ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

জন্মশতবর্ষ

বিদগ্ধ শিল্পী ওয়ালীউল্লাহ্‌

বিদগ্ধ শিল্পী ওয়ালীউল্লাহ্‌

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌ [১৫ আগস্ট, ১৯২২-১০ অক্টোবর, ১৯৭১]

লুৎফর রহমান

প্রকাশ: ১৮ আগস্ট ২০২২ | ১২:০০

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌র (১৯২২-১৯৭১) জন্মশতবর্ষ প্রবহমান। তিনি বরাবর বাঙালি সংস্কৃতির মর্মস্থলে চৈতন্যের আলো প্রতিফলিত করতে প্রয়াসী ছিলেন। উন্মোচিত করতে চেয়েছেন- বাংলার সমাজ অভ্যন্তরে বহমান জীবনের ফাঁকি, মিথ্যার ভিতে জীবনের কায়েমি বেসাতি, সামাজিক অন্ধকারে বিদ্যমান অন্যায্যতা; রিপুতাড়িত বিপথগামী মানুষের অন্তর্গত অস্তিত্ব; সাম্প্রদায়িক চেতনার বশবর্তী মানুষের চিত্তে অসাম্প্রদায়িক বোধের জন্ম দিতে চেয়েছেন। ওয়ালীউল্লাহ্‌র নিজস্ব জগতের সাদামানুষ, কালোমানুষ, লাঞ্ছিত, বঞ্চিত, শোষিত, নিরন্ন মানুষ- তারা নিয়ত সংগ্রামশীল। তারা ছদ্মবেশী, ভণ্ড, প্রতারক, বিবেকবর্জিত নীতিজ্ঞানহীন স্বার্থপর মানুষ। শিল্পী সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌র উদ্দিষ্ট তৎকালীন নিরন্ন পশ্চাৎপদ মূর্খ ধমান্ধ মুসলমান সমাজ। কুসংস্কারাচ্ছন্ন মুসলমান সমাজে অশিক্ষা, পীরবাদ, নানাবিধ পিতৃতান্ত্রিক মূল্যবোধ বিদ্যমান ছিল, ছিল ঝাড়ফুঁক জাদুটোনায় বিশ্বাস- এই পশ্চাৎপদ মানুষকে তিনি মুক্তিদান প্রয়াসী ছিলেন। সামাজিক ত্রুটিবিচ্যুতিগুলো তাই ভিতর থেকে স্বরূপে বাইরে বের করে এনেছেন। ওয়ালীউল্লাহ্‌র রচনা পাঠে আখ্যানস্থ চরিত্রদের বিপরীতমুখী দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়ে প্রগতি আর প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিকে নিজ নিজ অবস্থানে শনাক্ত করা যায় অনায়াসে। তাঁর রচনায় রাজনীতি উচ্চকণ্ঠ স্লোগানমাত্র নয়। মানুষের মানবিক, অর্থনৈতিক অধিকার, সামাজিক অধিকার, আইন ও বিচার-সংক্রান্ত অধিকার ইত্যাদি বিষয়ক দাবিকে অধিকারহীন সামাজিক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে উপস্থাপন করেন। ওয়ালীউল্লাহ্‌ প্রান্তকে কেন্দ্র স্থির করে তাঁর সাহিত্য রচনা করেন। আর এই জন্য তিনি অধিকারবঞ্চিত প্রাকৃতজনের জীবনশিল্পী।
এমন একজন প্রাজ্ঞ, সজ্জন, প্রতিভাবান কুশলী কালজয়ী কথাশিল্পীর জন্মশতবর্ষ চলে যাচ্ছে নিতান্ত অবহেলায় কেবলই কালের খেয়ায়। বিদ্বজ্জনের দৃষ্টি আকর্ষণ তিনি কোনোদিনই করতে পারেননি। সাধারণ পাঠক তাঁকে ছুঁতে পারেননি। পাশ্চাত্য দর্শনের চিন্তনপ্রক্রিয়ায় সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌র মনন সমৃদ্ধ। তাই হৃদয় দিয়ে নয়, তাঁর সাহিত্য পাঠ করতে হয় মস্তিস্কের শক্তি দ্বারা। বাংলা ভাষার পাঠককুলে মননসমৃদ্ধ রচনার পাঠক বরাবরই সংখ্যাল্প। তাই এই অসাধারণ ভাষাশিল্পী জনপ্রিয় লেখকের স্বীকৃতি পেলেন না, হতে পারলেন না জননন্দিত কথাশিল্পীদের অন্যতম। থেকে গেলেন অপরিচিতই। সাহিত্য-শিল্পরসিক বিজ্ঞ বিদ্বজ্জন সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌র বিষয়ে সপ্রশংস কিন্তু তাঁর সম্বন্ধে খুব সোচ্চার নন তাঁরাও। এজন্য সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌র সমালোচকের সংখ্যা অত্যল্প। এর ফলে লোকজীবনের, লোকমানসের রূপকার হয়েও শতবর্ষ পরে আজ বড় বেশিই অজ্ঞাত অপরিচিত তিনি।
