ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

সাক্ষাৎকার

থাকছে বিনিয়োগ উৎপাদন বাজারজাতের সব সুবিধা

থাকছে বিনিয়োগ উৎপাদন বাজারজাতের সব সুবিধা

শেখ ইউসুফ হারুন, নির্বাহী চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ

--

প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারি ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৩ | ০৩:৩৪

সমকাল: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর স্থাপনের কাজ কবে থেকে শুরু হয়?

শেখ ইউসুফ হারুন: দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার উদ্যোগটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১০টি বিশেষ উদ্যোগের একটি। এক এক করে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের কাজ করতে থাকে বেজা। সেই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালের শেষ দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর স্থাপনের জন্য জমি বন্দোবস্ত ও অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়। এরপর থেকে চলতে থাকে নানা পরিকল্পনা। ২০১৯ সালের ২০ অক্টোবর এ শিল্পনগর স্থাপনের মহাপরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়। সে অনুযায়ী এই শিল্পনগরকে কয়েকটি জোনে ভাগ করা হয়েছে। এরপর থেকে বিনিয়োগ উপযোগী করে গড়ে তুলতে শুরু হয় অবকাঠামো নির্মাণের যাবতীয় কাজ, যা এখনও চলমান।

সমকাল: এ শিল্পনগর নিয়ে বিনিয়োগকারীদের বেশ আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। এর পেছনে মূল কারণ কী?

শেখ ইউসুফ হারুন: অনেক কারণ আছে। বিনিয়োগ, উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা দরকার তার সবক'টি নিশ্চিত করা হচ্ছে এ শিল্পনগরে। এ শিল্পনগরকে দেশের প্রথম পরিকল্পিত এবং বৃহৎ শিল্পনগর হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে, যাকে আমরা স্মার্ট নগরী বলছি। শিল্প ছাড়াও একটি পূর্ণাঙ্গ শহরের সম্ভাব্য সব ধরনের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেই এ শিল্পনগর গড়ে তোলা হচ্ছে। সেখানে হালকা, মাঝারি, বৃহৎ এবং ভারী সব ধরনের শিল্প-কারখানা থাকবে। জনজীবনে প্রয়োজন- এমন সব ধরনের পণ্যই উৎপাদন হবে সেখানে। শিল্পপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও সেখানে থাকবে আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকা, নগর কেন্দ্র, বিজনেস হাব, সার্ভিস জোন, প্রশাসনিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও পুনর্বাসন এলাকা। পরিকল্পনায় শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদানের জন্য নির্দিষ্ট এলাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সমুদ্রপথে আমদানি-রপ্তানির জন্য শিল্পনগরে অত্যাধুনিক জেটি এবং সংশ্লিষ্ট লজিস্টিকস সুবিধা দেওয়ার জন্য রাখা হয়েছে আলাদা এলাকা। এ শিল্পনগর হবে সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব। মাল্টিমোডাল যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে। এসব কারণে দিন দিন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর।

সমকাল: শিল্পনগরে উৎপাদন শুরুর অগ্রগতি কতটা হলো?

শেখ ইউসুফ হারুন: বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর নির্মাণকাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। উদ্যোক্তাদের জমি বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে একের পর এক শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। বর্তমানে সেখানে ১৫টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান নির্মাণাধীন রয়েছে। গত বছরের ২০ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী এ শিল্পনগরে চারটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিক উৎপাদন এবং কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও অবকাঠামো নির্মাণের উদ্বোধন করেছেন। চলতি বছরে আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান উৎপাদন শুরু করবে। পুরোদমে উৎপাদন শুরু হলে অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে এ শিল্পনগর।

সমকাল: ব্যবসায়ীরা বলছেন, বেজার ওএসএসকে আরও শক্তিশালী করা দরকার। এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে?

শেখ ইউসুফ হারুন: ওয়ান স্টপ সার্ভিস বা ওএসএস সেন্টারের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের নির্বিঘ্নে সেবা প্রদানের জন্য বেজার প্রচেষ্টার ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় সংসদে ওএসএস আইন পাস হয়। এখন ট্রেড লাইসেন্স, জমি নিবন্ধন, নামজারি, পরিবেশ ছাড়পত্র, নির্মাণ অনুমোদন, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সংযোগ, টেলিফোন-ইন্টারনেট সংযোগ, বিস্ম্ফোরক লাইসেন্স, বয়লার সার্টিফিকেটসহ ২৭ ক্যাটাগরির সেবা এক জায়গায় পাওয়া যায়। ৪৮টি সেবা অনলাইনে প্রদানসহ প্রায় ১২৫টি সেবা ওএসএস সেন্টার হতে দেওয়া হচ্ছে। যেসব সেবা এখনও অনলাইনের আওতায় নেই, সেসব সেবাকে দ্রুত অনলাইনে রূপান্তরে বেজা কাজ করছে। 

সমকাল: সরকারি বিভিন্ন সংস্থার সেবা পেতে এখনও ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এ ব্যাপারে বেজা কীভাবে সহায়তা করছে বিনিয়োগকারীদের?

শেখ ইউসুফ হারুন: সংশ্লিষ্ট সব সরকারি সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে ব্যবসা সহজীকরণে এবং সেবার মান উন্নয়নে বেজা প্রতিনিয়ত তৎপর রয়েছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং কভিড অতিমারির সময়েও দেশি-বিদেশি বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে বেজায়। এতে প্রতীয়মান হয়, বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিনিয়োগের চমৎকার পরিবেশ বিরাজমান। বিদেশি বিনিয়োগ আরও বাড়াতে বেজা বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।

সমকাল: কোনো কোনো উদ্যোক্তা মনে করেন, বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে ইতোমধ্যে জমির দাম অনেক বেড়ে গেছে। জমির দাম কমালে বিনিয়োগ আরও ত্বরান্বিত হবে বলে মনে করেন তাঁরা। এ ব্যাপারে বেজার কোনো পরিকল্পনা আছে কি?

শেখ ইউসুফ হারুন: বেজার মূল লক্ষ্য দেশে বিনিয়োগ বাড়িয়ে অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা। সে জন্য দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অনেক কম দামেই জমিসহ অন্যান্য ইউটিলিটি সংযোগ দিচ্ছে। তবে বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়নে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হয়। এই অর্থ সংস্থানের জন্য প্রয়োজনীয় উৎস সৃষ্টি করতে হয় বেজার। এরপরও যে দামে বিনিয়োগকারীদের জমি লিজ দেওয়া হচ্ছে, তা অন্য যে কোনো দেশের চেয়ে এখনও অনেক কম। এ কারণে বেজার অর্থনৈতিক অঞ্চলে জমি বরাদ্দ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে।

আরও পড়ুন

×