ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

ছোট ছোট আশা

ছোট ছোট আশা

রোশান। ছবি ::ফয়সাল সিদ্দিক কাব্য

অনিন্দ্য মামুন

প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২২ | ১২:০০

ভারী কণ্ঠ, নায়কোচিত চেহারা- এই দুটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে বলে শুরু থেকেই তাঁর দিকে বাড়তি নজর ছিল দর্শকের। এই ছেলে একদিন ঢাকার সিনেমায় লিড করবে- এমন মন্তব্য শোনা গেছে অনেক নির্মাতার মুখ থেকেও। ছয় বছর ধরে তাই ঢাকাই সিনেমায় নিজেকে প্রমাণের চেষ্টা করে যাচ্ছেন নায়ক জিয়াউল রোশান। কিছুটা পেরেছেনও। ছোটবেলায় রোশানের মা চাইতেন- ছেলে বিসিএস ক্যাডার হবে। বাবা চাইতেন- সেনা কর্মকর্তা হবে ছেলে। রোশান হতে চাইতেন ক্রিকেটার। এই তিনটির কোনোটিই হওয়া হয়নি রোশানের। হয়েছেন নায়ক। রোশান বললেন, 'নায়ক হয়ে একটা সুবিধা হয়েছে। এখন সবই হতে পারব। বিসিএস ক্যাডার, সেনা কর্মকর্তা কিংবা ক্রিকেটার- সব।'
সুন্দরবন দস্যুমুক্ত করার র‌্যাবের দুঃসাহসিক অভিযান নিয়ে নির্মিত ছবি 'অপারেশন সুন্দরবন' মুক্তি পেয়েছে সম্প্রতি। এই ছবির মাধ্যমে রোশানের বাবার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে যেন। ছবিটিতে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার রিশান চরিত্রে হাজির হয়েছেন রোশান। শুধু হাজিরই নন, চরিত্রটি দারুণভাবে দর্শককে মুগ্ধ করেছে। দরাজ কণ্ঠ, উচ্চতা, কমান্ডিং- সব মিলিয়ে কালো পোশাকে দুর্দান্ত একজন হয়ে উঠেছিলেন তিনি। যতক্ষণ পর্দায় রোশান ছিলেন ততক্ষণ তাঁকে র‌্যাবের একজন কর্মকর্তাই লেগেছে। যদিও রোশানকে পর্দার রিশান হয়ে উঠতে কম কষ্ট করতে হয়নি। বন্দুক চালাতে, র‌্যাবের ট্রেনিং নিতে হয়েছে। তিনি বললেন, 'আমরা যাঁরা এই ছবিতে কাজ করেছি, সবাই যার যার অবস্থান থেকে সেরা কাজটিই দিয়েছি। একজন র‌্যাব কর্মকর্তা যেভাবে চলাফেরা করেন, তাঁর পিস্তল চালানো, কমান্ডিং, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ- সবই শিখতে হয়েছে। যা অনেক কষ্টসাধ্য ছিল আমাদের জন্য। এই পরিশ্রম আমরা সবাই করেছি ছবিটি বাস্তবধর্মী করে তুলতে। ছবি মুক্তির পর দর্শকের ইতিবাচক মন্তব্য পাওয়ার পর মনে হয়েছে, আমাদের কষ্ট সার্থক হয়েছে।'