নিজভূমে তিনি অল্পকালই অবস্থান করেছেন। প্রথম জীবনে বাবার বদলি চাকরিসূত্রে বঙ্গদেশের বিভিন্ন জেলায় বসবাসের অভিজ্ঞতা ছিল। অধ্যয়নকালের অধিকাংশই কেটেছে অবিভক্ত ভারতবর্ষের কলকাতায়, কিছুদিন ময়মনসিংহে। কর্মজীবনে প্রথমে কলকাতা, তারপর ঢাকা, ইউরোপ-এশিয়ার বিভিন্ন দেশে, অস্ট্রেলিয়ায়। স্থায়ী নিবাস গড়েছিলেন ফ্রান্সে। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌র ফ্রান্সে অবস্থানকাল ১৯৬১-১৯৭০। এই সময় ফরাসি দেশে যে বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন দানা বাঁধে তার অভিপ্রায় ছিল আধুনিকতার সমূলোৎপাটন। হালে সেই আন্দোলনটিই 'উত্তর-আধুনিকতা' নামে সমগ্র বিশ্বের সামাজিক অর্থনৈতিক ও ব্যক্তিগত জীবনকে আমূল পাল্টে দিতে যাচ্ছে। ওয়ালীউল্লাহ্‌র প্রত্যক্ষণের ভুবন ছিল সুবিস্তৃত- সূক্ষ্ণদর্শী এই শিল্পী তীক্ষষ্টদৃষ্টির সূচ্যগ্রে জীবনের গভীরতম সত্যকে তুলে আনতে ছিলেন পারঙ্গম। স্বল্পায়ু জীবনে দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের দুরবস্থাকে চিত্রিত করেন কেরানির জীবন (মতিনউদ্দিনের প্রেম), জাহাজীর কষ্টকর জীবন (জাহজী), কেরায়া নৌকার মাঝির জীবন (কেরায়া), সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় উচ্ছেদকৃত মানুষের জীবন (একটি তুলসী গাছের কাহিনী), মাজার ব্যবসায়ীর উন্মূল জীবন (লাল সালু), দরিদ্র স্কুল শিক্ষকের দ্বিধান্বিত অস্তিত্বের সংকট ও ছদ্মবেশী পীরের গোপন কীর্তি (চাঁদের অমাবস্যা), মওলভী নেওলাপুরীর গোপন কীর্তি (তরঙ্গভঙ্গ), একজন অযোগ্য বিচারক, একজন দুস্থা সন্তানহন্তা মা, সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিতে না পেরে যে-মা তার শিশু সন্তানকে হত্যা করতে বাধ্য হয় (তরঙ্গভঙ্গ), এইসব নির্মম বাস্তব জীবনকে তিনি অস্তিত্ববাদ ও মনোবিকলনতত্ত্বের আলেকে জীবনভর উপস্থাপন করেন।
সংখ্যাল্প হলেও সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌ কিছু কবিতা, দুটি গল্পগ্রন্থ, চারটি উপন্যাস, তিনটি নাটক ও বেশ কিছু চিত্র সমালোচনার রচয়িতা। প্রতিটি রচনায় তাঁর প্রতিভার স্বকীয়তা বিশেষ এক উচ্চতায় পৌঁছেছে। সে দক্ষতাকে কেবল ভাস্কর্যের দৃঢ়তার সঙ্গেই তুলনা করা চলে। কথাশিল্পীর সবচেয়ে বড় মারণাস্ত্র ভাষা- ওয়ালীউল্লাহ্‌ অনন্য ধীশক্তি এবং সামাজিক জ্ঞান দ্বারা নিজস্ব এক ভাষারীতি প্রতিষ্ঠা করেন- স্বীয় রচনায় তার বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রয়োগ করেছেন। উদাহরণত 'নয়নচারা', 'লাল সালু', 'চাঁদের অমাবস্যা', 'কেরায়া', 'বহিপীর', 'তরঙ্গভঙ্গে' ব্যবহূত ভাষার প্রসঙ্গ উল্লেখ্য।
