ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

লাল-সবুজের আরও একজন

লাল-সবুজের আরও একজন

মাতসুশিমা সুমাইয়া

রোমাঞ্চ তালুকদার

প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারি ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২৩ | ০৫:০৯

মাতসুশিমা সুমাইয়া। জাপানে জন্ম নেওয়া এবং বেড়ে ওঠা এই তরুণী ডাক পেয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলে। সুমাইয়া অলিম্পিক বাছাই দলে ডাক পাওয়ার পর যোগ দিয়েছেন ক্যাম্পেও। বেশ কিছুদিন ধরে খেলছেন ঘরোয়া ফুটবলে। বসুন্ধরা কিংসে খেলা এই ফরোয়ার্ড ঘরোয়া প্রতিযোগিতার পাশাপাশি সাবিনা খাতুনের সঙ্গে মালদ্বীপও মাতিয়ে এসেছেন। আগামী ৩ থেকে ১১ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে অলিম্পিক ফুটবল বাছাই পর্ব। গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশ খেলবে ইরান, মিয়ানমার ও মালদ্বীপের বিপক্ষে। খেলবেন অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার সুমাইয়াও।

বিশ্বাসে ভর দিয়ে পথচলা
'স্বপ্ন দেখা সহজ, কিন্তু তার বাস্তবায়ন কঠিন'- এই কথাকে ভুল প্রমাণ করে দিয়েছেন সেরেনা উইলিয়ামস। লাল-সবুজের দলে জায়গা করে নেওয়া সুমাইয়াও এ বাণী ভুল প্রমাণ করতে পারবেন, তা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেই পথ চলতে শুরু করেন। জাপানি বংশোদ্ভূত বাংলাদেশি নারী ফুটবলার মাতসুশিমা সুমাইয়ার মতে, প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস আর একাগ্রতা থাকলে কঠিনও একসময় সহজ হয়ে যায়। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ফ্রি-স্টাইল ফুটবলের পোস্টার বালিকা হিসেবেও নাম কুড়িয়েছেন তিনি।

জন্ম ও বেড়ে ওঠা
২০০৩ সালে জাপানে জন্ম নেওয়া মাতসুশিমা সুমাইয়া মাত্র দুই বছর বয়সে প্রথম বাংলাদেশে আসেন। সুমাইয়ার মা মাতসুশিমা তমোমি জাপানি এবং বাবা মাসুদুর রহমান বাংলাদেশি। সুমাইয়া জাপান ও বাংলাদেশ দুই দেশেরই নাগরিক। ২০ বছর বয়সী সুমাইয়া বর্তমানে গুলশানের সি-ব্রিজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে এ-লেভেলে পড়াশোনা করছেন। নিজের স্কুলের ফুটবল দলে খেলার মাধ্যমে তাঁর ফুটবলে হাতেখড়ি। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আন্তঃইংলিশ মিডিয়াম স্কুল টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেছিলেন সুমাইয়া। দুর্দান্ত খেলে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন করেন তাঁর দলকে। সুমাইয়াও হয়েছিলেন টুর্নামেন্ট সেরা। জাপানে পেশাদার ফুটবলে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ থাকলেও সুমাইয়া বেছে নেন লাল-সবুজকেই। শুধু তাই নয়, জাপানে জন্ম নিলেও সুমাইয়া মনে করেন বাংলাদেশই তাঁর আসল ঠিকানা।

ফ্রি-স্টাইলে শুরু...
ফুটবলের প্রতি সুমাইয়ার ভালোলাগা ছোটবেলা থেকেই। সেই ভালোলাগা থেকেই ছয় বছর বয়সে শুরু করেন ফ্রি-স্টাইল ফুটবলের অনুশীলন। ফ্রি-স্টাইল ফুটবলচর্চায় বড় কোনো মাঠের দরকার হয় না, শরীর ও ঘাড়ে বল রেখেই করা যায় এর অনুশীলন। সুমাইয়ার অনুশীলনও তাঁর ঘাড় থেকেই শুরু। তারপর সময় যত গড়িয়েছে ফুটবলের প্রতি তাঁর ভালোবাসা ততই বেড়েছে। বয়সভিত্তিক দলের বাইরে সুমাইয়া বাংলাদেশের প্রথম নারী ফ্রি-স্টাইল ফুটবলার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর ফ্রি-স্টাইল ফুটবলের ভিডিওতে অনুসারীর সংখ্যা এবং প্রতিক্রিয়াই বলে দেয় জনপ্রিয়তার কথা!

