ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

রেড সি আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল: সেরা ছবির পুরস্কার গেল তিউনিসিয়ায়

রেড সি আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল: সেরা ছবির পুরস্কার গেল তিউনিসিয়ায়

রেড সি আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল। ছবি: সংগৃহীত

অনিন্দ্য মামুন, জেদ্দা, সৌদি আরব থেকে

প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০৫:১২ | আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১২:২৭

লোহিত সাগর পারের শহর সৌদি আরবের জেদ্দা। দেশটির বন্দর নগরী হিসেবেও খ্যাতি রয়েছে শহরটির। এই নগরীর অন্যতম ঐতিহাসিক স্থান আল বালাদ, যা প্রায় আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন ইতিহাস বুকে ধারণ করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এই অঞ্চলটি বিগত ১২টি দিন মেতে উঠেছিল ভিন্ন এক আমেজে। মেতে ছিল বিশ্ব সিনেমার জাকালো উৎসবে। অথচ বিশ্ববাসী আজ থেকে পাঁচ-সাত বছর আগেও কল্পনা করতে পারেনি সিনেমা নিয়ে এতো জাঁকালো আয়োজন সৌদির মত দেশে হতে পারে। কল্পনা শক্তির বাইরে গিয়েই বিগত তিন বছর ধরে সিনেমা নিয়ে এমন মহাযজ্ঞ করে বিশ্ববাসীকে চমকে দিয়ে আসছিল সৌদি সরকার।

সেই ধারাবাহিকতায় জেদ্দার আল বালাদ শহরে এবারও গত ৫ ডিসেম্বর বসেছেল রেড সি ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, যেখানে জমায়েত হয়েছিলেন হলিউড, বলিউড, কোরিরিয়ান, ইরানি, মিশরীয় ও বাংলাদেশের বিনোদন দুনিয়ার বাঘা বাঘা সব তারকারা। যাদের রেড কার্পেটে জলমলে উপস্থিতি দেখেছে বিশ্ব। সেই আয়োজনের পর্দা নামল ১৪ ডিসেম্বর। 

রেড সি আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের এবারের চতুর্থ সংস্কণে তিউনিসিয়ার পরিচালক লুতফি আচৌর পরিচালিত ‘রেড পাথ’ সেরা ফিচার ফিল্মের জন্য মর্যাদাপূর্ণ গোল্ডেন ইউসর পুরস্কার পেয়েছে। ছবিটির গল্প একটি যুদ্ধকালীন অঞ্চলের মানসিকভাবে আহত হওয়া একজন শিশুর অসাধারণ যাত্রা নিয়ে। যেখানে উত্তর তিউনিসিয়ার এক দরিদ্র অঞ্চলে এক তরুণ খামারি ছেলে সন্ত্রাসীদের হাতে তার কিশোর চাচাত ভাই-এর মাথা কাটার ঘটনা দেখে গভীর আঘাত পায়। এর পর থেকে ওই তরুণের কাছে এখন একমাত্র পথ হচ্ছে তার পরিবারকে নিজারের মাথাটি নিয়ে আসা, যেহেতু সন্ত্রাসীরা একটি অবিরাম হুমকি এবং পুলিশ দরিদ্র খামারিদের সমস্যা নিয়ে উদাসীন। এই চলচ্চিত্রটির মাধ্যমে, তিউনিসিয়ার সিনেমার বিকাশ, দেশটির কারুশিল্প এবং স্বতন্ত্র উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। 

সিনেমাটি পরিচালকের তৃতীয় ফিচার ফিল্ম। এটি এর আগে সুইজারল্যান্ডের লোকার্নো ফেস্টিভ্যালে ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয়েছিল। এই সিনেমার জন্য সেরা নির্মাতাও নির্বাচিত হয়েছেণ লুতফি আচৌর। 

সেরা ফিচার ফিল্মের খেতাব ও সেরা নির্মাতা হওয়ার পর লুতফি বলেন, ‘এটি আমার জন্য সত্যিই আনন্দের। আমি আসলে সিনেমাটির মাধ্যমে আমার দেশের গল্পটা বলতে চেয়েছি। বিশ্ববাসীর কাছে জানাতে চেয়েছি যে আমার দেশের শিশুরা কেমন আছে। কতটা ভয়ংকর মানসিক অসুস্থতা নিয়ে তারা বেড়ে উঠে।’ 

উৎসবের মূল ফিচার ফিল্ম প্রতিযোগিতার জুরি সভাপতি ছিলেন বিখ্যাত পরিচালক স্পাইক লি। যিনি সঙ্গী হিসেবে মিশরীয় পরিচালক আবু বাকর শওকি, যুক্তরাজ্যের অভিনেত্রী মিনি ড্রাইভার, তুর্কি অভিনেত্রী তুবার বয়ুকস্তুন এবং মার্কিন অভিনেতা-প্রযোজক ড্যানিয়েল ডে কিমকে নিয়ে কাজ করেন।
 