১৯৪৭ সালে দেশবিভাগ পূর্ব রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রামে তিনি মুসলিম লীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক। তাঁর শিল্পীসত্তার স্বীকৃতি লক্ষণীয় গবেষক আবদুল মান্নান সৈয়দের নিল্ফেম্নর বক্তব্যে-
'প্রথমে ছোটোগল্প, তারপর উপন্যাস, তারপর নাটক- এই ক্রমে মাধ্যমগুলিতে অগ্রসর হয়েছেন সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌। কিন্তু তাঁর সমস্ত রচনায় এক অখণ্ড ও অবিভাজ্য ওয়ালীউল্লাহই প্রকাশিত। সব মিলিয়ে ওয়ালীউল্লাহ্‌ নিবিড় একজন গদ্যশিল্পী; একটি-দুটি কবিতা লিখলেও বা তাঁর গদ্যরচনায় কবিতার সংক্রাম থাকলেও ওয়ালীউল্লাহ কিছুতেই কবি নন, নিছকই গদ্যশিল্পী, কিন্তু গদ্যশিল্পী হিসেবে তিনি গহন পথের যাত্রিক। আবার, গল্প ও নাটক লিখলেও, ওয়ালীউল্লাহ্‌কে মূলত ঔপন্যাসিক বলেই মনে হয়।' [সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌, আবদুল মান্নান সৈয়দ]
অনেকের অনেক কিছুই মনে হতে পারে কিন্তু এ কথা অতীব সত্য যে, নাটক রচনায় সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌র চেয়েও কম প্রতিভাধর, কম পারদর্শী ও কম সার্থক নাট্যকারের সংখ্যা বাংলা নাট্য-সাহিত্যের ইতিহাসে মোটেই দুর্লভ নয়। নাট্যকার পরিচয়ে অত্যন্ত সগৌরবেই তাঁরা আমাদের সাহিত্যের ইতিহাস অলংকৃৃত করে আছেন। বরং বলা যায়, গল্প-উপন্যাস-নাটক সাহিত্যের এই তিন মাধ্যমেই সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌ সমান দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন। স্বকালে বহু পণ্ডিত, কবি, সাহিত্যিকগণ সৃজনশীল প্রতিভার অধিকারী সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌র সৃষ্টিকর্মের বহুমাত্রিক আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছেন। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌র প্রতিভার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে মুনীর চৌধুরীর বক্তব্য নিম্নরূপ-
১. 'বাংলা সাহিত্যিক গদ্যরীতির রূপায়ণের এক বিশিষ্ট দিক হলো আঞ্চলিক উপভাষার বিচিত্র উপকরণের কলামণ্ডিত প্রয়োগ। এই প্রয়াস কত সূক্ষ্ণ, গূঢ় ও পরিশীলিত হতে পারে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌র গদ্য তার একপ্রকার দৃষ্টান্ত।
২. সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌ কি কাহিনী গ্রন্থনে, চরিত্র সৃজনে, জীবনের প্রতি দৃষ্টিপাতে কিংবা জীবনোপলব্ধির ভাষাগত রূপায়ণে কখনোই বাস্তবতার অন্ধ অনুকারী নন। তাঁর সংলাপও অঞ্চলবিশেষের মুখের ভাষার প্রতিফলন নয়। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি বঙ্কিম, উপলব্ধি জটিলতাপূর্ণ। তাঁর ভাষা তাঁর চেতনার মতোই বহুমাত্রিক। বর্ণনাগুণে তাঁর গল্পের অতিচেনা স্থূল পরিবেশ সূক্ষ্ণ সরসতাপ্রাপ্ত, সত্য হয়েও কল্পলোকের প্রান্তসীমা স্পর্শ করে; পূর্ব বাংলার গ্রাম, তার মানুষ, তাদের অনুভূতি এক বৃহত্তর দুর্জ্ঞেয় জীবনরহস্যের প্রতীকে পরিণত হয়। ওয়ালীউল্লাহ্‌র ভাষা এই ভাবেরই বাহন। আঞ্চলিক বুলিকে তিনি সরাসরি গ্রহণ করেন না। তাকে ইচ্ছানুযায়ী ভাঙেন, ইচ্ছানুযায়ী গড়ে দেন।' [পৃষ্ঠা. ৩৪, বাংলা গদ্যরীতি, মুনীর চৌধুরী]
