ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

সংস্কৃতি

শৌলাগড়ের লৌকিকতা

শৌলাগড়ের লৌকিকতা

হাওর এলাকার বাড়ি বাড়ি গিয়ে সন্ন্যাসীদের নৃত্য, ছবি :: লেখক

সনজিৎ নারায়ণ চৌধুরী

প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৩ | ১৮:০০

শৌলাগড় হাওর বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলাধীন বিশাল আয়তনের সৌন্দর্যমণ্ডিত দৃষ্টিনন্দন হাওর। জনশ্রুতি, এই হাওরে একসময় প্রচুর পরিমাণে শোল মাছ পাওয়া যেত। আর এই শোল থেকে শৌলা আর বন এলাকার গড় মিলে নাম হয়েছে শৌলাগড়। কাগজে-কলমে এই হাওরের বড় একটি মৌজার নাম গড়শৌলা। এই হাওরপাড়ের জনজীবনে জড়িয়ে আছে মৌলিক সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য।

  হিরালের মন্ত্র, খনার বচন প্রাকৃতিক দুর্যোগ শিলাবৃষ্টি ও বজ্রপাত থেকে বোরো মৌসুমের ধানক্ষেত রক্ষায় হিরাল মন্ত্র দ্বারা শৌলাগড় হাওর প্রতি বছরই বন্ধন করা হয়। হিরালের মন্ত্র দ্বারা ‘হাওর বন্ধন’ সংস্কৃতিতে অনেকেরই বিশ্বাস রয়েছে, বিশেষত কিষান-কিষানিদের। ধানে থোড় আসার সময়ে ফাল্গুন মাসের প্রথমভাগে একজন হিরাল এসে ক্ষেত বন্ধন করেন, যার ফলে ক্ষেত শিলাবৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পায়। হিরালের ভূমিকা পালন করেন এমন মানুষ আজও আছেন শৌলাগড়ে। দুর্যোগ থেকে ফসল রক্ষার সম্মানী হিসেবে বৈশাখ মাসের ফসল ওঠানোর পর হিরাল ফসলের ভাগ নিতে আসেন। যদিও শ্রম ও সাধনার বাইরে তন্ত্রমন্ত্র কোনো কাজ করে না, তবু সম্প্রীতির স্বার্থে মানুষের বিশ্বাসে আঘাত না করাই হিতকর। জনপদে, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের নিকট খনার বচন অত্যন্ত আদৃত। নানা ক্ষেত্রে তাঁরা এ বচন মেনে চলেন। খনার বচন বাংলার অমূল্য লোকশাস্ত্রও বটে। খনার বচন শস্য ও বৃক্ষরোপণ, গৃহনির্মাণ, আবহাওয়া, পশুপালন, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি প্রভৃতি সম্বন্ধে ছড়া আকারে পরিবেশিত বচন, যা খনা নামে বিদুষী এক নারীর রচিত বলে প্রসিদ্ধ ও জনপ্রিয়। খনার বচন মূলত কৃষিতত্ত্বজ্ঞানভিত্তিক ছড়া। যেমন– ১ কলা রুয়ে না কেটো পাত, তাতেই কাপড়, তাতেই ভাত। ২ পূর্ণিমা অমাবস্যায় যে ধরে হাল তার দুঃখ হয় চিরকাল। ৩ সুপারিতে গোবর, বাঁশে মাটি অফলা নারিকেল শিকড় কাটি। সম্প্রীতির তেরো পার্বণ, ঘাটু-ধামাইল-মালজোড়া হিন্দু, মুসলমান নির্বিশেষে বাংলা সন-তারিখের প্রচলন লক্ষণীয়। হালখাতার মাধ্যমেই নতুন বাংলা সন পালিত হয়। বারো মাসে তেরো পার্বণের রীতি এখানকার হিন্দু সম্প্রদায়ের চিরাচরিত ঐতিহ্য। নাগরিক জীবনের পহেলা বৈশাখের আয়োজন এখানে অনুপস্থিত। এখানে বৈশাখ আসে ফসল তোলার তোড়জোড় নিয়ে। প্রকৃতি শান্ত থাকলে সোনার বৈশাখ আর বিরূপ হলে কালবৈশাখীর খামখেয়ালিপনার বিরুদ্ধে লড়াই করে হাওরপাড়ের মানুষ। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ কিংবা বর্ষার প্রথম দিকে বৃষ্টির ঢল চলাকালে বজ্রপাত হলে পুকুর, দিঘি, ডোবা, খাল ও নদী থেকে কই, মাগুর, শিং মাছ উজায়। বৃষ্টি উপেক্ষা করে অনেকেই এই উজাইয়া মাছ ধরার জন্য বেরিয়ে পড়েন। এ জনপদে ১০ থেকে ১৫ বছর আগেও পৌষসংক্রান্তির সময় মানুষ দলবেঁধে মহা-উৎসাহে হাওর ও নদীতে পলো দিয়ে মাছ ধরতেন। মাছ কমে যাওয়ায় এ দৃশ্য একেবারেই বিরল। শখের মাছশিকারিরাও মাছ শিকার ছেড়ে দিয়েছেন। শ্রাবণ মাস আরম্ভ হলেই হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি বাড়ি নিয়ম করে প্রতিদিন মনসামঙ্গল বই (পুথিপাঠ নামে পরিচিত) পাঠ হয়, যা শেষ হয় মনসা পূজার পরের দিন মনসা দেবীর বিসর্জনের মধ্য দিয়ে। মনসা পূজা যেমন সাড়ম্বরে হয়, তেমনি দেবী বিসর্জনও হয় বাজনা সহকারে নানা ধরনের শোকগাথা গানে গানে। সবার চোখেমুখে তখন শোকাশ্রু। বিসর্জনের পরপরই অনেকে নৌকাবাইচ শুরু করেন। বিবিয়ানা ও হাওয়া নদীর বেশিরভাগ দখল-ভরাট হয়ে যাওয়ায় নৌকাবাইচ সংস্কৃতিও হারিয়ে যাওয়ার পথে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এ অঞ্চলে চমৎকার। শারদ দুর্গাপূজা এ অঞ্চলের অনেক গ্রামেই সাড়ম্বরে হয়, আর বাসন্তী দুর্গাপূজা হাতে গোনা কয়েক বাড়িতে হয়ে থাকে। শারদ দুর্গাপূজার অষ্টমী ও নবমী তিথিতে মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজনও শুভেচ্ছা জানাতে আসেন। মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায় এলাকায় আনন্দঘন পরিবেশ তৈরি হয়। ঈদের দিনে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনও মুসলমানদের বাড়িতে যান। প্রতি বছর মুসলিমপ্রধান বিভিন্ন গ্রামে ওরস হয়। ওরসে জারিগান, বাউলগান হয়ে থাকে। এতে ভক্ত ও আশেকানরা উপস্থিত হন। শীতকালে ওয়াজ মাহফিল হয়। এ অঞ্চলে নানা ধরনের গানবাজনার চর্চা রয়েছে দীর্ঘকাল ধরে। বর্ষাকালে ঘাটুগানের (ঘাটে নৌকা ভিড়িয়ে নৌকাতেই গান গাওয়া) চল ছিল। ঘাটুগান এক ধরনের প্রণয় গীতি। এই গানের উৎপত্তিস্থল হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলা। ষোড়শ শতকের প্রথমভাগে আজমিরীগঞ্জের উদয় আচার্য দেব এই গানের প্রবর্তন করেন। আজমিরীগঞ্জ থেকেই বৃহত্তর