ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

ফিরে দেখা ২০২৪ সালের পৃথিবী

ফিরে দেখা ২০২৪ সালের পৃথিবী

শেষ হয়ে এলো ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ

কে এন দেয়া

প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৫:৩৯ | আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৬:০৫

শেষ হয়ে এলো ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ। এ বছরের খবরের পাতায় পাতায় প্রাধান্য পেয়েছে বিভিন্ন দেশে চলমান যুদ্ধ। এছাড়াও বিশ্বজুড়ে দেখা গেছে রেকর্ড পরিমাণে সংসদ নির্বাচন। বেশিরভাগ দেশেই ক্ষমতার হাতবদল হয়েছে। সবাইকে চমকে দিয়ে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে বাংলাদেশে, এর কয়েক মাস পর যুক্তরাষ্ট্রে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, আর বছরের শেষটিতে দেখা গেছে সিরিয়া থেকে বাশার-আল-আসাদের পলায়ন।

অর্থনীতি ধুঁকছে অনেক দেশেই, এর প্রভাব পড়েছে রাজনীতিতেও। অন্যদিকে ব্যপক পরিবেশ বিপর্যয়ের কুফল ভোগ করেছে উপকূলীয় এলাকা, দ্বীপদেশগুলো। প্রতি বছরের মত এ বছরেও চাঞ্চল্যকর কিছু মৃত্যুর ঘটনায় স্তব্ধ হয়েছে পৃথিবীবাসী। 

বিজ্ঞানের দিক থেকে এ বছর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা বলা যেতে পারে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআইয়ের ধীরস্থির অগ্রগতি। 

জেনে নিন ২০২৪ সালে ঘটে যাওয়া এসব চমকপ্রদ ঘটনার বিস্তারিত:

বিক্ষোভে উত্তাল ঢাকা, ১৮ জুলাই, ২০২৪। ছবি- এএফপি

 

বাংলাদেশ: চড়াই-উৎরাইয়ের এক বছর

বছরের শুরুর মাসেই দেখা গেল শ্রম আইনে দোষী সাব্যস্ত হলেন নোবেল পুরস্কারজয়ী ড মুহাম্মদ ইউনুস। এর পরপরই সংঘটিত হলো দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন, যাতে আবারও ক্ষমতায় আসেন শেখ হাসিনা। এই নিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতা ধরে রাখে আওয়ামী লীগ। 

মার্চ মাসের মাঝ বরাবর সব পত্রিকার প্রথম পাতায় একই খবর- তা হলো সোমালী জলদস্যুদের কবলে পড়েছে এমভি আবদুল্লাহ নামের একটি বাংলাদেশি জাহাজ। দিনের পর দিন আলোচনা ও প্রচেষ্টার পর অবশেষে এপ্রিলের মাঝামাঝিতে তাদের জিম্মিদশার অবসান হয়। 

এ বছরের মে মাসে আরেক ট্র্যাজেডির অবতারণা হতে দেখা যায়। ভারতে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে গিয়ে আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য আনওয়ারুল আজিম ওরফে এমপি আনার হুট করেই নিরুদ্দেশ হয়ে যান মে মাসের ১৩ তারিখ নাগাদ। ২০ তারিখ পর্যন্ত তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। এরপর ২২ তারিখ জানা গেলো তাকে খুন করা হয়েছে, এরপর তার দেহ খন্ডবিখন্ড করে লুকিয়ে ফেলা হয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। তদন্তের তথ্য অনুযায়ী, ১৩ তারিখেই তার মৃত্যু হয়। 

ওই মাসেরই ২৬ তারিখ বাংলাদেশের উপকূলে আছড়ে পড়ে বিধ্বংসী ঝড় রিমাল। মৌসুমের প্রথম এই সাইক্লোনে নিহত হন সাত বাংলাদেশি। 

বছরের মাঝামাঝি সময়েই বিভিন্ন সমালোচনার মুখে পড়েন সরকারের দুই ঊচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। দুদকের তদন্তে বেরিয়ে আসে পুলিশের প্রাক্তন মহাপরিদর্শক বেনজির আহমেদের দুর্নীতির ফিরিস্তি। এরপর ঈদ-উল-আজহার সময়ে অতিরিক্ত খরচে একটি ছাগল কিনে লাইমলাইটে আসেন ইফাত নামের এক ব্যক্তি। তার ব্যাপারে খোঁজখবর করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে তার বাবা মতিউর রহমানের বিশাল সম্পত্তির তথ্য। রাজস্ব বোর্ডের একজন সদস্যের এত সম্পত্তি কী করে হলো, এমন গুঞ্জন ওঠায় ‘ছাগল-কাণ্ড’ খ্যাত মতিউর রহমান হারান নিজের পদ। 

জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে পরিবর্তনের হাওয়া বইতে থাকে বাংলাদেশে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ থেকে জ্বলে ওঠে এক গণঅভ্যুত্থানের বারুদ। ফলশ্রুতিতে শেখ হাসিনার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার পরেও শেষ রক্ষা হয় না। সরকারের পতন ঘটে আগস্টের ৫ তারিখ। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারযোগে ভারত চলে যান। এর পর একে একে সংসদ বিলুপ্ত হয়, মুক্তি পান বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া, নোবেলজয়ী ড ইউনুসকে প্রধান উপদেষ্টা করে গড়ে তোলা হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। 

আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি (বামে) এবং ইরানের সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। ছবি- এএফপি

 

বছরজুড়ে নির্বাচনের ছড়াছড়ি

৬০টিরও বেশি দেশের মানুষ ভোট দিয়েছেন এই বছরে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে ক্ষমতা হারিয়েছে আগের সরকার। এই পালাবদলের পেছনে অনেকাংশে দায়ী ছিল দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ইস্যু এবং রাজনৈতিক ইস্যু। 

বড় ধরনের পালাবদল দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, বতসোয়ানা, ঘানা, পানামা, পর্তুগাল, এবং উরুগুয়েতে। এছাড়া কিছু দেশে ঠিক পরাজিত না হলেও বেশ ধাক্কা খায় ক্ষমতায় থাকা সরকার, যেমন জাপান, ভারত, ও ফ্রান্স। 

বিভিন্ন নির্বাচনে ডানপন্থিদের জয়জয়কার দেখা গেছে। এছাড়া দেশে দেশে চলমান যুদ্ধ নিয়ে মতভেদেও এসব নির্বাচনের হাওয়া বদলে হতে দেখা গেছে। বিশেষ করে ইউক্রেনের যুদ্ধ নিয়ে নীতিগত বিভেদ দেখা গেছে খোদ যুক্তরাষ্ট্রের বামপন্থি সরকারেই। 

বেশিরভাগ দেশের অর্থনীতিতেই কমে এসেছে মূল্যস্ফীতি। কিন্তু বছরের পর বছর চলমান মূল্যস্ফীতি এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে চটে ছিলেন ভোটাররা। এই রাগ তারা ঝেড়েছেন ব্যালট বক্সে। মূলত অর্থনীতি সামলাতে না পেরেই ক্ষমতা খুইয়েছে সরকারগুলো। এ কারণেই দ্রব্যমূল্য কমিয়ে আনার ইশতেহারে ভর করে নির্বাচনে জিতে গেছে ট্রাম্প। একটিমাত্র দেশেই এমন পরিবর্তন আসেনি, আর তা হলো রাশিয়া। রেকর্ড ৮৮ শতাংশ ভোট পেয়ে ক্ষমতায় রয়ে গেছেন ভ্লাদিমির পুতিন। 

আততায়ীর গুলিতে রক্তাক্ত ট্রাম্প। ছবি- এপি

 

আলোচনায় ফিরেছেন ট্রাম্প

ভালো-মন্দ বিভিন্ন কারণে কিছুদিন পর পরই লাইমলাইটে আসেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই বছর তিনি সিদ্ধান্ত নেন আবারও লড়বেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদের জন্য। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বেশ হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছিল তার। 

জুলাইয়ের ১৩ তারিখ পেনসিলভেনিয়ার এক জমজমাট সমাবেশে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন ট্রাম্প। তখনই ঘটে এমন এক বিস্ময়কর ঘটনা, যাতে পুরো নির্বাচনের ভোল পাল্টে যায়। হুট করেই জনতার মধ্যে থেকে একটি গুলি ছোঁড়া হয়। আক্ষরিক অর্থেই ট্রাম্পের কানের পাশ দিয়ে যায় সেই গুলি। নিমিষের মধ্যেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সমাবেশে। নিরাপত্তাকর্মীরা ঝাঁপিয়ে পড়ে ট্রাম্পকে আড়াল করেন, ওদিকে বন্দুকধারীর খোঁজ পড়ে যায় সঙ্গে সঙ্গেই। রক্তাক্ত অবস্থায় ট্রাম্পকে সরিয়ে নেওয়া হয় সমাবেশ থেকে। 
সে যাত্রায় বেঁচে যান ট্রাম্প। তবে সমাবেশে থাকা অন্যান্যরা গুলিবিদ্ধ হন। একজন নিহত ও দুইজন আহত হবার ঘটনা জানা যায়। এ ঘটনায় বন্দুকধারী, স্থানীয় বাসিন্দা ২০ বছর বয়সী টমাস ম্যাথু ক্রুকসও নিহত হন। 