আমাদের বিবেচনায় সমসাময়িক মুনীর চৌধুরীর উদ্ধৃত বক্তব্য ওয়ালীউল্লাহ্‌ সম্বন্ধে শেষকথা। বাংলা ভাষায় গদ্যরীতির বিশিষ্টতা যাঁদের রচনায় সুপরিস্টম্ফুট সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌ তাঁদের অন্যতম। তাঁর প্রত্যক্ষণের স্বাতন্ত্র্য প্রকাশকালে ছিল স্বতন্ত্র ভাষারীতির দাবিদার। ওয়ালীউল্লাহ্‌ জীবনের গভীরতলে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সমাজের অভ্যন্তরীণ নিগূঢ় সত্য, জীবনের অতলস্থ জীবন অর্থাৎ অস্তিত্বের মৌল সংকট এবং আধুনিক জীবনে সর্বত্রগামী মানবচেতনার অভাবনীয় প্রভাব কতটা কার্যকর তা আবিস্কার প্রয়াসী। এর মধ্য দিয়ে তাঁর রচনা বিশ্বসাহিত্যের সমকালীন ধারায় সংস্থাপিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর বিশ্বসাহিত্য নিৎসে, কিয়েরকেগার্ড, হাইডেগার প্রমুখের দর্শনের প্রভাবে ছিল অনিশ্চিত বিশ্বে উন্মূল মানব অস্তিত্বের রহস্যানুসন্ধানী। দার্শনিক ও সাহিত্যিক জাঁ পল সার্ত্রে স্বীয় রচনার দ্বারা অস্তিত্ববাদী দর্শনকে ভিন্ন মাত্রা দান করেন। কল্পনার ঐশ্বর্যময় ভুবন থেকে সরে এসে প্রত্যক্ষের অভ্যন্তরে বিদ্যমান অসংগতির সমাধানে অন্তরাস্তিত্বের দ্বারস্থ হলো। প্রাত্যহিকের ক্লিশে বাস্তবতা ঘিরে শিল্পীদের ব্যক্তিগত মত-মতাদর্শকেন্দ্রিক আবেগঘন উপস্থাপনা দাঁড়াতে চাইল দর্শনের ভূমিতে। ব্যক্তি অস্তিত্বের দ্বন্দ্বের আলোয় দেখতে প্রয়াসী হয় সমাজাস্তিত্বের সংকটের স্বরূপ। অর্থাৎ সমাজ বিবর্তনের ধারায় প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের নতুন সকল আবিস্কার, সৃষ্টি ও সংহার মানুষের যে ক্ষমতাকে প্রতিষ্ঠিত করে তা পূর্বতন শতাব্দী প্রতিষ্ঠিত সত্যের কাচের প্রাসাদ গুঁড়িয়ে দেয়। ফলে খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসে গভীর ফাটল সৃষ্টি হয়। যে অনন্ত সন্দুরের প্রতি ছিল চিত্ত সমর্পিত; যে অসীমের পানে তাকিয়ে ইহজাগতিক ও অপার্থিব জগতের যাবতীয় মুক্তির প্রত্যাশা চেতনায় লতিয়ে উঠত তা প্রথমবারের মতো চরম অনিশ্চয়তার অন্ধকারে তলিয়ে গেল।
প্রতিটি পদার্থের অভ্যন্তরীণ শক্তি; তাদের সাংগঠনিক কাঠামো, আপাদশীর্ষ মানবশরীর সংগঠনে প্রাপ্ত উপাদানসমূহ অন্যান্য বস্তুর সংগঠনেও গোচরীভূত হলে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব বিষয়ক শতাব্দী বাহিত ধারণায় আসে পরিবর্তন। জাগতিক শৃঙ্খলা বিষয়ক মৌলিক প্রশ্ন বদলে দেয় দর্শনের প্রচলিত গতিধারা। অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-শিক্ষা-চিকিৎসা ইত্যাদি মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে মানুষের কায়িকশ্রম, মস্তিস্কের উদ্ভাবনী ক্ষমতা, সংরক্ষণ যোগ্যতা, উৎপাদনের হালহাতিয়ার সৃষ্টির জন্য নতুন নতুন প্রযুক্তি, প্রকৌশল নিশ্চিত করেছে সভ্যতার ক্রমবিকাশ। কিন্তু বণ্টন ব্যবস্থার অসংগতি সৃষ্ট ভিন্ন সামাজিক বাস্তবতায় মানুষ আজ দুটি প্রধান ভাগে বিভক্ত- বিত্তহীন মানবেতর যাপনে বাধ্য মানুষ; পাশবপ্রবৃত্তি সম্পন্ন স্বার্থপর মানুষ। বেকেট কথিত অস্তিত্বহীন কোনো এক অদৃশ্য, 'গডো' এবং নিটৎসের 'সুপারম্যানে'র প্রতীক্ষায় বিত্তহীন, অত্যাচারিত মুক্তিকামী মানুষ ভরসাহীন বিপন্ন অস্তিত্বে কাল কাটাচ্ছে।
