ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

বিষণ্ণতা কমাতে চিত্রকর্ম

বিষণ্ণতা কমাতে চিত্রকর্ম

নাজিয়া হাসান

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান

প্রকাশ: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০

মস্তিষ্কের জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় জীবনের শেষ প্রান্তেই পৌঁছে গিয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জের মেয়ে নাজিয়া হাসান। সেখান থেকে তিনি নতুন করে বাঁচার তাগিদ খুঁজে পেয়েছেন; যেখানে অবলম্বন হলো চিত্রকর্ম।

২০১৮ সালের কথা। হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েন নাজিয়া। কয়েকবার অচেতন হয়ে পড়েন। ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। এমআরআই রিপোর্টে তাঁর মস্তিষ্কে সেরিব্রাল ব্রেইন অ্যাট্রফি রোগ ধরা পড়ে। এ রোগে মস্তিষ্কের কিছু কোষ নষ্ট হয়ে যায়। চিকিৎসক বিশ্রামে থাকতে বলেন। ঘুমের ওষুধ দেন। কোনো রকম মানসিক চাপ নেওয়া যাবে না বলে জানান।

শুয়ে-বসে থাকার মানুষ নন নাজিয়া। অথচ জোর করে বিশ্রামে থাকার ফলে তিনি বিষণ্নতায় আক্রান্ত হন। নাজিয়া বলেন, ‘অসুস্থ অবস্থায় আমার বিশ্রাম দরকার ছিল। তবে অসুস্থতাজনিত বিষণ্নতায় বন্ধু-স্বজনের সহযোগিতাও ভীষণ জরুরি, যা সেভাবে না পাওয়ায় বিষণ্নতা আঁকড়ে ধরে। এমনকি তখন আমি আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে উঠেছিলাম। ডাক্তার বললেন, আমার ছোটবেলার এমন কোনো কাজ যা আমি পূর্ণ করতে পারিনি, তা এখন করতে পারি। তখন চিত্রকর্মের কথা মাথায় এলো। এটা ২০২০ সালের কথা। করোনাকালে ঘরে বন্দি। আমি অনলাইনে চিত্রকর্ম শেখা শুরু করি। তখন থেকে এ চিত্রকর্মকে আমি বাঁচার অবলম্বন করে নিয়েছি। বিষণ্নতা কাটিয়ে উঠেছি এর মাধ্যমে। এটা অনেকটা সেলফ কাউন্সেলিংয়ের মতো।’ তিনি আরও বলেন, ‘চিকিৎসক আমাকে বাকি জীবন ঘুমের ওষুধে থাকতে বললেও আমি তা করিনি। ভালো লাগার-ভালোবাসার কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখার জন্যই মূলত এই ছবি আঁকার মাধ্যমটা বেছে নেওয়া। আমি চিত্রশিল্পী নই। কিন্তু এ কাজে আমি নিজেকে খুঁজে পেয়েছি। এখন আরও গভীরভাবে চিত্রকর্মে মনোনিবেশ করেছি।’

সেরিব্রাল ব্রেইন অ্যাট্রফি দুরারোগ্য ব্যাধি। এ রোগের ফলে নাজিয়া চোখে কম দেখেন, হাত কাঁপে, কখনও ক্যানভাসে রঙের আঁচড় কাটতে হাতে তুলি ধরে রাখতেও কষ্ট হয়। তবে তা নাজিয়ার একাগ্রতার কাছে হার মেনেছে। চিত্রকর্ম নাজিয়ার পেশা না হলেও তিনি দেশ-বিদেশে বেশ কয়েকটি প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন। অনেক ছবি বিক্রিও হয়েছে। তাঁর আঁকা ছবি পেয়েছে হামিদুজ্জামানসহ বেশ কয়েকজন বরেণ্য চিত্রশিল্পীর প্রশংসা। পেয়েছেন দেশ-বিদেশের বেশ কয়েকটি পুরস্কারও। ছবি আঁকার পাশাপাশি নাজিয়া বইয়ের প্রচ্ছদও করেন। এ পর্যন্ত আটটি বইয়ের প্রচ্ছদে কাজ করেছেন।

বিভিন্ন জায়গায় আর্ট ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়। নাজিয়া অসুস্থতার জন্য যেতে পারেন না। এটিই তাঁর বড় দুঃখ। তিনি বলেন, ‘অসুস্থতার জন্য আমি তেমনভাবে কোনো ক্যাম্পে যাই না। তবু আউটডোরে আঁকার জন্য আমার অনেক আগ্রহ। সেই ইচ্ছে থেকে কিছুদিন আগে একটি কর্মশালায় গিয়েছিলাম। সেখানে মাথা ঘুরে পড়ে যাই। আমার অংশগ্রহণ সেখানেই অসমাপ্ত রেখে বাড়ি ফিরে আসতে হয়।’

তবে নাজিয়ার মতে, ‘অসুস্থতা থেকে মানসিকভাবে বের হতে যে কেউ ছবি আঁকার মতো একটি সৃজনশীল কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন। আমি আমার অসুস্থতাকে, আমার ডিপ্রেশনকে জয় করেছি আমার রঙের রঙিন খেলায়, তুলি ক্যানভাসে। আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি, ছবি একটি চমৎকার মাধ্যম অসুস্থতার সময়ে ভালো সময় কাটানোর জন্য।’

আরও পড়ুন

×