সিলেট, নেত্রকোনা ও পূর্ব ময়মনসিংহে এ গান ছড়িয়ে পড়েছিল। বিশ শতকের শেষদিকে তুমুল জনপ্রিয় ঘাটুগান বিলুপ্ত হয়ে যায়। বড়দের কাছ থেকে শোনা দুটি ঘাটুগান– ১. আমার মনের বেদনা সে বিনে কেউ জানে না কালা যখন বাজায় বাঁশি তখন আমি রানতে বসি বাঁশির সুরে মন উদাসী ঘরে থাকতে পারি না আমার মনের বেদনা সে বিনে কেউ জানে না। ২. আইও বন্ধু বইও পাশে মুখে দিয়া পান দেইখ্যা যাওরে ঘাটুর নাচন পূর্ণিমারও চান। হাওর জনপদের অত্যন্ত জনপ্রিয় মালজোড়া গান (দুটি পক্ষের মধ্যে গানে গানে প্রতি উত্তর) ১০ থেকে ১৫ বছর আগে বেশ জমজমাট ছিল– এখন আর এসব গানের আয়োজন হয় না বললেই চলে। বাউল রশীদ উদ্দিনের উল্লেখযোগ্য দুটি মালজোড়া গান– ১. মানুষ ধর মানুষ ভজ শুন বলিরে পাগল মন মানুষের ভিতরে মানুষ করিতেছে বিরাজন। ২. আমার শোয়া চান পাখি আমি ডাকিতাছি, ঘুমাইছ নাকি। তুমি আমি জনম ভরা ছিলাম মাখামাখি আইজ কেন তুই হইলে নীরব, মেল দুইটি আঁখি।। বুলবুলি আর তোতা ময়না কত নাম তোর রাখি শিকল কেটে চলে গেলে কারে লইয়া থাকি।। তোমার আমার মধুর পিরিত, চন্দ্র সূর্য সাক্ষী অকস্মাৎ কেন ভেঙ্গে দিলে, বুঝলাম না চালাকি।। বিশ্বজোড়া এই পিরিতি, সবই দেখছি ফাঁকি বাউল কবি রশিদ বলে ডাকলেই বা হবে কী।। বাউলদের মধ্যে যাঁরা ছিলেন প্রথিতযশা তাঁদের মধ্যে রাধারমণ দত্ত, দুরবিন শাহ, কামাল উদ্দিন, শাহ আবদুল করিম, কারি আমির উদ্দিন, রুহী ঠাকুর উল্লেখযোগ্য। রয়েছেন আরও অনেকে। এ অঞ্চলের জনপ্রিয় গান ‘কোন্ মেস্তরি নাও বানাইছে’-এর স্রষ্টা হলেন বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম। সুনামগঞ্জের কালনী নদীর তীরে বেড়ে ওঠা শাহ আবদুল করিমের গানে ভাটি অঞ্চলের মানুষের প্রেম-ভালোবাসার সাথে দেহতত্ত্ব ও অসাম্প্রদায়িকতার চিত্র লক্ষণীয়। যেসব গান বেশি শুনতে পাওয়া যায়– ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’, ‘বন্দে মায়া লাগাইছে, পিরিতি শিখাইছে’, ‘গাড়ি চলে না’, ‘কেমনে ভুলিব আমি বাঁচি না তারে ছাড়া’ ইত্যাদি। বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে যাত্রাগানের সংস্কৃতি একসময় এ অঞ্চলে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। বাড়ির উঠোনে কিংবা খোলা জায়গায় প্যান্ডেল বানিয়ে রাতের বেলায় অভিনীত হতো যাত্রাপালা। আষাঢ় থেকে আশ্বিন মাসেই যাত্রাদলের অভিনয় চলত। ফাল্গুন মাসে গ্রাম্য মেলা উপলক্ষেও যাত্রাপালা হতো। দুর্গাপূজার বিজয়ার রাতেও যাত্রাগান হতো। যাত্রাগান এখন খুবই কম হয়। যাত্রাগানের নৃত্যে অশ্লীলতা যুক্ত