বইয়ের ভুবন
অন্তর্জগতের জটিল রহস্য উদ্ঘাটনের আখ্যান

দেহতরীর মনমাঝি, লেখক-মোহিত কামাল, প্রচ্ছদ-ধ্রুব এষ, প্রকাশক-বিদ্যাপ্রকাশ, প্রকাশকাল-ফেব্রুয়ারি ২০২২, মূল্য-৩৫০ টাকা
সালমা আক্তার
প্রকাশ: ৩১ মার্চ ২০২২ | ১২:০০
সাহিত্যে জীবনের যে প্রতিবিম্ব নির্মিত হয় তা সমাজ-বাস্তবতারই প্রতিচ্ছবি। সমাজ বহু জীবনকে বাইরের দিক থেকে একত্রিত করে আর সাহিত্য অন্তরের দিক থেকে বহু হৃদয়কে একই সুরে ভরিয়ে তোলে। কোনো শিল্পীই আপন দেশ ও যুগের বিশেষ গণ্ডিকে সম্পূর্ণ অতিক্রম করতে পারেন না। তবে বিশেষের ওপর দাঁড়িয়েই তাকে শিল্প-নির্মিতির নির্বিশেষের ব্যঞ্জনা বিশ্বজনীন করে তুলতে পারে। বলা যায়, সাহিত্যের জগৎ এক অলৌকিক মায়ার জগৎ। কিন্তু সেই অলৌকিক জগৎ বস্তুজীবনকে বাদ দিয়ে গড়ে ওঠেনি। এই পরিদৃশ্যমান জগৎ ও বস্তুজীবন থেকে লেখক তার কাজের উপাদান সংগ্রহ করে তাতে আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে প্রকাশ করে থাকেন। কথাসাহিত্যিক মোহিত কামালও এর ব্যতিক্রম নন।
আধুনিক সভ্যতার অগ্রগতিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্রমাগত বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চিন্তা-চেতনায় বা জীবনযাত্রায় এসেছে নিত্যনতুন পরিবর্তন। সভ্যতার বিকাশ সাধিত হলেও সমাজের অংশীদার হিসেবে আমরা কিছু বিষয় আজও মন থেকে মেনে নিতে পারি না। সৃষ্টির আদিলগ্ন থেকে আমাদের সমাজে এখনও তরুণ-তরুণীর প্র্রেমের সম্পর্ক অভিভাবকের কাছে গ্রহণযোগ্য না হওয়ার অনেক কারণের একটি হলো বয়সের অসামঞ্জস্য। কিন্তু জীবন-রসায়নের এক আকর্ষণীয় বা অনিবার্য উপাদান হচ্ছে এ ভালোবাসা; যা ইতিবাচক আবেগ।
আর হিংসা হচ্ছে নেতিবাচক মিশ্র আবেগ। এতে সম্পর্কের মাঝে সৃষ্টি হয় নানা ঘাত-প্রতিঘাত। সমস্যার নতুন আবর্তে জীবন প্রতিনিয়ত কীভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে তা এ উপন্যাসে বিদ্যমান। কিন্তু হিংসার মধ্যেও থাকে মমতা এবং ক্রোধ। কাছের জনকে হিংসা করে মানুষ, তার জন্য মমতা আছে বলেই। এই মনস্তাত্ত্বিক উপাদানের মুখোমুখি সংঘাতে সৃষ্ট আচরণ আর চিন্তার গতিপ্রকৃতিতে খাবি খেতে খেতে এগিয়েছে এ মনস্তাত্ত্বিক, মনোসামাজিক ও মনোবৈজ্ঞানিক উপন্যাসের চরিত্রদের যাপিত জীবন, তাদের দেহমন।
উপন্যাসটিতে সমাজ বাস্তবতা, অস্তিত্ব রক্ষার্থে মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েন এবং চারিত্রিক সক্রিয়তা বিদ্যমান। চরিত্রের ওপর বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের প্রয়োগ, মনোবিজ্ঞান অনুযায়ী কোনো ঘটনার প্রতি মন কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে এবং সেই প্রতিক্রিয়া কতটা যথার্থ বা অযথার্থ এবং তা থেকে বেরিয়ে আসার সঠিক দিকনির্দেশনা বা ইতিবাচক মনোভঙ্গি দেখতে পাই উপন্যাসের পরতে পরতে।
উপন্যাসে চরিত্রের মনস্তাত্ত্বিক দিকগুলো শৈল্পিকতার আশ্রয়ে নিখুঁতভাবে বর্ণিত হয়েছে। আখ্যানের ধাপে ধাপে উন্মোচিত হয়েছে চরিত্রদের মনোজগৎ ও বুদ্ধিবৃত্তিক মূল্যায়ন। লেখক মানবজীবনের শাশ্বত অনুভূতিকে সফলতার সঙ্গে রূপায়িত করতে সক্ষম হয়েছেন। বিষয়বস্তু, মূল ভাবনা এবং পরিণতিতে সমস্যা সমাধানে ইঙ্গিতের দিকে দৃষ্টি দিলেও স্পষ্ট হয় যে, উপন্যাসের নামকরণ 'দেহতরীর মনমাঝি' যুক্তিযুক্ত।
মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাসের প্রধান আশ্রয় পাত্র-পাত্রীর মনোজগতের ঘাত-সংঘাত ও ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া; চরিত্রের অন্তর্জগতের জটিল রহস্য উদ্ঘাটনই ঔপন্যাসিকের প্রধান লক্ষ্য। মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাসে কাহিনি একটা অবলম্বন মাত্র। প্রকৃত উদ্দেশ্য থাকে মানবমনের জটিল দিকগুলো সার্থক বিশ্নেষণের মাধ্যমে উপস্থাপন করা। রবীন্দ্রনাথের 'চোখের বালি', সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর 'কাঁদো নদী কাঁদো', 'চাঁদের অমাবস্যা', শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'রামের সুমতি' ইত্যাদি মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস। সে বিচারে কথাসাহিত্যিক মোহিত কামালের 'দেহতরীর মনমাঝি'ও একটি মনস্তাত্ত্বিক এবং মনোসামাজিক উপন্যাস।
উপন্যাসটি পড়তে গিয়ে পাঠককে কিছু প্রশ্ন বারবার ভাবনার অতলে নিমজ্জিত করে পাঠকহৃদয়কে তীরবিদ্ধ করবে- কে চালায় দেহ? দেহডিঙির মাঝিইবা কে? কে বায় তার দাঁড়? সম্পর্কের রসায়নে এত জটিলতা কেন? বিয়ে কি শুধুই দুটি মানুষের সম্পর্কের মাঝেই সীমাবদ্ধ? নাকি দুটি পরিবারের মিলনকেন্দ্র? তরুণ-তরুণীদের ভালোবাসার জন্য বয়সটা কি খুবই গুরুত্বপূর্ণ? নাকি বয়সের চলমান ধারা বদলে দিয়ে তারা উড়াতে চায় নতুন কোনো পতাকা? সত্যিই কি তাদের সেই পতাকা উড়তে পারে? নাকি সামাজিক শৃঙ্খলে আটকে গিয়ে ভেঙে যায়, দুমড়েমুচড়ে মুখ থুবড়ে পড়ে সেই পতাকা-স্ট্যান্ড?
পাঠ শেষে এসব প্রশ্নের উত্তর খুলে দেবে পাঠকের অন্য চোখ। বিশ্বাস করি, সাহিত্যের ভেতর থেকে মনস্তত্ত্বের নিগূঢ়তম অনুভবে নতুনভাবে জেগে উঠবেন পাঠক। এ ছাড়া মানসম্পন্ন প্রকাশনা এবং নান্দনিক প্রচ্ছদে মলাটবন্দি এ উপন্যাস পাঠকের দৃষ্টি এড়াবে না।
আধুনিক সভ্যতার অগ্রগতিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্রমাগত বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চিন্তা-চেতনায় বা জীবনযাত্রায় এসেছে নিত্যনতুন পরিবর্তন। সভ্যতার বিকাশ সাধিত হলেও সমাজের অংশীদার হিসেবে আমরা কিছু বিষয় আজও মন থেকে মেনে নিতে পারি না। সৃষ্টির আদিলগ্ন থেকে আমাদের সমাজে এখনও তরুণ-তরুণীর প্র্রেমের সম্পর্ক অভিভাবকের কাছে গ্রহণযোগ্য না হওয়ার অনেক কারণের একটি হলো বয়সের অসামঞ্জস্য। কিন্তু জীবন-রসায়নের এক আকর্ষণীয় বা অনিবার্য উপাদান হচ্ছে এ ভালোবাসা; যা ইতিবাচক আবেগ।
আর হিংসা হচ্ছে নেতিবাচক মিশ্র আবেগ। এতে সম্পর্কের মাঝে সৃষ্টি হয় নানা ঘাত-প্রতিঘাত। সমস্যার নতুন আবর্তে জীবন প্রতিনিয়ত কীভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে তা এ উপন্যাসে বিদ্যমান। কিন্তু হিংসার মধ্যেও থাকে মমতা এবং ক্রোধ। কাছের জনকে হিংসা করে মানুষ, তার জন্য মমতা আছে বলেই। এই মনস্তাত্ত্বিক উপাদানের মুখোমুখি সংঘাতে সৃষ্ট আচরণ আর চিন্তার গতিপ্রকৃতিতে খাবি খেতে খেতে এগিয়েছে এ মনস্তাত্ত্বিক, মনোসামাজিক ও মনোবৈজ্ঞানিক উপন্যাসের চরিত্রদের যাপিত জীবন, তাদের দেহমন।
