও ভালোবেসে ফেলেছেন তিনি। 'দেবী' ছবিতে অভিনয়ের আগে থেকেই এই চরিত্রের প্রতি দুর্বলতা ছিল তার। একই লেখকের জরি চরিত্রের প্রতি ভীষণ ভালো লাগা আছে অভিনেত্রী জাকিয়া বারী মমর। তার কথায়, 'দারুচিনি দ্বীপ' ছবির এই চরিত্র আমাকে এতটাই সম্মোহিত করেছিল যে, শুটিংয়ের সময় ভুলে গিয়েছি, আমি মম নামের কোনো তরুণী। জরি যেন অন্য কেউ নয়, আমি সেই। তাই এই চরিত্রের মাঝে অনায়াসে ডুব দিতে পেরেছিলোম। মমর এই কথা স্পষ্ট, কীভাবে জরি চরিত্রটি আত্মপরিচয় ভুলিয়ে দিয়েছিল। একদিক থেকে তাতে মঙ্গলই হয়েছে। কেননা এই চরিত্রের জন্য তিনি অভিনেত্রী হিসেবে পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি।

হুমায়ূন আহমেদের 'শ্রাবণ মেঘের দিন' ছবির কুসুম চরিত্র নিয়েও ভালো লাগার কথা শোনা গেছে অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনের কাছে। হুমায়ূন আহমেদের গল্প, উপন্যাসের অসংখ্য চরিত্র প্রিয় হলেও কুসুমের কথা আলাদা করেই সবসময় বলতে চেয়েছেন তিনি।

অন্যদিকে শুরু থেকেই রবীন্দ্র বন্দনা শোনা গেছে অভিনেত্রী অপি করিমের মুখে। অপি করিমের কথায়, রবীন্দ্রনাথের একটি বা দুটি চরিত্রের কথা আলাদা করে বলা কঠিন। সব চরিত্রের প্রতি এক ধরনের প্রেম আছে। এটা ঠিক, 'রক্তকরবী' নাটকের নন্দিনী চরিত্রে অভিনয় করে অনেকের ভালোবাসা পেয়েছি। যে জন্য এই চরিত্র নিয়ে এখনও আলোচনা হয়। তারপরও বলল, নন্দিনী থেকে শুরু করে বরিঠাকুরের প্রতিটি নারী চরিত্রের প্রতি আছে অন্যরকম দুর্বলতা। সুযোগ পেলেই তার কোনো একটি চরিত্রে অভিনয় করব। অপির মতো রবীন্দ্র চরিত্রের প্রতি দুর্বলতা কম-বেশি সব অভিনয়শিল্পীর আছে।

পূর্ণিমাও আছেন সে দলে। যদিও বাণিজ্যিক ধারার অসংখ্য ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি, তারপরও প্রিয় চরিত্রে কথা বলতে গেলে প্রতিবার তার মুখে 'সুভা' চরিত্রের কথা উঠে এসেছে। এর বাইরেও কালজয়ী গল্প ও উপন্যাসের চরিত্রে কাজ করার ইচ্ছা সবসময় ছিল তার। পূর্ণিমার কথায়, কিছু চরিত্র পাঠকের হৃদয় যেমন দখল করে আছে, তেমনি পর্দায়ও তার আবেদন এতটুকু কম নয়। দীর্ঘদিনের অভিনয় ক্যারিয়ারে তাই সাহিত্যনির্ভর কাজেই বেশি আনন্দ পেয়েছি।

পূর্ণিমার মতো একই রকম কথা শোনা গেছে অভিনেত্রী অপর্ণা ঘোষের মুখে। যদিও সাহিত্যনির্ভর চরিত্রে তাকে ছোটপর্দায় বেশি দেখা গেছে। তাই টিভি নাটক, টেলিছবির অনেক চরিত্রই প্রিয় হয়ে উঠেছে অপর্ণার। এর বাইরে যদি বড়পর্দার কথা জানতে চাওয়া হয়, তাহলে ঘুরেফিরে তিনি 'ভুবন মাঝি' ছবির ফরিদার কথা বলেন। যদিও 'মেঘমল্লার', 'মৃত্তিকা মায়া', 'গণ্ডি', 'সুতপার ঠিকানা'সহ তার প্রতিটি ছবির চরিত্রই প্রিয় তালিকায় রেখেছেন। বাকি চরিত্রগুলো থেকে 'ভুবন মাঝি'র ফরিদাকে তিনি আলাদা করে বলেন। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, 'কিছু চরিত্র অভিনয়ের মধ্য দিয়ে প্রিয় হয়ে ওঠে। ফরিদা তেমনই এক চরিত্র। যাকে আমি নিজের মধ্যে ধারণ করতে চেয়েছি সবসময়।'

আরও পড়ুন

×