ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

যাপিত জীবনের গল্প

প্রবহমান ঢেউ

প্রবহমান ঢেউ

সুমাইয়া আক্তার

প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০২৩ | ১৮:০০

সিরাজুল আলম বাজারের ব্যাগ বগলদাবা করে ছুটলেন বাজারে। চোখে-মুখে সে কী উল্লাস! মেয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে ফিরেছে ছয় মাস পর। ওদিকে বাড়িতে চুলায় বসানোর মতো তেমন কিছু নেই।

আসার সময় নাতিটা পাঞ্জাবির কোণ টেনে বলেছে, ‘নানুভাই, আমি গরুর মাংস খাব।’

তার ইচ্ছা পূরণে সিরাজুল বাজারে ঢুকেই মাংসের দিকে চোখ ফেরালেন। দোকানির চোখে-মুখে হতাশা। দাম আকাশচুম্বী হওয়ায় ক্রেতাও কম। সিরাজুলকে দেখে চোখে-মুখে কিঞ্চিৎ খুশির আভা ফুটে উঠল তাঁর।

‘কত কেজি দেব আপনাকে’– দাঁড়িপাল্লা কাছে টেনে বললেন দোকানি। কণ্ঠে আহ্লাদ। ‘কেজি কত টাকা?’ দোকানির মুখ মলিন হলো। এই বুঝি ক্রেতা হাত ফসকে যায়! উত্তর দিলেন, ‘৭৫০ টাকা।’

সিরাজুল চমকে উঠলেন। ৭৫০ টাকা! অস্ফুট ভারী কষ্ট এসে সিরাজুলের হৃদয়ে জমতে শুরু করল। তিনি দিনমজুর। চামড়া পোড়া রোদে কাজ করে দিনশেষে কত আর টাকা পান। গরুর মাংসই কিনা ৭৫০ টাকা! গত কয়েক মাসে গরুর মাংসে হাত দেওয়া হয়নি সিরাজুলের। জানতেন না বাজারের এ অবস্থা। তাই এক হাজার টাকা নিয়ে এসেছেন। আগেকার দিনে ৫০০ টাকায় দুই ব্যাগ বাজার জুটত। সিরাজুল দীর্ঘশ্বাস ফেলে গরুর মাংসের আশা ছাড়লেন। গেলেন মুরগি নিতে। হাজার হোক, নাতি আবদার করেছে। গরুর পরিবর্তে মুরগির মাংস কিনলে তাও যদি নাতির মুখে একটু হাসি ফোটে।

‘ভাই, ব্রয়লার কেজি কত?’

দোকানির চটপট উত্তর, ‘২০০ টাকা কেজি।’

সিরাজুলের কণ্ঠে উৎকণ্ঠা, ‘গত মাসে না ১৪০ টাকা ছিল?’

দোকানি উত্তর দিলেন না। সিরাজুলও আর কিছু বলতে পারলেন না। এই দুর্দিনে দুর্বিষহ অভাবে পড়েছে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই। কাকে কী বলবেন? উপায়ন্তর না পেয়ে তিনি এক কেজি ব্রয়লার নিলেন। এবার ব্রয়লারের আশাও ছাড়তে হবে ভেবে ব্যথিত হলেন। গুমরে উঠলেন ভেতর ভেতরে। মাছের দরও নেহাত কম নয়। তাই মাছ আর কিনলেন না। পরে যদি সবজিতে টান পড়ে! প্রয়োজনীয় সবজি কিনে বাড়ির পথ ধরলেন সিরাজুল। মলিন সূর্যের দুর্বল তেজ তাঁর শরীর ভেজাতে লাগল। অজান্তেই মনের কোণে ভেসে উঠল এক দুঃস্মৃতি। চোখ ভরা অশ্রু নিয়ে সিরাজুল অজান্তেই ব্যথিত স্বরে বলে উঠলেন, ‘আহ্‌ আমার দেশ!’

সুহৃদ দিনাজপুর

আরও পড়ুন

×