মৃত্যুর আগে দর্শক-সহকর্মীদের যা বলেছিলেন রাজীব

ওয়াসীমুল বারী রাজীব
বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০২৪ | ১৭:৩৫ | আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২৪ | ১৮:০১
সালটা ২০০৪। রাজীব যখন ক্যানসারের সঙ্গে লড়ছেন, তখন তাকে দেখতে গিয়েছিলেন চলচ্চিত্র অঙ্গনের অনেকেই। ততদিনে রাজীব হয়তো বুঝে গিয়েছিলেন, আর বেশিদিন হাতে নেই। চলে যেতে হবে পরকালে। এরই মধ্যে একদিন অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চনসহ কয়েকজন তার সঙ্গে দেখা করেন।
সেদিন হুইল চেয়ারে বসে চোখ মুছতে মুছতে রাজীব বলছিলেন, ‘সবাই কাজকর্মে অনেক ব্যস্ত থাকে। সবাই আমাকে দেখতে আসছে হবে এমন কোনো কথা নয়, দূর থেকে তোমরা আমার জন্য দোয়া কইরো।’
ইলিয়াস কাঞ্চনের অনুরোধে চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িত সবার উদ্দেশে কথা বলেন রাজীব। টিস্যু দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে রাজীব বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন চলচ্চিত্রের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আপনাদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় কাজ করেছি। কাজের সময়ে আপনাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে থাকতে পারি। এটা থেকে যদি কেউ আঘাত পেয়ে থাকেন তাহলে আমাকে মাফ করে দেবেন। আর আমার জন্য সবাই আল্লাহর কাছ দোয়া করবেন। যাতে আমি পরকালে সিফা লাভ করতে পারি, শান্তিতে থাকতে পারি। আমি আপনাদের সবার জন্য দোয়া করি আল্লাহ আপনাদের যেন সুখে-শান্তিতে রাখেন।’
এরপর হয়তো আর রাজীবের সঙ্গে সেভাবে দেখা হয়নি কারও। ২০০৪ সালের ১৪ নভেম্বর ৫২ বছর বয়সে না ফেরার দেশে চলে যান বর্ষীয়ান খল অভিনেতা রাজীব। আজ তার মৃত্যুর দুই দশক পূর্ণ হল।
রাজীবের আসল নাম ওয়াসীমুল বারী রাজীব। ১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি পটুয়াখালী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন রাজীব। সিনেমায় অভিনয় শুরুর আগে তিতাস গ্যাস কোম্পানিতে চাকরি করতেন রাজীব। ১৯৮১ সালে ‘রাখে আল্লাহ মারে কে’ সিনেমার মাধ্যমে রুপালি পর্দায় অভিষেক হয় রাজীবের। এরপর কাজী হায়াতের ‘খোকন সোনা’ সিনেমার মাধ্যমে তারকাখ্যাতি পান এই অভিনেতা। বিএফডিসির ব্যবস্থাপক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
প্রায় দুই শতাধিক বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব-অভিনেতা বিভাগে চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন রাজীব। সিনেমাগুলো হল- ‘হীরামতি’ (১৯৮৮), ‘দাঙ্গা’ (১৯৯১), ‘বিদ্রোহ চারিদিকে’ (২০০০) ও ‘সাহসী মানুষ চাই’ (২০০৩)।
রাজীব অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে- ‘উছিলা, মিয়া ভাই’, ‘সত্য মিথ্যা’, ‘বীরাঙ্গনা সখিনা’, ‘হুমকি’, ‘মা মাটি দেশ’, ‘প্রেম প্রতিজ্ঞা’, ‘দাঙ্গা’, ‘ত্রাস’, ‘দুর্নীতিবাজ’, ‘প্রেম দিওয়ানা’, ‘টাকার অহংকার’, ‘মৃত্যুদণ্ড’, ‘বন্ধন’, ‘চাঁদাবাজ’, ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’, ‘মীরজাফর’, ‘মিথ্যার রাজা’, ‘বেনাম বাদশা’, ‘আখেরি রাস্তা’, ‘বিদ্রোহী কন্যা’, ‘ক্ষমা’, ‘জবরদখল’, ‘প্রিয় তুমি’, ‘বিক্ষোভ’, ‘খলনায়ক’, ‘দেশদ্রোহী’, ‘লুটতরাজ’, ‘ভণ্ড’, ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’, ‘ভাত দে’, ‘সত্যের মৃত্যু নেই’, ‘স্বপ্নের পৃথিবী’, ‘মগের মুল্লুক’ ও স্বপ্নের বাসর প্রভৃতি।
- বিষয় :
- খল অভিনেতা
- ঢালিউড
- এফডিসি