দু-দুটি বিশ্বযুদ্ধের অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ মানুষ তার ছায়ার পেছনে আর কোনো মহাশক্তির উপস্থিতি প্রত্যক্ষ না করে বিশ্বসৃষ্টির মূলানুসন্ধানে যথাশক্তি প্রয়াসী। জীবন সম্পর্কিত ধনাত্মক ও ঋণাত্মক সকল ধারণার সমস্বয়ে মানবঅস্তিত্ব বিষয়ক দার্শনিক জিজ্ঞাসা সন্তোষজনক কোনো উত্তর খুঁজে পায়নি। তাই এরূপ সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, জন্ম এবং মৃত্যু এর মধ্যবর্তী সময়ই প্রকৃতজীবন- মানুষের জীবন সংগ্রাম তার নিজস্ব, তার যাবতীয় অগ্রগতি সম্পূর্ণত শ্রমনির্ভর। মানুষের জীবনের সর্বাপেক্ষা বড় সংকট তার অস্তিত্বের সংকট। অস্তিত্বের রহস্যানুসন্ধানে ব্রতী মানুষ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তীকালে নিজেকে উন্মূল ভাবতে বাধ্য হলো। যুক্তি ও বিজ্ঞান অবলম্বন হবার ফলে জীবনের প্রতিটি সত্যকে যুক্তি দ্বারা বৈজ্ঞানিক বিবেচনায় গ্রহণ করতে শিখেছে উনিশ শতকে। এবার অগাস্ট কোঁতের 'সমাজবিজ্ঞান জ্ঞানের সর্বোচ্চরূপ' তত্ত্বের পরিণাম প্রত্যক্ষ করা গেল। এ কালের সাহিত্যও এখন দর্শন, সামাজিক বিজ্ঞান ও প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের মূল্যকে (values) অবলম্বন করতে চাইল।
শিল্পসাহিত্যের ভুবন হতে আবেগ সর্বস্বতা, কল্পনার দৌরাত্ম্য, অতিপ্রাকৃত শক্তির প্রতি অন্ধ আনুগত্য অবসিত হয়েছিল উনিশ শতকীয় সমাজ-বাস্তবতায়। তার সঙ্গে এবার উৎপাটিত হলো খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসের মধ্যযুগীয় শিকড়। মানুষের অমিত সম্ভাবনা সত্ত্বেও নিৎসের সুপারম্যানের জন্য অর্থহীন প্রতীক্ষার অবসান ঘটেছে এ যুগে। মানুষ বদ্ধমূল সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, এ পৃথিবীতে সে আগন্তুক, একাকী, উন্মূল। মানুষের অন্তর্গত রক্তের ভিতর* [জীবনানন্দ দাশ] এক অপার রহস্যের ভুবন থেকে উৎসারিত অসীম শূন্যতা অস্তিত্বের অণু-পরমাণু আন্দোলিত করেছে। সে শূন্যতা অনতিক্রম্য। প্রাত্যহিক জীবনের যন্ত্রণাময় অভিজ্ঞতা সমাধানহীন এক ভবিষ্যতের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে ঠেলে দিচ্ছে ব্যক্তিকে। এ ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য সমষ্টির অন্ধকার জীবনকে উজ্জ্বল আলোকমালায় সুশোভিত করার অভিপ্রায়জাত নয়- যা জ্ঞানালোকের যুগে সৃষ্টি হয়েছিল। প্রগাঢ় অন্ধকারে সমাচ্ছন্ন আত্মার মুক্তির আকাঙ্ক্ষা ছিল প্রথা-পদ্ধতি-বিধিবিধান-ধর্মীয় নিষেধ ও বুর্জোয়ার প্রতিষ্ঠিত পক্ষপাতমূলক ও পীড়নমূলক আইনের শাসন, অত্যাচার থেকে স্বাধীন হওয়ার উদ্দেশ্যপ্রসূত।