এ হত্যাচেষ্টার ঘটনায় রাতারাতি ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন বেড়ে যায় বলে মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ। এখানেই শেষ নয়, সেপ্টেম্বরের ১৫ তারিখ আরেকটি হত্যাচেষ্টা চালানো হয় ট্রাম্পের ওপর। সব মিলিয়ে ট্রাম্পের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে ওঠেন অনেক ভোটার। 

ট্রাম্পের ওপর প্রথম হত্যাচেষ্টার কিছুদিন পরই নির্বাচনের দৌড় থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন জো বাইডেন। তার জায়গায় ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠেন কমলা হ্যারিস। তবে ডেমোক্র্যাটদের প্রাণপণ চেষ্টা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত একচুলের জন্য হেরে যায় তারা। আবারও ক্ষমতায় চলে আসেন ট্রাম্প। জানুয়ারির ২০ তারিখ নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার শপথ নেওয়ার কথা। এর মধ্যেই তিনি নিজের মন্ত্রীসভায় বিভিন্ন পরিবর্তনের কথা বলছেন, আলোচিত সব নীতি নির্ধারনের প্রসঙ্গ তুলছেন। সব মিলিয়ে জো বাইডেনের তুলনায় তার শাসনামল কতটা আলাদা হবে, তা দেখা যাবে ২০২৫ সালে। 

তুরস্কের 'ভাইরাল' শ্যুটার ইউসুফ দিকেচ। ছবি- সংগৃহীত

 

অলিম্পিকের বছর

এ বছর মন ভালো করা একটি ঘটনা ছিল প্যারিস অলিম্পিক। চার বছর পর পর আসা এই মহাযজ্ঞ জুলাই ১৬ থেকে আগস্ট ১১ পর্যন্ত মাতিয়ে রাখে বিশ্বকে। পুরো আসরে দেখা যায় বেশ কিছু ‘ভাইরাল’ ঘটনা। এর মাঝে সবচেয়ে স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন সম্ভবত তুরস্কের এক শুটার। না, তিনি অনেকগুলো পদক জেতেননি, এমনকি এই অলিম্পিকের আগে তাকে কেউ চিনতই না! 

তিনি হলেন ৫১ বছর বয়সী ইউসুফ দিকেচ। গত ৩০ জুলাই প্যারিস অলিম্পিকের ১০ মিটার এয়ার পিস্তল ইভেন্টে সেভাল লাদিয়া তারহানের সঙ্গে মিশ্র ইভেন্টে রুপা জিতেছেন ইউসুফ। শুটিংয়ে অলিম্পিকে তুরস্কের ইতিহাসেই এটি প্রথম পদক। 

এর পরপরই ইন্টারনেটজুড়ে ভাইরাল হয়ে পড়ে শুটিং ইভেন্ট চলাকালীন তার বেশভূষা। এত বড় এক আসরে তার চোখ নেই কোনো বিশেষ লেন্স, কানে নেই শব্দনিরোধক হেডফোন। যেনতেনভাবে কানে একটা বাড গুঁজে, এক হাত পকেটে রেখে আরেক হাতে পিস্তল তাক করে রুপা জিতে ফেলেন তিনি। তাকে দেখে মনে হতে পারে যেন সত্যিকারের এক ‘হিটম্যান।’

বিভিন্ন রেকর্ড, পদকের ছড়াছড়ির মাঝে ছিল আরেক আলোচিত বিষয়- তা হলো প্যারিসের সিন নদী। অবাক হলেও সত্যি যে, প্যারিস অলিম্পিকের আগে একশ বছরেরও বেশি সময় ধরে এ নদীতে সাঁতার কাটা ছিল একেবারেই নিষিদ্ধ। কারণ এ নদীর পানি প্রবল মাত্রায় দুষিত। অলিম্পিকের সাঁতারের কিছু ইভেন্ট এই নদীতে আয়োজন করার উদ্দেশ্যে আসরের আগে থেকেই পানি দূষণমুক্ত করার উদ্যোগ হাতে নেয় প্যারিসের কর্তৃপক্ষ। চোখের পলকে খরচ হয়ে যায় ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ইউরো (১ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)। এরপরেও সেই পানিতেই কোলা ই (আমাশয়ের জীবাণু) রয়ে যায় বলে কিছু ইভেন্ট বাতিল করা হয়। এতে বেশ সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয় আসরটির আয়োজকদের। 