সেরাদের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া জোনাস এবং ভায়োলা ডেভিসকেও সম্মাননা প্রদান করা হয়। যারা যথাক্রমে সারা জেসিকা পার্কার এবং হানা আল-ওমাইর দ্বারা পুরস্কৃত হন।

প্রিয়াঙ্কা চোপড়া জোনাস তার সম্মাননা গ্রহণকালে বলেন, ‘আমি সবসময় বিশ্বাস করি বিনোদনের বিশ্বজনীন শক্তি মানুষের মধ্যে সংহতি সৃষ্টি করতে পারে। রেড সি দলের প্রতিশ্রুতি এবং বিশ্বজুড়ে গল্প বলার বৈচিত্র্য প্রদর্শনের জন্য আমি তাদের প্রশংসা করি।’

রেড সির এবারের চতুর্থ সংস্করণে উপস্থিত ছিলেন সেলিব্রিটিসহ আরও অনেক বড় তারকা, যেমন সিনথিয়া এরিভো, মিশেল ইয়ো, বেঞ্জামিন কুম্বারব্যাচ, মাইকেল ডগলাস, ক্যাথরিন জেটা-জোনস, অলিভিয়া. এমিলি ব্লান্ট, এবং ইভা লংগোরিয়া।

উৎসবে সিলভার ইউসর ফিচার ফিল্ম পুরস্কার অর্জন করেছে মাহদি ফ্লেইফেলের ‘টু এ ল্যান্ড আননুন’। যা ফিলিস্তিনি যুবকদের চিরকালীন নির্বাসনের যন্ত্রণা নিয়ে একটি গল্প। লরেন্স ভ্যালিন পরিচালিত এবং অভিনীত চলচ্চিত্রটি আল-উলা অডিয়েন্স অ্যাওয়ার্ড ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম পুরস্কার লাভ করেছে এবং হোবাল (পরিচালক আব্দুলআজিজ আলশলাইহি) জিতেছে আল-উলা অডিয়েন্স অ্যাওয়ার্ড সৌদি ফিল্ম।

এ বছর রেড সি চলচ্চিত্র উৎসবের মূল থিম ছিল ‘দ্য নিউ হোম অফ ফিল্ম’। এই থিমের অধীনে উৎসবে ৮১টি দেশের ১২০টি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়েছে।

এবারের উৎসবের ভেন্যু ছিল নতুন। সেটা আল বালাদের সৌকে। আগেরগুলি শহরের রিটজ-কার্লটন হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করেন ড্যানিয়েল রহমে ও হাকিম জামা এবং পরিচালনা করেন জোমানা আল-রশিদ, রেড সি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আসেরি, রেড সি ফিল্ম ফাউন্ডেশনের সিইও এবং শিভানি পান্ডিয়া মালহোত্রা।

২০২৪ রেড সি ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল পুরস্কার বিজয়ীদের তালিকা

গোল্ডেন ইউসর সেরা ফিচার ফিল্ম: রেড পাথ
পরিচালক: লতফি আচার

সিলভার ইউসর ফিচার ফিল্ম: টু এ ল্যান্ড আননুন
পরিচালক: মাহদি ফ্লেইফেল

ইউসর সেরা পরিচালক: লতফি আচার (রেড পাথ)

ইউসর জুরি পুরস্কার: স্পিকিঙ হেব ফর মি. রামবো। 
পরিচালক: খালেদ মন্সুর

ইউসর সেরা অভিনেতা: মাহমুদ বাকরি
টু এ ল্যান্ড আননুন

ইউসর সেরা অভিনেত্রী: মারিয়াম শেরিফ
স্নো হোইট

ইউসর সেরা স্ক্রীনপ্লে: সং অফ অ্যাডাম
ওদে রাসিদ

ইউসর সিনেমাটিক অ্যাচিভমেন্ট: টু কিল অ্যা মোঙ্গলিয়ান হর্স। 
পরিচালক: শাওক্সুয়ান জিয়াং

গোল্ডেন ইউসর সেরা শর্ট ফিল্ম: হাচ
পরিচালক: আলিরেজা কাজেমিপুর, পান্টা মোস্লেহ

সিলভার ইউসর শর্ট ফিল্ম: আলাজার
পরিচালক: বেজা হেইলু লেমা

শর্ট স্পেশাল মেনশন: চিলর্ডন অব বেজান
পরিচালক: আহমেদ খাত্তাব

অন্যান্য পুরস্কার:

আশার্ক সেরা ডকুমেন্টারি: স্টেট অব সাইলেন্ট
পরিচালক: সান্তিয়াগো মাজা

চোপার্ড এমার্জিং সৌদি ট্যালেন্ট: রুলা দাখিলাল্লাহ
চলচ্চিত্র:মাই ড্রাইভার অ্যান্ড আই। 

আল-উলা দর্শক পুরস্কার সৌদি ফিল্ম: হাবল
পরিচালক: আব্দুলআজিজ আলশলাইহি

আল-উলা দর্শক পুরস্কার আন্তর্জাতিক ফিল্ম: লিটল জাফান
পরিচালক: লরেন্স ভ্যালিন

আরও পড়ুন

×