স্যানিটারি ন্যাপকিনে স্বাস্থ্য সুরক্ষা

সমতা ডেস্ক
প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২২ | ২৩:২৫
গত জুলাই মাসের বন্যায় ভোগান্তি পার করেছেন হাওরবাসী। বিশেষ করে সিলেট ও সুনামগঞ্জের মানুষের ভোগান্তি ছিল ব্যাপক। এমন বন্যায় ত্রাণ সাহায্য আসে, কিন্তু ত্রাণ বলতে চাল, তেল, লবণ, আলুকেই বোঝেন সবাই। বরাবরের মতো এমন সময় অবহেলিত থাকেন নারীরা। কারও চিন্তায়ও আসে না এই সময় পিরিয়ডে থাকা নারীকে কতটা ভোগান্তি পোহাতে হয়।
মিলি- ১৬ বছরের এই কিশোরী পিরিয়ড সামলান মায়ের কাছ থেকে শেখা পুরোনো শাড়ি বা লুঙ্গির কাপড় দিয়ে। বন্যার সময় কখন যে পরনের কাপড়টা ভিজছে আর শুকোচ্ছে নিজেই জানে না। সেখানে স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনের চিন্তা নেই তার মাথায়। পেটে দু-চার দানা ভাত গেলেই খুশি। মিলির মা জাহেদাও জানেন না, এমন দুর্যোগে মেয়েকে তিনি কী সমাধান দেবেন। বন্যার কষ্ট ঘোচার পরই আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল (ইফাদ) ও বাংলাদেশ সরকারের একটি যৌথ উদ্যোগে হাওরাঞ্চলের অবকাঠামো ও জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্প হিলিপ-এ স্যানিটারি ন্যাপকিন বানানোর প্রশিক্ষণ খাতায় নাম লিখিয়েছেন তাঁরা। নিজের স্বাস্থ্য সচেতনতার সঙ্গে নিশ্চিত হচ্ছে কিছু আয়ও।
জাহেদার ছয় মেয়ে। তিনি নিজের পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে, গ্রামের অন্য মেয়েদের কাছে স্বল্পমূল্যে বিক্রি করছেন তাঁর ঘরে বানানো স্যানিটারি ন্যাপকিন আর স্বপ্ন দেখছেন এই ছোট্ট উদ্যোগকে আরও বাণিজ্যিক রূপ দেওয়ার। এমন আরেকজন প্রশিক্ষণার্থী তাসলিমা। ২৫ বছর বয়সী এই নারী স্বপ্ন দেখেন তিনি এমন কিছু করবেন, যাতে করে তিনি যে কষ্টের মধ্যে দিয়ে গেছেন তার আশপাশের কাউকে এই কষ্টের মধ্যে দিয়ে আর যেতে না হয়। তাসলিমার মাসিক নিয়মিত নয়। এক বছরের বেশি সময় ধরে ভোগার পর জানলেন, তিনি জরায়ুর বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন।
তাসলিমা বলেন, 'যদি আমি আগে জানতাম মাসিকজনিত স্বাস্থ্য সমস্যার কথা কিংবা আমার যদি অর্থনৈতিক সক্ষমতা থাকত স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে মাসিক ব্যবস্থাপনা করার, আজ হয়তো আমাকে এই ভোগান্তিতে পড়তে হতো না।'
সাধারণ ও সহজলভ্য কিছু উপকরণ ও সহজ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সাত দিনের প্রশিক্ষণে তাঁরা শিখে নিয়েছেন কীভাবে নিজের ঘর বা উঠানেই বানিয়ে নেওয়া যায় স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিবেশবান্ধব স্যানিটারি ন্যাপকিন। জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে গ্রামীণ যুবক ও নারীর জীবিকা উপার্জনের সুযোগ প্রতিনিয়ত কমছেই; সে ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন তাঁদের উপযুক্ত কাজের সুযোগ করে দিতে পারে বলে মনে করেন বাংলাদেশে ইফাদের কান্ট্রি ডিরেক্টর আর্নো হ্যামেলিয়ার্স। তিনি আরও বলেন, 'উদ্ভাবনী ও পরিবেশবান্ধব স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরি ও বিপণনের এই প্রশিক্ষণ হাওরের নারীর শুধু জীবিকার প্রয়োজনই মেটাবে না, যুব প্রশিক্ষণের এ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অনেকেই মাসিক স্বাস্থ্যবিধি ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে পারবেন।'
আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিলের (ইফাদ) অর্থনৈতিক সহায়তায় হাওর অঞ্চলের অবকাঠামো ও জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পটি ইতোমধ্যে পাঁচটি জেলার ২৮০ জন নারীকে স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরি ও বাজারজাতকরণে প্রশিক্ষণ দিয়েছে এবং এই কার্যক্রমের মাধ্যমে মোট ৯৬০ জন নারী স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরি ও ব্যবসা ব্যবস্থাপনার প্রশিক্ষণ পাবেন।
- বিষয় :
- স্যানিটারি ন্যাপকিন
- স্বাস্থ্য সুরক্ষা