রেকর্ড ভেঙ্গেছে পরিবেশ বিপর্যয়

স্মরণকালের সবচাইতে উত্তপ্ত বছর হয়ে উঠেছে ২০২৪ সাল। এর আগে ২০২৩ সালটি ছিল সবচেয়ে উত্তপ্ত, জানিয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস। এছাড়া প্যারিস চুক্তিতে বর্ণিত তাপমাত্রার তুলনায় গড় বৈশ্বিক তাপমাত্রা এই প্রথমবার ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে দেখা যাবে। 

বছরের শুরুতেই দেখা যায় এ বছরের জানুয়ারিটি ছিল স্মরণকালের ইতিহাসে সবচাইতে উত্তপ্ত মাস। এর পর ফেব্রুয়ারি মাসেও দেখা যায় ইতিহাসের সবচাইতে উত্তপ্ত শীতকাল। এর পাশাপাশি সমুদ্রের তাপমাত্রায় বেড়ে যায় অস্বাভাবিক মাত্রায়। 

বছরের শুরুতে তাপমাত্রা বৃদ্ধির এই ধাঁচ বজায় থাকে বছরজুড়েই। জুন মাস নাগাদ দেখা যায় এই উত্তাপের ফলে প্রবল শক্তিশালী হয়ে উঠছে ঝড়, সাইক্লোন, হ্যারিকেন এবং টাইফুনগুলো। আটলান্টিক মহাসাগরে মৌসুমের প্রথম হ্যারিকেনটিই আসে ক্যাটাগরি ৫ শক্তিমাত্রা নিয়ে। মৌসুমের শুরুতেই এত শক্তিশালী হ্যারিকেন বিরল। এই ঝড়ের প্রভাবে শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নিহত হন ৪৮ জন, আর অন্যান্য দেশ মিলিয়ে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৭৩ জনে। অন্তত আট বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্ষয়ক্ষতি হতে দেখা যায় এর প্রভাবে। 

জুলাই মাসে ভাঙে আরেকটি রেকর্ড। জুলাইয়ের ২২ তারিখের মত ঊচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। আগস্ট আসতে আসতে দেখা যায় স্মরণকালের রেকর্ডের সবচেয়ে উত্তপ্ত গ্রীষ্মকাল ছিল এ বছর। 

গ্রীষ্ম শেষ হয়ে আসে বর্ষা। নিম্নচাপ বরিসের প্রভাবে তুমুল বৃষ্টি হয় মধ্য ইউরোপে। বিগত ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বিধ্বংসী বন্যা দেখা যায় এই অঞ্চলে। তিন মাসে যে পরিমাণ বৃষ্টি হওয়ার কথা, পাঁচ দিনে সে পরিমাণ বৃষ্টিতে ভেসে যায় চেক রিপাবলিক, অস্ট্রিয়া, পোল্যান্ড ও স্লোভাকিয়া। 

আফ্রিকাতেও প্রবল বন্যা দেখা দেয়, আক্রান্ত হয় হাজার হাজার মানুষ। নাইজেরিয়াতে বন্যায় আক্রান্ত হন ১৩ লাখ মানুষ, নিহত হন ৩২০ জন। সেপ্টেম্বরের ১০ তারিখ একটি বাঁধ বিধ্বস্ত হওয়ার ফলে এমন ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। 

মুদ্রার অপর পিঠে দেখা যায় ভয়াবহ কিছু দাবানল। এর ফলে এক বছরেই অন্তত ১০০ মিলিয়ন টন কার্বন নিঃসৃত হয় বিশ্বজুড়ে। এসব আগুনের পেছনে মানুষের হাত আছে বলে একমত বিজ্ঞানীরা। মানুষের বিভিন্ন কার্যকলাপের ফলে দাবানল ছাড়াও বেড়েছে তাপপ্রবাহ ও খরার ঘটনা। 

