ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

দিনপঞ্জিকায় চাঁদ-সূর্যের হিসাব

দিনপঞ্জিকায় চাঁদ-সূর্যের হিসাব

জেবা ফারিহা

প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর -০০০১ | ০০:০০

ক্যালেন্ডার বা দিনপঞ্জিকা আবিষ্কারের পর থেকেই দেখা যাচ্ছে, ইংরেজি ক্যালেন্ডারের প্রতি বছর ৯ এপ্রিল ইস্টার সানডে, ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন উদযাপন করা হয়। এখন তো ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ উদযাপিত হয়। অর্থাৎ দিন বা তারিখ কমছে না। কিন্তু আমরা দেখি ঈদ বা রোজা শুরুর তারিখ প্রতি বছর কমতে থাকে। এর কারণ লুকিয়ে আছে দিনপঞ্জিকা গণনার ধরনের ওপর।

 রোজা বা ঈদের দিন গণনা করা হয় আরবি দিনপঞ্জিকা অনুযায়ী, যা চান্দ্র পঞ্জিকা। চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে রোজা ও ঈদ উদযাপন করা হয়। চাঁদের ঘূর্ণন বা আবর্তনকে কেন্দ্র করে দিনের হিসাব করা হয়। সুমেরীয় সভ্যতায় সর্বপ্রথম এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এটিকেই বলা হয় চান্দ্র বর্ষপঞ্জিকা। মুসলমানরা ধর্মীয় উৎসব, রীতিনীতি, অনুশাসনের জন্য অনুসরণ করেন আরবি চান্দ্র বর্ষপঞ্জি। এই চান্দ্র বর্ষপঞ্জির ১২তম মাস হচ্ছে জিলহজ।

সভ্যতা বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ সূর্যের ওপর নির্ভর করে দিন, মাস ও বছর গণনা শুরু করে। এই পঞ্জিকার নাম সৌর বর্ষপঞ্জিকা। সর্বপ্রথম মিসরীয়রা পৃথিবীতে সৌর পঞ্জিকার প্রচলন করেন। এ পঞ্জিকায় বছর হিসাব করা হয় ৩৬৫ দিনে এবং দিনগুলো ১২টি মাসে বিভক্ত। প্রতি চার বছর পর ফেব্রুয়ারি মাসকে অধিবর্ষ ধরা হয়। এটি ছিল একটি সম্পূর্ণ সৌরভিত্তিক বর্ষপঞ্জি। ১৫৮২ সালে পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি এটির উন্নতি সাধন করে ‘গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি’ রূপে প্রবর্তন করেন। বর্তমানে গ্রেগরিয়ান বা ইংরেজি বর্ষপঞ্জিই বিশ্বের সব দেশে চালু রয়েছে।

যদি সৌর পঞ্জিকা অনুসরণ করে রোজা পালন করা হতো, তাহলে প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট সময়ে রোজা ও ঈদ উদযাপিত হতো। চান্দ্র পঞ্জিকার ফলে মুসলমানরা বিভিন্ন মৌসুমে রোজা ও ঈদের অভিজ্ঞতার সুযোগ পাচ্ছে। চান্দ্র পঞ্জিকায় ১১ দিন কম থাকে সূর্য পঞ্জিকার চেয়ে। সে জন্যই প্রতি বছর ঈদ ১১ দিন করে এগিয়ে আসে। প্রতি তেত্রিশ বছরে ঈদের সময়টি ঘুরে আবার সৌর বর্ষপঞ্জির একই সময়ে ফিরে আসে।

প্রশ্ন হতে পারে, চান্দ্র বর্ষপঞ্জিকা অনুসারে পৃথিবীতে একই দিনে চাঁদ উঠে না কেন বা ঈদ হয় না কেন? পৃথিবী নিজ অক্ষের চারদিকে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ঘুরে চলছে, যাকে আহ্নিক গতি বলে। দূরবর্তী নক্ষত্রের সাপেক্ষে পৃথিবীকে তার অক্ষের ওপর একটি সম্পূর্ণ ঘূর্ণন সম্পন্ন করতে যে সময় লাগে, তা আসলে ২৩ ঘণ্টা ৫৬ মিনিট ৪.০৯১ সেকেন্ড; যা একটি দিন হিসেবে পরিচিত। সৌর হিসাবে সৌদি আরবের সঙ্গে আমাদের ৩ ঘণ্টা পার্থক্য হলেও চন্দ্রের হিসাবে পার্থক্য ২১ ঘণ্টা অর্থাৎ এক দিনের। খালি চোখে চাঁদকে দেখতে হলে চাঁদ ও সূর্যের মাঝে ১০.৫ ডিগ্রি কোণ থাকতে হবে। যতক্ষণ না পর্যন্ত চাঁদ ও সূর্যের মাঝে ১০.৫ ডিগ্রি কোণ উৎপন্ন হবে, ততক্ষণ চাঁদ দেখা যাবে না। এই দূরত্ব অর্জন করতে চাঁদের ১৭ থেকে ২৪ ঘণ্টা লেগে যায়। তাই আমেরিকায় চাঁদ দেখা গেলে বাংলাদেশে একই সময়ে চাঁদ দেখা যাবে না। একেক দেশে একেক সময়ে চাঁদ দেখা যায় এবং একেক দেশে একেক দিন ঈদ হয়। 

আরও পড়ুন

×