ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

সাক্ষাৎকার

কর ব্যবস্থা ডিজিটাল হওয়া খুব জরুরি

কর ব্যবস্থা ডিজিটাল হওয়া খুব জরুরি

রূপালী চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বার্জার পেইন্টস

আবু হেনা মুহিব

প্রকাশ: ০১ এপ্রিল ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২২ | ২২:৪৪

আগামী বাজেটে কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) শিল্পের জন্য বিশেষ অগ্রাধিকারভিত্তিক নীতি সহায়তা চান বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রূপালী চৌধুরী। সিএমএসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য স্থানীয় অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎস থেকে কাঁচামাল সংগ্রহে ভ্যাট প্রত্যাহারের সুযোগ দাবি করেছেন তিনি। সমকালের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের কাঁচামাল সংগ্রহের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ রয়েছে। নিয়ম হচ্ছে, সংগ্রহ চালান প্রদর্শনের মাধ্যমে এ ভ্যাট আবার সমন্বয় করতে হয়। বড় প্রতিষ্ঠানগুলো তাই করছে। তবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত থেকে কাঁচামাল সংগ্রহের কারণে ছোট প্রতিষ্ঠান এ সুযোগ কাজে লাগানোর সুযোগ পায় না। এ কারণে এই ১৫ শতাংশ ভ্যাটের চাপ তাদের ওপর শেষ পর্যন্ত থেকেই যায়। এ পরিস্থিতি ন্যায্য নয়। এ কারণে এদের বিকাশ বিঘ্নিত হচ্ছে। অথচ এই খাত অর্থনীতিতে অনেক বড় অবদান রাখছে। কর্মসংস্থানের বড় উৎস হিসেবে সামাজিক শৃঙ্খলায়ও এ খাতগুলোর অবদান গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষ যোগ্য কর্মী যেমন এসব খাতে কাজ করছে, তেমনি অদক্ষ ও আধাদক্ষ শ্রমিকদের কাজের সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠান। বাজেটের মাধ্যমে সরকারের পক্ষ থেকে অনুকূল নীতি সহায়তা পেলে এ খাত জাতীয় অর্থনীতিতে আরও বড় ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সংগঠন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসি) সাবেক সভাপতি রূপালী চৌধুরী করপোরেট কর সম্পর্কে বলেন, বছরে আড়াই শতাংশ হারে করপোরেট কর কমানোর পরিকল্পনা সরকারের পক্ষ থেকে বিনিয়োগ সহায়ক একটা নীতি। এতে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে উদ্যোক্তারা আগাম হিসাব-নিকাশ করতে পারেন। তারা বিনিয়োগে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কোনো কারণে যাতে করপোরেট কর কমানোর এ ধারা বা নীতি বাধাগ্রস্ত না হয়।

বাজেটে কর আদায় ব্যবস্থাপনায়ও বড় ধরনের পরিবর্তন চান রূপালী চৌধুরী। তিনি বলেন, দুঃখজনক সত্য হচ্ছে, কর প্রদানে জটিলতা এবং একটা ভয়ের সংস্কৃতি চলছে এখন। শোনা যায়, এ কারণে অনেকে অর্থ দেশের বাইরে নিয়ে যাচ্ছেন। এটা রাষ্ট্র কিংবা ব্যক্তি- কারও জন্যই সম্মানের নয়। কর ব্যবস্থা ডিজিটাল হওয়া খুব জরুরি। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই কর আদায় এখন ডিজিটালাইজড। তিনি মনে করেন, ডিজিটালাইজড হলে কর প্রদান সহজ এবং স্বচ্ছ হবে। এর ফলে আদায় বাড়বে। এ ছাড়া কর আদায় এখনও কেবল ঢাকা এবং চট্টগ্রামভিত্তিক। করের আওতা গ্রামেও নিয়ে যেতে হবে। যেখানে করযোগ্য আয় আছে, সেখান থেকেই কর আদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।

রূপালী চৌধুরী বলেন, করনীতি প্রণয়ন এবং আদায়ে দুটি পৃথক কর্তৃপক্ষ থাকার দরকার। নীতি গ্রহণ এবং আদায়ের দায়িত্ব এককভাবে এনবিআরের ওপর থাকার কারণে তারা ইচ্ছামতো করারোপ করে থাকে। বছরের একটা পর্যায়ে যখন দেখা যায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় হয় না, তখন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অনাহূত এসআরও জারি করে থাকে। এতে কর এক প্রকার বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।

রূপালী চৌধুরীর মতে, করোনা পরবর্তী বাস্তবতায় বিশ্বের ভোক্তাবাজারে বড় রকমের চাহিদা লক্ষ্য করা গেছে। বাংলাদেশের মতো অর্থনীতির দেশের জন্য এ বাস্তবতা সুযোগ তৈরি করেছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নতুন করে গতি এসেছে। এ অবস্থায় সরবরাহ চেইনের সব পর্যায় নির্বিঘ্ন রাখতে সহায়ক অবকাঠামো গুরুত্বপূর্ণ।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আবু হেনা মুহিব

আরও পড়ুন

×