অক্টোবর নাগাদ অতিবৃষ্টির অভিশাপ নেমে আসে স্পেনে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ভ্যালেন্সিয়া অঞ্চলটি। এক বছরে যে পরিমাণ বৃষ্টি হওয়ার কথা, মাত্র আট ঘণ্টায় সে পরিমাণ বৃষ্টি রেকর্ড করে ওই অঞ্চলের এক আবহাওয়া অফিস। ব্যাপক উদ্ধার তৎপরতার পরেও এই অতিবৃষ্টিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় দুই শতাধিক, ক্ষতিগ্রস্ত হন হাজারো বাসিন্দা। 

নভেম্বরের দিকে শীত পড়তে শুরু করে উত্তর গোলার্ধে। তেমন বড় কোনো দুর্যোগ দেখা দেয়নি বটে, তবে এ মাসে দক্ষিণ কোরিয়ায় দেখা দেয় রেকর্ডভাঙ্গা তুষারপাত। দেশটির রাজধানী শিউলে বিগত ১০০ বছরের তুলনায় বেশি তুষারপাত হতে দেখা যায় ২৮ নভেম্বর। 

আলেক্সেই নাভালনি। ছবি- সংগৃহীত

 

মৃত্যু কেড়ে নিয়েছে যাদের

বেশ কিছু আলোচিত ব্যক্তিত্বের মৃত্যু হয়েছে এ বছরে। এর মাঝে রয়েছেন রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে লেখক, অভিনেতা, গায়ক ও ব্যবসায়ী। 

ফেব্রুয়ারিতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল রাশিয়ার রাজনীতিবিদ আলেক্সেই নাভালনির মৃত্যু। ক্ষমতাধর ভ্লাদিমির পুতিনের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী নাভালনি লম্বা সময় কারাবাসে ছিলেন। কারাবন্দী অবস্থাতেই তিনি মারা যান। কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, তিনি বিকেলে হাঁটতে বেরিয়ে অচেতন হয়ে পড়েন। এরপর আর তার জ্ঞান ফেরেনি। তবে তাদের এ ভাষ্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন নাভালনির পরিবার ও অনুসারীরা। তাদের মতে, নাভালনিকে খুন করা হয়েছে। মাত্র ৪৭ বছর বয়সে জীবনাবসান ঘটে নাভালনির। 
মার্চ মাসে মারা যান ‘ড্রাগন বল’ খ্যাত জাপানি লেখক আকিরা তোরিয়ামা। 

জুলাইয়ের ৩১ তারিখ ইসরায়েলের এক হামলায় নিহত হন ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের নেতা ইসমাইল হানিয়েহ। মাস দুয়েক পরই ইসরায়েলের আরেক হামলায় নিহত হন লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহের নেতা হাসান নাসরাল্লাহ। অক্টোবরে ইসরায়েলের হাতে মারা যান হামাসের আরেক নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার। অক্টোবরে মারা যান প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারতের জনপ্রিয় ব্যবসায়ী ব্যক্তিত্ব রতন টাটা। 

বিনোদন জগতকে শোকে আচ্ছন্ন করে এ বছরের দুটি মৃত্যু। দুইবারের অস্কারজয়ী ব্রিটিশ অভিনেত্রী ম্যাগি স্মিথ মারা যান সেপ্টেম্বরে। এদিকে অক্টোবরে মারা যান এক সময়ের জনপ্রিয় ব্যান্ড ওয়ান ডিরেকশনের সদস্য লিয়াম পেইন। আর্জেন্টিনার এক হোটেলের বারান্দা থেকে পড়ে মারা যান মাত্র ৩১ বছর বয়সী এই তারকা। 

 

বেজে চলেছে যুদ্ধের দামামা

যুদ্ধ চলছে বিশ্বের বেশকিছু অঞ্চলে। এর মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ। এসব অঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য শীঘ্রই কোনো সুখবরের আশ্বাস পাওয়া যাচ্ছে না। 

দিনের পর দিন ইউক্রেনের ওপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। তবে ইউক্রেনের যোদ্ধারাও মাটি কামড়ে পড়ে রয়েছেন। বছরের শেষের দিকে ইউক্রেনকে বিপুল পরিমাণ সাহায্যের অনুমোদন দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে অন্যদিকে রাশিয়াও বসে নেই। সম্প্রতি রাশিয়ার যুদ্ধে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে উত্তর কোরিয়ার সেনা যোগ দেওয়ার খবর জানা গেছে। রাশিয়ার জন্য যুদ্ধে প্রাণও গেছে তাদের অনেকের। এই যুদ্ধের ইতি টানবার ক্ষেত্রে অনেকেরই চোখ যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দিকে, কারণ ট্রাম্প তার নির্বাচনি ইশতেহারে বলেছিলেন এই যুদ্ধের একটা এস্পার-ওস্পার করে ছাড়বেন তিনি। তবে অনেকেই আবার আশঙ্কা করছেন পুতিনের পক্ষ নিয়ে যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেবেন ট্রাম্প। 

মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি আরও করুণ। একবছরেরও বেশি সময় ধরে গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। ডিসেম্বরের মাঝ বরাবর জানা যায়, ৪৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি মারা গেছেন ইতোমধ্যেই, এর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি নারী ও শিশু। জাতিসংঘ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল উভয়েই গাজায় গণহত্যা চালানোর জন্য দুষেছে ইসরায়েলকে। তবে এতে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর। গাজায় হামাসের সাথে যুদ্ধের পাশাপাশি এ বছর লেবাননের হিজবুল্লাহের সঙ্গেও যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে ইসরায়েল। অন্যদিকে সিরিয়ায় বাশার আল আসাদের পতনের পর সিরিয়ার কিছু অংশেও ইসরায়েলের দখলদারী দেখা গেছে। এ বছরের শেষ নাগাদ যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি হস্তান্তরের একটি চুক্তি হওয়ার কথা ছিল, তবে তা কতদূর আগায় তা নিয়ে রয়েছে সন্দেহ। 

এসব যুদ্ধের খবরের নিচে নিয়মিতই চাপা পড়ে যাচ্ছে সুদানে মানবিক বিপর্যয়ের ভয়াবহ চিত্র। ২০২৩ সালের এপ্রিলে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধের জের এসে পড়েছে ২০২৪ সালেও। গৃহযুদ্ধের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সংঘর্ষে, হামলায়, ক্ষুধায় এবং বিভিন্ন অসুস্থতায় প্রায় দেড় লাখ মানুষ মারা গেছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষদের ঘরছাড়া করা হয়েছে, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন অসংখ্য নারী। যারা বেঁচে আছেন, তাদের দিন কাটছে এসব অসহনীয় স্মৃতির বোঝা নিয়ে। 

লাখ লাখ মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে দেশটিতে। ব্যাপক আকারে দেখা দিয়েছে দুর্ভিক্ষ। সুদানে প্রয়োজনের তুলনায় সামান্যই পৌঁছেছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাহায্য। হামলা-সংঘর্ষের ভয়ে এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় ঘুরে ঘুরে জীবন কাটাচ্ছেন উদ্বাস্তুরা। সুদানের অবস্থাকে ‘জীবন্ত দুঃস্বপ্ন’ বলে আখ্যা দিয়েছে খোদ জাতিসংঘ। 

আসাদের পতনের পর দামেস্কের রাস্তায় ফুল হাতে উল্লাস করছেন এক নারী। ছবি- এএফপি

 

সিরিয়ায় নতুন এক সূর্যোদয়

বছর প্রায় শেষ হয়ে এসেছে, এমন এক সময়ে এসে সিরিয়ায় বইছে নতুন দিনের হাওয়া। মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই সিরিয়ার আলেপ্পো, হোমস, এবং দামাস্কের দখল নিয়ে নেয় বিদ্রোহী গোষ্ঠী। পিছু হঠতে বাধ্য হয় সরকারি সেনারা এবং ৮ ডিসেম্বর দেশ ছাড়েন প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। জানা গেছে, আসাদকে আশ্রয় দিয়েছে রাশিয়া। 

এ ঘটনার মধ্যে দিয়ে সিরিয়ায় আসাদ পরিবারের প্রায় ৫০ বছরের শাসনের অবসান ঘটে, সেই সঙ্গে শেষ হয় ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধের। এই ক্ষমতা বদলের অগ্রভাগে ছিল হায়াত তাহরির আল-শামস (এইচটিএস) নামের গোষ্ঠীটি, যাকে জাতিসংঘ এবং যুক্তরাষ্ট্র উভয়েই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করে রেখেছে। তবে তা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্বাগত জানিয়েছেন সিরিয়ার এই পরিবর্তনকে। 