পেশাদার ফুটবলের পথে
২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আন্তঃইংলিশ মিডিয়াম স্কুল টুর্নামেন্টে তাঁর স্কুল সি-ব্রিজ ইন্টারন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর সুমাইয়া আইএমসি স্পোর্টিং একাডেমিতে যোগ দেন এবং ফ্রি-স্টাইলের পাশাপাশি পেশাদার ফুটবলের অনুশীলন শুরু করেন। তখন থেকেই তাঁর স্বপ্ন লাল-সবুজ জার্সি গায়ে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলে খেলার। এ সময়ে তিনি বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের প্রধান কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের নজরেও আসেন। কোচ তাঁর খেলা পছন্দ করেন এবং একই বছরের ৮ অক্টোবর তাঁকে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন ভবনে আমন্ত্রণ জানান। বাফুফের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল থমাস স্মলিরও ভালো লেগে যায় সুমাইয়ার খেলা।

ক্লাব ফুটবল ও ইনজুরির থাবা
সুমাইয়া মাঠ কাঁপাচ্ছেন দেশের প্রথম শ্রেণির ফুটবল ক্লাব বসুন্ধরা কিংসের হয়ে। বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনার সঙ্গে খেলে এসেছেন মালদ্বীপ ফুটসাল লিগ। টুর্নামেন্টে ১১ গোল করে আলোচনায় উঠে আসেন সুমাইয়া। ফাইনাল ম্যাচ জয়েও ছিল তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান। ২০২১ সালে পায়ের লিগামেন্টের ইনজুরিতে পড়েছিলেন সুমাইয়া। চিকিৎসকরা তাঁকে ফুটবল না খেলার পরামর্শ দিলেও সেই বারণে কান দেননি সুমাইয়া। বরং ইনজুরিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কঠোর পরিশ্রম শেষে আবারও ফেরেন ভালোবাসার ফুটবলে। করোনাকালেও সুমাইয়া ছাড়েননি অনুশীলন।

বর্তমান ব্যস্ততা
লাল-সবুজের জার্সি গায়ে জড়ানোর যে স্বপ্ন তা পূরণের প্রাথমিক ধাপ পেরিয়ে মাতসুশিমা সুমাইয়া ডাক পেয়েছেন জাতীয় দলের ক্যাম্পে। যত ব্যস্ততা এখন এই ক্যাম্প ফুটবলকে ঘিরেই। অলিম্পিক বাছাই দলে ডাক পাওয়ার পর দলের সঙ্গে যোগ দিয়ে ঢুকেছেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল ফেডারেশনের নারী ফুটবল ক্যাম্পের অনুশীলনে। সুমাইয়া বেশ কিছুদিন ধরে দেশের ঘরোয়া ফুটবল লিগ মাতিয়ে চলেছেন। আগামী ৩ থেকে ১১ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে অলিম্পিক ফুটবল বাছাই পর্ব। গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশ খেলবে ইরান, মিয়ানমার ও মালদ্বীপের বিপক্ষে। খেলবেন অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার সুমাইয়াও। বেশ কিছু ভোগ্যপণ্যের বিজ্ঞাপনেও দেখা মিলছে সুমাইয়ার। সামাজিক মাধ্যম ও বিভিন্ন ইভেন্টেও থাকে তাঁর সরব উপস্থিতি।

প্রিয় রান্না ও আগামীর স্বপ্ন
খেলা ও কঠোর অনুশীলনের অবসরে মজার মজার রান্না করতে পছন্দ করেন সুমাইয়া। বাসায় বাবা-মা তাঁর রান্নার গুণমুগ্ধ ভক্ত! শুরুতে বাংলাদেশি খাবার যেমন- ভাত, মাছ, সবজি এগুলো রান্না করতে না পারলেও আস্তে আস্তে বাংলাদেশি খাবার রান্নায় অনেকটাই পারদর্শী হয়ে গেছেন। সুমাইয়া কঠোর পরিশ্রমী ও নিয়মানুবর্তী মানুষ। পছন্দ করেন ফ্রি-স্টাইল ফুটবলের বিভিন্ন স্কিল নিয়ে অনুশীলন ও প্রদর্শন করতে। জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার পরে নিজের সেরাটা দিতে মুখিয়ে আছেন দল ও দেশের জন্য। আগামীতে হতে চান এশিয়ার সেরা নারী ফুটবলার! আমরাও চাই তাঁর সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন।

আরও পড়ুন

×