ঢালিউডে জিয়াউল রোশানের পথচলা শুরু হয় 'রক্ত' সিনেমার মধ্য দিয়ে। এরপর কয়েকটি সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে নিজের অবস্থান শক্ত করেন। কলকাতার দেবের সঙ্গেও কাজের অভিজ্ঞতা হয়েছে তাঁর। মুক্তির অপেক্ষায় আছে 'জিন', 'মায়া; দ্য লাভ', 'রিভেঞ্জ', 'বিট্রে', 'প্রেম পুরাণ' ও 'জামদানি' সিনেমা। বলা যায়, এ সময়ের ঢাকাই ছবির অন্যতম ব্যস্ত নায়কদের একজন তিনি। রোশান বললেন, 'মুক্তির অপেক্ষায় থাকা সব ছবিই বড় বাজেটের। আগামী দিনগুলোতে পর্যায়ক্রমে ছবিগুলো মুক্তি পাবে।' এই যে একের পর এক ছবি মুক্তি পাচ্ছে, গৌণ থেকে মুখ্য নায়ক হয়ে উঠছেন, ভক্তকুল তৈরি হচ্ছে- কেমন লাগছে রোশানের? কথায় কথায় রোশান বলেন, 'দর্শকের ভালোবাসা একদিনে তৈরি হয় না। ছয় বছর ধরে দর্শকের কাছে যেতে চেষ্টা করছি। এখন তাঁদের ভালোবাসা পাচ্ছি। আমার ছবি দেখতে তাঁরা সিনেমা হলে আসছেন। এটা আমার জন্য বড় পাওয়া। এই ভালোবাসার পরিধি বাড়াতে আগামীতে ভালো ভালো কাজ উপহার দিতে চাই।' শুধু সিনেমার গণ্ডিতে আটকে নেই রোশান। ওয়েবেও ডেব্যু হয়েছে তাঁর। ওয়েব ছবি 'শুক্লপক্ষ'-তে অভিনয় করেছেন। চরকিতে মুক্তিও পেয়েছে এটি। জানালেন, এ মাধ্যমটাও এখন জনপ্রিয় হচ্ছে। দর্শকরা এখন অনলাইনেও ভালো কাজগুলো দেখছেন। তবে বড় পর্দার কাজ করতেই বেশি আগ্রহ রোশানের। তাঁর ভাষ্যে, 'বড় পর্দার বিষয়টিই আলাদা। সিনেমা হলের পর্দায় ছবি দেখার মধ্যে আলাদা আনন্দ আছে। ফিল আছে। তবে সব মাধ্যমের কাজকেই আমি গুরুত্বের চোখে দেখি।' দুই বোন, এক ভাইয়ের সংসারে সবার ছোট রোশান। চলচ্চিত্রে তাঁর যাত্রা ২০১৬ সালে জাজ মাল্টিমিডিয়ার হাত ধরে। রোশানের মুখ থেকে শোনা যাক, "ফেসবুকে আমার ছবি দেখে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়া থেকে ডাক আসে। কৌতূহল নিয়েই আমি যাই। সেদিনই পরিচয় আজিজ ভাইয়ের সঙ্গে। আমাকে দেখেই জিজ্ঞাসা করলেন, 'তোমার উচ্চতা কত?' বলি, '৬ ফুট ২ ইঞ্চি।' অন্য কিছু জানতে না চেয়ে তৎক্ষণাৎ 'রক্ত' ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দিলেন। কিছু না ভেবে আমিও রাজি হয়ে গেলাম। ওই দিনই চুক্তি হলো।" কাজ নিয়ে অনেক কথা হলো। আলোচনায় ব্যক্তিজীবনও বাদ থাকে না। শিগগিরই রোশান বিয়ে করছেন তাঁর দীর্ঘদিনের প্রেমিকা তাসনিম ঈশাকে। অনেক দিন আগে তাঁদের বাগদানও হয়েছে। তাড়াতাড়ি বিয়ের আয়োজনও করবেন। তিনি বললেন, 'আমার হবু স্ত্রীর পড়াশোনা শেষের পথে। আমার কাছে ও সময় চেয়েছে। পড়াশোনা শেষ হলেই দুই পরিবার বসে বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করবে। এখন বিয়েটা শুধু বাকি। যদিও শুরুতে আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন বিনোদন অঙ্গনের মানুষকে খুব একটা পছন্দ করতেন না। সামনাসামনি আমাকে দেখার পর নাকি তাঁদের অনেক ভালো লেগেছে (হাসি)। এ জন্যই তাঁরা বিয়ে দিতে রাজি হয়েছেন। বাকিটা জানি না।'

আরও পড়ুন

×