চাকরির জন্য মৌখিক পরীক্ষা
প্রস্তুতি কেমন হবে

শাহিনা নদী
প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২২ | ২৩:৫৭
সরকারি-বেসরকরি চাকরির পরীক্ষার চূড়ান্ত ধাপ হলো ভাইভা। কেমন হওয়া উচিত এই পরীক্ষার প্রস্তুতির কৌশল তা জানাচ্ছেন- শাহিনা নদী
মৌখিক পরীক্ষার নির্দিষ্ট কোনো সিলেবাস নেই। তাই এ পরীক্ষায় কী ধরনের প্রশ্ন করা হবে, তা নির্দিষ্ট করে বলার সুযোগ নেই। বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে যে কাজ বা চাকরির জন্য ভাইভা দিতে যাচ্ছেন, তার আগে সেই প্রতিষ্ঠান ও তাদের কাজ সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। এখন সব প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার ওয়েবসাইট আছে, সেখান থেকেও বিস্তারিত জানা যেতে পারে। প্রতিষ্ঠানের অর্জনের কথাও জেনে নিতে পারেন এখান থেকে। যদি ভাইভা বোর্ডে আপনার কাছে জানতে চাওয়া হয়, কেন আমরা এ পদে আপনাকে বেছে নেব বা কেন আপনি এ পদের জন্য নিজেকে যোগ্য বলে মনে করেন- এমন প্রশ্ন যে কোনো ভাইভার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এমন প্রশ্নের জবাবে প্রার্থীর উত্তর খুব গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ, আপনি হয়তো এরই মধ্যে অনেক চাকরির জন্য ভাইভা দিয়েছেন। তাঁরা মূলত আপনার কাছে জানতে চাইছেন, কেন অন্যদের চেয়ে এ কাজের জন্য সেরা। আপনি কাজটি এবং প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে কতটুকু জানেন, তাও আসলে জানতে চাওয়া হয় এমন প্রশ্নে। আপনার উত্তরের মাঝে এমন কিছু ফুটে ওঠা চাই, যা শুনে একজন চাকরিদাতা মনে করেন এই পদের জন্য আপনিই সেরা। বোঝাতে হবে কেন আপনি নিজেকে সেরা মনে করেন। আর কীভাবে প্রতিষ্ঠান আপনার দ্বারা লাভবান হবে। যাতে উত্তরটির পর চাকরিদাতার কাছে যথেষ্ট পরিমাণ কারণ থাকে আপনাকে নিয়োগ করার।
এ তো গেল প্রাথমিক দিক, এর বাইরে আপনাকে আপনার একাডেমিক বিষয় বা অন্যান গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর প্রশ্ন করতে পারেন। যেমন দেশে ও দেশের বাইরের খোঁজখবর কতটুকু রাখেন, বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া বিষয়গুলো অনেক ক্ষেত্রেই যাচাই করা হয়ে থাকে। যে পদের জন্য আবেদন করেছেন, সে পদসংশ্নিষ্ট প্রশ্ন হতে পারে। অনার্সে যে বিষয় পড়েছেন, সে বিষয়েও প্রশ্নম্ন হতে পারে। বাংলাদেশের সংবিধান সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখতে হবে। দখলে রাখতে হবে আন্তর্জাতিক বিষয়ও। নিজ জেলার আয়তন, জনসংখ্যা, শিক্ষার হার, কীসের জন্য বিখ্যাত, বিখ্যাত ব্যক্তি ইত্যাদি বিষয়ে ধারণা রাখতে হবে। মৌখিক পরীক্ষার জন্য যথাসম্ভব মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। বোর্ডে বাংলায় প্রশ্ন করলে বাংলায় উত্তর দেবেন আর ইংরেজিতে প্রশ্ন করলে ইংরেজিতে। কোনো বিষয়ে ভাইভা বোর্ডের সঙ্গে তর্ক করতে যাবেন না। মতাদর্শিক প্রশ্ন হলে টেকনিক্যালি উত্তর দেবেন। বিভিন্ন গাণিতিক হিসাবের প্রশ্ন করলে ভালোভাবে চিন্তা বা ক্যালকুলেশন করে উত্তর দেবেন। তাই বলে অতিরিক্ত কালক্ষেপণ করবেন না। ভাইভা দেওয়ার সময় তিনটি বিষয়ের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। তা হলো-
আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে। কোনোভাবেই নার্ভাস হওয়া যাবে না; দৃষ্টিভঙ্গি বুদ্ধিভিত্তিক এবং প্রাণবন্ত থাকতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ বিশেষ করে বাংলাদেশের ইতিহাস ('৪৭-'৭১)। সাম্প্রতিক আলোচিত ঘটনা, দেশ ও বিদেশ, এমডিজি, এসডিজি- এগুলোতে বাংলাদেশের অর্জন, নিজ জেলার নামকরণ, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ, সরকারের বিভিন্ন নীতি, স্বাস্থ্য খাতে পলিসি, তথ্যপ্রযুক্তি ইত্যাদি বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। নিজের নামের অর্থ, নামের সঙ্গে মিল আছে এমন বিখ্যাত ব্যক্তি এবং পরিবার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। আপনার পছন্দের কবি, সাহিত্যিক, সাহিত্য, গান, খেলাধুলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে পারে। এ ক্ষেত্রে আপনার পছন্দের বিষয়গুলো সম্পর্কে আগে থেকেই ভালোভাবে প্রস্তুতি নিলে ভালো করা সম্ভব।
আপনার নিজ জেলায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বিখ্যাত মুক্তিযুদ্ধের নাম, মুক্তিযুদ্ধের সময় আপনার জেলা কত নম্বর সেক্টরে ছিল ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে হবে। আপনার জেলা ও উপজেলার বিখ্যাত নদী, বন্দর, বিখ্যাত স্থান। আপনার জেলার যদি কোনো কবি ও সাহিত্যিক থাকেন, তাঁদের সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে।
১৯৪৭ সাল থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সাল পর্যন্ত আলোচিত বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। মুক্তিযুদ্ধে যাঁরা অসামান্য আবদান রেখেছেন, মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বই, উপন্যাস, কবিতা, যেসব বুদ্ধিজীবী, কবি ও সাহিত্যিক মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছেন, তাঁদের এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক, উপন্যাস, গল্পগ্রন্থ এবং বিখ্যাত গান সম্পর্কেও জানা থাকা ভালো।
সংবিধান প্রণয়নের সঙ্গে কারা জড়িত ছিলেন, খসড়া অবস্থা, উপস্থাপনের তারিখ, গৃহীত হওয়ার তারিখ। এ ক্ষেত্রে আপনাকে সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলো জেনে নিতে হবে। বিখ্যাত কবি-সাহিত্যিকদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরসহ প্রথিতযশা কবি-সাহিত্যিকদের সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিতে হবে।
- বিষয় :
- মৌখিক পরীক্ষা
- চাকরির পরীক্ষা