হওয়ায় এর প্রতি মানুষ আগ্রহ হারাচ্ছে। অশ্লীল নৃত্য-বর্জিত যাত্রাগানে মানুষের এখনও আগ্রহ রয়েছে। ধামাইল গান (নৃত্য-সংবলিত গান) এ জনপদে বেশ প্রচলিত। সাধারণত হিন্দু সম্প্রদায়ের বিয়ের অনুষ্ঠানেই এর অধিক প্রচলন দেখা যায়। রাধারমণ দত্ত, প্রতাপরঞ্জন তালুকদার প্রণীত ধামাইল গান বেশ জনপ্রিয়। একটি জনপ্রিয় ধামাইল গান– ‘প্রাণ সখিরে ঐ শোন কদম্বতলে বাঁশি বাজায় কে। বাঁশি বাজায় কে রে সখি, বাঁশি বাজায় কে॥ এগো নাম ধরিয়া বাজায় বাঁশি, তারে আনিয়া দে। অষ্ট আঙ্গুল বাঁশের বাঁশি, মধ্যে মধ্যে ছেদা নাম ধরিয়া বাজায় বাঁশি, কলঙ্কিনী রাধা॥ কোন বা ঝাড়ের বাঁশের বাঁশি, ঝাড়ের লাগাল পাই। জড়ে পেড়ে উগরাইয়া, সায়রে ভাসাই॥ ভাইবে রাধারমণ বলে, শুন গো ধনি রাই। জলে গেলে হবে দেখা, ঠাকুর কানাই॥’ বৈশাখী ধান তোলার পর জ্যৈষ্ঠ মাসে এবং অগ্রহায়ণী ধান তোলার মাস অগ্রহায়ণে গাজীর গান হয়। গাজী পীর মুসলমান হলেও বিভিন্ন ধর্মের লোকেরা এই পালা পছন্দ করেন। পালা গানের দলের লোকেরা বিভিন্ন গ্রামে গাজীর গান গেয়ে ধান বা টাকা নেন, যা দিয়ে তাদের জীবিকা নির্বাহ হয়। গানের দলে ঢোল ও বাঁশিবাদক এবং আরও চার-পাঁচজন থাকে যারা দোহার-এর ভূমিকা পালন করে। দলের প্রধান ব্যক্তি গায়ে বাহারি আলখাল্লা ও মাথায় পাগড়ি পরিধান করে একটি লোহার দণ্ড হেলিয়ে-দুলিয়ে, লম্বা পা ফেলে আসরে ঘুরে ঘুরে গান গেয়ে থাকেন। বাদ্যের তালে তালে দোহাররা এ গান পুনরাবৃত্তি করেন। দলপ্রধান গান গেয়ে গেয়ে কখনও কখনও শ্রোতা-দর্শকের মধ্যে যাকে পয়সাওয়ালা মনে করেন, তাঁর হাতে রুমাল ধরিয়ে দেন কিছু পাওয়ার আশায়। কেউ কেউ মনের আশা পূরণার্থে গাজীর উদ্দেশ্যে টাকা বা ধান দিয়ে থাকেন। গাজীর গানের পালা আগে বেশি হলেও এখন মাঝেমধ্যে হয়। হরগৌরী কালী নাচ, চড়ক মেলা, ব্যাঙের বিয়ে এ সময় হরগৌরী-কালী নাচের আয়োজনও হয়। এতে কেউ সাজেন হর মানে শিব, কেউ সাজেন গৌরী মানে পার্বতী আর কেউ কালী। মুখসহ সারা শরীরে রং মেখে হাতে অস্ত্র নিয়ে একেকজন হয়ে ওঠেন জীবন্ত দেবদেবী। সত্যিকার অর্থে তারা সবাই পুরুষ। চৈত্রসংক্রান্তিতে চড়ক পূজা ভিন্নরকম এক আয়োজন। সন্ন্যাসী দল গঠন করে চড়ক পূজার আয়োজন হয়ে থাকে। লম্বা কোনো গাছকে পূজা দিয়ে সন্ন্যাসীর পিঠে বড়শি ফুটিয়ে চড়কে ঘোরানো হয়। অনেকে বলেন, পিঠফুঁড়ে চক্রাকারে শূন্যে চড়কির মতো ঘোরানো হয় বলেই এর নাম চড়ক। চড়কপূজায় মেলা-ও বসে। ভূমি দেবতার শ্রদ্ধা-সন্তুষ্টির জন্য এই পূজা করা হয়। ইদানীং কোনো কোনো গ্রামে চৈত্র মাসের পরিবর্তে