সাক্ষাৎকার
উৎপাদন খরচ বাড়ায় সংকটে

আনিসুল আজম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল
--
প্রকাশ: ১৫ এপ্রিল ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২২ | ২৩:৫৮
পর্যাপ্ত কাঁচামালের অভাব, পুরোনো মেশিনপত্র, জনবলের অদক্ষতার কারণে চিনিকলগুলোর কস্ট অব প্রডাকশন বা উৎপাদন খরচ বেশি হচ্ছে। যে কারণে একের পর এক চিনিকলের কার্যক্রম স্থগিত বা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। পরিস্থিতির উন্নতির জন্য চিনিকলগুলোর আধুনিকায়ন ও আখের চাষ বাড়ানোর বিকল্প নেই।
সম্প্রতি সমকালকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন মতামত জানিয়েছেন নর্থবেঙ্গল সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিসুল আজম। নাটোরের লালপুরে অবস্থিত এই চিনিকলের দায়িত্ব নিয়েছেন কিছুদিন আগে। তিনি বলেন, কাঁচামালের অভাবে চিনিকলগুলো পূর্ণ ক্ষমতায় উৎপাদন করতে পারছে না। ফলে যে অল্প সময় তারা উৎপাদনে থাকছে, তার পেছনে খরচ হচ্ছে বেশি। অন্যদিকে, কারখানার পরিচালন ব্যয় যেভাবে বেড়েছে, উৎপাদন সেভাবে বাড়েনি। এতে কারখানা লোকসানে পড়ছে।
তিনি বলেন, দেশে ১৮ লাখ টন চিনির বাজার থাকলেও সরকারি চিনিকলগুলো সেই বাজারের হিস্যা নিতে পারছে না। সরকারের ১৫টি চিনিকলের মোট উৎপাদন ক্ষমতা ২ লাখ ১০ হাজার টন। এখন উৎপাদন হচ্ছে এক লাখ টনের সামান্য বেশি। প্রতিটি চিনিকল বছরে চার মাস চলার কথা। কিন্তু টেনেহিঁচড়ে দুই মাস চলছে। অন্যদিকে চিনিকলের পরিচালন ব্যয় বাড়ছে। কর্মীদের বেতন বেড়েছে। বেড়েছে আখের দাম। পরিবহন খরচও বেড়েছে। কিন্তু চিনির দাম বাড়েনি। বর্তমানে প্রতি কেজি চিনি ৭৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু এর উৎপাদন খরচ ১১০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত। তবে সরকারি চিনিকলগুলো থাকায় চিনির বাজারে স্থিতিশীলতা আছে।
১৯৩০ সালে প্রতিষ্ঠিত নর্থবেঙ্গল সুগার মিলের মেশিনপত্রের অবস্থা জানতে চাইলে আনিসুল আজম বলেন, সাধারণ একটি কারখানার আয়ুস্কাল থাকে ৬০ থেকে ৭০ বছর। নর্থবেঙ্গল সুগার মিলের বয়স হয়েছে ৯২ বছর। অনেক মেশিনারিজ সংস্কার করা হয়েছে। অনেক মেশিনারিজ প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি নিয়মিত মেরামতও করা হয়ে থাকে। তবে উৎপাদন ক্ষমতা সমান নেই। মিলটির দৈনিক মাড়াই ক্ষমতা এক হাজার ৫০০ টন। বর্তমানে এই মাড়াই ক্ষমতা নেই। এখন মিলে আধুনিক মেশিনারিজ স্থাপনের সময় হয়েছে।
কাঁচামালের ঘাটতি দূর করার জন্য কী করা যেতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চাষিদের উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে চাষিরা আখ চাষ থেকে সরে যাচ্ছেন। কারণ আখ দীর্ঘমেয়াদি ফসল। এখন চাষিদের উঁচু জমিতে আখ চাষ, উন্নত ও বেশি ফলনসম্পন্ন জাতের আখ চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। একরে ৪০ টন উৎপাদন হবে এমন জাতের আখ আনা হচ্ছে। বর্তমানে যেসব আখ চাষ হয় সেগুলো একরে ১৭ থেকে ১৮ টন উৎপাদন হয়ে থাকে। কিছু প্রণোদনাও দেওয়া হচ্ছে। যেমন- রোপা আখ চাষ (এসটিপি) করলে চাষিদের ভর্তুকি দেওয়া হয়। সাথি ফসলসহ আখ চাষের জন্য চার হাজার ৪০০ টাকা। আর মুড়ি আখ চাষের জন্য একরপ্রতি দুই হাজার টাকা দেওয়া হয়।
চাষিদের উদ্বুদ্ধ করতে আর কী করা যেতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আখ চাষ এলাকায় উন্নত রাস্তা তৈরি করতে হবে। প্রতি বছর কিছু সংস্কার করা হয়। কিন্তু উন্নত সড়ক হলে আখ পরিবহন সহজ হবে।
চিনি বিপণন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে প্রচারণার অভাব বড় সমস্যা। এ ছাড়া ডিলাররা সুবিধা অনুযায়ী চিনি তুলতে আসেন। বেসরকারি কোম্পানির চিনির দাম সরকারি চিনিকলের চিনির তুলনায় অধিকাংশ সময় কম থাকে। এ ক্ষেত্রে জনসাধারণকে আখের চিনি খাওয়ার বিষয়ে উৎসাহিত করা যেতে পারে।
- বিষয় :
- নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল
- চিনিকল
- চিনি বিপণন