নাবিলা তুফান ও অন্যান্য

মাসুমা রহমান নাবিলা
অনিন্দ্য মামুন
প্রকাশ: ০৭ জুন ২০২৪ | ২১:১৬ | আপডেট: ০৮ জুন ২০২৪ | ১২:৪৬
‘আয়নাবাজি’র নাবিলাও যে এভাবে ফিরবেন, ভাবনাতেই ছিল না কারও। ওটিটির একটি অ্যাভারেজ কাজ কিংবা ঈদের কোনো অনুষ্ঠান উপস্থাপনার মাধ্যমে তাঁর ফেরা হবে– ভাবনা সবার এমনই ছিল। কিন্তু নাবিলা এলেন অন্যভাবে, হাঁটলেন বৃত্তের বাইরে একেবারে ভিন্ন এক ছকে। চন্দ্রবিন্দুর গাওয়া সেই গানের মতোই মাসুমা রহমান নাবিলার বেলায়ও উচ্চারিত হলো– এভাবেও ফিরে আসা যায়...।
শুরুর গল্প...
সৌদি আরবে বড় হয়েছেন নাবিলা। ২০০০ সালে জেদ্দা থেকে স্থায়ীভাবে ঢাকায় চলে আসেন। দেশে ফেরার আট মাসের মাথায় তাঁর বাবা মারা যান। বড় সন্তান হিসেবে সংসারের হাল ধরতে হয় তাঁকে। ২০০৬ সালে উপস্থাপনার মাধ্যমে তাঁর যাত্রা শুরু। এরপর ধীরে ধীরে অভিনয়। ২০০৬-এ বাংলাভিশনে ‘এবং ক্লাসের বাইরে’ নামে একটি স্কুল ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে মিডিয়া জগতে নাবিলার পথচলা শুরু। এরপর আর থামেননি। সে সময় রেডিও জকি হিসেবেও কাজ করেছেন। নাবিলার মডেলিংয়ে আত্মপ্রকাশ ঘটে ২০০৬ সালে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত শার্প ব্লেডের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে। এরপর বহু পণ্যের মডেল হয়েছেন। অভিনয় করেছেন নাটকেও। ‘আয়নাবাজি’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে আলোচনায় আসেন মাসুমা রহমান নাবিলা। ২০১৬ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটিতে নাবিলা অভিনয় করেন চঞ্চল চৌধুরীর বিপরীতে। ‘আয়নাবাজি মুক্তির চার বছর পর তাঁকে দেখা যায় দ্বিতীয় চলচ্চিত্রে। ‘১৯৭৫: অ্যান আনটোল্ড স্টোরি’ নামে একটি ছবিতেও অভিনয় করেন।
প্রথম ছবি ছিল শিক্ষাসফর
‘আয়নাবাজি’ সিনেমা দিয়ে জনপ্রিয়তা পেলেও সিনেমাটির জন্য কোনো পারিশ্রমিক নেননি নাবিলা। কেন নেননি সে প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছিলেন, সিনেমার শুটিংয়ের পুরো তিন মাস সময়কে তিনি লার্নিং পিরিয়ড হিসেবে নিয়েছিলেন। এখান থেকে তিনি অনেক কিছু শিখেছেন, যে কারণে পারিশ্রমিক নেননি। পরিশ্রমের বিনিময়ে তিনি শিখেছেন। তাঁর কাছে সিনেমাটির পরিচালক অমিতাভ রেজা চৌধুরী একটি প্রতিষ্ঠান। ২০১৬ সালে মুক্তি পায় ছবিটি। এ ছবি মুক্তির পরই জীবন বদলে যায় নাবিলার। তাঁর ভাষ্য, “আয়নাবাজি মুক্তির পর ছবিটির নাম আমার নামের সঙ্গেই জড়িয়ে যায়। অনেকেই নাবিলা নাম নেওয়ার আগে ‘আয়নাবাজির নাবিলা’ সম্বোধন করা শুরু করেন। ছবিটি আমার ক্যারিয়ারকে আমূল বদলে দিয়েছে।” উপস্থাপনা ক্যারিয়ার শুরুর ১০ বছর পর আয়নাবাজিতে নাম লেখান নাবিলা।
মা হওয়ার পর পাল্টে যায় চিত্র...