ব্যক্তির স্বাধীনতা আবশ্যক এ কারণে যে, মানুষের দ্বারা সৃষ্ট সমাজ ও রাষ্ট্র এবং উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানদ্বয়ের অস্তিত্ব এবং শাসকগোষ্ঠীর স্বার্থ ও অস্তিত্ব রক্ষায় প্রণীত আইন-বিধিবিধান, প্রথা-পদ্ধতির সঙ্গে মুক্ত মানবের অসংগতি সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ইউরোপীয় সমাজে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তরকালে উপরি-কথিত সমাজ পরিপ্রেক্ষিতেই একটি দার্শনিক প্রত্যয় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে অস্তিত্ববাদ। অস্তিত্ববাদের প্রবক্তাগণ দার্শনিক তত্ত্বের বাইরে তাঁদের রচিত সাহিত্যের মধ্য দিয়েও প্রচার করেন তাঁদের মতবাদ। বাংলা সাহিত্যে ওয়ালীউল্লাহ্‌র গল্পগুলো তীক্ষষ্ট ও তির্যক ভঙ্গির। ব্যক্তি এখানে স্বাধীনতার জন্য এবং বিধিবিধানের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন সংগ্রাম করে তা নয়। যে মহাজন কেরায়া দেবে বলে অঙ্গীকার করেছিল সে তা বিস্মৃত হয়েছে। অন্যদিকে তিনজন মানুষ তার প্রতিশ্রুতিকে বিশ্বাস করে অনাহারে মৃতপ্রায়। বাড়িতে তাদের পরিজনরাও তার হঠকারিতার দ্বারা পীড়িত। তারাও রয়েছে অনাহারে। ধনবান বা বুর্জোয়ার চেতনায় এই মানবিকতাটুকু অনুপস্থিত যে, আমার সুখের জন্য অন্যকে অন্যায়ভাবে, বিনা অপরাধে পীড়ন করবার অধিকার আমার নেই। গল্পে এমন নানা প্রসঙ্গ এসেছে যা শ্রমজীবীর অস্তিত্বের নানান সংকটের অভিব্যক্তি।
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌ শিল্পীর চেতনালোক ভারতবর্ষীয় মুক্তির সংগ্রামে একদা ইসলামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ না হলেও মুসলিম লীগের রাজনৈতিক চেতনা দ্বারা আলোড়িত হয়। তিনি মুসলিম লীগের রাজনীতির সমর্থক ছিলেন। ফলে সমগ্র বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের আলোকে তাঁর প্রতিভার মূল্যায়ন যেমন হয়, তেমনি মুসলমান সাহিত্যিকদের সাহিত্য সাধনার পরিপ্রেক্ষিতেও ওয়ালীউল্লাহ্‌র সাহিত্যকর্মের মূল্যবিচার করার একটি প্রবণতা লক্ষণীয়। গল্পলেখক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌ সম্বন্ধে গবেষক আবদুল মান্নান সৈয়দের অনুরূপ একটি মূল্যায়ন নিল্ফেম্ন উদ্ধৃত হলো-
''বাঙালি- মুসলমানদের মধ্যে প্রথম প্রকৃত গদ্যশিল্পী সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌, শওকত ওসমান, আবু রুশদ আমাদের ছোটগল্পের প্রথম অগ্রদূত; এঁরাই প্রথম অন্তর্জগৎ-বহির্জগৎস্পর্শী গল্প লিখেছেন। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌র এই সাফল্যের বাইরের কারণ : একদিকে পেশাঘটিত আভিজাতিক-আন্তর্জাতিক মানস-সংযোগ, অন্যদিকে নবোত্থিত মুসলিম সৃষ্টিশীল ও বুদ্ধিজীবীদের সংস্পর্শ-সংযোগ। তৎকালীন বাংলা সাহিত্যের কেন্দ্রীয় রাজধানী কলকাতায় অবস্থান, পূর্বাশা-চতুরঙ্গ একদিকে- অন্যদিকে সওগাদ-মোহাম্মদীর সঙ্গে যোগ, দেশি-বিদেশি শিল্প-সাহিত্যের অধ্যয়ন, অনুশীলন ওয়ালীউল্লাহ্‌র সৃজ্যমান মানসকে 'দেশজ' ও 'দেশোত্তর' লক্ষণসমূহে সমৃদ্ধ করে তুলেছিল [সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌, ২০০১, ১৬ ]।"
