তিন দিনে হাজারের বেশি রোগী ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে

ছবি: ফাইল
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৫ | ২২:৩৭
দেশে এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে টানা তিন দিন দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটল।
বৃহস্পতিবার ডেঙ্গু নিয়ে সারা দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে আরও ৩৫৮ জন ভর্তি হয়েছেন। এতে জুলাইয়ের প্রথম তিন দিনে ভর্তি রোগীর সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
গত বুধবার ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৪১৬ জন। এটি ছিল চলতি বছর একদিনে সর্বোচ্চ রোগী ভর্তির রেকর্ড। তিন দিনে সব মিলিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ১৬০ জন। চলতি বছর ১১ হাজার ৪৫৬ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৪৫ জনের। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গতকাল ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া ব্যক্তি বরিশালের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ভর্তি নতুন রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরিশাল বিভাগে– ১৫০ জন। এছাড়া ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ৭৮ জন, ঢাকা বিভাগে ৪৫ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে পাঁচজন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩২ জন, খুলনা বিভাগে ১৪ জন, রাজশাহী বিভাগে ২৯ জন এবং সিলেট বিভাগে দুজন ভর্তি হয়েছেন। ডেঙ্গু নিয়ে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ১ হাজার ৩২৯ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ৩৫১ জন, ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ৯৭৮ জন।
১৯ হাজার কম্বো কিট দিলো চীন
ডেঙ্গু মোকাবিলায় চীন সরকার ১৯ হাজার কম্বো কিট দিয়েছে। আরও কার্যকরভাবে ডেঙ্গু শনাক্তে সক্ষম এসব কিটে একসঙ্গে এনএস-১, আইজিজি ও আইজিএম পরীক্ষা করা যাবে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে এ কিট হস্তান্তর করা হয়। এ সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীন দূতাবাসের ডেপুটি মিশন চিফ লিউ ইউইন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে দাবি করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান। তিনি বলেন, ডেঙ্গুর হটস্পটগুলোতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, অ্যাম্বুলেন্স ও ডায়াগনস্টিক কিটসহ সব ধরনের সহযোগিতা অতি দ্রুত পাঠানো হবে। তিনি বলেন, ডেঙ্গুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভেক্টর প্রোগ্রাম। এ শনাক্তকরণ প্রোগ্রাম ব্যর্থ হলে বা মৌসুম পরিবর্তনের কারণে হাসপাতালে রোগী বেড়ে যায়। এজন্য যে উৎসগুলোর কারণে এ পরিস্থিতি হচ্ছে, সেখানে নজর দিতে হবে। যার যার দায়িত্ব সে পালন করলে শুধুমাত্র চিকিৎসা নিয়ে উদ্বেগ পোহাতে হবে না। তবে ডেঙ্গু এখন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
বিশেষ সহকারী বলেন, বর্তমানে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জাসহ চারটি ভাইরাসের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। যার কারণে অনেকে সাধারণ রোগ ভেবে বাসায় থাকছেন। দেরিতে হাসপাতালে আসা আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে জটিল করে দিচ্ছে। তিনি বলেন, বিগত সময়ে স্বাস্থ্যখাত কখনো অগ্রাধিকারে ছিল না, কখনোই পাঁচে স্থান পায়নি। অন্তর্বর্তী সরকার স্বাস্থ্যকে সব জায়গায় গুরুত্ব দিচ্ছে।
দেশে ২০২৪ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১ লাখ ১ হাজার ২১১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। মৃত্যু হয় ৫৭৫ জনের। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর এ সংখ্যা তৃতীয় সর্বোচ্চ। মৃতের সংখ্যায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ২০২৩ সালে এ রোগ নিয়ে সবচেয়ে বেশি ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। মারা যান সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ৭০৫ জন। ২০২২ সালে ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হন।
- বিষয় :
- ডেঙ্গু
- ডেঙ্গু রোগী
- ডেঙ্গু আক্রান্ত