পপগুরু আজম খান প্রয়াণের ১৪ বছর

আজম খান। ছবি: সংগৃহীত
বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬ জুন ২০২৫ | ১২:১৩
বাংলাদেশের সংগীতাঙ্গনের অবিসংবাদিত কিংবদন্তি, পপগুরু হিসেবে খ্যাত আজম খান নেই আমাদের মাঝে দীর্ঘ ১৪ বছর। ২০১১ সালের ৫ জুন, ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ক্যানসারের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াই শেষে না-ফেরার দেশে পাড়ি জমান তিনি। একাধারে মুক্তিযোদ্ধা, গায়ক, গীতিকার, সুরকার এবং সংস্কৃতির প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর-আজম খান ছিলেন বাংলা পপ ও ব্যান্ড সংগীতের অগ্রদূত।
১৯৫০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি, ঢাকার আজিমপুর কলোনির ১০ নম্বর সরকারি কোয়ার্টারে জন্মগ্রহণ করেন মাহবুবুল হক খান, যিনি পরে ‘আজম খান’ নামেই কিংবদন্তি হয়ে ওঠেন। তাঁর সংগীতের প্রতি ভালোবাসা জন্ম নেয় ষাটের দশকের শুরুর দিকে। তবে তাঁর জীবন নতুন মোড় নেয় ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণের মাধ্যমে। গেরিলা যোদ্ধা হিসেবে ঢাকায় বেশ কয়েকটি দুঃসাহসিক অভিযানে অংশ নিয়ে তিনি দেশমাতৃকার প্রতি নিজের দায়বদ্ধতার প্রমাণ রেখেছিলেন।
স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে সংগীতের ভুবনে আজম খানের পদার্পণ ঘটে ১৯৭২ সালে, যখন তিনি গঠন করেন ‘উচ্চারণ’ নামক ব্যান্ডদল। তাঁর কণ্ঠে ‘হায় রে বাংলাদেশ’, ‘রেল লাইনের ওই বস্তিতে’, ‘ওরে সালেকা ওরে মালেকা’, ‘আলাল ও দুলাল’ কিংবা ‘পাপড়ি কেন বোঝে না’- এসব গান হয়ে ওঠে স্বাধীন দেশে নতুন প্রজন্মের আত্মপরিচয়ের অংশ। তাঁর গানে একদিকে যেমন ছিল নাগরিক জীবনের বাস্তবতা, অন্যদিকে ছিল প্রতিবাদ, প্রেম ও মানবিকতার অগাধ প্রকাশ।
আজম খান জীবনের প্রথম কনসার্টে অংশ নিয়েছিলেন ঐতিহাসিক মধুমিতা সিনেমা হলে-এ তথ্য তাঁর বড় ভাই, বিশিষ্ট সুরকার আলম খান ২০১৫ সালে একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন। সেখান থেকেই শুরু হয়েছিল আজম খানের গণমুখী সংগীত-ভ্রমণ। তাঁর গান ছিল সহজ কথা ও সুরের মধ্যে গাঁথা এক গভীর জীবনচেতনার বার্তা।
বাংলাদেশে আধুনিক পপ ও ব্যান্ড সংগীতের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকারী এই শিল্পীকে আজও গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করে সংগীতপ্রেমী জনগণ। তাঁর সৃষ্টির শক্তি, তাঁর কণ্ঠের দরাজ আহ্বান এবং জীবনের প্রতিটি পরতে জড়িয়ে থাকা দেশপ্রেম আজও আমাদের অনুপ্রেরণা জোগায়।
আজম খান শুধু একজন গায়ক ছিলেন না, তিনি ছিলেন এক ধারার শুরু। তাঁর প্রয়াণের ১৪ বছর পরেও তাঁর গান বাঙালির মনোজগতে তুমুলভাবে জীবন্ত।
- বিষয় :
- আজম খান
- প্রয়াণ দিবস