ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

ছাদবাগানের যত্ন

ছাদবাগানের যত্ন

--

প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০২৩ | ১৮:০০

আজকাল অনেকেই ছাদে বাগান করার দিকে ঝুঁকছেন। পানি গাছের জন্য উপকারী হলেও টানা বর্ষণ ক্ষতিকর। বর্ষায় ছাদবাগানের যত্ন নিয়ে লিখেছেন আল আমীন

শহরের পাশাপাশি দেশের গ্রামগঞ্জের পাকা বাড়িগুলোতেও এখন ছাদবাগান জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কেউ শখে, কেউবা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে করছেন ছাদবাগান। বিভিন্ন ধরনের শৌখিন গাছপালার পাশাপাশি ছাদে করা হচ্ছে দেশি-বিদেশি ফুল-ফল এবং শাকসবজির আবাদও। অনেক সময় অতি বৃষ্টিতে ক্ষতি হয় গাছপালার। চলুন জেনে নেওয়া যাক বর্ষায় কীভাবে করবেন গাছের পরিচর্যা।

জমিতে বা অন্যান্য জায়গায় বাগান করার চেয়ে ছাদে বাগান করার পদ্ধতি একটু ভিন্ন। তাই ছাদবাগানের যত্নও নিতে হয় ভিন্নভাবে। তাছাড়া বর্ষা মৌসুমে ছাদবাগানে অন্যান্য সমস্যার পাশাপাশি মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায় ডেঙ্গু। এ সময় টবে জমে থাকা পানিতে এডিস মশা বংশবিস্তার করতে পারে। এ কারণে কোথাও যাতে পানি জমে না থাকতে পারে, সেটা খেয়াল রাখতে হবে।

বৃষ্টির দিনে গাছের যত্ন নিতে আরও কিছু কাজ করা জরুরি। যেমন– বৃষ্টিতে গাছের গোড়া নরম হয়ে যাতে হেলে না পড়ে, সেজন্য কাঠি বা খুঁটি দিয়ে সোজা করে রাখতে হবে। মাঝেমধ্যে গাছের অপ্রয়োজনীয় কিছু ডাল, বিশেষ করে উপরের দিকে বেশি বাড়ন্ত ডাল ছেঁটে দিতে হবে।

বৃষ্টি শেষে পানি নেমে গেলে গাছের গোড়ার মাটি শুকিয়ে শক্ত বা চট ধরে যেতে দেওয়া যাবে না। মাঝেমধ্যে নিড়ানি দিয়ে ওপরের মাটির স্তর ভেঙে দিতে হবে। এতে আগাছা দমন হবে, ভেতরে বায়ু চলাচলেও সুবিধা হবে।

নিয়মিত ছাদবাগান পরীক্ষা করে দেখতে হবে। কীট বা পোকার ডিমগুলো খুঁজে বের করে মেরে ফেলতে হবে। বয়স্ক বা হলুদ হয়ে যাওয়া পাতার বোঁটা রেখে তা ছেঁটে দিতে হয়। এসব পাতায় পোকামাকড় বেশিদিন আশ্রয় নেয়। বিশেষ পদ্ধতিতে হলুদ বা মরিচের গুঁড়া ব্যবহার করে গাছের এসব পোকামাকড় দমন করা যায়। এ ছাড়া অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে অন্যান্য কীটনাশক স্প্রে বা পদ্ধতিও ব্যবহার করতে পারেন।

নিয়মিত সার প্রয়োগও ছাদবাগানের যত্ন-আত্তির অংশ। তবে কোন গাছে কখন কী সার প্রয়োগ করতে হবে, সেটি ভালোভাবে না জেনে-বুঝে করা যাবে না। তাতে ক্ষতিও হতে পারে। তাই অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে সার প্রয়োগ করতে হবে। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের নয়াপুরের বাসিন্দা রেহেনা পারভীন রুমার বাড়িতে রয়েছে শখের ছাদবাগান। বর্ষায় ছাদবাগানের যত্ন প্রসঙ্গে তিনি জানান, ছাদবাগানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি খেয়াল রাখতে হবে রোদ-বৃষ্টির ব্যাপারে। কিছু গাছ আছে, যেগুলো বেশি রোদ বা খরায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই অতিরিক্ত রোদ থেকে রক্ষা পেতে সেমি শেড পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রয়োজনমতো পানিও দিতে হবে। আবার গাছগুলোর গোড়ায় যাতে বৃষ্টির পানি দীর্ঘ সময় ধরে জমে না থাকতে পারে, সেটাও খেয়াল রাখা জরুরি।

সার এবং কীটনাশক ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাবধানী হওয়ার পরামর্শও দেন তিনি। রুমা বলেন, অন্য চাষাবাদের মতো ছাদবাগানেও সার এবং কীটনাশক ব্যবহার, পোকামাকড় দমন করতে হয়। তবে এসব কাজ বিশেষ নিয়ম মেনে করতে হবে। রাজধানীর এলিফেন্ট রোডের বাসিন্দা ও একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম বাড়ির ছাদে শখের বশে বাগান করছেন। তিনি জানান, তারা স্বামী-স্ত্রী মিলেই ছাদবাগানের কাজ করেন, যত্ন নেন। তাঁর বাগানের গাছপালাগুলো বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করা। সেখানে আছে নানা রকম ফল-ফুল এমনকি শাকসবজিও।

তিনি বলেন, ছাদবাগানে নিয়মিত দুই বেলা পানি দিতে হয়। মাঝেমধ্যে গাছের গোড়ার মাটিগুলো আস্তে আস্তে খুঁচিয়ে আলগা করে দিতে হয় এবং আগাছা পরিষ্কার করতে হয়। বর্ষার দিনে টবে যাতে পানি না জমে সেটা নিয়মিত পরীক্ষা করেন। তাঁর মতে, নিয়মিত পরিচর্যা করলে ছাদবাগানে দেশি-বিদেশি নানা রকম ফল-ফুল এবং শাকসবজির আবাদ করা সম্ভব।

বর্ষায় ছাদবাগানের যত্ন প্রসঙ্গে রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক নার্সারির কৃষি বিশেষজ্ঞ রাজীব হাসান জানান, বর্ষার সময় টবের গাছের গোড়ায় বা পাতায় যাতে পানি জমে না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তা না হলে পানি জমে গাছের ক্ষতি হতে পারে। গাছ ভালো রাখতে প্রতি ১৫ দিন পরপর ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে পারেন। এ ছাড়া দীর্ঘদিন কোনো গাছ একটা টবে থাকলে শিকড়ে পচন ধরে নষ্ট হয়ে যায়। কিছু গাছ আবার পানিতে সংবেদনশীল হয়। এসব ক্ষেত্রে বৃষ্টি শেষে, অর্থাৎ জুলাইয়ের পর গাছের যত্নের ব্যাপারে কোনো কৃষি বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নিতে পারেন। 

আরও পড়ুন

×