জীবনে ‘ভালোবাসা’ এবং ‘আনন্দ’ শব্দ দুটি খুব জরুরি: আফসানা মিমি

আফসানা মিমি ছবি: সংগৃহীত
বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২৪ | ১৪:২৬
আফসানা মিমি। অভিনেত্রী ও নির্মাতা। ৯ বছর আগে তিনি গড়ে তুলেছেন শিশু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘ইচ্ছেতলা’। গতকাল এ প্রতিষ্ঠানের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় ‘সুকুমার রায় উৎসব’। এ আয়োজন ও ইচ্ছেতলা প্রসঙ্গে কথা হলো তাঁর সঙ্গে–
ইচ্ছেতলার সুকুমার উৎসব সম্পর্কে বলুন?
প্রখ্যাত ছড়াকার, শিশুসাহিত্যিক, রম্যরচনাকার, প্রাবন্ধিক ও নাট্যকার সুকুমার রায়ের জন্মদিন ছিল গত ৩০ অক্টোবর। এ সময়ের শিশুদের সঙ্গে সুকুমার রায়ের ছড়া, কবিতা ও নাটকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে এ আয়োজন করা হয়েছে। ‘আবোল তাবোল’ শিরোনামের এ আয়োজনে অংশ নিয়েছে প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ জন শিশু ও কিশোর। ইচ্ছেতলার শিশু-কিশোররা সুকুমার রায়ের ছড়া, কবিতা, তাঁর সাহিত্য পড়ার পাশাপাশি তাঁর লেখা ‘অবাক জলপান’ নাটকটির মঞ্চায়ন করে।
ইচ্ছেতলায় কি সারা বছরই এমন আয়োজন থাকে?
হ্যাঁ। সারা বছরেই আমাদের বিভিন্ন ধরনের আয়োজন থাকে। এই যেমন শ্রাবণে আমরা গাছ লাগিয়েছি। আমরা চৈত্রসংক্রান্তি করি, মঙ্গল শোভাযাত্রা করি। প্রবারণা পূণির্মাতে ফানুস উড়িয়েছি, ক্রিসমাসও করেছি।
ইচ্ছেতলা ঠিক কী ধরনের স্কুল?
ইচ্ছেতলাকে আমরা ঠিক স্কুল বলব না, কারণ স্কুলের কনসেপ্টটা এমন যে, স্কুলে কোনো বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে হয়, আবার তা পরীক্ষা দিয়ে প্রমাণ দিতে হয়। ইচ্ছেতলাকে আমরা বলতে পারি একটা কেন্দ্র। শিশু-কিশোরদের সংস্কৃতিচর্চার কেন্দ্র। আমরা চাই, ছেলেমেয়েরা এখানে আসুক। ওদের কিছু সুন্দর সময় কাটুক। প্রতি শুক্র ও শনিবার বিকেলে ঘণ্টা তিনেক সময়ের জন্য বাচ্চারা ইচ্ছেতলায় আসে। ওদের জন্য সব ধরনের বিষয় মিলিয়ে একটা সিলেবাস আমরা তৈরি করে রেখেছি। বাংলা চর্চা ক্লাসে ওরা হয়তো গল্প লেখে বা গল্প শোনে বা ছড়া-কবিতা পড়ে, কিছু ক্রিয়েটিভ রাইটিং করে। গানের ক্লাসটাও একই রকম। ওরা হয়তো সারগাম শিখছে, টুকটাক তাল শিখছে। তার মানে এই না যে, ওরা সংগীতশিল্পী হওয়ার জন্যই গান শিখছে; গান ভালো লাগার জন্যই ওরা গানটা শিখছে।
ইচ্ছেতলা নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী...
আমি এইচএসসি পাস করে থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত হই। আমি মনে করি সেটিই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ। থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম বলেই একটার পর একটা দরজা আমার জন্য খুলে গেছে। এজন্যই আমরা বলছি, সংস্কৃতি ও সৃজনশীলতার চর্চাগুলো আসুক এবং দরজা-জানালাগুলো খুলে যাক। ধুলা-বালি-বৃষ্টি-আলো সব আসুক; তবুও দরজা-জানালাগুলো খোলা থাক। আমরা চাইছি, বাচ্চারা প্রকৃতি আর মানুষকে ভালোবাসুক, দেশটিকে জানুক; সবকিছুর প্রতি তাদের ভালোবাসা তৈরি হোক। সবকিছু তারা আনন্দ নিয়ে করুক। ‘ভালোবাসা’ এবং ‘আনন্দ’ শব্দ দুটো খুব জরুরি জীবনের জন্য। বই তার বন্ধু হোক, গান তার বন্ধু হোক, গল্প তার বন্ধু হোক, প্রকৃতি তার বন্ধু হোক, মানুষ তার বন্ধু হোক।
চলমান পরিস্থিতিতে আপনি কি আশাবাদী?
আমি খুবই আশাবাদী। নৈরাশ্য আমার অভিধানের শেষ শব্দ।
চারদিকে এত এত নেতিবাচক বিষয় ঘটে চলছে। এগুলো এড়িয়ে চলেন কীভাবে?
যখন দেখি কোনো মিথ্যা, অপ বা নেতিবাচক কিছু তখন খুব দ্রুত সেখান থেকে সরে যাই। কখনও নেগেটিভিটি দ্বারা আক্রান্ত হলে আমার ভেতরের আমি আমাকে শাসন করে। মনকে আলোকিত করতে হবে। আর মনের আলো হচ্ছে জ্ঞান। আমার জীবনের বন্ধু হলো মানুষ আর বই। কখনও এমন হয় কোনো মানুষের থেকে দূরে সরে যেতে হয়, কিন্তু বইয়ের ক্ষেত্রে এ সমস্যাটা নেই। বই সবসময়ের বন্ধু। মনে অন্ধকার নিয়ে কখনও শুদ্ধতার চর্চা করা যায় না।
আরেকবার সুযোগ পেলে কী হতে চাইতেন?
এখন যা আছি সেটিই আবার হতে চাইতাম। কিছু কিছু জায়গায় হয়তো সামান্য পরিবর্তন চাইতাম। তবে সব মিলিয়ে যা আছি সেটিই হতে চাইতাম।
- বিষয় :
- আফসানা মিমি