উপন্যাসটিতে সমাজ বাস্তবতা, অস্তিত্ব রক্ষার্থে মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েন এবং চারিত্রিক সক্রিয়তা বিদ্যমান। চরিত্রের ওপর বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের প্রয়োগ, মনোবিজ্ঞান অনুযায়ী কোনো ঘটনার প্রতি মন কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে এবং সেই প্রতিক্রিয়া কতটা যথার্থ বা অযথার্থ এবং তা থেকে বেরিয়ে আসার সঠিক দিকনির্দেশনা বা ইতিবাচক মনোভঙ্গি দেখতে পাই উপন্যাসের পরতে পরতে।
উপন্যাসে চরিত্রের মনস্তাত্ত্বিক দিকগুলো শৈল্পিকতার আশ্রয়ে নিখুঁতভাবে বর্ণিত হয়েছে। আখ্যানের ধাপে ধাপে উন্মোচিত হয়েছে চরিত্রদের মনোজগৎ ও বুদ্ধিবৃত্তিক মূল্যায়ন। লেখক মানবজীবনের শাশ্বত অনুভূতিকে সফলতার সঙ্গে রূপায়িত করতে সক্ষম হয়েছেন। বিষয়বস্তু, মূল ভাবনা এবং পরিণতিতে সমস্যা সমাধানে ইঙ্গিতের দিকে দৃষ্টি দিলেও স্পষ্ট হয় যে, উপন্যাসের নামকরণ 'দেহতরীর মনমাঝি' যুক্তিযুক্ত।
মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাসের প্রধান আশ্রয় পাত্র-পাত্রীর মনোজগতের ঘাত-সংঘাত ও ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া; চরিত্রের অন্তর্জগতের জটিল রহস্য উদ্ঘাটনই ঔপন্যাসিকের প্রধান লক্ষ্য। মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাসে কাহিনি একটা অবলম্বন মাত্র। প্রকৃত উদ্দেশ্য থাকে মানবমনের জটিল দিকগুলো সার্থক বিশ্নেষণের মাধ্যমে উপস্থাপন করা। রবীন্দ্রনাথের 'চোখের বালি', সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর 'কাঁদো নদী কাঁদো', 'চাঁদের অমাবস্যা', শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'রামের সুমতি' ইত্যাদি মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস। সে বিচারে কথাসাহিত্যিক মোহিত কামালের 'দেহতরীর মনমাঝি'ও একটি মনস্তাত্ত্বিক এবং মনোসামাজিক উপন্যাস।
উপন্যাসটি পড়তে গিয়ে পাঠককে কিছু প্রশ্ন বারবার ভাবনার অতলে নিমজ্জিত করে পাঠকহৃদয়কে তীরবিদ্ধ করবে- কে চালায় দেহ? দেহডিঙির মাঝিইবা কে? কে বায় তার দাঁড়? সম্পর্কের রসায়নে এত জটিলতা কেন? বিয়ে কি শুধুই দুটি মানুষের সম্পর্কের মাঝেই সীমাবদ্ধ? নাকি দুটি পরিবারের মিলনকেন্দ্র? তরুণ-তরুণীদের ভালোবাসার জন্য বয়সটা কি খুবই গুরুত্বপূর্ণ? নাকি বয়সের চলমান ধারা বদলে দিয়ে তারা উড়াতে চায় নতুন কোনো পতাকা? সত্যিই কি তাদের সেই পতাকা উড়তে পারে? নাকি সামাজিক শৃঙ্খলে আটকে গিয়ে ভেঙে যায়, দুমড়েমুচড়ে মুখ থুবড়ে পড়ে সেই পতাকা-স্ট্যান্ড?
পাঠ শেষে এসব প্রশ্নের উত্তর খুলে দেবে পাঠকের অন্য চোখ। বিশ্বাস করি, সাহিত্যের ভেতর থেকে মনস্তত্ত্বের নিগূঢ়তম অনুভবে নতুনভাবে জেগে উঠবেন পাঠক। এ ছাড়া মানসম্পন্ন প্রকাশনা এবং নান্দনিক প্রচ্ছদে মলাটবন্দি এ উপন্যাস পাঠকের দৃষ্টি এড়াবে না।
- বিষয় :
- বইয়ের ভুবন
- সালমা আক্তার