আসাদের পতনের পর পরই দামেস্কের সড়কে সড়কে নেমে আসেন উল্লসিত নাগরিকরা। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে দেশে ফেরার তোড়জোড় শুরু করেন অন্যান্য দেশে থাকা সিরিয়ান উদ্বাস্তুরাও। কুখ্যাত সেদনায়া কারাগার থেকে বের করে আনা হয় বিপুল পরিমাণ বন্দীদের। তাদের অনেকেই ছিলেন বহির্জগৎ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। এমনকি অনেক বন্দীর পরিবার জানতেনও না তার বেঁচে আছেন না মৃত। 

স্বাভাবিক হয়ে আসছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (এআই) ব্যবহার

কয়েক বছর আগেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ছিল কল্পকাহিনীর বিষয়, আর এখন তা আক্ষরিক অর্থেই পৌঁছে গেছে ঘরে ঘরে। কারও হাতে স্মার্টফোন আছে মানেই ধরে নেওয়া যায় তিনি কোনো না কোনোভাবে এআই ব্যবহার করতে পারেন। 

সবরকমের এআইয়ের ভিড়ে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে চ্যাটজিপিটি। এর পাশাপাশি প্রতিযোগিতায় টিকে রয়েছে অ্যাপলের সিরি এবং আমাজনের অ্যালেক্সাও। এসব এআইয়ের নতুন নতুন ফিচার এসেছে এবং পুরনোগুলো আরও উন্নত হয়েছে। ছড়িয়ে পড়েছে এআই দিয়ে চালানো চ্যাটবট, ভয়েজ ক্লোনিং, ইমেজ জেনারেশন, এমনকি গান ও ভিডিও তৈরির মতো কাজগুলো। 

‘এআইয়ের কারনে আমার চাকরি চলে যাবে’ এমন গুঞ্জন শোনা গেছে এ বছরেও। এ গুঞ্জনের বিপক্ষে থাকা লোকজন বলছে, এআই শুধুমাত্র একটা যন্ত্র বা টুল, কম্পিউটারের মতই। কম্পিউটার যেমন মানুষের চাকরি কেড়ে নিতে পারেনি বরং অন্যদিকে নতুন নতুন অনেক কর্মসংস্থান তৈরি করেছে, এআইয়ের ক্ষেত্রেও তাই হবে।

কিন্তু বছরের শুরুর দিকে ইন্টারন্যাশনাল মনেটারি ফান্ড বা আইএমএফের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন বলে অন্য কথা। কিছু কিছু দেশে প্রায় ৪০ শতাংশ কর্মীর ওপর এআইয়ের প্রভাব পড়বে এবং এদের অনেকে চাকরি হারাতে পারে। জুন মাসের দিকে সিটিব্যাংকের এক অনুসন্ধানে দেখা যায়, অর্থনীতি সংক্রান্ত প্রায় অর্ধেক চাকরিই এআই দিয়ে চালানো সম্ভব। পে-প্যালের প্রতিষ্ঠাতা পিটার থিয়েলের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলেন এই মুহূর্তে এআইয়ের কারনে অনেক চাকরি বিলুপ্ত না হলেও ভবিষ্যতে তা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক। 

শুধু তাই নয়, মানুষের কাজের হুবহু অনুকরণ করতে শেখানো হচ্ছে এআইকে। এ কারনে অনেকেই আশঙ্কা করছেন শিল্পী ও কলাকুশলীদের কাজ কেড়ে নেবে এআই। 

এআইয়ের ব্যবহার যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে একে নিয়ে বিতর্ক। এআই ব্যবহার করে ধোঁকাবাজি, ভুল তথ্য ছড়ানো এবং মানুষের ক্ষতির ঘটনা দেখা গেছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের নির্বাচনে ডিপফেক ব্যবহারের ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়েছেন অনেকেই। এছাড়া অনুমতি অন্যের ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি ব্যবহার করছে বিভিন্ন এআই- এমন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এ সমস্যাটির কোনো সমাধান হয়নি। তবে সহসাই সমাধান হওয়ারও কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। 

তবে এআই’র কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণে আনার কিছুটা চেষ্টা শুরু হয়েছে এ বছর থেকে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের এক নীতিমালা প্রকাশ হয়েছে, যাতে বলা হয়েছে, এআই হবে নৈতিক, স্বচ্ছ। এটি মানুষের অধিকার রক্ষা করবে এবং ঝুঁকি মোকাবেলা করবে। 