বৈশাখী ধান ঘরে তোলার পর জ্যৈষ্ঠ মাসে চড়ক পূজা হচ্ছে। হিন্দুধর্মীয় এই লোকজ সংস্কৃতি প্রায় লুপ্ত হতে চলছে। সমাজের বিত্তবান ও সংস্কৃতিসচেতন নাগরিকরা এগিয়ে আসার মাধ্যমেই লোকজ ধারা টিকে থাকবে। হাওরের উত্তর জনপদের তালতলার পীর সুন্দর আলী সাহেবের দোয়া নেওয়ার জন্য এ জনপদ ও অন্যান্য এলাকা থেকেও লোকজনের আগমন ঘটে। ফাল্গুন-চৈত্র মাসে বৃষ্টি না হলে অনেক গ্রামে ‘বৃষ্টির জন্য ব্যাঙের বিয়ে’ দেওয়ার আশ্চর্য রীতিও এখানে দেখা যায়। রীতিমতো ধুমধাম করে আনুষ্ঠানিকভাবে হয়। হাওরভরা ধান বৃষ্টি না হলে খরায় ক্ষতি হয়। মানুষের ধারণা ব্যাঙের বিয়ে দিলে বৃষ্টি হবে এবং ধান উৎপাদন ভালো হবে। কিশোর-কিশোরীরা এর আয়োজক। বিয়ের পাত্র-পাত্রী দুটি কোলা ব্যাঙ! আগের দিন দুটি ব্যাঙকে ধরে রং লাগিয়ে সাজানো হয়। পুরুষ ব্যাঙের অভিভাবক একজন, নারী ব্যাঙের অভিভাবক আরেকজন। অভিভাবক দু’জনই নারী মানুষ। ব্যাঙ ও বৃষ্টির ছড়া কেটে বিয়ে দেওয়া হয়। আনুষ্ঠানিকতার পর বিকেলে পুকুরে ছেড়ে দেওয়া হয় ব্যাঙাই-ব্যাঙিকে। বিয়েতে অতিথিদের খাওয়ানোও হয়। অতিথি অবশ্যই মানুষ। নাচ-গানও হয়। এই অনুষ্ঠানে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে কিশোর-কিশোরীদের সুর করে গাওয়া গান– ব্যাঙাই-ব্যাঙির বিয়া কুলা মাথায় দিয়া ও ব্যাঙ পানি আন গিয়া খালও নাই পানি, বিলও নাই পানি আসমান ভাইঙা পড়ে ফোঁটা ফোঁটা পানি আম পাতা দিয়া দিলাম ছানি জাম পাতা দিয়া দিলাম ছানি তেও (তবু) পড়ে মেঘের (বৃষ্টির) পানি মুসলিম সম্প্রদায়ের বাড়িতে গাওয়া হয়– আল্লাহ মেঘ দে পানি দে ছায়া দেরে তুই আল্লাহ মেঘ দে, আসমান হইল টুটা টুটা জমিন হইল ফাটা মেঘ রাজা ঘুমাইয়া রইছে মেঘ দিব তোর কেডা আল্লাহ মেঘ দে আল্লাহ মেঘ দে আল্লাহ মেঘ দে পানি দে পানি ছায়া দেরে তুই আল্লাহ মেঘ দে।। ফাইটা ফাইটা রইছে যত খালা বিলা নদী পানির লাইগা কাইন্দা ফিরে পঙ্খী জলদি আল্লাহ মেঘ দে পানি দে পানি ছায়া দেরে তুই আল্লাহ মেঘ দে।। কপোত কপোতী কাঁদে কূপেতে বসিয়া শুকনা ফুলের কলি পড়ে ঝড়িয়া ঝড়িয়া আল্লাহ মেঘ দে পানি দে পানি ছায়া দেরে তুই আল্লাহ মেঘ দে।। বৈচিত্র্যমণ্ডিত লৌকিক কৃত্যসম্পন্ন শৌলাগড় অঞ্চলকে ঘিরে রেখেছে : উত্তরে নবীগঞ্জের ১নং বড়ভাকৈর পশ্চিম ইউনিয়ন ও ২নং বড়ভাকৈর পূর্ব ইউনিয়নের জনপদ, এলজিইডি সড়ক, দক্ষিণ-পশ্চিমে হাওয়া নদী এবং পশ্চিমে কাচিহাতা, পালকিভাঙা, পূর্বে গুমগুমিয়া, ভাকৈর ও অন্যান্য গ্রাম, দক্ষিণে দুর্গাপুরের পার্শ্ববর্তী এলজিইডি সড়ক। 

আরও পড়ুন

×