ঢাকা সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫

জেনে রাখুন

বিটকয়েন, অনলাইনে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন অবৈধ

বিটকয়েন, অনলাইনে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন অবৈধ

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২৩ | ১৮:০০

বেশ কিছুদিন ধরেই আলোচনায় রয়েছে মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জের (এমটিএফই) প্রতারণার খবর। ভুঁইফোঁড় এই বিদেশি অনলাইন প্রতিষ্ঠানে টাকা খাটিয়ে ফতুর হয়েছেন অনেক মানুষ। অ্যাপসভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে অনলাইন থেকে কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়েছে। এই ঘটনায় ফের আলোচনায় এসেছে ক্রিপ্টোকারেন্সির বিষয়টি। দেশের বিভিন্ন জেলায় মানুষকে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) এবং ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে ব্যবসা করে বড় অঙ্কের মুনাফার লোভ দেখিয়ে প্রতারণার কাজটি করেছে এমটিএফই। শুধু এমটিএফই নয়, ক্রিপ্টোকারেন্সি ও অনলাইনের বৈদেশিক মুদ্রার ব্যবসায় রাতারাতি ধনী হওয়ার লোভ দেখিয়ে ফাঁদ পেতে বসে আছে আরও প্রতারক চক্র।

আর্থিক খাত বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে বিটকয়েনসহ সব ধরনের ক্রিপ্টোকারেন্সি ও অনলাইনে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন সম্পূর্ণ অবৈধ। এসবের যেমন আইনি কোনো অনুমোদন নেই, তেমনি এগুলোতে বিনিয়োগের ঝুঁকিও খুব উচ্চপর্যায়ের। বাংলাদেশ ব্যাংকও এ নিয়ে বারবার সবাইকে সতর্ক করে আসছে। তাই কোনোভাবেই কারও প্ররোচনা বা লোভের ফাঁদে পড়ে এ ধরনের লেনদেনে জড়ানো উচিত নয়। এ বিষয়ে মানুষকে সতর্ক ও সচেতন করতে আরও বেশি প্রচারণা জরুরি বলেও মনে করেন বিশ্লেষকরা।

ক্রিপ্টোকারেন্সি হচ্ছে এক ধরনের ভার্চুয়াল মুদ্রা। ব্লকচেইন টেকনোলজির ওপর ভিত্তি করে হওয়া এ ধরনের মুদ্রা লেনদেনে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন পড়ে না। এই মুদ্রা বা এর লেনদেন কোনো দেশের সরকার, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা কোনো আর্থিক কর্তৃপক্ষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়।

তাই ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেনের গতিবিধিও অনুসরণ করা যায় না। হাজারো ধরনের ক্রিপ্টোকারেন্সির উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে– বিটকয়েন, ইথেরিয়াম, রিপল, লাইটকয়েন, সোলানা, কার্দানো, ডোজকয়েন, স্টেলার, ইউনিসোয়াপ, চেইনলিঙ্ক, ইউএসডি কয়েন ইত্যাদি। এগুলোর মাধ্যমে অর্থ পাচার, মাদক, কালোবাজারি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অর্থ স্থানান্তর হয়ে থাকে বলেও অভিযোগ রয়েছে। ক্রিপ্টোকারেন্সির বাজারে সবসময় ব্যাপক অস্থিরতা থাকে। এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগের ঝুঁকিও থাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে হাতেগোনা দু-একটি বাদে বিশ্বের অধিকাংশ দেশের সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকই ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লেনদেনের অনুমতি দেয়নি।

বাংলাদেশেও ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ভার্চুয়াল মুদ্রার বিনিময়, স্থানান্তর ও ব্যবসা বেআইনি। তবে অভিযোগ পাওয়া যায়, কোনো কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ভার্চুয়াল মুদ্রা বা ক্রিপ্টোকারেন্সির কেনাবেচা হচ্ছে। এ ধরনের লেনদেন ঠেকাতে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করার পাশাপাশি তদারকি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়ে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক করে এ বিষয়ে সার্কুলার জারি করা হয়েছে। এ ধরনের লেনদেন বা ব্যবসা থেকে সবাইকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়ে বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ক্রিপ্টোকারেন্সি তথা ভার্চুয়াল সম্পদ বা মুদ্রা বিনিময়, স্থানান্তর ও ট্রেড থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দিয়ে গত বছর বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সার্কুলারে বলা হয়, যে কোনো ভার্চুয়াল সম্পদ বা মুদ্রার বিনিময়, স্থানান্তর, ট্রেডে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নেই। নির্দেশনা অমান্য করে কেউ এ ধরনের লেনদেন করলে তা হবে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইনের ২৩(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই অপরাধ করলে সাত বছরের জেল বা আর্থিক জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে।

ওই নির্দেশনার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে পরবর্তী সময়ে আরেকটি সার্কুলারে বলা হয়, ভার্চুয়াল সম্পদ ও ভার্চুয়াল মুদ্রা লেনদেন, বিনিময় স্থানান্তর বা বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসা এবং এ-সংক্রান্ত যে কোনো কার্যক্রমে সহায়তা থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা রয়েছে। লক্ষ্য করা গেছে, বিভিন্ন বিদেশি ভার্চুয়াল অ্যাসেট সার্ভিস প্রোভাইডারের (ভিএএসপি) ওয়েবসাইট বা অ্যাপের মাধ্যমে বাংলাদেশে কার্যরত কোনো কোনো তপশিলি ব্যাংকের গ্রাহক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ভার্চুয়াল কারেন্সি, ক্রিপ্টোকারেন্সি বা বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন, কেনাবেচা, পুনঃবিক্রয়, ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি বিনিময় স্থানান্তর বা বাণিজ্য কার্যক্রম পরিচালনা করছে। নির্দেশনায় অবিলম্বে এ ধরনের লেনদেন বন্ধের পাশাপাশি এ বিষয়ে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বনের জন্য তদারকি বাড়াতে বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন

×