গড়ে উঠবার গল্প
নাটকের গল্প থেকে মনপুরা

'মনপুরা' চলচ্চিত্রে ফারহানা মিলি ও চঞ্চল চৌধুরী
গিয়াসউদ্দিন সেলিম
প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২০ | ১২:০০ | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২০ | ০২:০৬
প্রতিটি সৃষ্টির পেছনে গল্প থাকে। ফ্রেমের দুনিয়ার যে যাপিত জীবন দর্শক দেখে, তার পেছনেও থাকে অসংখ্য অজানা গল্প। তিন তারকা নির্মাতা- গিয়াস উদ্দিন সেলিম, তৌকীর আহমেদ ও অমিতাভ রেজা তুলে ধরলেন নিজ নিজ জনপ্রিয় সৃষ্টকর্ম নির্মাণের ঘটনা।
নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের সঙ্গে আমার সখ্য ছিল। তার সঙ্গে একবার কী কাজে যেন বাংলা একাডেমিতে গিয়েছিলাম। তখন সেখানে 'প্রতীচ্য পুরাণ' নামে একটা বই তিনি আমার হাতে দিয়ে বললেন, তুমি বইটি পড়ে দেখো। বইটিতে গ্রিক পুরাণের ওপর ছোট ছোট গল্প আছে। সেখানেই পেলাম হিরো আর লিয়ান্ডারের গল্পটি। ছেলে আর মেয়েটি সমুদ্রের দু'পাড়ে থাকে। রাতের বেলা মেয়েটি মশাল জ্বালে আর ছেলেটি সাঁতরে সমুদ্র পার হয়। একদিন এভাবেই মেয়েটি মশাল জ্বালে, ছেলেটা সমুদ্রে ঝাঁপ দেয়, কিন্তু ঝড় বৃষ্টির চাপে মেয়েটির হাতের মশাল নিভে যায়, ছেলেটি দিকভ্রান্ত হয়ে মারা যায়, পরের দিন তীরে তার লাশ দেখা যায়, মেয়েটিও এ দৃশ্য দেখে সমুদ্রে ঝাঁপ দেয়।
গ্রিক পুরাণের লিয়ান্ডারের মশাল জ্বেলে অপেক্ষার দৃশ্য আমাকে ভাবায়। পরে সে ভাবনা উঠে আসে 'মনপুরা'র পরীর হাত ধরে। যদিও শুরুর দিকে গল্পটি সিনেমায় তুলে ধরার কোনো ইচ্ছা ছিল না। ১৯৯৭ সালে নাটকের জন্য একটি পাণ্ডুলিপি লিখেছিলাম। নায়িকা হিসেবে আফসানা মিমির নাম ভাবনায় ছিল। এক দিন তাকে গল্প শোনানোর পর বললেন, 'এটি নাটক না। এটি দিয়ে সিনেমা বানাও। ভালো হবে।' তখন পাণ্ডুলিপিটা রেখে দিই।
এরপর ২০০৩ সালে প্রথমবার চেষ্টা করি সিনেমা বানানোর জন্য। তখন করা যায়নি। তারপর ২০০৭ সালে দ্বিতীয়বার পরিকল্পনা করি। কিন্তু একটি দুর্ঘটনার কারণে ছবির প্রযোজক প্রকল্পটি থেকে পিছিয়ে যান। ততদিনে প্রি-প্রডাকশন শুরু করেছি। পিছিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। সোনাই চরিত্রের চঞ্চল চৌধুরীকে দেখেই পছন্দ হয়। এক দিন মিলিকে আমার অফিসের নিচে দেখলাম শাড়ি পরা। জানলাম, সে থিয়েটার করত। টুকটাক অভিনয়ও করে। পরীর চরিত্রে তাকে কাস্ট করলাম। এভাবেই চঞ্চল আর মিলির কাস্টিং হয়।
মনপুরা সিনেমার গানগুলো আড্ডার মধ্য দিয়েই তৈরি হয়। তাজুল নামে এক বন্ধু ছিল। ধানমন্ডিতে তাদের বাসা। ওখানে আমরা পুরোনো বন্ধুরা আড্ডা দিতাম। কৃষ্ণকলিও আড্ডা দিত। সে এই ছবির জন্য গান করল দুইটি। অর্ণব আবার সংগীতায়োজন করল। ফজলুর রহমান বাবু ছবিটির অভিনেতা। তাকে দিয়েও গান গাওয়ানোর সিদ্ধান্ত হলো। আমরা গান গাওয়াই মমতাজ বেগমকে দিয়েও। এভাবেই সব গান তৈরি হলো। ২০০৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পাওয়া 'মনপুরা' আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে ইতিহাস হয়ে আছে। দলগত প্রচেষ্টা ও দেশীয় সংস্কৃতিকে ধারণ করার কারণেই এমন সফলতা পাওয়া সম্ভব হয়েছে।
- বিষয় :
- মনপুরা
- বিনোদন
- গিয়াস উদ্দিন সেলিম