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের কোনো নীতিমালা প্রকাশ হবে, এমন কোনো ভরসা পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে পথে হাঁটছেন এবং যে ধরনের লোকজন নিয়োগ দিচ্ছেন তার প্রশাসনে, এতে মনে হচ্ছে অন্তত তার শাসনামলে এআই নিয়ন্ত্রণের কোনো চেষ্টা করা হবে না। 

নিউ ইয়র্কে স্ট্যাচু অব লিবার্টির মাথার ওপর পূর্ণ সূর্যগ্রহণ। ছবি- রয়টার্স

 

বিজ্ঞান এগিয়ে চলেছে নীরবে

পৃথিবীতে যতই যুদ্ধ-বিগ্রহ চলুক না কেন, বিজ্ঞান সবসময়েই চলে তার নিজস্ব গতিতে। বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ হলে আপনার জন্য খুবই ঘটনাবহুল একটি বছর ছিল ২০২৪। 

এপ্রিল মাসে লাখ লাখ মানুষ উৎসবের মধ্যে দিয়ে নিজের চোখে দেখেছে একটি পূর্ণ সূর্যগ্রহণ। মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার বেশিরভাগ এলাকায় এই গ্রহণ দেখা গেছে। কমবেশি ১৮ মাস পর পর একেকটি পূর্ণ সূর্যগ্রহণ দেখা যায়। তবে সাধারণত এসব গ্রহণ এমন জায়গা থেকে দেখা যায় যেখানে মনুষ্যবসতি নেই বা থাকলেও কম। এবার যে বিপুল পরিমাণ মানুষ একটা পূর্ণ সূর্যগ্রহণ দেখতে পেলো, এমন নজির বিরল। 

অক্টোবর মাসে একেবারে অপ্রত্যাশিতভাবে ঘন জঙ্গলের মাঝে আবিষ্কার হয়েছে হারিয়ে যাওয়া এক শহর। নিজের গবেষণার জন্য গুগল সার্চ করছিলেন এক পিএইচডি শিক্ষার্থী। গুগল সার্চের একদম শেষ পাতায় হুট করে এক লেজার স্টাডি তার চোখে পড়ে যায়। তিনি ভাবেন, ‘আরে, এ দেখছি মায়া সভ্যতার এক হারানো শহর!’

অনেকের চোখে পড়েও এই রহস্য উদঘাটন হয়নি, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের টুলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষার্থীর চোখে পড়ে বেরিয়ে আসে আসলেই মেক্সিকোর ঘন বনে চাপা পড়ে থাকা ৭৫০-৮৫০ খ্রিষ্টাব্দের ওই শহরে, যেখানে অন্তত ৩০-৫০ হাজার মানুষের বসবাস ছিল। 

লুক অল্ড-টমাস নামের ওই শিক্ষার্থীর বের করা এই শহরে আরও পাওয়া গেছে বেশকিছু পিরামিড, অ্যাম্ফিথিয়েটার এবং খেলার মাঠ। 

প্রাণিবিদ্যার জন্য নতুন উদ্ভাবনের এক বছর ছিল ২০২৪। দেখা গেছে, বছরের পর বছর চেষ্টায় এ বছর ধীর হয়ে এসেছে বিশ্বজুড়ে প্রাণীবৈচিত্রের ক্ষতি। এছাড়া নর্দার্ন হোয়াইট রাইনো নামের এক ধরনের বিলুপ্তপ্রায় গণ্ডারের বংশবৃদ্ধি করতে ব্যবহার করা হয়েছে কৃত্রিম পদ্ধতি, যাতে এই প্রজাতিকে বিলুপ্তির পথ থেকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে নতুন আশার আলো দেখা যাচ্ছে। 

মহাকাশ ভ্রমণ হয়েছে আগের তুলনায় সহজ এবং সস্তা। ইলন মাস্কের স্টারশিপ রকেটের একটি অংশ পৃথিবীতে ফিরে আসার পর লঞ্চ প্যাডে তাকে ধরে ফেলা সম্ভব হয়েছে। অতীতে রকেটগুলো পানিতে আছড়ে পড়ে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ত। এখন থেকে রকেট ধরে ফেলা যাবে এবং বারংবার ব্যবহার করা যাবে বলে খরচ কমে আসবে। 

তবে সব ঘটনাই যে ইতিবাচক তা নয়। ইতোমধ্যেই দেখা গেছে পরিবেশ বিপর্যয় আগের চেয়ে অনেক অনেক তীব্র হয়ে উঠেছে।

আরও পড়ুন

×