উপনির্বাচনেও তৃণমূলের জয়, খাতা খুলতে পারেনি বিজেপি

ফাইল ছবি
কলকাতা সংবাদদাতা
প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২২ | ০৯:০১ | আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২২ | ০৯:০১
উপনির্বাচনেও তৃণমূলের জয় জয়াকার। পাঁচটি আসনের একটিতেও জয় পায়নি বিজেপি । পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম বর্ধমান জেলার ‘আসানসোল’ লোকসভা আসন এবং দক্ষিণ কলকাতার ‘বালিগঞ্জ’ বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনে রাজ্যটির ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীরাই জয়ী হয়েছেন।
অন্যদিকে বিহারে একটি মাত্র বিধানসভা আসনে উপনির্বাচনে জয়ী হয়েছেন আরজেডি প্রার্থী। ছত্তিশগড় ও মহারাষ্ট্রে দুইটি বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। পাঁচটির কোথাও খাতাই খুলতে পারল না বিজেপি বা তাদের জোটসঙ্গীরা। এমনকি পশ্চিমবঙ্গের বালিগঞ্জে জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে বিজেপি প্রার্থীর।
২০১৪ ও ২০১৯ সালে পরপর দুইবার ‘আসানসোল’ লোকসভা আসনের সাংসদ ছিলেন বাবুল সুপ্রিয়। তার লোকসভা আসন পশ্চিমবঙ্গের ‘আসানসোল’ লোকসভায় রেকর্ড ভোটে জয়ী হয়েছে তৃণমূল প্রার্থী অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিনহা। ৩ লাখ ৫৪৪ ভোটে তিনি হারিয়েছেন বিজেপি প্রার্থী ফ্যাশন ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পালকে। শত্রুঘ্ন সিনহা পেয়েছেন ৬,৫২,৫৮৬ ভোট, সেখানে অগ্নিমিত্রা পাল পান ৩,৫২,০৪২টি ভোট। তৃতীয় স্থানে রয়েছেন বামফ্রন্টের প্রার্থী পার্থ মুখার্জি এবং চতুর্থ স্থানে রয়েছেন কংগ্রেস প্রার্থী প্রসেনজিৎ পুইতুন্ডি।
এই আসনে মোট আটজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এই জয়ের ফলে বিজেপির হাত থেকে এই লোকসভা আসনটি ছিনিয়ে নিল তৃণমূল। এই লোকসভা আসনে তৃণমূলের এটা প্রথম জয়। কারণ এর আগে তৃণমূল কোনদিনই এই আসনটিতে জয় পায়নি। জয়ের পরই শত্রুঘ্ন সিনহা বলেন, ‘আমরা সকলে মিলে চেষ্টা করেছি, দেশের অন্যতম বড় নেত্রী এবং আমাদের সকলের প্রিয় ও জনপ্রিয় মমতা ব্যনার্জির নাম আরও উজ্জ্বল করতে। এই জয়ের কৃতিত্ব দলের নেত্রী ও আসানসোলের সাধারণ মানুষের জন্য।’
বিজেপির সাংসদ হিসেবে বাবুল সুপ্রিয় মোদি মন্ত্রিসভায় মন্ত্রী ছিলেন। যদিও ২০২১ সালের মোদি মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণে জায়গা না পাওয়ায় বিজেপির সংস্পর্শ ত্যাগ করেন এবং সাংসদ পদেও ইস্তফা দেন তিনি। পরবর্তীতে তিনি যোগ দেন তৃণমূল কংগ্রেসে। ফলে দীর্ঘদিন আসানসোল কেন্দ্রটি সাংসদ বিহীন হয়ে পড়েছিল। স্বভাবতই এই আসনে উপনির্বাচন জরুরি হয়ে পড়ে। আর ওই আসনেই তৃণমূলের প্রার্থী করা হয় সাবেক কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ এবং জাহাজ মন্ত্রী, বিজেপি নেতা ও অভিনেতা ৭৬ বছর বয়সী শত্রুঘ্ন সিনহাকে।
অন্যদিকে যোগ দেওয়ার পর বিধানসভার ‘বালিগঞ্জ’আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন বাবুল সুপ্রিয়। ভালো ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী বাবুল। ৫১ বছর বয়সী বাবুল ২০,০৫৬ ভোটে হারিয়েছেন তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিআইএম প্রার্থী সায়রা শাহ হালিমকে (তিনি সম্পর্কে বলিউড অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহ-এর ভাতিজি)। বাবুল ভোট পেয়েছেন ৫০,৯৯৬টি। অন্যদিকে সায়রা হালিমের প্রাপ্ত ভোট ৩০,৯৪০টি। এই আসনে অনেক পেছনে থেকে তৃতীয় হয়েছে বিজেপির কেয়া ঘোষ এবং চতুর্থ স্থানে আছেন কংগ্রেসের কামরুজ্জামান চৌধুরী। সেক্ষেত্রে এই আসনে জামানত জব্দ হয়েছে বিজেপি ও কংগ্রেসের। নিয়ম অনুযায়ী বিজেপি প্রার্থীকে ১৬ হাজারের কিছু বেশি ভোট পেতে হত। সেখানে কেয়া পেয়েছেন ১৩,১৭৪ ভোট। এই আসনে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল সিপিআইএম প্রার্থীর দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা। গেল পৌরসভা ভোট থেকেই ফের পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক হতে শুরু করেছে বামরা। উল্টো দিকে কলকাতা শহরে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়তে শুরু করেছে গেরুয়া শিবির।
গত নভেম্বরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বালিগঞ্জ আসনের জয়ী তৃণমূল বিধায়ক সুব্রত মুখার্জির মৃত্যুতে এখানে উপনির্বাচন জরুরি হয়ে পড়ে। আর এখানেই তৃণমূলের প্রার্থী করা হয় গায়ক বাবুল সুপ্রিয়কে।
গত মঙ্গলবার এই আসনগুলোতে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এদিন জয়ের খবর ছড়িয়ে পড়তেই ওই দুই আসনের তৃণমূলের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা উৎসবে মেতে ওঠেন। দুই আসনে জয়ের পরই টুইট বার্তায় উভয় আসনের দলীয় প্রার্থীদের অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি সেখানকার বাসিন্দাদেরও ধন্যবাদ জানিয়েছেন তৃণমূল প্রধান মমতা ব্যনার্জি।
পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি বিহারের ‘বোচাহান’ বিধানসভা আসনে জয়ী হয়েছে রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) প্রার্থী অমর কুমার পাসওয়ান। অন্যদিকে মহারাষ্ট্রের ‘নর্থ কোলাপুর’ বিধানসভা আসনে জয়ী হয়েছে কংগ্রেস প্রার্থী জয়শ্রী যাদব এবং ছত্তিশগড়ের ‘খাইরাগড়’ বিধানসভা আসনে জয়ী হয়েছে কংগ্রেস প্রার্থী যশোধা ভার্মা।
- বিষয় :
- উপনির্বাচন
- বিধানসভা
- লোকসভা
- তৃণমূল
- বিজেপি