সাম্প্রদায়িকতার আলোয় নয়, বরং মুক্তচিন্তার দ্বারা মান্নান সৈয়দ প্রমাণ করেছেন- গল্পলেখক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌র প্রগতিশীল শিল্পচিন্তার ও সৃষ্টির অনন্যতার কারণ বহুমাত্রিক। তন্মধ্যে সংস্কারমুক্ত চেতনা অন্যতম। বিশ্বসাহিত্যের পঠন-পাঠন, অনুশীলন তাঁর প্রত্যক্ষণের ধরনটি গড়ে দিয়েছিল। বাংলাদেশের নোয়াখালী অঞ্চলের অধিবাসী ওয়ালীউল্লাহ্‌র গভীরতর অবলোকনে ছিল তাঁর অঞ্চলের জনজীবনে প্রচলিত ধর্মীয় গোঁড়ামি। কিন্তু নিজে ছিলেন তার উল্টো অবস্থানে। ধর্মীয় গোঁড়ামিমুক্ত, সংস্কারমুক্ত মানবতাবাদে আস্থাবান ছিলেন বলেই তিনি অস্তিত্ব সম্বন্ধেও সচেতন। প্রতিটি প্রাণীর বাঁচবার অধিকার সমান, মানুষেরও- কিন্তু স্বার্থবাদী মানুষ, ক্ষমতাবান রাষ্ট্রযন্ত্র, বুর্জোয়ার সম্পদের সীমাহীন লিপ্সা সে অধিকার হরণ করতে বদ্ধপরিকর। সেই আগ্রাসী শক্তির বিরুদ্ধেই অধিকারবঞ্চিতের অস্তিত্বের সংগ্রাম। কথাশিল্পী ওয়ালীউল্লাহ্‌ মানুষের সেই অস্তিত্বের সংগ্রামকেই উপস্থাপন করেছেন, বিচক্ষণ পর্যবেক্ষণে সর্বপ্রকার প্রবণতাসহ অস্তিত্বের সংগ্রামে আত্মনিয়োগকৃত সেই মানুষগুলোকেই তুলে আনেন লোকগোচরে।
ওয়ালীউল্লাহ্‌র শিল্পীচৈতন্য দুটি ধারায় সৃজন সম্পন্ন করেছে- এক. চেতনা প্রবাহ পদ্ধতি (Stream of Consciousness), দুই. অস্তিত্ববাদ (Existentialism)। চেতনাপ্রবাহ (Stream of Consciousness) : আধুনিক জীবনব্যবস্থার সামগ্রিক পরিবর্তন ইউরোপীয় জীবনে যে তরঙ্গাভিঘাত সৃষ্টি করে উনিশ শতকের শেষার্ধে তার প্রত্যক্ষফল ঐ-সময়কার বিভিন্ন শিল্পান্দোলনে গোচরীভূূত হয়। জীবন যখন যাপনের বিধিবিধান, উপকরণ ও ব্যবহার্য সামগ্রীর সঙ্গে অভাবনীয় বৈপরীত্যমূলক অবস্থানে উপনীত হয়, তখন সৃষ্ট বা উপস্থিত অসংগতির কারণে সামাজিক চেতনার সঙ্গে ব্যক্তিচেতনার প্রবল দ্বন্দ্ব বাঁধে। সেই দ্বন্দ্ব দৈনন্দিন জীবনে ঘটমান বর্তমানের অংশ বিধায় তা কষ্ট, যন্ত্রণা, সহ্যাতীত পীড়নমূলক, অন্যায়ের বহুমাত্রিক পেষণে পিষ্ট হওয়ায় তা কতকটা নিয়তিজ্ঞানেই মেনে নেয় সাধারণ মানুষ। শিল্পী-সাহিত্যিকগণ সমাজের সাধারণ নাগরিকগণের মতো কেবল পরিস্থিতির অংশ নয়, তাঁরা একই সঙ্গে সেই পরিস্থিতির পর্যবেক্ষকও। সকল পরিস্থিতিকেই তাঁরা কার্যকারণসূত্রে ব্যাখ্যা করতে সক্ষম। পরিবর্তমান সমাজের বহির্বাস্তবতা ও অন্তর্বাস্তবতার সমকালীন ও সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ রূপটি বিশ্নেষণপূর্বক, তারই অভিব্যক্তি নিজস্ব সৃষ্টির মধ্যে বিধৃত করেন। যুগে যুগে শিল্পী-সাহিত্যিকগণের সেই আত্মপ্রকাশ মাধ্যম আঙ্গিকগত বিবেচনায় পৃথক পৃথক মতবাদে চিহ্নিত হয়ে আসছে ১৮৫০ সালের পরবর্তী সময় থেকেই। দুই মহাযুদ্ধের অভিজ্ঞতাপ্রসূত জীবন ও সমাজ বাস্তবতা যে-শিল্পমতবাদকে মানবচেতনার গভীরতর স্তরে প্রতিষ্ঠিত করেছে তা চেতনাপ্রবাহ পদ্ধতি (Stream of  Consciousness)। অপর মতবাদটি অস্তিত্ববাদ (Existentialism)। চেতনাপ্রবাহ পদ্ধতির সাহিত্যের বৈশিষ্ট্য আবদুল মান্নান সৈয়দের সহযোগিতা গ্রহণ করা যেতে পারে।
