ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

'মাথার ওপর থেকে বিশাল ছাতাটা হঠাৎ করে সরে গেলো'

'মাথার ওপর থেকে বিশাল ছাতাটা হঠাৎ করে সরে গেলো'

বিনোদন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২০ | ০৭:০১

৪০ দিন লড়াই শেষে রোববার বেলা ১২টা ১৫ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন ভারতের বাংলা সিনেমার কিংবদন্তী  অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তার মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করে স্মৃতিচারণা করেছেন একসময়ের জনপ্রিয় তারকা অপর্ণা সেন।

বলেন, 'উনি আমার প্রথম ছবির প্রথম নায়ক। প্রথমে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে কাকু বলে ডাকতাম। পরে নাম ধরে ডাকলেও সেই শ্রদ্ধাটা ছিল। জুটি হিসেবে আমরা কখনও সফল ছিলাম কি না জানি না। তবে উনি একবার ঠাট্টা করে বলেছিলেন, তুই পরিচালক হলি আমাদের জুটিটা ভেঙে গেল।'

অপর্ণা সেন বলেন,  ভীষণ রুচিশীল, সাহিত্যচর্চার একজন মানুষ ছিলেন তিনি। শুটিংয়ের মাঝে তাই অনেক বিষয় নিয়ে কথা বলা যেত। ওর ছেলে যেমন এক সময় মানসিকভাবে অসুস্থ হয়েছিল, ঠিক তেমনই আমার বোন। এই নিয়ে আমরা কত আলোচনা করেছি! এখন ওর ছেলে অবশ্য ঠিক হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আর তার স্ত্রী আমাদের পারিবারিক বন্ধু বনে গেছিলাম। মা-বাবার সঙ্গে ওর অনেক কালের যোগাযোগ। ছেলেবেলায় কিন্ত আমাকে পাত্তা না দিলেও ধীরে ধীরে যত বড় হলাম, এক সঙ্গে কাজ হল। জুটি তৈরি হল। আমরা অবশ্য কেউ জুটি নিয়ে ভাবতাম না। তবে যখন পরিচালনা করতে এলাম উনি মজা করে বললেন, "যাহ্‌! এ তো বড় পরিচালক হয়ে গেল। আমাদের একসঙ্গে কাজ কি করে হবে?"

তিনি ঠাট্টা করে বলতেন, 'বড় পরিচালক, তোমার ছবিতে কবে কাজ করব?' আমার ছবি 'পারমিতার একদিন'-এ কাজ হল। কত বছর কেটে গেল। কত বার সেটে আমি জীবনানন্দ বলছি, তো উনি রবীন্দ্রনাথ বলছেন। শুটের মধ্যেই কত অন্য ধারার চর্চা হত।

সত্যজিৎ রায়ের 'সমাপ্তি' ছবির এ বার ৫৯ বছর। এতগুলো বছর পরে অমূল্য-মৃণ্ময়ী জুটি আবার ফিরেছিল সুমন ঘোষের 'বসু পরিবার'-এর হাত ধরে। এর পরে আমরা করেছি ‘বহমান’।

তিনি আরও বলেন, মনে পড়ছে আমার, এই ছবির জন্য আমরা অক্সফোর্ড বইয়ের দোকানে শ্যুট করছি। একটি বই দেখিয়ে জানতে চেয়েছিলাম, "এই বইটি তুমি পড়েছ?" বললেন, "না পড়া হয়নি।" আমি বললাম, "একটু দাঁড়াও।" আমাদের মধ্যে সাহিত্য, সিনেমা নিয়ে অনেক কথা হত

আমি চট করে গিয়ে তার পর নীচ থেকে বইটা কিনে আনি। ওকে হাতে দেওয়ার পর ভীষণ অপ্রস্তুত। বলে উঠলেন, "না, না, এ কী! এ সব কী করছ?" কিন্তু ভিতরে ভিতরে ভীষণ খুশি হয়েছিলেন, এটাও বুঝতে পারছিলাম। পরে সুমন ঘোষকে বলেছিলেন, "এই মেয়েটা পড়াশোনা করে। ভাল লাগে। এই তো আমাকে বই কিনে দিল।" আমাদের মধ্যে সাহিত্য, সিনেমা নিয়ে অনেক কথা হত। এখন সেই সব স্মৃতিই ফিরে ফিরে আসছে।

আমি আর পারছি না। এ সময় কথা বলা যায় না। কষ্ট হচ্ছে। আসলে শোনার পরে কিছুতেই বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছিল না। খুব আশা করেছিলাম, উনি যুদ্ধে জিতে ফিরবেন। মানিককাকা অনেক বছর আগেই চলে গিয়েছেন। তার পর একে একে চলে গেলেন আমার মা-বাবা, মৃণালকাকা। এবার সৌমিত্র-ও। কাকে যেন বলছিলাম, আমার চেনা জগৎটা আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে। মাথার ওপর থেকে বিশাল ছাতাটা হঠাৎ করে সরে গেল। সূত্র: আনন্দবাজার

আরও পড়ুন

×