সরেজমিন পঙ্গু হাসপাতাল
৫ দিনে চিকিৎসা নেন দেড় হাজার, জবাই করতে গিয়ে আহত ১৩৮

ফাইল ছবি
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১ জুন ২০২৫ | ০১:১৬ | আপডেট: ১১ জুন ২০২৫ | ০৮:৫৫
কোরবানির ঈদের আগে ও পরে গত পাঁচ দিনে ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসা নিয়েছেন ১ হাজার ৫২০ জন। এর মধ্যে ভর্তি হয়েছেন ৪২২ জন এবং অস্ত্রোপচার করা হয়েছে ৪৬৬ জনের। তাদের মধ্যে মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত এবং সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও বাস দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ১ হাজার ৩৮২ জন। বাকি ১৩৮ জন কোরবানির পশু জবাই করতে গিয়ে আহত হয়েছেন।
চিকিৎসকরা বলছেন, আহতদের কারও হাত-পা কেটে ফেলার মতো অবস্থা হয়েছে। কারও সারাজীবনের জন্য পঙ্গু হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার পঙ্গু হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের অস্ত্রোপচার রুম থেকে শুরু করে এক্স-রে রুমসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার রুমে দীর্ঘ লাইন। রোগী ও স্বজনের ভিড়ে পা ফেলার জায়গা নেই। তাদের চোখেমুখে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার ছাপ। সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে কারও কারও এক হাত কিংবা দুই হাত, আবার কারও এক পায়ে কিংবা দুই পা ভেঙে গেছে। হাত-পা ছাড়াও বুক, পেট, মাথাসহ বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম হয়েছেন। এ ছাড়া হাসপাতালে জরুরি বিভাগে কিছুক্ষণ পরপর অ্যাম্বুলেন্স, সিএনজিচালিত অটোরিকশায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রোগীরা আসছেন।
হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি-১ ওয়ার্ডে ভর্তি ফরিদপুরের আরমান হোসেন। দুশ্চিন্তায় হাসপাতালে শয্যায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন তিনি। তাঁর বাবা আশিক হোসেন বলেন, ঈদের আগের দিন শনিবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে ছেলে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় পড়ে। এক হাতের হাড় ভেঙে গেছে। আরেক হাত না ভাঙলেও খুব খারাপ অবস্থা। পুরো পরিবারের ঈদের দিন কেটেছে হাসপাতালে। একমাত্র ছেলের জন্য চরম দুশ্চিন্তায় আছি।
গত সোমবার মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার হন কিশোরগঞ্জের ইসলাম উদ্দিন। মঙ্গলবার হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসেন। তিনি বলেন, জরুরি বিভাগে এক ঘণ্টা অপেক্ষা করেও শয্যা পাচ্ছি না।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, গত বৃহস্পতিবার জরুরি বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন ২৫৩ জন। এর মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭০ জন এবং অপারেশন লেগেছে ৬৪ জনের। শুক্রবার ৩১৬ জন, এর মধ্যে ভর্তি হয়েছেন ৮৫ জন এবং অপারেশন লাগে ৮৯ জনের। ঈদের দিন শনিবার চিকিৎসা নিয়েছেন ৩২৫ জন, ভর্তি ১২২ জন এবং অপারেশন লেগেছে ১০২ জনের। রোববার ৩ হাজার ৩০১ জনের মধ্যে ভর্তি হয়েছেন ৯২ জন এবং অপারেশন লেগেছে ৭৫ জনের। সোমবার জরুরি বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন ৩২৫ জন। এর মধ্যে ভর্তি হয়েছেন ৯৭ জন এবং অপারেশন লেগেছে ১০২ জনের।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা জানান, এখানে স্বাভাবিক সময়ে গড়ে ২০০ রোগী আসেন। কিন্তু এখন গড়ে ৩শর বেশি রোগী আসছে।
হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কেনান সমকালকে বলেন, প্রতিবছরই ঈদের সময় দুর্ঘটনা বাড়ে। তাই স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে রোগীর চাপও অনেক বাড়ে।
- বিষয় :
- হাসপাতাল