গত বছরের ১ জুলাই আয়নাবাজিখ্যাত অভিনেত্রী নাবিলার জন্য ছিল স্বপ্নের মতো একটি দিন। তাঁর ঘর আলো করে আসে একমাত্র সন্তান মালহার মাসুমা হক; যে সন্তানের জন্য ক্যামেরার সামনে থেকে দূরে ছিলেন নাবিলা। ক্যারিয়ারের সুবর্ণ সময়ে অভিনয় না করে মা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে মালহারের জন্মের পর বেশিদিন আর ঘরে বসে থাকতে পারেননি নাবিলা। সাড়ে তিন মাসের মালহারকে নিয়েই শুটিংয়ে ফিরেছেন। হ্যাঁ, সাড়ে তিন মাসের সন্তানকে নিয়ে টানা দিন দিন একটি বিজ্ঞাপনের শুটিংয়ে অংশ নেন তিনি। কিন্তু ফেরার তাড়না থাকলেও অভিনয়ে ফেরা হচ্ছিল না নাবিলার। সেটি নানা কারণেই।
নাবিলা বলেন, ‘শোবিজে কাজ করছি ১৭-১৮ বছর ধরে। শুরু থেকেই সবার ভালোবাসা পেয়ে আসছি। যখন বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিলাম, তখন কিছু মানুষ আমাকে বলেছিলেন, বিয়ে করলে কাজ কমে যায়। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে সেটি হয়নি। আমি বরং বিয়ের পর আরও ব্যস্ত হয়ে পড়ি কাজ নিয়ে। কিন্তু মা হওয়ার পর মানুষের মাথায় এক ধরনের কনসেপ্ট হয়তো ঢুকে যায়। প্রযোজক-পরিচালকরা হয়তো ভাবেন, মা হওয়ার পর আমি এখনই কাজ করতে রাজি হবো কিনা, ঠিকমতো সময় দিতে পারব কিনা ইত্যাদি। অথবা যেহেতু মা হওয়ার জন্য একটু আড়ালে চলে যেতে হয়, তাই হয়তো আউট অব সাইট, আউট অব মাইন্ড হয়ে যেতে হয়। যারা পর্দায় আছেন, তাদেরই তারা বারবার রিপিট করতে চান। এগুলো আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। অন্যদের ক্ষেত্রেও একই বিষয় ঘটবে সেটি বলছি না। আমি কিন্তু মাতৃত্বকে কখনোই জটিল করিনি। মা হওয়ার পর বড় বড় কিছু কাজের প্রস্তাব আসে। এর একটি ‘তুফান’। যে ‘তুফান’ নিয়ে এখন সবাই মেতে আছে।
এভাবেও ফিরে আসা যায়...
হ্যাঁ, মা হওয়ার পর নাবিলা যখন মরুর বুকে তৃষ্ণার্ত পাখির মতো অপেক্ষায় ছিলেন ‘কখন জলের সন্ধান পাব, কখন ভালো একটা কাজের প্রস্তাব আসবে’, যে কাজ তাঁকে নতুন করে চর্চায় নিয়ে আসবে; পূরণ করবে এক বছরের শূন্যতা। অবশেষে সে কাজ পেয়েছেন। নাবিলা মূলত উপস্থাপনাতেই সিদ্ধহস্ত। অভিনয় বলতে গেলে ‘আয়নাবাজি’, ‘ফাইভ ফিমেল ফ্রেন্ডস’ নামে একটি ধারাবাহিক এবং ‘১৯৭৫: অ্যান আনটোল্ড স্টোরি’ ছবিতে কাজ করেছেন। কাজের ইতিহাসের দিকে তাকালে নাবিলার উইকিপিডিয়া খুব বেশি লম্বা নয়। কিন্তু এক আয়নাবাজিই তাঁকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। যে উচ্চতা থেকে তাঁকে নামাতে পারেনি কেউ।
আয়নাবাজির হৃদির মতো করে আর কেউ তাঁকে দাঁড় করাতে পারেনি চলচ্চিত্রে। সেই নাবিলা হুট করেই দিলেন ধামাকা খবর। যেন চরিত্র থেকে রিভেঞ্জ নিলেন তিনি। যে রকম সিনেমায় তাঁকে ভাবা হতো, সেই ভাবনা উতরে চুক্তিবদ্ধ হলেন শাকিব খানের বিপরীতে তুফান সিনেমায়। যে সিনেমা নিয়ে হইচই বইছে দেশে। রায়হান রাফির পরিচালনায় সিনেমাটি প্রযোজনা করছে যৌথভাবে এসভিএফ, আলফা আই ও চরকি। গত বছর জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে ঘোষণা দেওয়া হয় এ সিনেমার। সে সময় সিনেমার নায়ক শাকিব খানের নাম ঘোষণা করা হয়। তবে জানানো হয়নি নায়িকার নাম। পরে যখন জানা গেল থাকছেন নাবিলা, সবাই তো অবাক। অনুরাগীদের এমন বিস্ময়ে মুগ্ধ নাবিলা। বললেন, ‘তুফান ছবিতে আমার উপস্থিতি দেখেও দর্শক অবাক হবেন। আয়নাবাজির পর অন্য এক নাবিলাকে দেখবেন দর্শক।’
- বিষয় :
- মাসুমা রহমান নাবিলা