ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

আপন দর্পণ

'ইহকাল পরকাল কিছুই পরোয়া করল না হতভাগা...'

'ইহকাল পরকাল কিছুই পরোয়া করল না হতভাগা...'

ইনাম আল হক [১৫ আগস্ট ১৯৪৫]

ইনাম আল হক

প্রকাশ: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১৮:০০

- দূর শৈশবের প্রথম স্মৃতি-
-- উঠোনে আমি গরু-রাখাল খেলছি। আমি রাখাল; আর গরু হলো একটি আহত চড়ুই পাখি। পাখিটির পায়ে সুতো বেঁধে এক প্রতিবেশী আমাকে খেলতে দিয়েছেন। নিষ্ঠুর খেলা। তখন সে বোধটি হয়নি আমার। বয়স সম্ভবত চার বছর।
- শৈশব-কৈশোরের বন্ধুরা-
-- শৈশবের বন্ধু আমার চাচাতো-খালাতো ভাইয়েরা; এখন কেউই নেই। সহপাঠীদের মধ্যে বার্ধক্যে এসে বন্ধুত্ব ঘনীভূত হয়েছিল কেবল শিল্পী কালিদাস কর্মকারের সাথে। এখন সেও নেই।
- কোনো ব্যক্তিগত ঘটনা কি আপনাকে পাখিতে আকৃষ্ট করেছে?
-- শহরবাসী মা-বাবা থেকে দূরে গড়াই নদীর তীরে গ্রামের বাড়িতে অগণিত আমবাগান, বাঁশঝাড় আর ঝোপঝাড়ের মধ্যে শৈশবের দুটি বছর কেটেছে পক্ষী আর পলু (মাকড়সা) দেখে। শহরে ফিরে আমার আড়ষ্ট গৃহকোণটি বাসযোগ্য করেছি পায়রা ও অন্যান্য পোষাপাখি দিয়ে। তখন বুঝেছি বনের বিহঙ্গ রেখে খাঁচার পাখি দেখাটা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো মাত্র। বুনোপাখিরা তাই আমার সঙ্গে রয়েই গেছে।
- প্রকৃতি বা পাখি নিয়ে কাজ করেছেন, এমন অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব-
-- প্রকৃতি সংরক্ষণে যুক্তরাষ্ট্রের জন মিওর (John Muir) আমার কাছে হিমালয়ের মতো উন্নত এক ব্যক্তিত্ব। পাখির কাজে আবার আমার হিমালয় হলেন যুক্তরাজ্যের এডওয়ার্ড ব্লাইদ (Edward Blyth), যাঁকে এ উপমহাদেশের প্রাণিবিদ্যার জনক বলা যায়। ভারতের অবিস্মরণীয় পাখিবিদ সালিম আলী ও তাঁর তিন ছাত্র আসাদ রাহমানী, আলি রেজা খান ও আনোয়ারুল ইসলাম আমার শ্রদ্ধার পাত্র।
- পাখি বা প্রকৃতি নিয়ে আপনার পরবর্তী পরিকল্পনা কী?
-- আমার পরিকল্পনা হলো পাখি, ফুল ও প্রকৃতির অন্যান্য সম্পদ আরও কয়েক বছর প্রাণ ভরে দেখা। কারণ, কয়েক বছর পর থাকবে না এর অনেক কিছুই। থাকব না আমিও।
- এ মুহূর্তে কী লিখছেন, কী পড়ছেন?
-- ইংরেজি দৈনিকে মহা আনন্দে লিখে চলেছি আমার সাপ্তাহিক কলাম ‘Haque’s Eye View’। পড়ছি অমর্ত্য সেনের অসামান্য বই 'জগৎ কুটির'।
- যে বইগুলো বারবার পড়েন, যে চলচ্চিত্র বারংবার দেখেন-
-- বারবার পড়ি হেনরি ডেভিড থরোর বই 'ওয়াল্ডেন', উইল ডুরান্টের বই 'দ্য স্টোরি অব ফিলোসফি' এবং প্রিয় আটজন কবির (রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ, ওয়ার্ডসওয়ার্থ, কিটস, শেলি, বায়রন, টেড হিউজেস ও এমিলি ডিকিন্সন) বইগুলো। চলচ্চিত্র দেখি না।
- জীবনে আরও যা হতে পারতেন-
-- রিকশাচালক, সংবাদপত্রের হকার ও পথশিল্পী। ওসব হওয়ার ভালো সম্ভাবনা স্বল্পকালের জন্য জীবনে দেখা দিয়েছিল; এবং হলে আমার মনে আনন্দের কোনোই আকাল হতো না।
- এখন বন্ধু যাঁরা-
-- বন্য প্রাণীবিদ আনোয়ারুল ইসলাম, প্রজাপতিবিদ মনোয়ার হোসেন, বার্ড ক্লাবের ওবায়দুল হক, রবীন্দ্র-গায়ক দেবাশিস বিশ্বাস, তরুপল্লবের মোকারম হোসেন ও ব্যবসা প্রশাসন ইনস্টিটিউটের ১১তম এমবিএ গ্র্যাজুয়েটরা।
- প্রিয় লেখক যাঁরা, যে কারণে প্রিয়-
-- প্রিয় লেখকের তালিকা অতি দীর্ঘ। তালিকার প্রথমে আছেন উইলিয়াম শেক্সপিয়র। শুধু তাঁর কথাই বলি। জোচ্চোর, জালিয়াত, সৈনিক, শিক্ষক, প্রেমিক, পালোয়ান, খুনি, খান্ডারিনি, সাধু, সম্রাট, মোসাহেব কি মাস্তান, সবার মনের কথা ও মুখের ভাষা তিনি যা জানতেন তা আর কোনো লেখকের নাগালে আসতে দেখিনি। পাকিস্তানে আমার দুই বছরের বন্দিজীবনে আনন্দের খনি ছিল 'শেক্সপিয়র সমগ্র'।
- ব্যক্তিগত যে সীমাবদ্ধতা আপনাকে কষ্ট দেয়-
-- শৈশবে আমি গান গাইতে শেখার কোনো সুযোগ পাইনি, এটাই আমার জীবনের একমাত্র কষ্ট।
- আপনার চরিত্রের শক্তিশালী দিক-
-- সত্যিকারের শক্তিশালী কিছুই নেই; তার প্রত্যাশাও নেই। সম্পূর্ণ শক্তিহীন হয়েও অত্যন্ত সুখী জীবন পেয়েছি আমি।
- প্রিয়জনের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি শোনা প্রশংসাবাক্য-
-- চলেছে আপন মনে; ইহকাল, পরকাল, কিছুই পরোয়া করল না হতভাগা।
- প্রিয়জনের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি পাওয়া অভিযোগবাক্য-
-- অনুভূতিহীন (সঠিক অভিযোগ) ও ভুলোমনা (মোটেই সঠিক নয়)।
- মানুষের ব্যক্তিত্বের যে দিকটি আপনাকে আকৃষ্ট করে-
-- জ্ঞানপিপাসা (অন্তহীন জানার ইচ্ছে)।
- প্রিয় উদ্ধৃতি-
-- শেক্সপিয়রের কথা : 'কেবল এ পৃথিবীতেই আমি আছি কিছু স্থান জুড়ে, যা শূন্য করে গেলে পূর্ণ হবে সম্ভবত আরও ভালোভাবে। '(Only in the world I fill up a place, which may be better supplied when I have made it empty. - As You Like It)’।

আরও পড়ুন

×