অপরদিকে অস্তিত্ববাদী (Existentialism) সাহিত্যে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের সর্বোচ্চ স্তর ব্যক্তির আত্মচেতনার সর্বোচ্চমাত্রা পরিলক্ষিত। মনোবিজ্ঞানীদের যুক্তিতে এই স্তরে ব্যক্তি স্বভাবতই সুপার-ইগো দ্বারা পরিচালিত। সামাজিক নৈতিকতার বোধ, ঔচিত্য-অনৌচিত্যের বোধ, নিজের বিবেক, সামাজিক বাস্তবতা ও এর অভ্যন্তরীণ সমস্যার মৌল কারণ চিহ্নিত করে ফেলে- বিপন্ন বোধ করে নিজেকে। অস্তিত্বের বোধ এবং বিপন্ন অস্তিত্ব রক্ষার সচেতন প্রয়াস অস্তিত্ববাদী চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য। [সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌ আবদুল মান্নান সৈয়দ, পৃষ্ঠা-৭৩]
শিল্পী হিসেবে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌ সমাজ বাস্তবতাকে মনোবাস্তবতার অনুষঙ্গে এক অনতিক্রম্য পরিস্থিতির অভিব্যক্তি করে উপস্থাপন করেন। চরিত্রের বহির্বাস্তবতার চাইতে মনোজাগতিক বাস্তবতার আলোকে তিনি তাদের চেতনা ও অস্তিত্বকে স্বরূপে আবিস্কার করেন অধিকতর দক্ষতায়। নির্বাচিত 'পথ বেঁধে দিল ...', 'মতিনউদ্দিনের প্রেম' ও 'কেরায়া' তিনটি গল্পের ক্ষেত্রে আলোচ্য বক্তব্য যথার্থ বলে মনে করি। ওয়ালীউল্লাহ্‌ ফ্রান্সে বসবাসের দরুন ইউরোপীয় শিল্পদর্শন বা শিল্পান্দোলনের প্রত্যক্ষ প্রভাব তাঁর রচনায় থাকা অত্যন্ত সংগত। ব্যক্তিমানুষ একে অপর থেকে আলাদা, আলাদা প্রত্যেক ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ চাহিদা- সবকিছু যখন স্পষ্ট তখন স্বপ্ন, কল্পনা, ভবিষ্যৎ রচনার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য, যোগ্যতা ও প্রত্যাশানুযায়ী, রুচি অনুযায়ী প্রাপ্তির ইচ্ছা তাই প্রবলতর হওয়া সংগত। মানুষ হিসেবে এ সকল পাবার অধিকার সকলের আছে- এখানে ঈশ্বর, নিয়তি বা অতিলৌকিক শক্তির প্রতি দায়বদ্ধতা অনুপস্থিত। কারণ জাগতিক সকল কাজের নিয়ন্তা মানুষ। অন্য সব কাজ মানুষ করতে সক্ষম হলে নিজেকে গড়ে তোলা ও পরিচালনা করার যোগ্যতাও তার নিজের রয়েছে। অস্তিত্ববাদী তাই সমাজাভ্যন্তরে নিজেকে স্বাধীন করতে বদ্ধপরিকর।
বাংলা কথাসাহিত্যের ইতিহাসে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌ এক উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম। ব্যতিক্রম পর্যবেক্ষণের গভীরতায়, প্রত্যক্ষণের সূক্ষ্ণত্বে, উপলব্ধির অভিনবত্বে এবং প্রখর জীবনবোধ, সৃজন ও ভাষ্যের অসাধারণ আত্মনির্লিপ্ত ভঙ্গির অভ্যন্তরে এবং ভাষারীতির মধ্যে নিহিত। ওয়ালীউল্লাহ্‌কে অস্তিত্ববাদী দর্শনের বিশ্বস্ত অনুসারী আখ্যা দেয়া আবেগতাড়িত কোনো সিদ্ধান্ত নয়। তিনি মনোবিকলনতত্ত্বের প্রতিও ছিলেন বিশ্বস্ত। চেতনাপ্রবাহ পদ্ধতির সফল প্রয়োগ তাঁর সৃষ্টিকে ভিন্নমাত্রা দান করেছে। স্বল্প পরিসরের এ রচনা তাঁর শিল্পীসত্তার ভূমিকাপত্রও নয়।

আরও পড়ুন

×