কানাডায় পড়াশোনা

সাঈদ সিদ্দিক
প্রকাশ: ১৮ ডিসেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২২ | ২৩:৪৮
উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা শেষ করে এই সময়ে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য পরীক্ষা দেন। একইভাবে বিদেশে অনার্স-মাস্টার্স বা পিএইচডিতে ভর্তির আবেদনের সময়ও এখন। কানাডাতে সব পর্যায়ের পড়াশোনার মান বেশ উন্নত। তবে খরচ ও পারিপার্শ্বিক বিবেচনায় আমার মতে দেশ থেকে অনার্স শেষ করে বাইরে উচ্চশিক্ষার আবেদন করলে ভালো হয়। কারণ গ্র্যাজুয়েট (মাস্টার্স বা পিএইচডি) লেভেলে বৃত্তি সহজলভ্য। আমি আজ শুধু মাস্টার্স বা পিএইচডির আবেদন নিয়ে লিখব।
কখন আবেদন করতে হয়: নভেম্বর মাসে কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির আবেদন শুরু হয়। আমাদের দেশে ২০২০-২১ সেশন, যেখানে এক বছর আবেদন করে পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি কার্যক্রম শেষ করে পরের বছর জানুয়ারিতে ক্লাস শুরু হয়, তেমনি কানাডাতে আগের বছর নভেম্বরে আবেদন করলে ক্লাস শুরু হবে পরের বছরের সেপ্টেম্বরে। আবেদন করা যায় নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভাগভেদে সময়সীমা দুই-তিন সপ্তাহ কম-বেশি হতে পারে। দ্রুত আবেদন করা ভালো, এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক স্কলারশিপ বা বৃত্তি পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
আবেদন করতে কী কী দরকার :
গ্র্যাজুয়েটে (মাস্টার্স বা পিএইচডি) আবেদন করতে অনার্স বা মাস্টার্সের ট্রান্সক্রিপ্ট ও সার্টিফিকেট, ইংরেজি ভাষার দক্ষতার নম্বর, শিক্ষকদের কাছ থেকে সুপারিশের চিঠি ও উচ্চশিক্ষার বিস্তারিত পরিকল্পনা। আবেদন অনলাইনে করতে হয়, তাই এসব কাগজের স্ক্যান কপি সঙ্গে রাখতে হবে।
ট্রান্সক্রিপ্ট ও সার্টিফিকেট
অনার্স বা মাস্টার্সের ট্রান্সক্রিপ্ট ও সার্টিফিকেট যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উঠিয়ে নিতে হবে। রেজাল্ট দেওয়ার ১-২ সপ্তাহ পরই এগুলো রেজিস্ট্রার বিল্ডিং/প্রশাসনিক ভবন থেকে সংগ্রহ করতে হয়।
ইংরেজি ভাষার দক্ষতা
ইংরেজি ভাষার দক্ষতার জন্য ওঊখঞঝ বা ঞঙঊঋখ এর নম্বর লাগবে। বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে ওঊখঞঝ ৬ থেকে ৭ এর মধ্যে থাকতে হয়। তবে কোথাও কোথাও এই মর্মে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সার্টিফিকেট জমা দিলেও হতে পারে। অল্প কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ কিছু বিষয়ে পড়ার জন্য এজঊ/এগঅঞ দরকার হতে পারে। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে চাইবেন, সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া থাকবে।
শিক্ষকদের কাছ থেকে সুপারিশ
এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সুপারিশপত্র। একে ষবঃঃবৎ ড়ভ ৎবপড়সসবহফধঃরড়হ (খঙজ) বলে। সাধারণত কোনো শিক্ষার্থী আবেদন করলে, সে কেমন তা জানার জন্য একটি গোপনীয় পত্র সংশ্নিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আপনার নির্বাচিত দুই-তিনজন শিক্ষকের কাছে চাওয়া হয়। আপনার শিক্ষক আপনাকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন, তা লিখে জানাবেন। এই কার্যক্রমে আবেদনকারী কোনোভাবেই কিছু জানবে না। তবে শিক্ষার্থীদের উচিত হবে, যে যে শিক্ষকের নাম দেবে তাঁদের সঙ্গে আগে থেকে অনুমতি নেওয়া। এ ক্ষেত্রে শিক্ষকের বিশ্ববিদ্যালয় ডোমেইনের ই-মেইল ব্যবহার করা উচিত।
উচ্চশিক্ষার বিস্তারিত পরিকল্পনা
একে অনেক সময় Statement of Purpose(SOP) বলে, যেখানে আপনি নিজে লিখবেন, কেন আপনি এই বিষয়ে পড়তে চান, নিজ দেশে কেন আপনি এই ডিগ্রি না নিয়ে বিদেশে যেতে চান, ডিগ্রি অর্জনের পর আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী ইত্যাদি। চেষ্টা করবেন মার্জিত ও যতটা পারা যায় সত্য লিখতে।
আবেদন করতে রেজাল্ট কেমন দরকার
আবেদন করতে রেজাল্ট অনেক ভালো হতে হবে- এমন নয়। রেজাল্টের বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভাগভেদে আলাদা হয়। তবে সিজিপিএ ৩.২৫-এর বেশি থাকলে ভালো হয়। রেজাল্ট যত ভালো থাকবে, ভর্তির সম্ভাবনা বেশি থাকবে।
আবেদন করতে কি টাকার প্রয়োজন হবে?
