ডিজিটাল লেনদেন কমিয়েছে বৈষম্য

সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২৩ | ০৩:৫১
প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন মানুষের জীবনকে যতটা সহজ করেছে, তার চেয়েও দ্রুততায় কমিয়েছে বৈষম্য। হোক সে বৈষম্য অবস্থান বা লিঙ্গভিত্তিক। হাতের কাছেই আছে মোবাইল আর্থিক সেবার উদাহরণ। ডিজিটাল এই সেবা ব্যবহারে শহরের চেয়ে গ্রামের লোকেরাই এখন অনেক এগিয়ে আছে। নারীরা পুরুষদের চেয়ে সেবাগ্রহীতার সংখ্যায় এগিয়ে না গেলেও আর্থিক সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণও উল্লেখ করার মতো। নারীদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধিতেও মোবাইল আর্থিক সেবা রাখছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান।
সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, ২০২২ সালের শেষে মোবাইল আর্থিক সেবার অ্যাকাউন্টের সাড়ে ৮ কোটি শহরে হলেও গ্রামে এই সংখ্যা ১১ কোটি ছুঁই ছুঁই। একইভাবে প্রায় সব নির্ভরযোগ্য তথ্য বলছে, মোবাইলের আর্থিক সেবার ফলে নারীদের লেনদেনের স্বাধীনতা আগের চেয়ে বেড়েছে। এই সেবায় নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে প্রতিদিন।
গত ডিসেম্বরে শেষে নারীদের নামে থাকা মোবাইল আর্থিক সেবার অ্যাকাউন্ট আছে ৮ কোটি ১ লাখ ২৪ হাজার। ২০২২ সালে সব মিলে নারীদের নামে নতুন ৭৬ লাখ ৭৯ হাজার অ্যাকাউন্ট যুক্ত হয়েছে। অ্যাকাউন্ট বৃদ্ধির হার ১০ দশমিক ৬০ শতাংশ। বাংলাদেশে ব্যাংকের হিসাবে অবশ্য লেনদেনের পরিমাণ বা সংখ্যা হিসাবে গ্রাম-শহর বা নারী-পুরুষ আলাদা করে কিছু উল্লেখ করা হয়নি।
এ পরিস্থিতিকে খুবই সন্তোষজনক বলে মনে করছেন দেশের অন্যতম সেরা মোবাইল আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান নগদের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক। তিন বলেন, ‘আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ছাড়া দেশকে এগিয়ে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আর এ ক্ষেত্রে নারীদের গুরুত্ব দিয়ে পরিকল্পনা সাজাচ্ছি আমরা। নারীদের যত বেশি সংখ্যায় ডিজিটাল আর্থিক সেবায় এগিয়ে নেওয়া যাবে, দেশ ততটাই এগিয়ে যাবে।’
তানভীর এ মিশুক বলেন, শুরু থেকেই নগদ নানানভাবে সমাজের পিছিয়ে পড়াদের সামনে তুলে আনতে কাজ করছে। আর এ ক্ষেত্রে নারীরা পাচ্ছেন প্রাধান্য। সে কারণে গ্রামের দিকে নারীরা অনেক বেশি সংখ্যায় নগদ অ্যাকাউন্ট খুলছেন বলেও জানান তিনি।
নগদের মোট অ্যাকাউন্ট সংখ্যার মধ্যে নারীদের অংশ প্রায় অর্ধেক। সহজে নগদ অ্যাকাউন্ট খোলার সুবিধা এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। একই সঙ্গে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি যেহেতু নগদের মাধ্যমে বিতরণ হয়, সেটিও রেখেছে বড় ভূমিকা। উপবৃত্তির অর্থ যাতে শিক্ষার্থীদের মায়ের মোবাইল ফোনে যায়, তার জন্য প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকেও নির্দেশনা দেওয়া হয়। এক কোটির বেশি মায়ের মোবাইল নম্বর মোবাইল আর্থিক সেবায় নিবন্ধিত হয়েছে। এর বাইরে সামাজিক নিরাপত্তা ভাতার ৭৫ শতাংশ বিতরণ করে নগদ। এই সামাজিক নিরাপত্তা ভাতার মধ্যেও বিধবা এবং প্রান্তিক পর্যায়ের অন্যান্য নারীর অংশ অনেক বেশি। এই দুইয়ে মিলে গ্রামের নারীদের বিশাল অংশ এখন নগদের মাধ্যমে ডিজিটাল লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।
তানভীর এ মিশুক আরও বলেন, নগদের অ্যাকাউন্ট খোলা সবচেয়ে সহজ কাজগুলোর একটা। অন্যদিকে সেবার খরচও বাজারে প্রচলিত হারের চেয়ে অনেক কম। ফলে প্রান্তিক পর্যায়ের নারীদের মধ্যে ডিজিটাল লেনদেন মানেই হলো নগদ আর নগদ। এ ছাড়া নগদ উদ্যোক্তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী রয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘অন্তত লেনদেনের ক্ষেত্রে হলেও নারীদের জন্য সাম্য বিধান করাটাই নগদের জন্য ভালো লাগার খবর। আমরা সব সময়ই সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে চেয়েছি। নগদের মাধ্যমে নারীদের লেনদেনের ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পারায় আমরা সন্তুষ্ট।’
তাছাড়া ফেসবুক কমার্স বা অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মেও ব্যবসা করছেন নারীদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ। সাশ্রয়ী লেনদেনের কারণে তারাও নগদের ওপর নির্ভর করেন।
চার বছর আগে সেবা শুরু করার সময় নগদ দেশে প্রথমবারের মতো অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য ইলেকট্রনিক কেওয়াইসি চালু করে। পরে সব মোবাইল আর্থিক সেবা এই পদ্ধতি অনুসরণ করে। একইভাবে যে কোনো মোবাইল ফোন থেকে ডায়াল করে অ্যাকাউন্ট খোলার নগদ উদ্ভাবিত পদ্ধতি ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়। গত ডিসেম্বর শেষে নগদের নিবন্ধিত গ্রাহক ৭ কোটি ৮ লাখে পৌঁছায়। ফেব্রুয়ারির শেষে তা ৭ কোটি ২০ লাখ পেরিয়ে গেছে, যার মধ্যে ৬০ শতাংশের বেশি অ্যাকাউন্ট হয়েছে গ্রামাঞ্চল থেকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব বলছে, ডিসেম্বরের শেষে দেশে মোট নিবন্ধিত এমএফএস গ্রাহক দাঁড়িয়েছে ১৯ কোটি ১০ লাখ ৬২ হাজার। এই এক বছরে মোবাইলের মাধ্যমে দেশে লেনদেন হয়েছে ১০ লাখ ৭৫ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা।
- বিষয় :
- ডিজিটাল লেনদেন
- বাংলাদেশ ব্যাংক