আত্মবিশ্বাসেই সাফল্য

মোহাইমিনুল ইসলাম
প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২২ | ২২:৫৪
মৌখিক পরীক্ষার প্রস্তুতি ও কৌশল কেমন হবে, কীভাবে নিজেকে তৈরি করতে হবে- জানাচ্ছেন ৪০তম বিসিএস পররাষ্ট্র ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত প্রথম স্থান অধিকারী মোহাইমিনুল ইসলাম
৪১তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৬ হাজার ৩৫ জন প্রার্থীকে নিয়ে মৌখিক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। ২০০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা ও লিখিত পরীক্ষার নম্বর বিবেচনায় প্রার্থীকে সর্বোচ্চ নম্বরধারীদের পছন্দের ক্রম অনুযায়ী ক্যাডার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ পরীক্ষার জন্য প্রয়োজন ভিন্ন প্রস্তুতি। তাই এ অংশে ভালো করলে দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হয়ে যেতে পারে অনেকেরই। আগের পরীক্ষাগুলোতে এমনও দেখা গেছে, অনেকে লিখিত পরীক্ষায় খুব কম নম্বর নিয়েও মৌখিক পরীক্ষায় ভালো করে ক্যাডার হয়েছেন। তাই ভাইভায় ভালো করা খুবই জরুরি। একটি নতুন বা পুরোনো যে কোনো ভাইভা গাইড জোগাড় করুন। প্রশ্নের ধরন দেখুন। ইন্টারনেট থেকে ফার্স্ট আর সেকেন্ড চয়েসের সাধারণ বিষয়গুলো দেখে ফেলুন। মৌখিক পরীক্ষায় ভালো করার জন্য ভালো প্রস্তুতি প্রয়োজন। শুধু কোনো পরীক্ষার ভাইভার জন্য নয়, যে কোনো ক্ষেত্রে সফল হতে হলে কথা বলার সময় যে তিনটি বিষয়ের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিতে হবে, তা হলো স্বচ্ছতা, স্পষ্টতা এবং ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। অন্যদিকে ভাইভা দেওয়ার সময় দুটি বিষয়ের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। তা হলো-
- আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে, কোনোভাবেই নার্ভাস হওয়া যাবে না।
- দৃষ্টিভঙ্গি বুদ্ধিবৃত্তিক এবং প্রাণবন্ত থাকতে হবে।ভাইভার প্রস্তুতিকেও তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- ১. অবচেতন মনের প্রস্তুতি, ২. তথ্যগত প্রস্তুতি এবং ৩. বোর্ডের মুখোমুখি হওয়ার প্রস্তুতি।
অবচেতন মনের প্রস্তুতি
ব্যক্তির সারাজীবনের বিভিন্নভাবে অর্জিত জ্ঞান, যার ওপর কারও কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। ভাইভার অনেক কিছুই নিজের জীবনের নানা অভিজ্ঞতা থেকে থাকবে।
তথ্যগত প্রস্তুতি
নিজের সম্পর্কে :নিজের নামের অর্থ, নিজের নামে কোনো স্বনামধন্য ব্যক্তি, নিজ জন্মদিনের বাংলা বর্ষপঞ্জি কত তারিখ ও মাস, নিজ স্কুল-কলেজ, নিজ বিশ্ববিদ্যালয়, বিভাগের চেয়ারম্যান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠানপ্রধান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য, নিজ স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা বিখ্যাত ব্যক্তি এবং নিজ পঠিত বিষয় নিয়ে প্রশ্ন থাকবে বেশি।
নিজ এলাকা সম্পর্কে :আপনার স্থায়ী ঠিকানা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য, যেমন- প্রতিষ্ঠা সাল, জনসংখ্যা, শিক্ষার হার, প্রধান ধর্ম ও উপজাতি, উপজেলা, বিখ্যাত ব্যক্তি, নদনদী, দর্শনীয় স্থান, পত্রপত্রিকা, সংসদের আসন ও সংসদ সদস্যদের নাম, বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব, মুক্তিযুদ্ধে কোন সেক্টরে ছিল, মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার, স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ও খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম, মুক্তিযুদ্ধের সময়ের বিভিন্ন ঘটনা, শত্রুমুক্তির তারিখ, ভাষাসংগ্রামীদের নাম জেনে যেতে হবে।
বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও সংবিধান :জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ভাইভাতে প্রশ্ন এসে থাকে। যেমন- জন্মস্থান, পারিবারিক ইতিহাস, শৈশব, রাজনৈতিক জীবন, কর্মজীবন এবং বঙ্গবন্ধুর লেখা বইগুলো নিয়ে ভাইভা বোর্ডে প্রশ্ন আসে। ভাষা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে কোনো উত্তর না পারলে ভাইভা বোর্ডে প্রার্থী সম্পর্কে নেগেটিভ ধারণার সৃষ্টি হবে। তাই এ ধরনের প্রশ্নগুলোর ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ভুল করা যাবে না।
বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন, যুক্তফ্রন্ট, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ছয় দফা, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, '৬৯-এর গণআন্দোলন, '৭০-এর নির্বাচন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত ঘটনাবলি, অপারেশন সার্চলাইট, স্বাধীনতার ঘোষণা, মুজিবনগর সরকার, অপারেশন জ্যাকপট, সেক্টর, সেক্টরপ্রধান, মুক্তিযুদ্ধের খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা, বীরশ্রেষ্ঠদের নাম, পদবি, জন্মস্থান, জন্ম-মৃত্যুর তারিখ, বীরাঙ্গনা, বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড, আত্মসমর্পণ চুক্তি, মুক্তিযুদ্ধের সময়ের বিভিন্ন দেশের ভূমিকা, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারের ভূমিকা ইত্যাদি সম্পর্কে জেনে রাখতে হবে। এ ছাড়া সংবিধানের বিশেষ কিছু ধারা বাংলা ও ইংরেজি উভয়ভাবেই মুখস্থ করে রাখতে হবে। পাশাপাশি সংবিধানের বিভিন্ন ধারার প্রয়োগ বিষয়েও প্রশ্ন হয়ে থাকে।
মনোযোগ দিয়ে শুনুন
পরীক্ষকের প্রশ্ন মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। শোনার পর একটু সময় নিয়ে গুছিয়ে উত্তর দিতে হবে। উত্তর দেওয়ার সময় আপনার জানা বিষয় দিয়ে উত্তর দেবেন।
ক্যাডার চয়েস :প্রথম, দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় চয়েস নিয়ে সাধারণত প্রশ্ন জানতে চাওয়া হয়। প্রথম চয়েসের সঙ্গে নিজের পড়ার বিষয়ের সম্পর্ক কী, লাস্ট চয়েস কী ও কেন দেওয়া হয়েছে, ক্যাডারগুলোর পদসোপান, সাংগঠনিক কার্যক্রম, কাজের কাঠামো ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত পড়াশোনা করে যাবেন।
সাম্প্রতিক ঘটনাবলি :নিয়মিত পত্রিকা পড়াসহ দেশ-বিদেশে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক ঘটনাবলি, মেগা প্রজেক্ট, বাংলাদেশের অর্থনীতি ইত্যাদি নিয়ে প্রশ্ন হয়। তাই ভাইভার আগে থেকেই নিয়মিতভাবে সাম্প্রতিক ঘটনার দিকে নজর রাখবেন। সাম্প্রতিক দু-তিন মাসের কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পড়তে পারেন। ভাইভার দিন পত্রিকার হেডলাইনগুলো চোখ বুলিয়ে নেওয়া উচিত।
গ্রন্থনা : শাহিনা নদী