আবেদন করতে বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে ১০০-১৫০ ডলার লাগতে পারে। তবে নিম্ন/মধ্যম আয়ের দেশ কোটায় বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে এই টাকাটা মওকুফ করা আছে (যেমন আলবার্টা বিশ্ববিদ্যালয়)।
কানাডায় কি শুধু বিজ্ঞান বা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশোনা হয়?
না, এখানে অনেক বিষয়ে পড়াশোনা করা যায়। আপনি বাংলাদেশে যেসব বিষয়ে পড়ার চিন্তাও করবেন না, এখানে তাও ফান্ডসহ পড়া যায়। আলবার্টা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচ শতাধিক বিষয়ে মাস্টার্স করা যায়। এই রকম সব বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনার পছন্দের বিষয়ে পড়তে পারবেন। সব থেকে মজার বিষয়, আপনি এক বিষয়ে অনার্স করে কাছাকাছি অন্য বিষয়ে মাস্টার্স করতে পারবেন। অনেক ছেলেমেয়ে আর্টস থেকে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে এখানে। সংগীত, স্পোর্টস, ন্যানোটেকনোলজি, রাজনীতি, পাবলিক হেলথ, সফটওয়্যার- এসব যে কোনো বিষয় শিক্ষার্থী বেছে নিতে পারবেন।
পড়াশোনা কি নিজের টাকায় করতে হয়?
কানাডাতে গ্র্যাজুয়েট (মাস্টার্স বা পিএইচডি) সব ক্ষেত্রেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বৃত্তি দেওয়া হয়। আপনার পড়াশোনা, থাকা-খাওয়ার যাবতীয় খরচ বিশ্ববিদ্যালয় দেবে। কিছু কিছু মাস্টার্স প্রোগ্রাম থিসিস ছাড়া হয় সেখানে নিজ খরচে পড়তে হয়। তবে এখানে শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে বা বাইরে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়। বেতন ঘণ্টায় নূ্যনতম ১৫ ডলার। তবে যাঁরা থিসিস করবেন, তাঁদের যাবতীয় খরচ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষণা সহকারী/শিক্ষকের সহকারী হিসেবে দেওয়া হবে।
পিএইচডি স্টুডেন্টদের নিশ্চিত বৃত্তি দেওয়া হবে গবেষণা সহকারী হিসেবে। পরে অন্য অনেক স্কলারশিপ দেওয়া হয়, যেগুলো ভর্তি হওয়ার পর পাওয়া যাবে। আমি আলবার্টা সরকারের একটা স্কলারশিপ পেয়েছি ভর্তি হওয়ার পর। আমার মনে হয় শুধু অনেক অনেক টাকা দিয়ে বিদেশে পড়তে যাওয়া ছাড়াও সেখানকার বৃত্তি নিয়ে দেশ থেকে কোনো টাকা না নিয়েও পড়াশোনা করা সম্ভব।
বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিয়ে লাভ কী?
আমরা অনেকেই মনে করি শুধু শিক্ষকরা অথবা মেধাবী শিক্ষার্থীরা বাইরে পড়তে যাবেন, অন্যরা নন। এখানে আসার পর আমার ধারণা বদলে গেছে। এখানে শুধু বাংলাদেশ থেকে আমরা কয়েকজন শিক্ষকই উচ্চশিক্ষা নিতে এসেছি, অন্য কোনো দেশ থেকে কোনো অধ্যাপক পড়তে আসেন না। দেখা গেছে সব দেশ থেকে অনার্স বা মাস্টার্সের পরপরই চলে আসেন।
এখানে মাস্টার্স বা পিএইচডির পর সবাই চাকরি শুরু করতে পারেন। বেতন অনেক বেশি, অন্তত শিক্ষার্থী হিসেবে যা পাওয়া যায়, চাকরি করলে নূ্যনতম বেতন তার কয়েক গুণ। আপনি আরও অনেকের চাকরির ব্যবস্থা করতে পারবেন। চাইলে পড়া শেষ করে দেশে ফিরেও সম্মানজনক চাকরির সুযোগ নিতে পারেন।
[ পিএইচডি শিক্ষার্থী, আলবার্টা বিশ্ববিদ্যালয়, কানাডা ]