দিন শেষে আমরা সবাই পেশাজীবী পরিবার: তারিক আনাম

তারিক আনাম খান
এমদাদুল হক মিলটন
প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১৮:৩৩ | আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১৮:৩৭
নিয়মিত, অনিয়মিত সদস্যদের দাবির মুখে শেষ পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সংস্কার কমিটি গঠন করেছে অভিনয় শিল্পী সংঘ। গত বুধবার রাজধানীতে অনুষ্ঠিত বিশেষ সাধারণ সভায় নন্দিত অভিনেতা ও প্রযোজক তারিক আনাম খানকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে। নতুন দায়িত্ব ও অন্যান্য প্রসঙ্গে এ অভিনেতার সঙ্গে কথা বলেছেন সমকালের সঙ্গে।
কোন ভাবনা থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সংস্কার কমিটির প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন?
আমরা দেখছি শিল্পী সংঘের কমিটি নিয়ে এক ধরনের বিভাজন, বিভেদ তৈরি হচ্ছে। এ বিভক্তি একেবারে কাম্য নয়। সেই লক্ষ্যেই মনে হলো দেখি একটু এগিয়ে দেখি কিছু করা যায় কিনা। আমরা দেখেছি সব জায়গাতেই ভুলভ্রান্তি ফেলে নতুন করে এগোবার প্রক্রিয়া চলছে। এটি তো পেশাজীবীদের সংগঠন। এ সংগঠনেও যদি ভুলত্রুটি থেকে থাকে, আমাদের নিজেদের সুবিধার জন্য যতটুকু সুন্দর করা যায়, তার তাগিদ অনুভব করেছি। একেবারে পেশাদারির বিষয়টা বিবেচনা করে দায়িত্ব নিয়েছি।
অন্তর্বর্তী সংস্কার কমিটি কোন কোন কাজ করবে?
শিল্পীদের স্বার্থ রক্ষার জন্যই তো এ সংগঠন। আমাদের প্রথম দায়িত্ব শিল্পীদের কী প্রয়োজন, তা খুঁজে বের করা। যে কোনো সদস্য এসে বলতে পারবেন কী সংস্কার প্রয়োজন। সংগঠনের বাইরের কেউ যদি কিছু বলতে চান, তাদের কথাও আমরা শুনব। সবার মতামত নিয়েই সংস্কার প্রস্তাব সাধারণ সভায় উপস্থাপন করা হবে। আমার সঙ্গে আরও চার থেকে ছয়জন থাকবেন। সবাই মিলে বসে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাব যে আমরা কী করতে চাই। গঠনতন্ত্র পরিবর্তন-পরিবর্ধন হবে। শুটিংয়ের সময়, পারিশ্রমিক থেকে শুরু করে শিল্পীকে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত করানোসহ শিল্পীদের স্বার্থ সংরক্ষণে নানা বিষয়ে কাজ করতে চাই। কর্মক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা দরকার। আমরা চার মাসের মধ্যে একটা রূপরেখা প্রণয়ন করতে চাই। সংস্কার কমিটির দেওয়া সুপারিশগুলো সাধারণ সভায় পাস হবে। ওই সভা থেকেই পরবর্তী নির্বাচন কমিশন গঠন করে ঘোষণা হবে নির্বাচনের তারিখ।
এ দায়িত্ব কতটা চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করেন?
চ্যালেঞ্জিং তো বটেই। আমরা একেবারে সবকিছু পাল্টে ফেলতে পারব না। চেষ্টা করব সাধ্যমতো সবকিছু করার।
শিল্পীরা রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?
কোনো শিল্পী রাজনীতিবিদ হবেন কিনা সেটা বলব না। কিন্তু কোনো শিল্পকর্মই রাজনীতির বাইরে না বলে আমি মনে করি। আমি যদি মানুষের কথা বলি, সমাজের মুক্তি চাই অথবা আমি যদি মানুষের ভালো চাই, তাহলে রাজনীতিহীন হওয়াটা খুব মুশকিল। যদি কেউ রাজনীতি করে করুক, সে ক্ষেত্রে আমরা তো কাউকে মানা করিনি। এর আগেও তো আমরা অনেককে দেখেছি। কিন্তু সেটার প্রভাব যেন আমাদের শিল্পী সংঘের ওপর না পড়ে। রাজনৈতিক মতাদর্শের পার্থক্য থাকতে পারে, তবে আমরা লেজুড়বৃত্তি করব না।
বিনোদন অঙ্গনের এই সময়কে কীভাবে দেখছেন?
গত দুই মাসে রাজনৈতিক অস্থিরতা প্রভাব ফেলেছে নাটক-সিনেমার ওপরও। এমন পরিস্থিতিতে নাটক কিংবা সিনেমা মুক্তি দিতে ভয় পাচ্ছেন প্রযোজকরা। তবে আশার কথা হলো পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে শুরু করেছে। সম্প্রতি রাজনৈতিক পরিবর্তনের ফলে আমাদের নাটক, সিনেমা এবং ওটিটি একটা বন্ধ্যত্ব অবস্থার মধ্যে পড়ে আছে। আমাদের অনেক শিল্পী-টেকনিশিয়ান আছেন, যারা দিনের আয় দিয়ে তাদের সংসার চালান। তাদের অবস্থা কিন্তু ধীরে ধীরে ভয়াবহতার দিকে যাচ্ছে। এটা অনেক কষ্টের।
অন্তর্বর্তীকালীন নতুন সরকার এসেছে। এ ক্ষেত্রে কর্মস্থলে কতটা স্বাধীনতা ফিরেছে...
সবে তো শুরু হলো। আমি চাই যারা নতুনভাবে বাংলাদেশ দেখছেন, তারা এটা মনে রাখবেন শিল্প-স্বাধীনতা বড় স্বাধীনতা। আজকে ওটিটি কিংবা ইউটিউবের কল্যাণে আমাদের নাটক বিশ্বব্যাপী চলছে। আমি আজ পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন নই। তাহলে কেন আমাদের শিল্পীরা হলিউড-বলিউড-ইরানে যাবে না। কাজের এই জায়গাটা তৈরি করা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। এসব মাথায় নিয়ে পরিবর্তনের জন্য এগিয়ে যেতে চাই।
শিল্পীদের উদ্দেশে আপনার বার্তা কী?
দিন শেষে আমরা সবাই একটি বৃহৎ পেশাজীবী পরিবার। অভিনয়শিল্পীদের তৈরি হওয়াটা জরুরি। নিজেকে যুগোপযোগী রাখতে হবে। পেশার উন্নতির জন্য সবার সহযোগিতা কাম্য।
- বিষয় :
- তারিক আনাম খান
- নাটক
- অভিনয়শিল্পী সংঘ